বিষ - চয়ন সমাদ্দার


বিষ

 চয়ন সমাদ্দার

 -:১:-

 

        মাত্র চারবছর হলো গয়া জেলা জন্ম নিয়েছে। তবে, তার বহু আগে থেকেই শের শাহের রাস্তা ধরে দলে দলে মানুষ আসে এখানে। আসে ব্যবসায়ীর দল, আসে তীর্থযাত্রীরা, হিন্দু, মুসলমান, বানিয়া... আর এই কবছর ধরেই লোকের ভীড়ের সঙ্গে  আসে ওরা সতেরজন। তিনজন, চারজন করে এক একটা দলের সঙ্গে মিশে। রফি, সফি, পুরণ, ছমরু, মঙরু...আর রূপচাঁদ। রূপচাঁদ দোসাদ।  মা, বাপ গেছে অল্প বয়সেই। তারপর থেকে পথই ঘর রূপচাঁদের। এই শের শাহের রাস্তা রূপচাঁদকে অনেক দিয়েছে। এই পথেরই হামরাহী ইসলাম। মরিশাস ফেরৎ ইসলাম। কুলিগিরি করত। কিন্তু, জাত সর্দার। ইসলামই জোগাড় করেছে বাকিদের। শুধু মুন্নিকে এনেছিল রূপচাঁদ। কুড়মি ওরা। ওদেরও গেরস্থালি পথেই। মুন্নির জওয়ানি চিনে নিয়েছিল রূপচাঁদকে। তারপর থেকে ওরা একসঙ্গে।

 

        এই মুহূর্তে ওরা তিনজনই আছে। বাকীরা সসুরাল। তবে ইসলাম যতক্ষণ আছে চিন্তা নেই। কুছু ডর নাহি। এই তো , গতমাসে এক নিসপেকটার ধরেই ফেলেছিল প্রায়। ইসলাম মুচকি এসে তার হাথেলিতে গুঁজে দিল পচাস্ রূপৈয়া! হায় রামা! ওতে যে একবছর চলে যায়। কিন্তু, ইসলাম এমনই। সে অনেক কিছু পারে যা অন্যে পারে না। আর তাই সে সর্দার। রূপচাঁদ ওর কথায় হাসতে হাসতে জান দিতে পারে। শুধু যদি মুন্নিটা...

 

-:২:-

         ১৮৬৯ এর ৫ই সেপ্টেম্বর। যে পথে এখন দাঁড়িয়ে আছি, তা আমার বহুদিনের চেনা। এইপথ দিয়ে যেত সার্থবাহরা, যেতেন  ভিক্ষুর দল, যেত সাধারণ পথিক, যেত তুরঙ্গ বাহিনী। আমি দেখেছি। এখন এর নাম দ্য গ্র‍্যাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড। রাত নেমেছে। এখনই তার ফেরার কথা। ঐ যে ফিরছে। দ্রুত পায়ে শহরের দিক থেকে ফিরছে সন্ন্যাসী। ঘোর বর্ণ, দীর্ঘকায়, শালপ্রাংশু, মহাবাহু। আমি জানি, সে কোথায় যাবে। ঐ জঙ্গলের পথ ধরল। প্রায় ক্রোশ পাঁচেক পথ দূরের ভাঙা শিবমন্দির ওর গন্তব্য। এই জঙ্গলে, এই সেদিনও, বছর চল্লিশ আগে পর্যন্ত, জটলা করতে দেখেছি বদরিনাথের দলবলকে। নবাব সবজি খানকে দেখেছি : চোখ দুটো ঠেলে বেড়িয়ে আসছে, ছটফটানো পা দুটো চেপে ধরে আছে সরফরাজ খান;  আর নবাবের গলায় জড়িয়ে দেওয়া মলমলি রুমালের দুই কোণা মুঠিতে ধরে, চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে আমির আলি। এখন আর তারা নেই। স্লীম্যান সাহেবের কৃপায় পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হয়েছে ঠগীরা । কিন্তু, তাদের স্থান নিয়েছে বিষ-ডাকাতের দল। তীর্থযাত্রী বা ব্যবসায়ীদের নফর বা বামুন ঠাকুর সেজে তাদের দলে ভিড়ে যায়। অল্প মাইনে নিতে রাজি বলে, চট করে কাজও জোটে। তারপর,তারা আসে শের শাহের রাস্তা ধরে। তাদের পূর্বসূরিদের মতোই। শুধু, রুমালের পরিবর্তে এরা ব্যবহার করে ধুতরোর বিষ।  জনবিরল স্থানে  রাত্রিবাসের জন্য পড়ে তাঁবু। বামুন ঠাকুর রান্না চাপায়, অথবা নফর পরিবেশন করে। এরপর, রাতের খাবার খেয়ে তাদের শিকারেরা একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। নিঃশব্দে, টাকাকড়ি, গয়নাগাটি নিয়ে, রাতের অন্ধকারের সঙ্গে মিশে যায় ঘাতকের দল। এই রকমই একটি দলকে গত চারবছর ধরে খুঁজে চলেছে ইংরেজ সরকারের পুলিশ। সতেরজনের এই দলই সবচেয়ে বেশী মারাত্মক। সাহেবি ভাষায় এর নাম দ্য ডাটুরা গ্যাং। সম্প্রতি এই দলের প্রায় সকলকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে। কিন্তু, দলের নেতা ইসলাম আর তার ডানহাত রূপচাঁদ যেন বাতাসে মিশে গেছে। দেখেছি, রাজধানীতে তাঁর দফতরের টেবিলের ওপর প্রচণ্ড মুষ্ট্যাঘাত করেছেন পুলিশের বড়কর্তা: 'ড্যাম ইট! দ্যাট ফেলো কনসীলড্ হিমসেল্ফ সো ইফেকচুয়ালি দ্যাট নো ট্রেস্ অভ্ হিম কুড বি ফাউণ্ড!' ধর্মভূমি ভারতের মানুষদের চিনতে আরও একটু বাকি আছে সাহেবদের। কোনও যুগে কোনও শাসকই কি চিনতে পারল সাধারণ মানুষের মধ্যে বাস করা ভারতবর্ষকে? সন্ন্যাসী মন্দিরের সামনে। ঐ দূরে,অশত্থ  গাছের নীচে বসে আছে তার শিষ্য। মুণ্ডিতমস্তক, শিখা -উপবীতধারী। তার দিকে একবার হাত তুলে সন্ন্যাসী দ্রুত পায়ে ঢুকল মন্দিরের ভেতর। গাছের পেছনের ঝোপ থেকে বেরিয়ে এল তার শিষ্যা। দুহাতে বোঝাই ধুনি জ্বালানোর জন্য শুকনো গাছের ডাল। আমি দেখছি ধুলোমাখা  গেরুয়া শাড়িটা ছাপিয়ে উছলে পড়তে চাইছে তার শরীর। দাঁতে ঠোঁট চাপা, নাসারন্ধ্র স্ফুরিত। দ্রুত পায়ে মন্দিরের দিকে এগোল সে।

 

-:৩:-

         শেষ দুবছর মুন্নি ইসলামের। রূপচাঁদকে সে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে ইসলামই যোগ্য মর্দ্। তন্ কি আগ্ বুঝাতে সে রূপচাঁদের চেয়ে বেশী দক্ষ। রাণীর মতো মুখ ঘুরিয়ে বলেছে : 'হম তোহর জরু নাহি!' কিছু করার নেই রূপচাঁদের। সর্দারের সঙ্গে নমকহারামি সে করতে পারবে না। আর,মুন্নিকে এখন  সে যতই ঘেন্না করুক না কেন, একবারও তাকে চোখে না দেখে থাকা অসম্ভব রূপচাঁদের পক্ষে। ইসলাম ফিরছে। সনইয়াসী মহারাজ, এবং তার বরাম্ভন চেলা -চেলিকে সসম্মানে গাঁয়ের মন্দির দেখিয়ে দিয়েছে গয়ার আশপাশের সব গাঁওওয়ালা। কেউ, কোনও সন্দেহ করেনি। এই দুবছর তারা সকলের চোখের সামনে হাওয়ায় মিশে থেকেছে তাই। ইসলাম মন্দিরে ঢুকল।  ঝোপের পেছন থেকে বেরিয়ে মন্দিরের দিকে যাচ্ছে মুন্নি। রাণ্ড শালি! মাটিতে ঘুষি মারে রূপচাঁদ। ধুনি জ্বলল মন্দিরের ভেতর। রূপচাঁদের পা দুটো স্বয়ংক্রিয় হয়ে তাকে দাঁড় করিয়ে দিল। চলতে শুরু করল সে। দুইবছর ধরে এই হয়ে আসছে। দেখতে চায় না রূপচাঁদ; কিন্তু কে যেন তাকে দেখতে বাধ্য করে। হায় রামা! কা করত্  ই জহর্! বিষ - বিষ ঘিরেছে রূপচাঁদকে। জ্বলে যাচ্ছে দেহ। এ জ্বালার কোনও নির্বাণ কি নেই? মন্দিরের পাশের  দেওয়ালের এই ইটটা আলগাই ছিল। সরিয়ে নিলে যে ভেতরটা স্পষ্ট দেখা যায় তা রূপচাঁদ প্রথমদিনই জেনেছে। উমম্... মুন্নির গলা থেকে সুখী বিড়ালির মতো এই আওয়াজটা চুমু খাওয়ার সময় বেরোয়। তার মানে, এখন, ইসলামের মুখের ভেতর শঙ্খ লেগেছে দুটো জিভের...। কামিনি শালি! হাতের মুঠোয় নখ বসে যাচ্ছে। ভেতরের দিকে চাইল রূপচাঁদ। ধুনির পাশে শোয়া এখন ওরা। মুন্নির নাভির গভীরে ইসলামের জিভ, মুন্নির হাত ওর চুল মুঠো করে ধরেছে, ধুনির আবছা আলোতেও উত্তুঙ্গ বুক দুটো প্রচণ্ড শব্দে ডেকে চলেছে বিশ্বের যত পুরুষকে। চোখ ফিরিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এল রূপচাঁদ। ই জহর উতার লে রামা! একি যন্ত্রণা। দেখতে চায় না; না দেখেও পারে না। আবার এগোতে হলো। মাটিতে শোয়া ইসলামের সর্ব অঙ্গ গাভীমাতার মতো পরম যত্নে লেহন করে চলেছে মুন্নি। শোষণ করছে উত্থিত, দৃঢ় পৌরুষ। বড় বাড়াবাড়ি করছে আজ ছিনাল। ইসলামের নিরাবরণ দেহের মধ্যস্থলে রাজেন্দ্রাণীর মতো শিরদাঁড়া সোজা করে উপবিষ্টা সে এখন। ঘোড়েকি সওয়ারি করত্ হো কা নাঙ্গি শালি? মুখ ফিরিয়ে নিল রূপচাঁদ। ঠোঁট কেটে বসে গেছে দাঁত। জিভে নোনা রক্তের স্বাদ, মুন্নির জানুসন্ধির মতো নোনা। তীব্র শীৎকারধ্বনি বনের নীরবতা ছিঁড়ে ফালা ফালা করছে। আহ্! আহ্! আহ্! আহ্! আল্লাআআহ্! মৈয়া গেএএএঃ! দুহাতে কান চেপে ধরেছে রূপচাঁদ। উতার লে ই জহর রামাআআঃ!

 

-:৪:-

        সময় হয়েছে। আবার গাছের নীচে গিয়ে বসেছে রূপচাঁদ। দুহাতে মুখ ঢাকা। থরথর করে কাঁপছে। খুব সাবধানে এগোতে  হবে আমায়।  ইতিহাসের গতি বদলে যাবে যদি সিদ্ধান্ত নিতে একমুহূর্ত বেশী সময় নেয় রূপচাঁদ দোসাদ। সেটা তো হতে দেওয়া যায় না। কালস্রোত একমুখী। কিন্তু, সম্ভাবনা অনন্ত। কোনও কোনও সময় এক সম্ভাবনা অন্য সম্ভাবনার চেয়ে প্রবলতর হয়। আর তখনই আমায় নেপথ্য ছেড়ে নামতে হয় মঞ্চে। আমি দেখি ঠিকই। কিন্তু, সব সম্ভাবনাই একসঙ্গে আসে আমার সামনে। নানা রঙের সুতোর জটিল বুনোট। একেবারে শেষ খণ্ডপলটির আগে আমিও জানি না কোন সুতোর রঙ সবচেয়ে উজ্জ্বল। কিন্তু, এখন আমি জানি। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম সামনে।

--- 'আরেকবার যাবে নাকি রূপচাঁদ? জানোই তো মুন্নির কমপক্ষে দুবার...। এখানটাতেই ইসলাম জিতে আছে।'

-- 'কওন বা?' ছিলে ছেঁড়া ধনুকের মতো ছিটকে দাঁড়িয়ে উঠেছে সে।

উত্তর না দিয়ে হাসলাম। রূপচাঁদের ঠোঁটের কোণে গ্যাঁজলা দেখা দিয়েছে। আর একটু ইন্ধন... আরও একটু।

--- 'দুবারের পর ইসলাম ঐ ঝোপঝাড়ের আড়ালে যাবে রূপচাঁদ; প্রকৃতির ডাকে। ঠিক সাত মিনিট তের সেকেণ্ডের জন্য। তারপর ফিরে এসে... আরও দুবার... এখনই ঠিক বলতে পারছি না... তিনবারের সম্ভাবনাও এত প্রবল।'

--- 'হারামিইইইই!' রূপচাঁদের গলা দিয়ে ঘড়ঘড়ে আওয়াজ বেরোল। অন্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর। তীব্র নীল আলোর ঝলক। মাটিতে ছিটকে পড়েছে লোকটা। উঠে দাঁড়িয়ে ছোরা বের করল। আমার তলপেটের ডানদিক তাক করে, ঝড়ের মতো এগিয়ে এসে, সোজা চালিয়ে দিল। আবার নীল আলোর ঝলক। ছোরাটাই এখন আলোয় গড়া। কাল, স্থান, বস্তু আর শক্তি সব পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে আছে। একটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অন্যগুলোকেও করা যায়। শান্ত স্বরে বললাম --

'আমি না চাইলে শক্তিক্ষেত্র ডিঙিয়ে আমায় ছুঁতে পারবে না রূপচাঁদ।'

--'তু কওন্? পিরেত?' রূপচাঁদের গলার স্বরে এখন ভয়।

-- 'ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান আমি সবই রূপচাঁদ। আমি অবলোকন পাত্র।'

--'কা?'

--'বোঝার চেষ্টা কোরো না। পারবে না। তার চেয়ে যা বলছি শোনো।'

--'বোল্'।

--  ১৮৬৭ এর ২৭শে মে। শের শাহের রাস্তা ধরে চলেছেন রইস গুলাম আলি আর তাঁর তিন বেগম। রফি, সফি এবং ছমরু দলে ভিড়ে গেছে।  মন চনমনে ওদের। ইসলাম এই প্রথম দলের সঙ্গে নেই। কিন্তু, ওদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। মরিশাস থেকে যে বিষ দেওয়ার তরিকা শিখে এসেছে সর্দার, তার অন্ধিসন্ধি ওদের জানা হয়ে গেছে। তাছাড়া, সর্দার তো বলেইছে যে মুদী দোকানে এসে যাবে। সন্ধে ঘনালো। রফি আর সফি পথের পাশের মুদী দোকানে নিয়ে গিয়ে তুলল শিকারদের। হরি মুদীকে বলাই ছিল। সে বাড়ী গেল তাকিয়া আনার অজুহাতে। ধুতরো বিষ মেশানো খাবার বানালো ছমরু। তুমি, মুন্নি, আর ইসলাম ছিলে দোকানের সামনের গাছতলায়। ধুনির পেছনে ধ্যানস্থ সন্ন্যাসী এবং তার দুপাশে বসা শিষ্য ও শিষ্যা। তোমাদের কাজ পাহারাদারের। ইসলাম একাজ আগে করেনি। এবার, কি একটা ভেবে নিজের জন্য বরাদ্দ করেছিল এই কাজ। মুন্নিকেও... মানে তোমাদেরও... সঙ্গে রাখতে চেয়েছিল। যখন চারটে শরীর লুটিয়ে পড়ল, তোমরা ঢুকলে দোকানে। লুটতরাজ শেষ করে বেরিয়ে তোমরা তিনজন গেলে এক পথে। আর, বাকী তিনজন অন্যপথে। কিন্তু, এই প্রথম বিষের মাত্রা গোলমাল হলো। বিবিরা বেহেস্ত্ গেলেও গুলাম আলি যাননি। বহুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে তিনি সোজা ছুটলেন থানায়। তাঁর এজাহারমাফিক কাজ শুরু করে অল্প কদিনের মধ্যেই পুলিশ গ্রেপ্তার করল রফি, সফি, ছমরুকে। আলি সাহেব তোমাদের দেখেননি। তাই, পুলিশ তোমাদের খোঁজও করেনি। যখন জানতে পেরেছে তোমাদের কথা,তখন তোমরা ফেরার।'

-- 'ইসব হাম জানত্।'

-- 'বেশ, তবে যা জান না তাই শোন। তোমাদের তিন দোস্ত ঐদিন তোমরা কোথায় ছিলে তা বলেনি পুলিশকে। পুলিশের কচুয়া ধোলাই, কম্বল ধোলাই খেয়েও নয়। তবে, গতমাসে, ওরা ভেঙে পড়ে সব বলে দিয়েছে। গাঁয়ে গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়েছে খবরিরা। গত সপ্তাহে  এক খবরির কাছ থেকে পাকা খবর পেয়ে,  ঘন্টাভর আগে, এই জঙ্গল থেকে মাইলটাক দূরে, তাঁবু ফেলেছেন বাঁকাউল্লা। রাস্তায় উঠে, ডানদিকে মিনিট দশ ছুটলেই পৌঁছন যায় সেখানে। আরেকটা ছোট খবর, মুন্নি ইসলামের বাচ্চার মা হতে চলেছে। ঐ ইসলাম বেরোল।  সাত মিনিট তের সেকেণ্ড।'

         আমার কথা শেষ হতে না হতেই  রূপচাঁদ মন্দিরের দিকে একটা উন্মাদ দৌড় মারল। ছুটতে ছুটতেই বাঁ কোমর থেকে টেনে বার করে নিল দ্বিতীয় ছোরাটা। ঠিক দুমিনিট পরে বেরিয়ে এসে ছুটতে লাগল ডানদিকে মোড় নিয়ে।

         একটা নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। ঠিক ষোল মিনিট আট সেকেণ্ড আগে মুন্নির গর্ভে প্রোথিত ইসলামের বীজ কোনওদিনই সূর্যের আলো দেখবে না।  নষ্ট হয়ে গেল হিংস্র লুটেরা, ইসলামের ছেলে, সুলেমান সর্দার নামক ত্রাস সৃষ্টির সম্ভাবনা।  বেঁচে গেল অনেক রাহী। পাঁচ মিনিট তের সেকেণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি সময় আছে হাতে। সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এখন। এই সময় রেখার ইতিহাসের গতিমুখ আর ফিরবে না। মন্দিরের ভেতর মুন্নির নিথর, উলঙ্গ শরীর পড়ে আছে। ছোরার টানে ফাঁক হয়ে যাওয়া গলার নলি থেকে ফিনকি দিয়ে বেরোন রক্ত চাটছে দুটো আরশোলা। ইসলামের পায়ের কাছের কাঁকড়া বিছেটাকে দেখতে পাচ্ছি। এক মিনিটের ভেতর ছোবলাবে। আধমরা ভাবটা কাটার আগেই পুলিশ এসে পড়বে। পথ দেখিয়ে আনবে রাজসাক্ষী রূপচাঁদ। দশ বছরের জন্য কালাপানি চালান হয়ে, পাঁঁচবছরের মাথায় আন্দামানেই মাটি নেবে ইসলাম। পুলিশসাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলবেন : 'ওয়েল, সো মাচ ফর দ্য ডাটুরা গ্যাং!' দফতর লিখবেন মুন্সী বাঁকাউল্লা। তাঁর সঙ্গেও আমার দেখা হবে।...নাকি হয়েছে...নাকি হয়েছিল?

 


অবলোকন(২)

Chayan Samaddar