স্বপ্ন-সূত্র
মধুমিতা মুখার্জী
আজকাল
সকালে ঘুম থেকে উঠেও কেমন একটা ক্লান্তি সারা শরীরে ছেয়ে থাকে। মনে হয়, এর
থেকে আমার আর নিস্তার নেই। ভালোই ছিলাম এতদিন। যেদিন থেকে নতুন উপসর্গগুলো
দেখা দিয়েছে; আমার মনের শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে।
নতুন
উপসর্গ বলতে, আমার স্বপ্নের কথা বলছি। বিয়ের পর হিমাচল প্রদেশে চলে এসে
ভালো ছিলাম। পুরনো সব স্মৃতি ধীরে ধীরে মন থেকে চলে গেছিল। স্বপ্নে আবার
সেই স্মৃতিগুলো ফিরে আসছে। স্বপ্নের মধ্যে সেই পুরোনো স্মৃতির সূত্র এসে
প্রতিরাতে আমাকে অস্হির করে তুলছে; ধরতে গিয়েও তাদের ঠিকমত ধরতে পারছিনা।
সেই অধরা স্বপ্ন-সূত্র আমাকে সারাদিন তাড়া করে চলেছে।
এখানে
আসার ঠিক তিন মাস পরেই এই সমস্যার সূত্রপাত। একরাতে গভীর ঘুমের মধ্যে
প্রথম স্বপ্নটা দেখলাম। দেখলাম, আমাদের বাংলোর মধ্যে সর্বক্ষণ ‘মিউ মিউ’
করে পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ানো দুধ সাদা বিড়ালটাকে। কিন্তু, বিড়ালটার চোখদুটো
অন্যরকমের ছিল। সেই চোখের দৃষ্টি আমি জীবনেও ভুলতে পারবনা। আমার স্বপ্নে
বিড়ালটার সবুজ চোখ বদলে মণির রঙ ঘন নীল দেখেছিলাম। এইরকম ঘন নীল চোখ আমি
বহু আগে একজনের দেখেছিলাম; সারা জীবনেও ভুলবনা। সেই চোখদুটো বহুদিন আমাকে
জীবন্ত দগ্ধ করেছে, কাউকেই বলে উঠতে পারিনি। বাবার গুরুদেব সেই সুঠাম দেহের
অধিকারী, নিত্যানন্দ বাবাজীর চোখদুটো আশ্চর্য রকমের ঘন নীল ছিল। সেইবার
তিনি আমাদের বাড়িতে আসার পরে পা টিপে সেবা করার জন্য আমাকে পছন্দ
করেছিলেন। দরজা বন্ধ করে সেদিন…। উফফ! সেই ভয়াবহ স্মৃতি আমি চেষ্টা করে
ভুলে ছিলাম। স্বপ্নে বিড়ালটার চোখদুটো বদলে ওইরকম হয়ে যেতে আবার মনে পড়ে
গেল। স্বপ্নে বিড়ালটা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল, ঠিক সেই গুরুদেবের
মত। আমি ভয় পেয়ে বিড়ালটাকে দরজার খিল খুলে মারতে গিয়েও ব্যর্থ হলাম। যেমন
হঠাৎ করে উদয় হয়েছিল; তেমনভাবেই মিলিয়ে গেল বিড়ালটা। আমি আবার ঘুমিয়ে
পড়লাম। সারাদিন কেমন একটা ক্লান্তি আমাকে ঘিরে রইল। আমার স্বামী মৃদুল
সকালে আমার দিকে কেমনভাবে তাকিয়ে ছিল। আমার খুব ভয় করছিল, ঘুমের মধ্যে
আবার নিত্যানন্দ বাবাজীর কথা বলে ফেলিনি তো? ও যেটা বলা হয়নি- সেই দুধসাদা
বিড়ালটাকে আর আমাদের বাংলোতে দেখতে পেলাম না। বেড়ালটা মৃদুলের খুব প্রিয়
ছিল, প্রতিদিন অফিস যাওয়ার আগে নিজের হাতে বেড়ালটাকে দুধ খাওয়াত। সেটাকে
দেখতে না পেয়ে ও একবারও খোঁজ করলনা, এটাই আশ্চর্য ব্যাপার। যাইহোক, আমিও
বিড়ালটাকে আর দেখতে চাইছিলাম না।
ধীরে ধীরে সব
স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। আবার নতুন স্বপ্ন এসে সবকিছু তোলপাড় করে দিল। দিনটা
ভালোভাবেই শুরু হয়েছিল। সকাল থেকে ঘন নীল আকাশে মেঘের খেলা দেখে মনটা ভালো
ছিল। রাতে গভীর ঘুমের মধ্যে আবার একটা স্বপ্ন দেখলাম। সেই স্বপ্নে আমাদের
ফাইফরমাস খাটা বাচ্চা ছেলে সঞ্জুকে দেখলাম। সঞ্জুর বয়স মাত্র বারো বছর,
শিশু শ্রমিক। স্বপ্নে দেখলাম সঞ্জু আমার দিকে এগিয়ে আসছে। শুধুমাত্র এইটুকু
দেখেই আমি অস্হির হইনি। দেখলাম, সঞ্জুর হাতদুটো অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে।
অস্বাভাবিক বলতে, ওর ফর্সা রঙের সাথে বেমানান মিশকালো হাত! শুধু তাই নয়,
হাতদুটো লম্বা লম্বা…বড়দের মত। ঠিক এইরকম হাত আমি দেখেছিলাম। আমাদের পুরোনো
পাড়ার মুদির দোকানদার তারকের এমন কালো-লোমশ হাত ছিল। দুপুরবেলায় আমাকে কেন
যে মা তারকের দোকানে নুন কিনতে পাঠাল সেদিন! ফাঁকা দোকানে আমাকে একা পেয়ে…
ভুলতে
চেয়েও যে ভুলতে পারিনা সেকথা। সেদিন ফেরার সময় হাতের নুনের প্যাকেটের নুন
- নাকি আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল কোনটা বেশি নোনতা ছিল বুঝে উঠতে পারিনি
কোনোদিন।
আমি স্বপ্নে সঞ্জুকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে
দেখে, ভয় পেয়ে গেছিলাম। স্বপ্নেই দরজার খিলটা নিতে গিয়ে সেটা খুঁজে পেলাম
না। তখন টেবিলে রাখা পেতলের ওজনদার ফুলদানিটা নিয়ে ওর দিকে ছুঁড়তে গিয়ে
দেখলাম সঞ্জু হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ঠিক বেড়ালটার মত। এমন অদ্ভুত স্বপ্ন
পৃথিবীতে আর কেউ দেখে বলে মনে হয়না। জানেন, পরেরদিন সকালে আর সঞ্জুকে দেখতে
পেলাম না, এমনকি সেই ফুলদানিটাও দেখলাম না। মৃদুল কেমনভাবে যেন আমার দিকে
তাকিয়েছিল। একটা আস্ত মানুষ আর একটা বিড়ালের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে।
সঞ্জুর ঘরে ওর জামা-কাপড় পড়েছিল অবহেলায়। শুধুমাত্র, বিছানার চাদরটা নিয়ে
সঞ্জু কোথায় চলে গেছিল। মৃদুল কিন্তু সেই নিয়ে একটা কথাও বললনা, আমিও বললাম
না। এমনিতেই আর সঞ্জুকে চোখের সামনে দেখতে চাইছিলাম না। মৃদুল অবশ্য
সঞ্জুর বাড়িতে খবর দিয়েছিল। ওর হত দরিদ্র বাবা-মা পাশের পাহাড়ের গ্রাম থেকে
এসে বেশ খানিকটা কান্নাকাটি করে মৃদুলের দেওয়া দশ হাজার টাকা নিয়ে, চোখের
জল মুছে ফিরেও গেছিল। আবার সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকল। একটা হতদরিদ্র
পাহাড়ি পরিবারের পাঁচ নম্বর সন্তান হারিয়ে গেলে অবশ্য তেমন কিছু হেলদোল
দেখা যাওয়ার কথাও নয়।
সেই গুরুদেব আর পাড়ার মুদির
দোকানদার তারকের সাথেও এমন আশ্চর্য কিছু ঘটনা ঘটেছিল। নাহ্, তারা হারিয়ে
যায়নি। গুরুদেব আমাদের বাড়ির তিনতলার একমাত্র ঘরটায় অতিথি হিসাবে কিছুদিন
ধরে ছিলেন। আমাদের পুরোনো দিনের বাড়ি বলে শৌচাগারগুলো একতলায় বাড়ির উঠোনের
একপাশে ছিল। গুরুদেব স্নান করার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ে
গেছিলেন। শিরদাঁড়ায় এমন আঘাত লেগেছিল যে তিনি আর কখনোই উঠে দাঁড়াতে
পারেননি। সিঁড়িতে নাকি তেল পড়েছিল, মনে হয় গুরুদেব স্নান করতে যাবেন বলে
বেশি করে তেল মেখেছিলেন। হয়ত, সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়েই তেল মাখছিলেন! কিছুই
বলা যায়না।
তারকের সাথে আবার অন্যরকমের ঘটনা হয়েছিল।
তারক রোজ দুপুরে দোকানে বসে, বাড়ি থেকে নিয়ে আসা টিফিন বক্স খুলে ভাত খেত।
একদিন, ও দুপুরে খাওয়ার পরেই মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে, অজ্ঞান হয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ ওইভাবে একা দোকানে পড়ে ছিল। বিকেলে একজন খরিদ্দার এসে তারককে
ভাতের থালার সামনে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে
হাসপাতালে দেয়। সে যাত্রায় তারক আর বেঁচে ফিরতে পারেনি। তারকের পাকস্হলীতে
ইঁদুর মারার বিষ পাওয়া গেছিল। কিন্তু, ওর মায়ের বানিয়ে দেওয়া ভাত, তরকারিতে
সেই বিষ পাওয়া যায়নি। পাকস্হলীতে নাকি মিষ্টি পাওয়া গেছিল! অথচ, তারকের মা
সেদিন টিফিনে মিষ্টি দেননি বলেই পুলিশের কাছে জানিয়েছিলেন। আশ্চর্য
ব্যাপার…খুব আশ্চর্য ব্যাপার। এতদিন পরে আমার স্বপ্নে তাদের বিশেষত্বগুলো
দেখাটাও অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা।
আসল
সমস্যার সূত্রপাত এই দ্বিতীয় স্বপ্নের পরেই হল। মৃদুল বদলে গেল। অবশ্য
মৃদুল বদলে গেল বলাটা ঠিক নয়…ওর আচার-আচরণ বদলে গেল। ও আমার সাথে স্বাভাবিক
ব্যবহার করা বন্ধ করে দিল। আমি যদিও এমনিতেই কম কথার মানুষ; তাও মৃদুলের
আমাকে ঘিরে পাগলামোগুলো খুব মনে পড়ত বিভিন্ন সময়ে। আমাদের তিনমাসের
দাম্পত্য কিন্তু বেশ আবেগঘন ছিল। পরিবর্তিত মৃদুল যন্ত্রের মত নিজের
কর্তব্য করে চলেছিল, আলাদাভাবে কোনো কথাবার্তা আর বলতনা। সে না বলুক, আমার
সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইতনা সেটাই খারাপ লাগত। মাঝেমধ্যে অফিস থেকে ফিরে কার
সাথে যেন দেখা করতে যেতে শুরু করল। ফোনেও কারোর সাথে আড়ালে গিয়ে কথাবার্তা
বলতে শুরু করল। বুঝতে পারছিলাম, আমার কপাল পুড়েছে। এরপরই একদিন মনে হল,
অফিসে যাওয়ার সময় আমার খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে যায় মৃদুল।
সারাদিন খুব ঘুম পেত। অফিসে যাওয়ার সময় জোর করে এক গ্লাস হরলিক্স নিয়ে এসে
মুখের সামনে ধরে বলত, “এটা খেয়ে নাও, তমালিকা। তুমি খুব দুর্বল হয়ে পড়ছ।"
প্রথম
প্রথম সন্দেহ করিনি, মনে হয়েছিল সত্যিই আমার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করছে।
পরে বুঝতে পারি, ওসব লোকদেখানো ব্যাপার। আসলে মৃদুল চাইছিল যে, আমি
সারাদিন ঘুমিয়ে থাকি। আমি বহু চেষ্টা করেছিলাম যাতে ও হরলিক্স রেখে চলে
যায়। তাহলে সুবিধামতো ফেলে দেওয়া যাবে। কিন্তু, ও নিজের হাতে খাইয়ে তবেই
অফিসে যেত। আমিও হরলিক্স খেয়েই গভীর ঘুমে ঢলে পড়তাম। জেগে থাকলেও খুব
ক্লান্ত লাগত।
সেদিন একটা অন্যরকমের স্বপ্ন দেখলাম।
সেই স্বপ্নটা দেখার পর থেকে আমি মনেমনে খুব অস্হির হয়ে পড়লাম। দেখলাম, একটা
বিশাল বড় সাপ ফনা তুলে আমাকে ছোবল মারতে আসছে। আমি আশেপাশে কিছু আঘাত করার
মতো আছে নাকি খুঁজে দেখতে গিয়ে কিছু না পেয়ে ছোট তেপায়া টেবিলটা হাতে তুলে
নিলাম। সাপটাকে আঘাত করতে গিয়ে যা দেখলাম, তাতে আমার সারা শরীর ভয়ে কেঁপে
উঠল। দেখলাম, সাপটার মুখটা পুরো মৃদুলের মতো হয়ে গেছে। ওর হাঁ মুখের ভেতর
থেকে চেরা জিভ বার করে আমাকে ছোবল মারার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। আমি
প্রাণপণে শক্তি সঞ্চয় করে সাপটার দিকে টেবিল ছুঁড়ে মারতে যাই। সাপটা আমাকে
লেজের ডগা দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আর কিছুই মনে নেই। সকালে উঠে ভয়ে
ভয়ে তেপায়া টেবিলটার দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা যথাস্হানে আছে। আমি ধীরে ধীরে
বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরের ঘরে মৃদুলকে সংবাদপত্র হাতে বসে থাকতে দেখে
স্বস্তির শ্বাস ফেলি। আগের দু’বার স্বপ্নে যাকেই দেখেছিলাম; ঘুম ভেঙে উঠে
তাকে আর কোথাও দেখতে পাইনি। এবার ব্যতিক্রম। আমি মৃদুলকে দেখে স্বস্তি
পেলেও ঠিক আনন্দ পেয়েছি নাকি বুঝতে পারছিলাম না। আমি ঠিক করলাম, সেদিন
হরলিক্স কিছুতেই খাবনা। মৃদুল অফিসে যাওয়ার সময় হরলিক্স গুলে কাপে করে নিয়ে
এসেছিল। আমি বললাম, “আজ আমি হরলিক্স খাবনা।“
মৃদুল কেমন যেন ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “সরবত করে আনব?”
আমি মুখের ভাব করুণ করে বললাম, “আমি আজ কোনোরকমের পানীয় খেতে চাইছিনা। আজকের মতো আমাকে ছেড়ে দাও।“
মৃদুল
কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে কিসব চিন্তা করে আমার কথা মেনে নিল। মনে হল, ও সেদিন
আমাকে ঘুমের ওষুধ না খাওয়াতে পেরে একটু হতাশ হয়ে পড়েছে।
বিকেলে
বাড়ি ফিরেই অন্য ঘরে গিয়ে ফোন নিয়ে বসে পড়ল। সেদিন আমার সারাদিন ঘুম
পায়নি, তাই সজাগ ছিলাম। ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে বহু কষ্টে কান পেতে শুনলাম,
মৃদুল খাদের মধ্যে কাউকে ফেলে দেওয়ার কথা বলছে। ভালো করে শুনতে পাইনি। তবে
মনে হল, খাদ, অবোধ, ফেলে দেওয়া এইসব শব্দ নিয়ে কিছু বলছে। মনে হচ্ছে কঠিন
কোনো পরামর্শ করছে কারোর সাথে। খুব ভয় করছিল আমার, আসলে আমাদের বাংলোর ঠিক
পেছনেই গভীর খাদ। সেই খাদের নিচের দিকটায় সর্বক্ষণ অন্ধকার জমাট বেঁধে
থাকে…এতটাই গভীর সেই খাদ। একটু পরেই প্রতিদিনের মতো বেরিয়ে পড়ল মৃদুল। আমি
একটু দূর থেকে ওকে অনুসরণ করলাম। পাহাড়ের একটা বাঁকে গিয়ে একজন সৌম্যদর্শন
বৃদ্ধের সাথে মৃদুল হাত-পা নেড়ে কথা বলছিল। আমি ধীরে ধীরে সেদিকে এগিয়ে
গেলাম। দুজনেই কথাবার্তায় এত মগ্ন ছিল যে, আমার উপস্হিতি প্রথমে বুঝতে
পারেনি। আমাকে হঠাৎ সেই ভদ্রলোক দেখতে পেয়েই চিৎকার করে উঠলেন, “মৃদুল! আমি
এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম।“
মৃদুল অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়ে
আমাকে দেখার সুযোগ পায়নি। ও কিভাবে যেন আমার সাথে ধাক্কা লেগে চোখের সামনে
খাদে পড়ে গেল। ওর পড়ে যাওয়ার সময় সেই ভয়াবহ আর্ত চিৎকার আজও কানে বাজে।
আমি
এখন পাহাড়ের কোলে একটা লাল রঙের বিশাল বাড়িতে অনেকের সাথে থাকি। সেই
সৌম্যদর্শন ভদ্রলোক বলেছেন, আমার নাকি মাথা খারাপ, তাই একটা প্রাণী আর
দু’জন মানুষকে হত্যা করেছি। পাগলদের জেল হয়না বলে এখানে রেখেছে। সে রেখে
ভালোই করেছে, আমি এমনিতে ঠিকই আছি। তবে গতরাতে স্বপ্নে এই বাড়িটার আর
আমাদের মতো আবাসিকদের যিনি দেখাশোনা করেন…তাঁকে স্বপ্নে দেখেছি। স্বপ্নে
সেই ওয়ার্ডেন দিদির চোখগুলো বেড়ালটার মতো সবুজ হয়ে গেছিল। আমি ওনাকে তাড়া
করেছিলাম, উনি ছুটে পালাচ্ছিলেন। আমি প্রায় ধরে ফেলব এমন সময় হাওয়ায় মিলিয়ে
গেলেন। ঘুম ভেঙে তাকিয়ে দেখি আমি লাল বাড়ির পেছনের জঙ্গলে যাওয়ার দরজার
সামনে মেঝেতে ঘুমিয়ে আছি। যাইহোক, তাঁকে নাকি সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
আমাকেও জিজ্ঞাসা করছিল সবাই। আমি কিভাবে জানব? দেখুক খুঁজে সবাই মিলে। বলা
যায়না, হয়ত কেউ যেখানে জন্মেও যায়না…এই বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ধারের খাদে
ভালো করে খুঁজলে পাওয়া যেতেও পারে। কিভাবে যে মানুষ উধাও হয়ে যায় বুঝতেই
পারিনা।
*সমাপ্ত*
Madhumita Mukherjee