অণুগল্প - রক্তিমাভা কলমে - মহুয়া মিত্র



 রক্তিমাভা
 মহুয়া মিত্র

মহালয়ার সকাল।
শম্পা দেবী তুহিনের ঘরে ঢুকে ঠক্ করে চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে ঈষৎ গলা তুলে বললেন, -- " ন'টা বাজতে যায়, বলি নবাবজাদার ঘুম ভাঙবে কখন?"

তুহিন ঘুম ভেঙে হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে তৃপ্তি করে 'আহ' শব্দ করে বলল, --" কি সৌভাগ্য আপনার মাতৃদেবী, আপনার গর্ভে এক নবাবজাদার জন্ম হয়েছে। "

--" ফাজলামি রাখ্, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বাজার যা, আজ মহালয়া, বলি ঠাকুরের ভোগ তৈরি করব তো না কি? "

--" যথা আজ্ঞা জগতজননী। তবে আমি কিন্তু এগারোটা নাগাদ বেরোবো, কখন ফিরব জানি না, একটু ভারী খাবার দিও। পাড়ায় পূজো কমিটির উদ্যোগে রক্তদান শিবির আছে। "

--" ঐ কর্ তুই, কটা টিউশন করে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়া, যত জ্বালা এই বিধবা বুড়ির। তোর সব বন্ধুরা চাকরি বাকরি করে কি সুন্দর ঘরসংসার করছে, আর তুই! "

--" আমি সমাজ সেবা করব মা, ঐসব সংসার আমার জন্য নয়।"

সেদিন সন্ধ্যা বেলা শিবির থেকে পাওয়া সব রক্ত ব্লাডব্যাঙ্কে জমা করে বীরের হাসি হেসে বাড়ি এল।

কিন্তু অষ্টমীর অঞ্জলি দিয়ে বাড়ির পথে আসার সময়ে একটা বেপরোয়া গাড়ি এসে খুব বাজে ভাবে ধাক্কা দিল তুহিনকে। প্রচুর রক্তপাতে ভেসে যাচ্ছে গোটা শরীর। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও উপযুক্ত রক্ত সঠিক সময়ে পাওয়া না যেতে রক্তের অভাবে অকালে ঝরে গেল একটা তরতাজা প্রাণ।

মাসখানেক পর আবার পাড়ায় রক্তদান শিবির হচ্ছে তবে এবারের উদ্যোগ শম্পা দেবীর কারণ একজন তুহিন চলে গেছে ঠিকই কিন্তু তিনি চান না রক্তের অভাবে আর কোন তুহিন অসময়ে অমৃতলোক যাত্রা করুক।

সমাপ্ত