সূচিপত্র - জানুয়ারী, ২০২১

 

 || সূচিপত্র ||

জানুয়ারী, ২০২১

(চতুর্থ  সংখ্যা)

 


💖ভিন্নস্বাদের গল্প - ফরেস্ট গার্ড - তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

💖ভিন্নস্বাদের গল্প  - জেদ - চুমকি চট্টোপাধ্যায়

💖ভিন্নস্বাদের গল্প - মাতৃদোষে - জয়তী রায়

💖রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প  - অন্ধকারে খুনের খেলা- কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

💖রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প  - সাক্ষী ছিল না  - দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়

💖হাসির গল্প - জলপাই রঙের শাড়ি - সুদীপ ভট্টাচার্য

💖ভিন্নস্বাদের গল্প  - ছোটলোকের অমলেট - মৌমিতা তারণ

💖কল্পবিজ্ঞান - সময়ের বিপদ আপদ - সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

💖প্রেমের গল্প - লাভার্স মিট - ছন্দা বিশ্বাস

💖রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প - দ্য গ্রেট ইটালিয়ন জাকুজি - বৈশাখী রায়

💖শিশুসাহিত্য  - ঝিল-মিল  - উর্বী রায়

 

 ধারাবাহিক

 

💖মহাপ্রস্থানের পথে - -অয়ন দাস

 

কবিতা

💖প্রত্যয় -  রাজা ভট্টাচার্য

💖ইজ্জত -  পার্থ দেব

💖মিলন সেতু -  সঞ্জয় কর্মকার

💖অনন্ত মাঠের পথ -  অবিন সেন

💖আজ অসময়ে, রাই -  শ্যামাপ্রসাদ সরকার

💖এক বিকেলের গল্প - ভাস্কর শীল

💖যাওয়া—আসা -  কৌশিক চট্টোপাধ্যায়

💖চন্ডাল - ডা: শুভায়ু দে

💖আরো গভীরে যাও - অভিজিৎ দাশগুপ্ত

 

বিশেষ সাক্ষাৎকার 

 

💖প্রখ্যাত সাহিত্যিক শ্রী অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী  


কমিকস/কার্টুন


💖সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়

💖রণি  বসু 

 

 প্রবন্ধ

 

💖সীমান্তে কালোমেঘ - সিদ্ধার্থ পাল

💖ইতিহাসের অলিন্দে থাকা হাম্পি -  সঞ্চারী ভট্টাচাৰ্য্য

 

 ভ্ৰমণ

  

💖অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ী - ভবেশ দাস

💖উত্থিমথ দর্শন - ড: রবীন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক 

 

বিশেষ সাক্ষাৎকার - শ্রী অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী

 

বিশেষ সাক্ষাৎকার 

 


 

প্রখ্যাত সাহিত্যিক শ্রী অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী

সহযোগিতায় : রাখী আঢ্য  

 

     আজ আমাদের সাথে রয়েছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক শ্রী অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী। তিনি কলকাতা নিবাসী হলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত ও সেই সূত্রে ইংল্যান্ড প্রবাসী। কর্মসূত্রে বিশ্বের নানা দেশে দীর্ঘদিন থেকেছেন। তিনি তাঁর ব্যস্ততম সময়ের মধ্য থেকে আমাদেরকে কিছুটা সময় দিয়েছেন তার জন্য তাঁকে অসীম কৃতজ্ঞতা জানাই। সুদূর লন্ডন থেকে তার সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে জেনে নিয়েছি সাহিত্য এবং এই সময়ের কিছু কথা।


প্রশ্ন ১) আপনি এই সময়ের কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। সত্যজিৎ রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, অনীশ দেবের   পরেই আপনার নাম আসে। এই কল্পবিজ্ঞান লেখা শুরু করার পেছনে ইতিহাস কি?

উত্তর: কল্পবিজ্ঞান লেখার একটা বড় কারণ হচ্ছে যাতে পাঠকদের মধ্যে বিজ্ঞান সচেতনতা বাড়ে এবং  বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়, তার থেকেই লেখা শুরু করেছি। আমার মনে হয় যে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব বাড়ছে, তাই আমাদের বিজ্ঞান আরো ভালোভাবে জানা উচিত। কল্পবিজ্ঞান লেখা শুরু করার এটা একটা অন্যতম কারণ। একই সাথে আমি মনে করি যে কল্পবিজ্ঞান মানেই শুধু বিজ্ঞান বা ফ্যান্টাসি নয়, তার মধ্যে যেন গল্প থাকে এবং সেটা লেখা অনেক শক্ত। সেই জন্য কল্পবিজ্ঞানের মাধ্যমে গল্প বলতে ভালোবাসি।

প্রশ্ন ২)  যারা কল্পবিজ্ঞান লিখতে চান তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

 
উত্তর: প্রথমে অবশ্যই তাদের প্রচুর কল্পবিজ্ঞান, বিজ্ঞানের প্রবন্ধ পড়তে হবে। এছাড়া বিজ্ঞান নিয়ে কোথায় কি কাজ হচ্ছে সেগুলো জানতে হবে। সবার আগে গল্প কি করে লিখতে হয়, গল্প লেখার স্টাইল, অভিনবত্ব এগুলো শিখলেই কল্পবিজ্ঞান লেখা যাবে।

প্রশ্ন ৩) আপনার কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম দুই  জনপ্রিয় চরিত্র অনিলিখা ও মিস্টার পাই। এই চরিত্র দুটি কি কাল্পনিক না বাস্তবে এদের কোন অস্তিত্ব আছে?

উত্তর: না, অনিলিখা চরিত্রটির মধ্যে বাস্তবের কোনো প্রতিফলন নেই, পুরোটাই কল্পনা। আমি চেয়েছিলাম কোন নারী চরিত্রের মাধ্যমে অ্যাডভেঞ্চার, কল্পবিজ্ঞান এগুলো নিয়ে আসতে যেহেতু এইগুলির উপরে নারী চরিত্র বিশেষ ছিল না।  আমার কিছুটা প্রভাব অবশ্যই অনিলিখা চরিত্রের উপরে রয়েছে, যেটা যেকোনো লেখকেরই তাঁর সৃষ্টির উপর থাকে।


আর মিস্টার পাই এর চরিত্রটি আমি অনিলিখার অনেক পরে নিয়ে আসি। এটাও একটা কাল্পনিক চরিত্র। যদিও এর উপর খানিকটা প্রভাব সমুদ্র বসুর আছে। সমুদ্র বসু কিশোর সাহিত্যের একজন খুব ভালো পাঠক। এছাড়া তার বাংলা সাহিত্যের প্রতি  আগ্রহের দিকটি আমি মিস্টার পাই এর  মধ্যে নিয়ে এসেছি। তবে মিস্টার পাই এর বৈজ্ঞানিক দিকটা কিন্তু কল্পনা।


প্রশ্ন ৪) বড়দের জন্য লেখা গল্পগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়েছে, এর মধ্যে অপেক্ষা, শেষ চিঠি, সীমান্তের মতো গল্পের নাম উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু আপনার কাছ থেকে বড়দের লেখা কম পাই কেন?


উত্তর: যে গল্পগুলো আমি লিখি তা পুরোটাই সব বয়সের জন্য। বড়দের জন্য লিখলে সেটা শুধুমাত্র বড়দের কাছে পৌঁছাবে। তার থেকে আমি এমন গল্প লিখবো যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। যে যে কিশোর  পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশিত হয় সেগুলো সব বয়সের জন্য লেখা। তবে আমার ইচ্ছা আছে বড়দের জন্য লেখা। এবারে শারদীয়া নবকল্লোল আমি লিখেছি। এইরকম কিছু  ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছা রইল।

প্রশ্ন:৫)  আপনার গল্পগুলোয় রহস্য- ফ্যান্টাসি- রোমাঞ্চতে ভরপুর। রয়েছে বিজ্ঞান এবং অ্যাকশন। কল্পবিজ্ঞানের মোড়কে আপনার গল্পে মানবিকতার ছোঁয়া থাকে। বর্তমানে ডার্ক রহস্য, তন্ত্র-মন্ত্র গল্পের প্রাধান্য চলছে এতে কি মানুষের মনে নেগেটিভ প্রভাব বেশি পড়ছে আপনার কি মনে হয়?

উত্তর: অবশ্যই পড়ছে। তন্ত্র-মন্ত্র, ডার্ক লেখা লিখতে আমি পছন্দ করিনা। বর্তমানে আমাদের মানসিকতার মধ্যে অন্ধকার দিকটি বড় বেড়ে গেছে।সেই অংশটা কে ব্যবহার করে লিখে মানুষকে আরো কুসংস্কার বা অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা এক প্রকার অপবিজ্ঞান কে সমর্থন করাই হচ্ছে। এতে কিছু পাঠক হয়তো বাড়ছে কিন্তু এর বাইরে অন্য ধরনের লেখা লিখে পাঠক তৈরি করা অনেক বেশি শক্ত কাজ কিন্তু এর সার্থকতা অনেক গুণ বেশি।

প্রশ্ন:৬) পৃথিবী ছাড়ার দিন, নিশীথের টেনিস ম্যাচ, অরিজিতের একটি দিন গল্পগুলি কোন বইতে সংকলিত হয়েছে?

উত্তর: এটা খুব ভালো প্রশ্ন। পৃথিবী ছাড়ার দিন, অরিজিতের একটি দিন এই দুটি গল্প শিশু সাহিত্য সংসদ থেকে প্রকাশিত "রাতের ট্রেনের সঙ্গী" এই বইটিতে সংকলিত হয়েছে। 'নিশীথের টেনিস ম্যাচ' এই গল্পটি এখনো কোন সংকলনে বের হয়নি। এটি সম্ভবত দু'হাজার সালের শুরুর দিকে আনন্দমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। এটা আমার পছন্দের অন্যতম গল্প।

প্রশ্ন:৭) কিশোর সাহিত্য রচনা করা প্রাপ্তমনস্ক সাহিত্যের থেকে কঠিন এই কথাটা কি সত্য?

উত্তর:
হ্যাঁ, সার্থক কিশোরসাহিত্য লেখা অনেক বেশি শক্ত। নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা, কল্পনার প্রয়োজন। কিশোররা যারা নতুন পড়তে শুরু করেছে তাদেরকে পড়ার আগ্রহ জাগিয়ে দেয়ার জন্য যাতে তারা একবার পড়া শুরু করলে না শেষ করে উঠতে পারে সেই রকম লেখার প্রয়োজন। বড়দের সাহিত্য যেহেতু বাস্তবধর্মী হয় তাই সেটা খুব সহজে লেখা যায়। কিন্তু কল্পনা, ফ্যান্টাসি, ভাষার প্রয়োগ এগুলো কিশোর সাহিত্যে বেশি। সাহিত্যে ভাষার ব্যাপারটা যদিও বড়দের সাহিত্যে একটু বেশি আসে। কিন্তু এখানে ভাষা বলতে আমরা বুঝি পাঠকের মনের সাথে একটা সেতুবন্ধন তৈরি করা যেমন সত্যজিৎ রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, অনীশ দেব করেছেন এবং বর্তমানে হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত ও সৈকত মুখোপাধ্যায়ের লেখার মধ্যে সেটা দেখি, শব্দের মাধ্যমে পাঠকের সাথে একটা যোগাযোগ তৈরি করা। এটা বড়দের সাহিত্যের থেকে কিশোরসাহিত্য খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ কিশোররা  যদি একবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে পড়ার তাহলে তারা কিন্তু আর বইটি পড়বে না বন্ধ করে দেবে।

প্রশ্ন:৮) বর্তমান সময়ে আমরা কোভিড নাইনটিন নামক ভাইরাস এর সাথে লড়াই করছি, অনেকটা সময় আমরা গৃহবন্দি হয়েছিলাম গত বছরে। সেই সময় কি সাহিত্যচর্চা বেড়ে গেছিল বলে আপনার মনে হয়? এছাড়া এই সময় অনেক ই-বুক প্রকাশিত হয়েছে এবং ই-বুক জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে যা আগে আমরা ভাবতেই পারিনি।

উত্তর:
প্যানডেমিকের সময় অনেক কিছু নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়।এই সময়ে সাহিত্য চর্চা শুধু শুরু হয়ে গেছে তাই নয়, নতুন ভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছানোর পদ্ধতি এসেছে। আমরা তাই ই-বুক পেয়েছি। কিছু কিছু শারদীয়াও ই-বুক হিসেবে এসেছে। অনেক খারাপ বই শুধুমাত্র মার্কেটিং এর জন্যই পাঠকের কাছে পৌঁছে গেছে এই মার্কেটিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি অভিজ্ঞতা আমি শেয়ার করি এখানে। এক পাঠক 'সব লজিকের বাইরে'  বইটি কিনতে গিয়ে শুনেছে সেটি একটি উপন্যাস যদিও এটি একটি গল্প সংকলন। সে মিসগাইডেড হয়ে বইটি না  নিয়েই চলে এসেছে কারণ সে গল্প সংকলন ভেবেই কিনতে গেছিল। যেখানে আজ ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষ অনেক বেশি সঠিক খবর পাচ্ছে। তারা যেকোনো বই সম্বন্ধে সঠিক জেনে তারপর বইটি কিনতে যাচ্ছে।
 

কোভিডের সময় মানুষ গৃহবন্দী ছিল বটে কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে শুধু বই নয় অনেক ব্যাপারে সঠিক খবর টা পেয়েছেন। কলেজ স্ট্রিটে গিয়েও অনেক দোকানে পাঠকরা বিভ্রান্ত হয়েছেন। কোন এক দোকানে একজন জিজ্ঞাসা করেছেন কল্পবিজ্ঞানের উপর কি বই আছে? তৎক্ষণাৎ উত্তর এসেছে কল্পবিজ্ঞানের উপর তো কোন বই নেই।খুব ভালো মার্কেটিং এবং সঠিক খবরের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
 
প্রশ্ন:৯)  সংকেত রহস্য, মাঝে মাত্র 24 দিন, রহস্য যখন রক্তে ইত্যাদি আপনার জনপ্রিয় গল্পগুলো কি শুধুমাত্র  কিশোরদের জন্য না বড়রাও  পড়তে পারেন?


উত্তর:
এই গল্পগুলো সব রকম বয়সের জন্য। কিশোরসাহিত্য যারা লেখেন তার মধ্যে একটা বড় অংশ কিন্তু সবার জন্য । সার্থক কিশোরসাহিত্য অবশ্যই বড়-ছোট সবাইকে নিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের লেখা যেমন আমরা আজও ছোট-বড় সবাই পড়ি।
 

আমার গল্পগুলি যেহেতু কল্পবিজ্ঞান নির্ভরশীল। আর এর মধ্যে বেশ কয়েকটা লেয়ার আছে সেগুলো যারা পড়েছেন বিশেষ করে বড়রা তারা বুঝতে পারবেন কেন এই প্রসঙ্গ নিয়ে আসা হয়েছে। কিশোরদের জন্য লেখা গল্পগুলোতে খুব গভীরে যাই না কিন্তু বড়রা পড়লে তারা বুঝবেন, আরো বেশী ভালো লাগবে। যেমন "মাঝে মাত্র 24 দিন" এই গল্পটি হিউম্যান মাইগ্রেশন নিয়ে। এটিও বড়-ছোট সবাইকার জন্যই। যাদের পড়াশোনা আছে তারা যেই বয়সেরই হোক না কেন তারা উপভোগ করতে পারবেন।

প্রশ্ন:১০)বর্তমানে অনুবাদ সাহিত্য বেড়ে চলেছে। বিদেশি সাহিত্য পড়ে তার ছায়া অবলম্বনে অনেক লেখা তৈরি হচ্ছে। তাতে কি মৌলিক লেখা ধীরে ধীরে কি কমে আসছে? আপনার কি মনে হয়?


উত্তর: না, মৌলিক সাহিত্য এখনো লেখা হচ্ছে। যেমন আমার সব লেখাই মৌলিক। কিছু কিছু টপিক অবশ্য থাকে তা ইউনিভার্সাল। যেমন গ্লোবাল ওয়ার্মিং।এটা নিয়ে যে কেউ লিখতে পারে।
 

এখন হয়তো একটু বেশি বিদেশী সাহিত্যের প্রভাব পড়ছে লেখাতে তার কারণ বিদেশি সাহিত্য মানুষ ইন্টারনেটের সাহায্যে খুব সহজেই পড়ে নিতে পারছে।আমার 'ভয় নিচের অজানা ভাষা' গল্পটি একদম অন্যরকম।এরকম টপিকের ওপর লেখা কোথাও নেই। আর সবশেষে একটাই কথা বলার আছে যে মৌলিক লেখার উপরেই কিন্তু জোর দিতে হবে কারণ তার উপরে কিন্তু বাংলা সাহিত্যের মূল্যায়ন হবে।

প্রশ্ন:১১) আপনার লেখাগুলো ইংলিশে অনুবাদ করার কথা ভেবেছেন?



উত্তর:
আমার সেটা অবশ্য ইচ্ছা আছে, তবে ভালো ট্রান্সলেটর অবশ্য দরকার।এটার একটা বড় মার্কেট আছে। আমার ভৌতিক অলৌকিক বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ হবার কথা হয়েছিল প্রায় 4-5 বছর আগে। কিন্তু সেটা আমি করিনি শেষ পর্যন্ত কারণ ইংলিশটা খুব দুর্বল ছিল। ট্রানস্লেশন  ভালো না হলে সেটির মান কিন্তু খারাপ হয়ে যায়। আমি বিশ্বের সাতটি দেশে গেছি কাজের সূত্রে। সেখানে দেখেছি সারা বিশ্ব সাহিত্যে ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাব অনেক বেশি,কারণ  ইংরেজি ভাষাটা খুব সহজে সবার কাছে পৌঁছে যায় কিন্তু মানুষ অন্য ভাষার সাহিত্য সম্পর্কে জানতে চায় কারণ  সেই সাহিত্য থেকে সেই দেশের সময়কার কথা এবং সেই দেশের অনেক কিছু জানা যায়।যেমন আমাদের বাংলা সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদ হয় তাহলে আমাদের বাংলা এবং দেশের একটা ধারণা সারাদেশে, সারা পৃথিবীর মানুষ পাবে। আমার দুটো বই ইংলিশে ট্রান্সলেশন হয়েছে,তার মধ্যে একটি হলো, 'এই পৃথিবী 100 বছর পরে'( দিস ওয়ার্ল্ড আফটার হান্ড্রেড ইয়ার্স)| এখনো এই বইদুটি  ইন্ডিয়ান মার্কেটে খুব জনপ্রিয়।
 

ভালো ট্রান্সলেশনের অবশ্যই উদ্যোগ নেয়া দরকার। অনেক লেখাই কিন্তু ফেমাস হয়েছে প্রপার ট্রানস্লেশনের জন্য। যেমন, জুল ভার্নের লেখা প্রথম অনুবাদটি ভালো ছিল না পরের অনুবাদটি  ভালো  হওয়ার জন্যই তো জনপ্রিয় হয়েছে।

প্রশ্ন:১২) বর্তমানে আপনার যে বইটি বেরিয়েছে 'শুধু একটা রাত ',    এই বইটি ভয় কেন্দ্রিক। ভয় বলতে কি শুধুই বীভৎসতা বোঝায় নাকি একটা শিরশিরানি আতঙ্ক?
 

উত্তর: ভয় বলতে বীভৎসতা রক্তপাত আমি একদমই পছন্দ করিনা।দু'হাজার কুড়ির  বইমেলায় দেব সাহিত্য কুটির থেকে আমার যে বইটি বেরিয়েছে' সেরা ভয়' এছাড়া বর্তমানে পত্রভারতী থেকেও ভয়ের উপর বই বেরিয়েছে। সেখানে  কোনো বীভৎসতা নেই। আমার গল্প গুলির মধ্যে একটা শিরশিরানি ভয় আছে,একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।। এখানে উল্লেখ করতে হয় সত্যজিৎ রায়ের লেখা খগম এবং অনাথ বাবুর ভয় গল্প দুটির কথা।
 

একদম অন্যরকম দুটি ভয়ের গল্প যেটা পড়ে আমাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। নৃশংসতা গল্পে আনা যেতেই পারে কিন্তু দেখতে হবে তা সমাজে বা মানুষের মনে কোন নেগেটিভ ছাপ না ফেলে কারণ আমাদের সমাজের প্রতিও কর্তব্য রয়েছে।
 

          অভিজ্ঞানদার সাথে আমাদের এই কথোপকথন, আলাপ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি অনেকটা সময় আজ আমাদের সাথে কাটালেন,অনেক কিছু জানলাম। তিনি সবাইকার জন্য, তাঁর পাঠকদের জন্য  জানালেন অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। অনেক ধন্যবাদ অভিজ্ঞান দাদা। শ্রদ্ধা ও প্রণাম নেবেন।💐🙂🙏❤️

.........................

 

 

 


 

ভ্রমন - উখিমঠ দর্শন - ডঃ রবীন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক


উখিমঠ দর্শন 
ডঃ রবীন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক  
 
 
স্কন্দপুরাণের অন্তর্গত  কেদারখণ্ডকে মান্ধাতাক্ষেত্র বলা হয়। কথিত আছে সূর্যবংশীয় রাজা 'মান্ধাতা' সিদ্ধিলাভের জন্য একপায়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বহুবছর তপস্যার  পর স্বয়ং ভগবান কেদারেশ্বর শিব 'ওঙ্কারেশ্বর'রূপে তাকে দর্শন দেন। সেই থেকে বর্তমান "ওংকারেশ্বর " উখিমঠ  কেদারখন্ডের শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান রূপে পরিচিত হয়। এরপর ত্রেতা যুগে রাজা মান্ধাতার বংশজ রাজা অতি সুন্দর ভাবে ওংকারেশ্বর মন্দির নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে এখানে পঞ্চ কেদারের পূজা হয় বারোমাস।
রাজা মান্ধাতার বংশজ গাড়োয়াল রাজের সহযোগিতায়  এখানে শৈব ধর্মাবলম্বী সুযোগ্য  পুজারী দ্বারা পুজো আরম্ভ করেন। বিভিন্ন পুস্তকের হিসাব অনুযায়ী এর স্থাপনকাল অবশ্যই  দ্বাপর যুগের কোন এক সময় হয়েছিল।সেই অনুসারে কেদারনাথের পূজা প্রায় পাঁচহাজার বছর পূর্বে। এখানকার প্রথম রাউল বলা হয় 'শ্রী ভুকুন্ঠ ভৈরব'কে।

ভগবান শঙ্করকে কৈলাস পর্বত বলা হয়।এখন কথা হচ্ছে কৈলাস কোথায় অবস্থিত? কিছু মানুষের ধারণা   মানস সরোবরই হলো কৈলাস। এর মধ্যে কোন দ্বিধা  নেই। কিন্তু শুধু মানস সরোবরই কৈলাস নয়,কৈলাসের প্রারম্ভ মাত্র। মানস সরোবর থেকে প্রায় দেবপ্রয়াগ অর্থাৎ  সম্পূর্ণ কেদারখণ্ড এই কৈলাসের অন্তর্গত।বর্তমান  উখীমঠের  অন্তর্গত পঞ্চ কেদারের এক কেদার তুঙ্গনাথে বহু তীর্থ  যাত্রী যাতায়াত করেন। সেখান থেকে  প্রায় ২ কিমি দূরে অবস্থিত চন্দ্রশিলা।চন্দ্র শিলা থেকে কৈলাস সম্পূর্ণরূপে দর্শন করা যায়। গঙ্গোত্রী ও  যমুনোত্রী  এই দুই ধাম কৈলাসের অন্তর্গত। 

স্কন্দপুরাণের বর্ণনানুযায়ী কেদারখণ্ড সীমা হলো হরিদ্বারের উত্তর  থেকে
শিবালিক পর্বতমালা হতে মানস সরোবর  ৫০ যোজন লম্বা এবং তমসা থেকে বোদ্ধাঞ্চল পর্যন্ত ৩০যোজন চওড়া। বর্তমান নামের সাথে সব কিছুর নামের পরিবর্তন হয়েছে। তবে এটা সত্য যে উত্তরাখণ্ডের  পাঁচধাম অবশ্যই কেদারখন্ডে অবস্থিত এবং কৈলাসের অন্তর্গত।

 এক যোজন অর্থাৎ চার ক্রোশ বা ৮ মাইল। এই হিসাব অনুযায়ী  ক্লাসের ব্যাপ্তি চারশো মাইল লম্বা ও দুশো চল্লিশ  মাইল চওড়া।
উখীমঠে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে দৃষ্টিগোচর হয়  সার বেঁধে দৃশ্যমান কেদারনাথ,   মন্দাকিনী,সুমেরু,চোখাম্বা,ভাতৃঘুন্টা এছাড়া  বিভিন্ন  পাহাড়ে অবস্থিত দেওরিয়া তাল,বালেক,কালিমঠ,ত্রিযুগী নারায়ণ,গুপ্ত কাশী। এগুলি অপূর্ব  দর্শনীয় স্থান।

 
উখিমঠ যেতে হলে হাওড়া থেকে উপাসনা বা দুন এক্সপ্রেসে হরিদ্বার পৌঁছাতে হবে। স্টেশনের কাছে গিয়ে জি. এম. ও বাসস্ট্যান্ড থেকে  বাসে বা মোটর আড্ডা থেকে গাড়ি বুক করে  একে একে ঋষিকেশ-দেবপ্রয়াগ, শ্রীনগর, রুদ্রপ্রয়াগ, অগস্ত্য মুনি পার হয়ে পথে মন্দাকিনী আর অলকানন্দাকে সাথী করে  পৌঁছাতে হবে উখীমঠ। উখিমঠ ছোট গঞ্জ বেশী ভীড় নেই।   তাই আপাত নিরিবিলি আর নির্ঝঞ্ঝাট জায়গা। উখিমঠ থেকে ছোট রাস্তার নিকটে বহু প্রাচীন সেই ওংকারেশ্বর মন্দির। মন্দির  থেকে বরফে ঢাকা পাহাড় আর মন্দাকিনী নজরে আসে। শোনা যায় পুরাকালে  মহারাজ মান্ধাতা তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে এসে পৌঁছেছিলেন এই উখীমঠে,  তারপর সেখানে শুরু করেন শিবের নামগান ও কঠোর তপস্যা। তপস্যায় তুষ্ট মহাদেব মান্ধাতার প্রার্থনা  অনুসারে বর দেন। কথিত আছে উখিমঠ দর্শন করলেই সমস্ত কেদারখন্ড দর্শনের পুণ্য পাওয়া যাবে। কারণ এই উখিমঠেই বছরের অর্ধ সময় নিয়মানুবর্তে পূজা হয়ে থাকে। সাধারণভাবে  অক্ষয়তৃতীয়ার পূণ্যলগ্ন থেকে  ভাতৃদ্বিতীয়া পর্যন্ত পঞ্চকেদারের পূজা যথাস্থানে হয়।এরপর শীতে সমস্তকিছু বরফাচ্ছাদিত  হয়ে পড়লে পঞ্চ কেদারের পূজা সম্ভবপর হয় না, তখন সেই দেবতাদের পূজা উখিমঠে হয়ে থাকে। বর্ষা ছাড়া উখিমঠে যেকোনো সময় যাওয়া যায়।  শুধু মাত্র বর্ণনা দিয়ে উখিমঠ এর সৌন্দর্য কল্পনা করা যাবে না, দর্শন করে এর সৌন্দর্য অনুধাবন করতে হবে যা অবর্ণনীয় ও অকল্পনীয়। যারা ভগবানে বিশ্বাস করেন না তারাও প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হবেন কারণ প্রকৃতি দ্বারা এই সৌন্দর্য ভারতের সুইজারল্যান্ড বলে মনে হবে।
 
 
 





 
................................
 

 

কমিকস/কার্টুন -রণি বসু

কমিকস

 রণি  বসু  

 



 

 


 

কমিকস/কার্টুন - সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়

 কার্টুন 

সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়

 


 

 

 


 

কবিতা - এক বিকেলের গল্প - ভাস্কর শীল

এক বিকেলের গল্প

ভাস্কর শীল
 
 
এই যে তুমি দাঁড়িয়ে আছো 
লেপটে থাকা মেঘের পাহাড়
 অল্প কথার গল্পগুলো 
সার বেঁধেছে  রেলিং ঘিরে । 

বন্ধ খামের আবছায়াতে
ভালোবাসা একলা ভীষণ,
খাদের ধারে আটকে আছে
বিষন্নতার মিষ্টি প্রলেপ।

চিবুক ছুঁয়ে ভিজছে বাতাস
রঙিন ছাতা, স্বপ্নগুলো ,
চোখের পাতার দোসর যদি
ঠান্ডা লাগায় কি আসে যায়?

 শাড়ির আঁচল আঙ্গুল খোঁজে
  পলকা চুলের গন্ধ মেদুর,
 কোথাও আবার বৃষ্টি হলো
একটু যেন উতল বাতাস। 

চায়ের কাপের আদরগুলো
উষ্ণ ঠোঁটের নিষাদ রাগে,
একটু পরে সন্ধ্যা হবে
 তুমিও তো আজ প্রবাসিনী। 

একটু পরে সন্ধ্যা হবে 
আমিও কেমন  দোটানাতে, 
এই  যে তুমি  রেলিং ধরে,
 গল্পগুলো এক বিকেলের। 

**********
 

 
 
 

সময়ের বিপদ আপদ - সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী


 

সময়ের বিপদ আপদ
সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
 


- “তুমি এখনও ঐ আ -পদ বলে বিচ্ছিরি জিনিসটা ইউজ করছ মা?”
আমার কিশোরী মেয়ে মুনিয়ার মুখে এই কথা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম।
আমরা সবাই যেসব জিনিসগুলো একেবারে স্বাভাবিক ভাবে দৈনন্দিন ব্যবহারের
তালিকায় রাখি, ওর সেগুলো ঠিক পছন্দ হয় না, এটা জানতাম। ও যত বড় হচ্ছে তত এইসব পছন্দ অপছন্দগুলো প্রকাশ করছে, স্বাভাবিক। এই স্বভাবটা ওর বাবার থেকেই পেয়েছে, বিপ্লব, আমার প্রাক্তন স্বামী। দুনিয়ার এই যন্ত্রসভ্যতায়
ক্রমাগত বদলে যাওয়াকে ঠিক মেনে নিতে পারত না। মুনিয়া যেটা বলছে, সেই আ-পদ অর্থাৎ আণবিক পদার্থ রূপান্তরক যন্ত্রটা এখন ঘরে ঘরে। একটা ভীষণ
কার্যকরী পোর্টেবল কোয়ান্টাম ম্যাটার ট্রান্সমিশন ডিভাইস। আমি সেই কথাই
বলে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করি, “দেখ মুনিয়া এগুলো তো এখন সবাই ব্যবহার করে।
এত সস্তা আর উপযোগী। আ-পদ ছাড়া চলে নাকি?”
- “কিন্তু মা, তুমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছ! বুঝতে পার না? সব ঐটার জন্য।”
- “কী বলছিস এসব আবোলতাবোল?”
- “ঠিকই বলছি মা। আসলে তুমি তো অনেকদিন আয়না দেখো না, তাই হয়ত...”
- “আয়নার কী দরকার বল তো? ভি আই পি (ভার্চুয়াল ইমেজ প্রোভাইডার)
থাকতে ওসব অবসোলেট জিনিস কেউ রাখে এখন বাড়িতে? তুই যে কী করে এত
সেকেলে হলি!”
- “দরকার আছে মা। তোমার ঐ ছাতার মাথা ভি আই পি’তে সব মনগড়া
প্রতিবিম্ব দেখায়, চকচকে, ঝকঝকে, তুমি ঠিক যেমনটি দেখতে চাও, তাই
দেখায়। দাগ, ছোপ, কুঞ্চনের লেশ মুছে দিয়ে একশ’ শতাংশ নিখুঁত ছবি! বাস্তব
দেখলে যদি দুশ্চিন্তা করো, তাই।”
- “মুনিয়া! তোকে কে এসব জ্ঞান শেখায় বল তো? তুই কি ভালো হতে চাস না?
এসব উল্টোপাল্টা আচরণ করতে থাকলে তোকে কী করে আবার আমার কাছে
নিয়ে যাব বল তো? জানিসই তো ওয়েব লর্ডের নিয়ম কত কড়া!”
- “হুহ! রাখো তোমাদের ওয়েব লর্ড! একটা না মানুষ না যন্ত্র কিনা গোটা
দেশটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে আর তোমরা বুঝেও বুঝতে পারছ না কী সর্বনাশটা
ঘটছে তোমাদের অগোচরে!”

- “চুপ চুপ! মুনিয়া! প্লিজ এসব আর বলিস না। এই ডিটেনশন চেম্বার থেকেও
তাহলে হয়ত তোকে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করে দেবে। তোর বাবার জেদের
পরিণতি কী হয়েছিল মনে নেই?” আঁতকে উঠি মেয়ের কথা শুনে।
- “দিক গে। কেয়ার করি না। বাবা সাহসী ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ ছিল। আই অ্যাম প্রাউড অফ হিম। তা বল, তোমার নতুন বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে?” ওর
গলায় প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গের সুর।
- “অর্চি, সে ভালোই আছে, খুব ভালো ছেলে।” মেয়ের কাছে এর বেশি কিছু বলতে
সঙ্কোচ বোধ হয়। অর্চি সত্যিই খুব ভালো। কেয়ারিং, ডমিন্যান্ট নয়, সব
সময় আমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে, শরীরে, মনে। অ্যান্ড্রয়েড মানব বলেই
হয়ত, প্রখর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পন্ন। বিপ্লবের মত অমন
ঝগড়া করে না কক্ষনও। তবে মুনিয়া কোনদিনই ওকে পছন্দ করে না।
- “বেশ বেশ। তুমি ভালো থাকলেই আমিও হ্যাপি। কিন্তু প্লিজ মা, ঐ আ-পদ
টাকে বেশি ব্যবহার কোর না। গাড়ি আছে, স্কাইস্কুটি আছে, নিদেনপক্ষে
হাঁটাচলা করেও তো টুকটাক যাতায়াতগুলো সারতে পার মাঝেমাঝে!”
- “হাঁটা! তোর মাথাটা সত্যিই খারাপ হয়ে যাচ্ছে রে মা। সময়ের কত দাম জানিস
এখন? এই আ-পদে যেভাবে নিমেষের মধ্যে যে কোনও বস্তু এক স্থান থেকে
অন্যত্র স্থানান্তর করা যায়, সেটা হাঁটাচলা করে সম্ভব? আর গাড়ি,
স্কাইস্কুটি সবেতেই তো অনেক বেশি সময় লাগে।”
- “দেখো মা, তুমি হয় ব্যপারটা বুঝতে পারছ না, বা বুঝতে চাইছ না। সময় ওভাবে
বাঁচানো যায় না। ডাইমেনশনের সঙ্গে ছেলেখেলা করলে প্রকৃতি সেটা সহ্য
করে না। তুমি যে সময়টা বাঁচাচ্ছ বলে ভাবছ, সময় ঠিক সেটা তোমার জীবন
থেকে নিয়ে নিচ্ছে। প্রত্যেক নিমেষেই।”
- “উফ! কী সব...”
- “বলতে দাও মা। এটা রিলেটিভিটির সেই বিখ্যাত টুইন প্যারাডক্সের মত
খানিকটা। সেই যে দুই যমজ ভাই, যাদের একজন পৃথিবীতে রইল আর
আরেকজন প্রায় আলোর বেগে রকেটে চেপে মহাশূন্য ভ্রমণে গেল। এবার
যেহেতু আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে তীব্রবেগে চলমান
রেফারেন্স ফ্রেমে মানে রকেটে সময় একটু ধীরে বইবে, তাই কয়েক বছর পর
পৃথিবীতে ফেরার পর নিশ্চয়ই দেখা যাবে ওখানে থাকা যমজ ভাইটি একটু বেশি
বুড়ো হয়েছে আর রকেটে ঘোরা ভাই একটু বেশি জোয়ান। কিন্তু বাস্তবে
এমনটা হবে না, কারণ এখানেই একটা মজার প্যারাডক্স বা হেঁয়ালি রয়েছে।
কারণ আপেক্ষিকতা অনুসারেই চলমান রকেটের সাপেক্ষে পৃথিবীতে থাকা

ভাইটিও তীব্র বেগে গতিশীল। ফলে সময়কে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। বয়স
দু’জনেরই সমান বাড়বে!”
- “তার সঙ্গে আ-পদের কী সম্পর্ক? এত ভালো একটা যন্ত্র।“
- “সম্পর্ক তো আছেই। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ। তোমাদের ঐ যন্ত্রে
বস্তুগুলোকে প্রথমে অতিক্ষুদ্র কণিকাতে, তারপর শক্তিতে রূপান্তরিত
করে ফোটন মানে আলোর কণার বেগে এক জায়গা থেকে অভীষ্ট স্থানে পৌঁছে
দেয়, তারপর আবার শক্তি থেকে ভরে বা বস্তু অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। কিন্তু
শক্তি আর সময়ের অনিশ্চয়তার সূত্রটা মনে করো। যে কোনও একটা যত
সুনির্দিষ্ট হবে, আরেকটা তত এলোমেলো, অনির্দিষ্ট হবে। এখন এই যে
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময়ে তোমরা স্থানান্তর করছ, এতে তোমাদের কিছু না কিছু
শক্তিক্ষয় হচ্ছেই, তোমরা তিলে তিলে অকাল বার্ধক্যের দিকে যাচ্ছ মা!”
বলতে নেই, এমন ‘অবান্তর’ কথা শুনেও কেমন যেন শিউরে উঠলাম ভিতরে। সত্যি এমনটা হচ্ছে না তো? যদি একটা আয়না পাওয়া যেত কোথাও... বোধহয় একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম। মুনিয়ার ডাকে চমকে সম্বিৎ ফিরল।
- “কিছু খুঁজছ মা? এটা চলবে?”
মেয়ের হাতে একটা ছোট্ট হাত আয়না উঠে এসেছে। হাসিমুখে আমার দিকেই
এগিয়ে ধরেছে সেটা। কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা ধরতে গিয়ে অস্ফুটে বলতে যাই – “তুই আবার এসব জিনিস এখানে...”
পুরোটা বলতে পারি না। আয়নাটা হাতের মুঠো থেকে খসে পড়ে। ভাগ্যিস মুনিয়ার বিছানাতেই পড়ল, না হলে ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যেত। এ আমি কী দেখলাম! চোখের নিচে কালি, দু’পাশে চামড়া কুঁচকে গেছে। কপালে বলিরেখা! গালের তলায় ত্বক ঝুলে যাচ্ছে! এটা আমি? তাহলে, তাহলে এতদিন যে...
হঠাৎ চেম্বারের ভিতর লাল আলো জ্বলে উঠল। আর সেইসঙ্গে একটা বিচ্ছিরি
কানে তালা ধরানো কর্কশ আওয়াজ। অ্যালার্ম বাজছে। আমি দরজার দিকে
এগোনোর চেষ্টা করার আগেই সেটা খুলে গেল। ভিতরে ঢুকে এল দু’জন সশস্ত্র
যন্ত্রদারোগা, আর, আর... তাদের পিছনে, একী, এ যে অর্চি! ও কী করছে
এখানে? আমি বলার আগেই যেন টেলিপ্যাথিতে প্রশ্নটা বুঝে জবাব দিল ও -

- “তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি সোনা। এখানে আবহাওয়া ভালো না। তোমার শরীর খারাপ করবে।” ওর ঠোঁটে সেই পরিচিত হাসিটাই। কিন্তু এখন যেন সেটা বড় ক্রূর লাগছে।
- “কিন্তু, কিন্তু তুমি জানলে কীভাবে যে আমি...”
- “হা হা! কেন, জানতে পারি না?” অর্চির ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টি ঘুরে যায় আমার
মাথার হেলমেট আর হাতে লাগানো ছোট্ট ধাতব যন্ত্রাংশের দিকে। আ-পদ!
তাহলে এটা নজরদারিরও কাজে লাগে? মুনিয়ার কথা যদি আরেকটু আগে
শুনতাম। ইশ! দেরি হয়ে গেছে। আমাকে দু’পাশ থেকে জাপটে ধরে টেনেহিঁচড়ে
নিয়ে যাচ্ছে যন্ত্রদৈত্যেরা। হয়ত আমার বিগত কিছু সময়ের স্মৃতি মুছে দিয়ে
আবার ‘স্বাভাবিক’ করে দেবে... কিন্তু মুনিয়া? ওর কী হবে? ওকে কি আর
দেখতে পাব?
পিছনে দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটানা কর্কশ অ্যালার্মের আওয়াজটা চাপা
পড়ে যাচ্ছে তার পিছনে। লাল আলোটা আরও তীব্রতর হয়ে আমার চেতনাকে
আচ্ছন্ন করে ফেলার আগে কি তাও বহুদূর থেকে কোনও ‘মা’ বলে ডাক কানে এল আমার?
....................
Saptarshi Chatterjee
 
অলঙ্করণ :-  সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী