অনন্ত মাঠের পথ
অবিন সেন
নিভন্ত নাড়ার আগুন ঠেলে জেগে ওঠে কুয়াসার বাষ্প
আবার পৌষের মাঠে শীর্ণ হিম হাতের ভিড়
উষ্ণতা অনতিদূরে, গাছের মাথায় উঠে পড়া লাল বল,
শিশুর খেলনার মতো ক্রমশ বড় হয় দেখে,
পাখিদের দল ফিস ফিস করে ডানা ঝাপটে উড়ে যায়
যে দিকে আল পথ— যে দিকে হলুদ পাম্প-ঘর,
বগ বগ করে জল ঠেলে ভাসিয়ে দিচ্ছে মুথো-ঘাসের সহজপাঠ।
সারাদিন এমনি ভেসে যাবার খেলা, সুদীর্ঘ গন্তব্যের মতো
ফিস ফিস কথা বলে, যেন তারা পুরানো স্কুলবাড়ির দরজায়
কবেকার হেলঞ্চ—সহজ—
ওদিকে নদীর কাছে শাদা বক কাদা পা মুছে নেয় ঘাসে,
ঠিক তার সুমুখে পাষাণ ঘুম ভেঙে জেগে উঠে অহল্যার মতো,
আলো— বিনম্র মাঠের সবুজের দিকে বরাভয় তুলে দাঁড়ায়
এই মাঠ— এই অনন্ত বিস্তৃত মাঠ
লক্ষ্মীর পায়ের টোকায় যেন সহসা সচকিত হয় আবার
জেগে ওঠে হাতের মুদ্রায়, শৃঙ্খল ছিন্ন করা চাষির জীবন
ফুলে ওঠা শিরায় দম-টেনে শ্বাস নেবার মতো—
জোরে জোরে প্যাডেল ঘোরায়— আর প্যাডেল ঘোরায়—
পাগলের মতো ক্রিং ক্রিং করে ঘণ্টি বাজাতে বাজাতে ছুটে যায়,
যেতে চায়।
চাষি-বাসী মানুষের সাত পুরুষের অধীত অধিকার
জিতে নেবার সাহস আছে যার, তার কি ভয় মানায়?
অনন্ত শাদা শেফালী ফুলের ছায়ায় লক্ষ্মীর বরাভয়
তির তির করে কাঁপে মৃদু হাওয়ায়—
স্বগতোক্তির মতো মেঠো মানুষেরে ভিক্ষাহীন স্বাধীনতার কথা বলে,
কাদায়, জলে, রক্তে, ঘামে, গুলিতে, বন্দুকে,
এই মেঠো পথে।