দেবাজীব সরকার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দেবাজীব সরকার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

হারাধনবাবুর ভুঁড়ি কিসসা - দেবাজীব সরকার

 

হারাধনবাবুর ভুঁড়ি কিসসা
দেবাজীব সরকার


 

 হারাধনবাবুর ভুঁড়ি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। গত কয়েক মাসে যত পরিমাণ ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট শরীরের ভেতরে গেছে, তার বেশিরভাগই সঞ্চয় হয়েছে, খরচ করার সুযোগ পান নি। এই শেষ দশদিনে হারাধনবাবুর তিনখানা প্যান্টের কোমর তিন ইঞ্চি করে বাড়ানোর পর গিন্নির যত রাগ গিয়ে পড়ে হারাধনবাবুর ঐ নাদুস নুদুস ভুঁড়ির ওপর।
--- খালি পড়ে পড়ে ঘুমোবে আর ভুঁড়ি বাড়াবে, এ ছাড়া আর কোনো কাজ আছে তোমার? এই বলে দিলুম, আর কোনো প্যান্টের কোমর বাড়াতে পারবো না, যদি ভুঁড়ি না কমাও, তোমার একদিন কি আমার একদিন।

গিন্নির এই রণচন্ডী হুঙ্কারে ভালোমানুষ হারাধনবাবু বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে ভুঁড়ি কমানোর উপায় খুঁজতে শুরু করলেন।   বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এলো ভুঁড়ি কমানোর হাজার একটা উপায় । কেউ বললো, হাঁটতে শুরু করো, কেউবা বললো দৌড়ও। আবার এই বয়সে কেউ সাইকেল চালানোর বুদ্ধিও দিলো। কিন্তু হারাধনবাবুর কোনোটাই মনঃপূত হলো না, সাইকেল তো নয়ই। কারণ এই বয়সে নতুন করে সাইকেল চালানো শিখবেন, এটা ভাবতেই গায়ে জ্বর এলো। আসলে হারাধনবাবু একটু সুখী টাইপের মানুষ তো, ওনার আবার ভুঁড়ি কমানোর জন্য এত পরিশ্রম সহ্য হবে না। আর এটাও হারাধনবাবুর মাথায় এলো, এই বয়সে সাইকেল চালানো শিখলে পাড়ার লোকে আবার না মাথার ব্যামো ভেবে বসে। অনেক আলোচনার পর তারাপদবাবু বললেন, -"শোনো হে হারাধন, এতকিছু না ভেবে পাশের পাড়ার "সাধনা জিম ও যোগ ব্যায়াম কেন্দ্র" তে ভর্তি হয়ে যাও । যোগ ব্যায়ামে মন শান্তও হবে আর ভুঁড়িও কমবে।" প্রস্তাবটা হারাধনবাবুর মন্দ লাগলো না।
        ‌গুটি গুটি পায়ে চললেন যোগ ব্যায়াম কেন্দ্রে খোঁজ নিতে। হারাধনবাবুর প্রশ্নের উত্তরে কর্ণধার কমলাক্ষ পুততুন্ডি হেঁড়ে গলায় প্রথমেই জানিয়ে দিলেন ভর্তির সময় তিনশো টাকা আর মাসে দুশো টাকা।
হারাধনবাবুর পরের প্রশ্নটা ছিল, "আচ্ছা, পুততুন্ডিবাবু কতদিনে আমার ভুঁড়িটা তিন ইঞ্চি কমবে বলতে পারেন?" এই প্রশ্ন শোনার পর  কমলাক্ষবাবু মুখের যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন, তাতে হারাধনবাবুর এটুকু বোধগম্য হলো যে তিনি বেমক্কা একটা অর্থহীন প্রশ্ন করে ফেলেছেন।
নাক-মুখ কুঁচকে ভ্রু ওপরে তুলে চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে কমলাক্ষবাবু বললেন,  -"দেখুন, মশাই, আপনার ভুঁড়ি কতদিনে কত ইঞ্চি কমবে, সেটা আমি বলবো কি করে? আমি কি জ্যোতিষ চর্চা করতে বসে আছি এখানে? আপনার সাধনা আর ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করছে।"
হারাধনবাবু মনে মনে বললেন, টাকা নেবে তোমরা আর ভুঁড়ি কমার সময় আমার সাধনা আর ইচ্ছাশক্তি।
মুখে কিছু বলার অভিপ্রায় থাকলেও  কমলাক্ষবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলাই সমীচীন মনে করলেন।
--- তাহলে কবে থেকে আসবো?
হারাধনবাবুর প্রশ্ন শুনে কমলাক্ষবাবু    আবার ভ্রু কুঁচকে বললেন, -"যবে থেকে ভুঁড়ি কমানোর ইচ্ছে হবে। সঙ্গে টাকাটা অবশ্যই আনবেন ।
--- "হ্যাঁ, হ্যাঁ, টাকা তো আনবোই।" মনে মনে বললেন বিনা পয়সায় কি আর করতে দেবেন। "তাহলে, আগামী কাল থেকে আসবো" বলে হারাধনবাবু উঠে পড়লেন।
       হারাধনবাবু চিন্তা করতে লাগলেন, আগামী বেশ কিছুদিন এই কমলাক্ষবাবু নামক রসকষহীন খিঁটকেল মানুষটার সঙ্গে কিছুক্ষণ করে কাটাতে হবে, যদিও এটা ভেবে নিজেকে সান্তনা দিলেন যে গিন্নির মুখ ঝামটার থেকে এটা ঢের ভালো । বাড়ি ফিরে গিন্নিকে বললেন, -"শুনছো,যোগ ব্যায়াম কেন্দ্রে ভর্তি হবো বলে খোঁজ নিয়ে এলাম, কাল থেকে সকালে যেতে হবে।"
--- উফ্, এতদিনে একটা কাজের কাজ করলে।
        পরের দিন ভোরবেলা গিন্নি বহু কষ্টে ঠেলেঠুলে হারাধনবাবুকে ঘুম থেকে তুলে যোগ ব্যায়ামে পাঠালেন। প্রথম দিন কমলাক্ষবাবুর ছাত্র রণজয় বেশ কিছু যোগাসন দেখিয়ে বললো, -"এই আসনগুলো প্র্যাকটিস করুন।" বেশ কিছুক্ষণ নীরস বদনে চেষ্টা চরিত্র করার পরে যখন বুঝলেন এর থেকে ভালোভাবে তার পক্ষে আসন করা সম্ভব নয়, তখন রণে ভঙ্গ দিয়ে রণজয়কে বললেন, -"আজ হয়ে গেছে, আবার কালকে ।" রণজয় বললো, -"আপনি বাড়িতেও এই আসনগুলো প্র্যাকটিস করবেন কিন্তু ।"
হ্যাঁ, হ্যাঁ করতে করতে হারাধনবাবু বেরিয়ে এসে হাঁফ ছাড়লেন যেন একজন অনিচ্ছুক বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো হয়েছিল, কোনোভাবে স্কুল ছুটি হলেই বাঁচে। বাড়িতে যোগ ব্যায়াম  প্র্যাকটিসের নামগন্ধ করলেন না হারাধনবাবু। পরের দিন গিন্নি আবার ঠেলেঠুলে ব্যায়াম শিখতে পাঠালেন। কিন্তু হারাধনবাবু আজ বেশ দেরী করে এলেন। গিন্নি মনে মনে খুশী হলেন, যাক, ব্যায়ামে আগ্রহ বাড়ছে।
        হারাধনবাবু অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই কাজের মেয়ে শেফালী এসে কাজ করতে করতে গিন্নিকে জিজ্ঞেস করলো, -আচ্ছা, বৌদি, দাদাবাবু কি ঐ ফোঁস ফোঁস করতে যায়? হারাধনবাবুর বৌ রেগে গিয়ে বললো, -"কি যা তা বলছিস? ফোঁস ফোঁস করে মানে?"
--- আরে বৌদি, ঐ নাক দিয়ে আওয়াজ করে না, কি বলে বলো না...
--- উফ্, তোকে নিয়ে আর পারি না, ওটাকে যোগ ব্যায়াম বলে।
--- হ্যাঁ, ঐ যা হোক....
শেফালীর কথা শেষ হতে না দিয়েই হারাধনবাবুর বৌ শশব্যস্ত হয়ে জানতে চাইলেন, -"তুই কি করে জানলি রে?"
--- আরে বৌদি, আমি তো ঐ বাড়িতেও কাজ করি। মামাবাবু মানে বুড়োটা খুব খিঁচ খিঁচ করে, ছেড়েই দিতাম, কিন্তু মামীটা খুব ভালো, তাই ছাড়তে পারি না।
এদিকে হারাধনবাবু অফিসে বেশ গর্বের সঙ্গে জানালেন, তিনি যোগাসনে ভর্তি হয়েছেন ভুঁড়ি কমাবার অভিপ্রায়ে। সে কথা শোনামাত্র দত্তবাবু, পাকড়াশীবাবু, সেনদা মিলে এতসব যোগার নাম এবং তার উপকারের ফিরিস্তি দিলেন যে হারাধনবাবুর মনে হলো, এই দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে একজন করে যোগগুরু থাকা অসম্ভব নয় । তিনি সব আসনের নাম শোনার পর প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিলেন যোগব্যায়াম কেন্দ্রে তাকে কি কি আসন করতে বলেছিল। যদিও সব কিছু সামলে পরের দিন হারাধনবাবু নিজে থেকে অ্যালার্ম দিয়ে উঠে যোগ ব্যায়াম করতে চলে গেলেন। এত আগ্রহ দেখে হারাধনবাবুর বৌ কিছুটা শঙ্কিত আর আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। শেফালী কাজে আসার পর ওকে ডেকে বললেন, -অ্যাই শোন্, একটা কাজ করতে পারবি?"
--- কি কাজ বৌদি?
--- তুই তো বললি, ঐ বাড়িতে কাজ করিস, যে বাড়িতে দাদাবাবু ব্যায়াম শিখতে যায়।
--- হুমম, তো?
--- তুই শুধু খেয়াল রাখবি, দাদাবাবু ঠিক ঠাক ব্যায়াম করছে কিনা? এই খবরটুকু দিতে পারবি?
শেফালী তাচ্ছিল্যভরা উত্তর দিলো,- "ওহ্ বৌদি, এটা কোনো কাজ হলো?  লোকের ঘরের খবর আনার ব্যাপারে এই শেফালী এ পাড়ায় এক নম্বরে। এ তো শেফালীর বাঁয়ে হাত কা খেল্ ।
শেফালীর উত্তরে হারাধনবাবুর বৌ নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন, -"যাক্, বাঁচালি...."
কথা শেষ হবার আগেই শেফালী পা নাচাতে নাচাতে হাত পেতে বললো, -"কিন্তু বৌদি, হাতে কিছু না পড়লে তো মুখ দিয়ে কিছু বেরোবে না।"
হারাধনবাবুর বৌ রেগে গিয়ে বললেন, -"হতচ্ছাড়া, তোর সবেতেই খালি টাকা। ঠিক আছে, তোকে  প্রত্যেক দিন দশটাকা করে দেবো।"
--- বড্ড কম হয়ে গেল বৌদি, ঠিক আছে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নিলাম, কিন্তু যেদিন বেকিং নুজ দেবো, সেদিন বোনাস লাগবে কিন্তু । রাজী থাকলো বলো।
--- ঠিক আছে, হতভাগা।
--- পয়সা পেলে শেফালী ওসব গালাগালিতে কিছু মনে করে না।
শেফালীর গোয়েন্দাগিরি শুরু হয়ে গেলো। তার পরের দিন হারাধনবাবু যথারীতি সময় মেনে যোগব্যায়াম করতে ছুটলেন। শেফালী তো অপেক্ষায়, কখন হারাধনবাবু ঢুকবে? একটু পরে হারাধনবাবু ব্যায়াম করতে ঢুকলেন। শেফালী লক্ষ্য করলো, একটু বাদেই ওখানে জিম করতে ঢুকলো হারাধনবাবুর দুটো বাড়ির পরে থাকা শর্মিলা বৌদি। শেফালী তো অন্য কিছুর গন্ধ পেতে শুরু করেছে, ওড়নাটা মাথা দিয়ে জড়িয়ে ঘরে ঝাড়ু দিতে ঢুকলো। হারাধনবাবু তো গদগদ হয়ে শর্মিলা বৌদির সঙ্গে কথা বলেই চলেছে। শেফালী ঝাড়ু দিতে দিতে শুনতে পেলো শর্মিলা বৌদি বলছে, দাদা, কালকেই আপনাকে বললাম, বৌদির কিন্তু একদম ঠিক হয় নি, আপনাকে জোর করে ‌ভুঁড়ি কমানোর জন্য ব্যায়াম করতে পাঠানো।
--- কি আর করি বলুন, এমন চেঁচামেচি শুরু করলো, যে না এসে আর পারলাম না।
--- আপনাকে কিন্তু ভুঁড়িতে খুব হ্যান্ডসাম লাগে ।
হারাধনবাবু লাজুকভাবে বলে উঠলেন, -"কি যে বলেন।"
হঠাৎ শেফালী লা লা লা লা করে গান করতে করতে ঝাড়ু নিয়ে একদম হারাধনবাবুর কাছে এসে বললো, -ওহ্, দাদাবাবু, দেখি সরো তো একটু পরিষ্কার করে ঝাড়ু দিয়ে নিই।
হারাধনবাবু তো ভূত দেখার মতো চমকে উঠে বললেন,-" কি রে তুই?"
-- হুমম, আমি তো অনেকদিন থেকে এই বাড়িতে কাজ করি।
হারাধনবাবুর শেফালীকে দেখার পর আর মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না, সেই দেখে শর্মিলা বৌদি আবার মিষ্টি করে বলে উঠলেন, -"কি হলো, দাদা, আপনি চুপ করে গেলেন যে, আমার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে না বুঝি?"
হারাধনবাবুর বুক ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে, মুখে আসল কারণটাও বলতেও পারছেন না, তাও মুখে কষ্ট করে হাসি এনে বললেন, -"না না, তা কেন হবে? ভালোই লাগছে তো।"
হঠাৎ একটা কাশির আওয়াজ এলো, বুঝলেন শেফালী সব শুনেছে। আর সময় নষ্ট না করে হারাধনবাবু চুপচাপ লক্ষ্মী ছেলের মতো যোগাসন করতে বসলেন। প্রায় আধ ঘন্টা ব্যায়াম করার পর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে শেফালীকে এড়িয়ে হারাধনবাবু চুপি চুপি বেরোতে যাবেন, সেই সময়ে শর্মিলা বৌদি আবার অন্য ঘর থেকে বলে উঠলেন -"বাইই...দাদা, আবার কালকে দেখা হবে।"
হারাধনবাবুর তখন শেফালীর ধাক্কায় প্রাণ যাই যাই, এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচেন। কোনোরকমে "আমি যাই" বলে বেরিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললেন, -উফ্, কি বাঁচান, বেঁচেছি।"
হঠাৎ পেছন থেকে শেফালীর "দাদাবাবু" ডাকে রীতিমতো কেঁপে উঠলেন। কিন্তু মুখে একরাশ বিরক্তি দেখিয়ে বললেন, -"বল্, কি বলবি? আমার তাড়া আছে, অফিস যেতে হবে।"
--- হ্যাঁ, দাদাবাবু, আমারও তাড়া আছে, অত সময় নেই। বলছিলাম কি, আজকের এই ঘটনাগুলো বৌদি শুনলে মনে কতটা দুঃখ পাবে, তুমি ভেবে দেখেছো?
হারাধনবাবু মিষ্টি করে বললেন, -"তুই তো লক্ষ্মী মেয়ে, এগুলো কেউ বলে নাকি?"
--- হুমম, কিন্তু শেফালীর আবার হাতে কিছু না পড়লে যখন তখন মুখ খুলে যায় । ভেবে দেখো।
--- তুই মহা শয়তান তো। কত নিবি মুখ বন্ধ রাখতে।
--- দেখো, দাদাবাবু সোজা একটা হিসাব বলি, তুমি আরো বেশ কিছু দিন  এখানে আসবে, তুমি যতদিন এখানে আসবে, বিশ টাকা করে দেবে, আমার মুখ একদম আঠা দিয়ে বন্ধ করে রাখবো।
হারাধনবাবু মুখ ভেঙিয়ে বললেন, "টাকা গাছে ফলে বুঝি? খুব সস্তা, তাই না? তুই যা পারিস, বলে দে।" বলেই হন্ হন্ করে হাঁটা দিলেন।
পেছন থেকে শেফালী বলে উঠলো, -"যাই, তাহলে বৌদিকে খবরটা দিয়েই আসি।"
হারাধনবাবু আবার ঘুরে পেছনে দুʼপা এসে বললেন, -"আরে রাগ করছিস কেন? আমি তো মজা করছিলাম। তবে টাকাটা একটু কম কর। "
---ঠিক আছে, তোমার কথা ভেবে পাঁচ টাকা কমালাম, পনেরো টাকার কম হবে না, এই বলে দিলুম।
অগত্যা শেফালীর প্রস্তাবেই রাজী হয়ে বিরস বদনে বাড়ী ফিরলেন।
এইভাবেই বেশ কয়েকদিন চলতে থাকলো। হারাধনবাবু আর শর্মিলা বৌদির কথপোকথন সব জমা হতে থাকে শেফালীর হার্ড ডিস্কের মেমোরীতে আর দিন প্রতি পনেরো টাকায় সেটা ডিলিটের ব্যবস্থা করেছেন হারাধনবাবু।
বেশ কিছুদিন পরে হারাধনবাবুর গিন্নি শেফালীকে জিজ্ঞেস করলেন, -"কি রে, এতদিন হয়ে গেলো, কিছু খবর দিতে পারলি না?"
শেফালী মনে মনে চিন্তা করলো, দুʼদিক থেকেই যখন আমদানী হচ্ছে, তখন এই ব্যবসাটা বন্ধ করে লাভ নেই।
শেফালী বললো, "না গো বৌদি, দাদাবাবু খুব মন দিয়ে ঐসব করে, তবে মাঝে মাঝে কথাও বলে।"
--- সত্যি বলছিস তো, মন দিয়ে করে? হারাধনবাবুর গিন্নির কথায় শেফালী বললো, -"এই দিব্যি খেয়ে বলছি, শেফালী মিথ্যে কথা বলে না।"
--- ঠিক আছে, খবর পেলেই আমায় দিবি কিন্তু ।
এর মধ্যে মাস দুয়েক কেটে গেছে। শেফালীর তথাকথিত ব্যবসাও ভালো চলছে। হারাধনবাবুও এই দুʼমাসে তার গিন্নির নির্দেশ মতো তিন ইঞ্চি ভুঁড়িও কমিয়ে ফেলেছেন, অবশেষে একদিন হারাধনবাবু শর্মিলা বৌদির মায়া ত্যাগ করে যোগাসনে আসা বন্ধ করবেন ঠিক করে পুততুন্ডিবাবুকে বললেন, "ভাবছি আগামী কাল থেকে আর আসবো না।"
পুততুন্ডিবাবু স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বলে উঠলেন, -"আপনার যা ইচ্ছে, এতে আমার কি বলার আছে? ইচ্ছে হলে আসবেন নাহলে আসবেন না।"
শেফালী কি ভাবে যেন এই কথা শুনে ফেলায় ওর মাথায় চিন্তা এলো ওর এত সুন্দর সাধের ব্যবসার দফারফা হয়ে যাবে ।
শেফালী দুঃখ দুঃখ মুখ করে হারাধনবাবুকে বললো, -"এটা ঠিক করছো দাদাবাবু, গরীবের পেটে এভাবে নাথি মারছো? তুমি এখানে না এসে এইভাবে আমার আমদানী বন্ধ করে দিচ্ছো? ঠিক আছে, দাদাবাবু আমার যদি আবার সব কথা মনে পড়ে যায়, তাʼলে আমাকে দোষ দিও না। ভেবে দেখো।"
হারাধনবাবু দেখলেন এ তো মহা বিপদ। ইচ্ছে না থাকলেও তাই পরেরদিন থেকে আবার হারাধনবাবু আবার যোগাসন কেন্দ্রে হাজির হয়ে ব্যায়াম করা শুরু করলেন আর শেফালীর আমদানীও চলতে থাকলো দুʼতরফেই।
এদিকে যোগ ব্যায়ামের কল্যাণে বেশ কিছুদিন বাদে হারাধনবাবু মেপে দেখলেন তার ভুঁড়ি আরো দুʼইঞ্চি কমে গেছে, হারাধনবাবুর এখন গভীর চিন্তা, কি করে উনি ওনার প্যান্টগুলোকে সামলাবেন।
............................................
 
অলঙ্করণ :- সহিষ্ণু কুড়ি