প্রবন্ধ - আয়ুষ্কাল নির্ধারণের পারকিনসন- পীযুষ রঞ্জন ঘোষ

আয়ুষ্কাল নির্ধারণের পারকিনসন
পীযূষ রঞ্জন ঘোষ 
 

আপনি জানেন আপনি কতদিন বাঁচবেন?

হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন আপনি জানেন না
আমিও ঠিক সেই উত্তরটা দিয়েছিলাম 3 বছর আগে এক নৈশভোজে
অতর্কিত এই প্রশ্নটিই করেছিলেন আমার এই প্রোজেক্টের দিল্লি নিবাসী মনি জৈন, বিজনেস ক্লাব এর একটি টিম ডিনারে

পরবর্তী প্রশ্ন, কতদিন বাঁচবেন বলে আপনার ধারণা?
বড়জোর 70 ,এটাই সব বাঙালি স্ট্যান্ডার্ড উত্তর.
প্রত্যুত্তরে সেই উত্তর ভারতীয় মহিলা যে কথাটি বলেছিলেন তা আজও আমার কানে বাজে
বিশ্বাস করুন আপনার আয়ুষ্কাল সত্তরের আগেই স্তিমিত হবে আসলে আমাদের অবচেতন মনকে সেই পরিমানই সময় দেওয়া হয় যেটা আমরা বিশ্বাস করি সমস্যা আরো বাড়তে শুরু করে অবসর কালে যখন মনে করি আমাদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে

আমার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন তুমি এত জানলে কি করে?
সেই উত্তর আমার জীবন বদলে দিলো চিরতরে বদলে গেল আমার চিন্তন মন্থন জীবন দর্শন
উত্তরের সেদিন ভদ্রমহিলা এটি বলেছিলেন রিড দ্যা পাওয়ার অব ইউর সাবকনশাস মাইন্ড

বইটি যত পড়তে শুরু করে তথ্য আমাদের অবচেতন মনের অসীম ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে থাকি এবং সেই বই থেকে দুটো উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে না ধরলে হয়তো আপনারা বিশ্বাস করবেন না যে আমাদের আয়ুষ্কাল আমরা নির্ধারণ করি এবং অবচেতনে প্রোথিত করে রাখি

অবচেতন মন থেকে 75 শতাংশ লোক নেমে আসে আমাদের শরীরে নেতিবাচক ভাবনা মৃত্যুভয় রোগ হয় স্ট্রেস হিংসা মস্তিষ্কে বিক্রিয়া ঘটে তার প্রভাব নামিয়ে আনে আমাদের শরীরে এবং আমাদের নির্ধারিত সময়ে আমরা এগিয়ে যাই আমাদের পরিণতির দিকে
সোর্স চ্যাপটার টু: কিভাবে আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে?
কিভাবে অসৎ উপদেশ একজনকে মৃত্যুমুখী করল

লেখক এর এক আত্মীয় ভারতবর্ষে এসে জ্যোতিষের কাছে যান সেই জ্যোতিষী বলেন তার হৃদপিণ্ড সংকটজনক অবস্থায় এবং উনি এক পক্ষ কালের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করবেন
সেই আত্মীয় তার পরম আত্মীয়দের সেই ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে বলেন এবং তার মৃত্যুর পর দলিল তৈরি করে ফেলেন কারণ সেই জ্যোতিষের উপদেশ তার অবচেতন মনে পতিত হয়েছিল এবং তিনি সেই সময়ে কাল সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করেছিলেন
আশ্চর্যজনকভাবে পরবর্তী অমাবস্যায় হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে উনার মৃত্যু হয়
এবার দেখে নেওয়া যাক অবচেতন মনের পরিপ্রেক্ষিতে কি হয়ে থাকতে পারে? আমাদের বাস্তববাদী যুক্তিবাদী চেতন মন কনসাস মাইন্ড বিভিন্ন ব্যাখ্যা দ্বারা প্রভাবিত হয় যা বিশ্বাস করে সেই ইনপুট আমাদের অবচেতন মন বা সাবকনসাস মাইন্ড গ্রহণ করে কাজ করতে শুরু করে দেয়
লেখক বইটিতে বলেছেন তারপরও লোক প্রাপ্ত আত্মীয় যথেষ্ট স্বাস্থবান পরিশ্রমী এবং সুখী ছিলেন সেই জ্যোতিষ দর্শন তার বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে দেয় সেই জ্যোতিষ যে উপদেশ দেন তা তিনি গভীরভাবে স্বীকার করেন এবং বিশ্বাস করতে থাকেন এক পক্ষকালের মধ্যে উনি মারা যাবেন সেই সেই ব্যাপারে সকলকে বলতে থাকেন সব সময় ভাবতে থাকেন এমনকি উইল করে তার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেন অর্থাৎ উনি নিজেই উনার আয়ুষ্কাল এবং মৃত্যু ডেকে আনেন ক্রমাগত নেতিবাচক চিন্তাধারা শরীরে প্রবেশ করে হৃদরোগের মাধ্যমে

সেই জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী উনি যদি স্বীকার না করতেন, তবে তার শক্তিহীন হয়ে পড়তো উনি জানতেন আমাদের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে তাহলে সেই অসদ উপদেশ অবলীলায় অস্বীকার করতেন
যেভাবে একটি তীর বর্ম দ্বারা প্রতিহত হয় ঠিক সেইভাবে কোন অসৎ উপদেশ অবহেলা বা অবজ্ঞা দাঁড়া প্রশমিত হয় হাজার নয় যদি কায়মনোবাক্যে দৃঢ়চেতা হতেন জেতার যন্ত্র তার মস্তিষ্ক বলে চলে এবং অদ্বিতীয় তাঁর কোন হৃদ রোগ হয়নি তবে সেই ভবিষ্যদ্বাণীও প্রশমিত হয়ে যেত
আসলে প্রত্যেকটি মানুষ এই তার চিন্তন তার মন তার পছন্দ তার বিশ্বাস তার জীবনের পছন্দগুলি তার ভালোবাসা গুলি অবচেতনের নিহিত করে রাখে যেটি আমাদের ভবিষ্যতের পাথেয় হয়ে দাঁড়ায়

এই ঘটনা থেকে দুটি তথ্য পারকিনসন সূত্র কে প্রমাণ করেন
একপক্ষ কাল অর্থাৎ আমরা আমাদের সময়সীমা ঠিক করি
সুস্থ শরীর কেবলমাত্র নেতিবাচক চিন্তা গ্রহণে অসুস্থ হয়

অর্থাৎ কর্কট রোগ থেকে হূদরোগ সর্বদা আমাদের অবচেতন থেকে শরীরে নেমে আসে এবং নিয়ে যায় পরিণতির দিকে

এই অবচেতনে খারাপ দিক যেমন আছে তেমন ভাল দিকও আছে অত ভালো ভাবলে ভালো হয় আয়ুষ্কাল বাড়ে
ফিরে যায় সেই নৈশভোজের কথোপকথনে
আমি বললাম তাহলে দুরারোগ্য ব্যাধি হলেও আমরা আমাদের আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারি?
অবশ্যই পারেন আমাদের পরিবার হিসেবে উদাহরণ রয়েছে
মনি এই গল্পটি বলতে গিয়ে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গেল. বলতে লাগলো তার দাদু অর্থাৎ মায়ের বাবার কথা হঠাৎই প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ডাক্তার বলে দেয় সে কেবল কয়েক মাস বাঁচবে উনার যা বয়স হয়েছিল তাতে শরীরে কেমোথেরাপি নেওয়ার শক্তি ছিল না তাই তার পরিবার থেকে তাঁকে জানানো হয় তার অগ্নাশয় ইনফেকশন হয়েছে তাই ডায়েট রেস্ট্রিকশন এ থাকতে হবে সবাই আশা করেছিলেন যতদিন বাজবি হয়ে বেচেন ভদ্রলোক যথেষ্ট ইতিবাচক ছিলেন আনন্দ করতে ভালোবাসেন সঙ্গে সময় কাটাতে গল্প করতে ভালোবাসতেন
অবাক বিস্ময় উনি প্রায় 5 বছর বেঁচে ছিলেন বিনা চিকিৎসায় যখন মারা গেলেন তখন তার কারণ কর্কট রোগ নয় , উনার মেয়ের অকস্মাত্ পরলোকগমন একথা শুনে উনার স্ট্রোক হয় অর্থাৎ সেই ধাক্কা মস্তিষ্ক নিতে না পেরে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যায়

কিন্তু প্রাথমিকভাবে যদি উনি জানতেন যে ডাক্তাররা আয়ুষ্কাল কয়েক মাস নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাজার বছর বেঁচে থাকতে পারতেন?

হয়তো না উনি যদি দীর্ঘ চেতা হন না কেন এই নেতিবাচক চিন্তা গুলো তার মস্তিষ্কের সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে এবং অদ্ভুত ভাবে আমাদের ব্রেইনে নেগেটিভ প্যাটার্ন তৈরি করতে পারে


আমাদের অবচেতন মস্তিষ্ক অসীম ক্ষমতাশালী এবং যেকোন রকম কার্যকারিতা করতে পারে
সেটি একটি ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যায় এই এক্সপেরিমেন্ট এর সত্যতা আমার জানা নেই তবে ইন্টারনেটে এই ঘটনাটি বহুল প্রচলিত

এই পরীক্ষার পরে অবশ্যই আপনাদের মাথায় একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে অবচেতন মস্তিষ্ক যদি বিষাক্ত রাসায়নিক উৎপন্ন করতে পারে তবে অমৃত উৎপাদন করতে পারে
তাহলে আমরা কেন অমর হইনা

আসলে সম্পূর্ণতা যেমন একটি মিথ তেমন অমরত্ব একটি মিথ
অর্থাৎ আমাদের অবচেতন যে বিশ্বাস করবে তাই হবে এবং যত সময়কাল ধার্য করবে সেই সময়কালেই হবে
যেমন অনন্তকাল চলা একটি টেস্ট ম্যাচ এ একজন দক্ষ ইনফর্ম ব্যাটসম্যান চিরকাল অপরাজিত থাকতে পারে না তেমন একটি অত্যন্ত ইতিবাচক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মস্তিষ্কে অমৃত প্রসব করেও চিরকাল থাকতে পারেন না
বৈজ্ঞানিক জন্মদিনে তার বিরুদ্ধে বলেছেন আমাদের মস্তিষ্ক সদা পরিবর্তনশীল আপনার ব্রেইন এই প্রবন্ধটি পড়ার আগে এবং পরে এক স্টরে থাকবে না ঠিক যেমন সদা পরিবর্তনশীল জীবনের চড়াই-উৎরাই এক সর্বদা থাকেনা

কথা স্বার্থে যদি ধরে নেওয়া যায় মস্তিষ্কের চরম উচ্চতায় আপনার অবচেতন অমৃত নিঃসৃত করে সেটা ডোপামিন অক্সিটোসিনের অধিক ক্ষরণ হতে পারে এবং সেটা ক্রমাগত কয়েক দিন কয়েক মাস হতে পারে তাতে আপনার শরীর বহুগুণে উন্নত হয়ে বহু রোগ নিরাময় হতে পারে উদাহরণ সূত্রে নিজের জীবনের কথা বলি মাইন্ড মাইন্ড পাওয়ার শুরু হওয়ার পূর্বে আমার জীবন বেস্ট নেতিবাচক শরীরে অত্যধিক কোলেস্টেরল ব্লাড প্রেসার 150 100 একটি বাংলা টেলিভিশনে দৈনিক মাইন্ড পাওয়ার সু করাকালীন আমাকে নানাবিধ পজিটিভ পড়াশোনাতে এবং চর্চাতে নিমজ্জিত থাকতে হয় নিজেকে প্রস্তুত করতে নানা প্রকার দৃশ্যায়ন করতে করতে মস্তিষ্ক অত্যন্ত উন্নত চলে যেতে থাকে নিজের মধ্যে এক পবিত্র অসীম ক্ষমতা অনুভূত হয় এবং আশ্চর্যের বিষয় আমার পেশার কোলেস্টেরল সম্পূর্ণভাবে নরমাল হয়ে যায়

অর্থাৎ এই পজিটিভিটি তে থাকাকালীন নিঃসৃত হরমোন কে অমৃত বলা চলে যদি এই পজিটিভিটি অনন্তকাল ধরে রাখতে পারি তবে অবশ্যই অনন্তকাল নীরব থাকতে পারবো আমি দৃঢ় ভাবে বলতে পারি অতীতে মুনি-ঋষিরা কয়েক শতাব্দি বেঁচে থাকার যে মন্ত্র তাই ইতিবাচক স্তরে নিহিত কিন্তু ফিরে আসি বাস্তব জীবনের কথা আমাদের জীবনের 78% চিন্তা ধারা নেতিবাচক অর্থাৎ আপনি ব্যাট করছে যেখানে বেশিরভাগ সাংঘাতিক কঠিন জীবনকে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তুলনা করা হতো অতিসরলীকরণ হয়ে গেল জীবনযুদ্ধ আরো ভয়ানক যেখানে নানা পরিস্থিতি নানাভাবে আমাদের নেতিবাচক কন্ডিশনিং করে ফেলে অর্থাৎ কেবল এক সময়ে একটি বল আমাদের খেলতে হয় না নানান রকম ইনপুট আমাদের অবচেতন কে প্রভাবিত করতে থাকে সেই প্রভাব নানান রকমের বিশ্বাসের জন্ম দেয় বিশ্বাস থেকে তৈরি হয় স্নায়ু সন্নিধি প্যাটার্ন অর্থাৎ সাইন্যাপস প্যাটার্ন সেই প্যাটার্ন দেহে হরমোন ক্ষরণ এবং নানাবিধ ইনফর্মেশন পাঠাতে থাকে

এবার ধরে নিন আমরা বিশ্বাস করে বসে আছি যে আমাদের 100 বছরের বেশি বেঁচে থাকা সম্ভব নয় দেখবেন গোষ্ঠীগতভাবে সমগ্র সমাজ সম্ভবত সকল ব্যক্তিবর্গ অবশ্যই কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া যায় সেটি প্রমাণ করে 100 বছরের আগেই মৃত্যুবরণ করেন এরকম বিশ্বাস তৈরি হয় নানা ভাবে হয়তো আমরা দূষিত বায়ু রাসায়নিক যুক্ত খাদ্য জীবনধারণের স্ট্রেসকে অবচেতনে ভাবতে ভাবতে শরীরকে কষ্ট দিয়ে কর্কট রোগের জন্মদিন হয়তোবা সামলাতে থেকে ভাবতে শুরু করি এই রকম হয়ে যাবে এবং সেই স্নায়ু সন্নিধি তৈরি করে ফেলি
 
.........................