অণুগল্প - সাদা মন- রাখী আঢ্য

সাদা মন 

রাখী আঢ্য


-"মন কেমন করে না? কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলি?" কোল্ড কফির  স্ট্রয়ে একটা সিপ দিয়ে মধুজা সায়নীর দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল। সায়নী  ভ্রু কুঁচকে বললো, "বিদ্রুপ করছিস?  আর যদি করেও থাকিস তবে বলবো ঠিকই করছিস। বিদ্রুপের যোগ্য কাজই করেছি আমি।" মধুজা সায়নীর এইভাবে কথা বলা ধরনের সাথে বহু বছর আগে থেকেই পরিচিত। এরপরেই ঠোঁট ফুলে আর দু চোখ জলে ভর্তি হয়ে আসবে। নয় নয় করে আজ প্রায় দশ বছর বয়স হতে চললো ওদের বন্ধুত্বের। কলেজে ঢুকে আলাপ। তারপর আজ এই ত্রিশের কোঠায় পৌঁছেও সমানভাবে অটুট আছে তাদের বন্ধুত্ব।
মধুজা তাড়াতাড়ি  বলে উঠলো, "আরে বিদ্রুপ  করতে যাব কেন?  তোকে তো সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করলাম তোর কি মন কেমন করে না সায়নের জন্য?"
সানি ঠোঁটটা টিপে কফিশপের উপরের প্রাচীনতম ঘূর্ণায়মান ফ্যান টা দেখতে দেখতে বলল, " মন তো অনেক কিছুর জন্যই কেমন করে। রোজ সকালে ফোনে 'সুপ্রভাত' মেসেজ, সারা দিনে দশ- বারোবার ফোন করে কি করেছে তার রুটিন বলা। আমাকে যে ভালোবাসে তা বার কুড়ি বলা সবকিছুর জন্যই তো মনটা বড় কেমন করে। হঠাৎ করে মুছে নিঃশেষ হয়ে গেল যে এইসব জীবন থেকে, সে ধাক্কা সামলে তো দুটো বছর পার করে দিলাম। তা বলে কি মন কেমন করাও মুছে গেছে?"
 
মধুজার চোখটা জ্বালা করে উঠলো। ও বুঝতে পেরেছে সায়নীর কোথায় লেগেছে। কিন্তু ও আঘাত করতে চায়নি সেটা বোঝাবার জন্য বলে উঠলো," সায়নী আর কিছু অর্ডার করবো?"
মনে হলো সায়নী অনেক দূরে বসে আছে। বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে বললো," তোরা জানিস যে আমি সায়নকে ছেড়ে দিয়েছি। না,ভুল জানিস। সায়ন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। কারণটা লজ্জায় কাউকে বলতে পারিনি। এমনকি তোকেও না।  চল একবার আমার সাথে ওয়াশরুমে।" এই বলে মধুজার হাত ধরে টান দিলো।
মধুজা  দ্বিরুত্তি না করে সায়নীর পিছু নিলো।

ওয়াশরুমে ঢুকে টি-শার্ট টা সায়নী খুলতেই মধুজা অবাক!!!
-" এ তো!!!!"
-" তুই যা ভাবছিস, তাই।আমার বুকের মাঝখানে প্রথমে একটা ছোট বিন্দু  হিসেবেই দেখা দিয়েছিল আর আজ সেটা বেড়ে গেছে এতটা। আর কদিন পর গলার কাছে চলে আসবে, তখন তা লুকোতে পারবো না। তখন হয়তো লোকে ঘৃণায়  মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যাবে। যেভাবে সায়ন চলে গেছে..." শেষের কয়েকটা কথা সায়নী বলতে পারলো না চোখের জল লোকাতে গিয়ে।
মধুজা সায়নীর চোখের জল মুছিয়ে টিশার্টটা পরিয়ে দিতে দিতে বলল," যে তোকে এই সামান্য কারণের জন্য ছেড়ে চলে গেছে তার ভালোবাসা খাঁটি ছিল না। আজ তোর অন্যকিছু হলেও এভাবেই ছেড়ে চলে যেত। শ্বেতী তোর দেহে হয়েছে কিন্তু সায়নের যে মনটাই শ্বেতীতে পরিপূর্ণ।  কষ্ট পাস না। মনে হয় যা হয়েছে ভালই হয়েছে।"
-" না,কষ্টটা অন্য জায়গায়। আমি সায়নের হাতে একটা ছোট বিন্দু দেখেছিলাম শেষবার। ভাবছি এতদিনে তা হয়তো অনেক বেড়ে গেছে। এবার ও হয়তো আমার যন্ত্রণা উপলব্ধি করবে।"

...................................... 





Comments (2)

Loading... Logging you in...
  • Logged in as
অসাধারণ লাগলো দিদি 👌❤️
AKASH DUTTA's avatar

AKASH DUTTA · 182 weeks ago

দারুণ লাগলো দিদি 👌👌👌

Post a new comment

Comments by