সুদীপ পাঠক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সুদীপ পাঠক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

একমেবাদ্বিতীয়ম্ - সুদীপ পাঠক

 একমেবাদ্বিতীয়ম্ 

সুদীপ পাঠক 
 

 
পিকু বলল দুঃখ করিস না রে কাজল , মা বাবা কারোরই চিরকাল থাকে না । আমাকেই দেখ না সবাই থেকেও নেই , সবার মাঝে আমি একা । যে ভাবে দাদু চলে গেলেন ; আজও ভাবলে বুকটা মুচড়ে ওঠে । দাদুই তো ছিলেন আমার একমাত্র সাথী । বাবা মা যে যার নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত , নিঃসঙ্গতাই আমার আজন্মের বন্ধু । তাইতো ছবি আঁকাটাকে সিরিয়াসলি আঁকড়ে ধরেছি । ছবির দুনিয়া বর্ণময় অন্তহীন । কাজলকে সান্ত্বনা দেবার জন্যই এতো কথার জাল বোনা । কিন্তু পিকু নিজেই যেনো কিছুটা মনমরা হয়ে পড়ল । সেটা নজর এড়ায়নি জটায়ুর । কেল্লার পাঁচিলে পা ঝুলিয়ে বসে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সংক্রান্ত একটা পেপারব্যাক বই পড়ছিলেন । ওনার একান্ত বাসনা এবার বেটিং , ম্যাচ ফিক্সিং ইত্যাদি ক্রিকেটের অন্ধকারময় দিকের ওপর আলোকপাত করুক তাঁর হিরো প্রখর রুদ্র । এটাই এবছরের পুজোর উপন্যাসের প্লট হবে । রুদ্রমশাইকে একেবারে বিশ্বকাপের ময়দানের মাঝে নিয়ে গিয়ে ফেলার ইচ্ছা তাঁর । নামকরণও সেরে ফেলেছেন 'ক্রিকেটের কাঁকড়া' ।  

এবার ঝপ্ করে একলাফে পাঁচিল থেকে নেমে হাত পা এমন ঝাড়া দিলেন যেনো এতক্ষন বিশ্বশ্রী গুনময় বাগচীর তত্ত্বাবধানে দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবার তালিম নিচ্ছিলেন । গলা ঝেড়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন 
-- হাইলি সাস্পিসাস্ !  
আমি অবাক হয়ে তাকাতেই বললেন 
-- তোমার দাদার এহেন বিলম্বের কারণ কিছু অনুমান করতে পারছ কি ভাই তপেশ ? 
বললাম 
-- ব্যস্ত হবেন না । ধৈর্য ধরুন আসবে যখন বলেছে তখন ঠিকই হাজির হবে । একটু দেরী হচ্ছে এই যা । কাজটা তো আর মোটেই সহজ নয় সময় লাগবে ।
-- সে তো একশোবার । দায়িত্ব আর কাকে বলে , একেবারে গুরুদায়িত্ব । গুরুদেবের নোবেল চুরির রহস্যের কিনারা করা । এ কি আর চাট্টিখানি কথা ! সে পারলে একমাত্র ফেলুবাবুই পারবেন । তবে চিন্তাটা কি জানো ভায়া ; মাঝে অনেক গুলো বছর পার গেছে কিনা , তথ্য প্রমাণ সব লোপাট হয়ে গিয়ে থাকলে? 
কথা অসমাপ্ত থেকে গেলো , আশ্বস্ত করার জন্য বললাম  
-- আপনি শুনে নিশ্চিন্ত হবেন এবার ফেলুদার সঙ্গে জ্ঞানরত্ন , জ্ঞানচূড়ামনি , গবেষক গবুচন্দ্র আছেন । তিনি এমন একটা মায়াজাল সৃষ্টির যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যাতে করে ফেলে আসা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের চলমান ছবি দেখা যাবে । অনেকটা সিসি টিভি ফুটেজের মতন । 
-- বা বা ব্বা বা , তাই নাকি ? ইউরেকা ! 
এই বলে লালমোহনবাবু আবার একবার হাততালি দিয়ে একপাক নেচে নিলেন । তারপর থমকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন 
-- তা গবেষকের হঠাৎ এতো সুমতি হলো যে বড় ? তিনি তো হীরার লোভে অসৎ কার্যে মদত দেবার জন্য এক সময় ভয়ঙ্কর যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন ! 
আমি বললাম  
-- স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন না বলেই তো আপনি এখনো এতো পিছিয়ে আছেন । নেট সার্ফ করলেই জানতে পারতেন গবেষক গোবুচন্দ্র আর আগের মানুষটি নেই । উদয়ন পণ্ডিত তাঁকে আমূল পাল্টে দিয়েছেন । তাঁর একাধিক আবিষ্কার দ্বারা সাধারণ মানুষ আজ বিশেষ ভাবে উপকৃত হচ্ছে । 
-- ঠিক কথা , সত্যি এবার দেখছি আপ টু ডেট না হয়ে উপায় নেই । 
বললেন লালমোহনবাবু । আবার খুশির মেজাজে যোগ করলেন 
-- উদয়ন পণ্ডিতের কথায় মনে পড়ে গেল  তপেশ , আমাদের কজলবাবু তো এবার পণ্ডিত মশাইয়ের পাঠশালায় পড়তে যাবে তাই না ! কত নতুন নতুন বন্ধু হবে । আর পণ্ডিতমশাই যে কত রকমের গল্প জানেন ; জাতককথা , পঞ্চতন্ত্র , হিতোপদেশ সে সব বলে শেষ করার নয় । তবে কাজলবাবু আপাতত আমি তোমার জন্য দুটো মজার বই এনেছি এই দেখো ...
এই বলে কাঁধের বিখ্যাত ঝোলার মধ্যে হাত ঢোকালেন । আমি প্রমাদ গুনলাম , লালমোহনবাবু কি এবার নিজের বই উপহার দেবেন ? তাও আবার কাজলকে ! তবে আমাকে সম্পুর্ন অবাক করে দিয়ে তাঁর হাতে উঠে এলো টিনটিন এর দুটো বই । ' চন্দ্রলোকে অভিযান '  আর ' চাঁদে টিনটিন ' ।
একেই বলে কাকতালীয় ! একটু আগেই মহাকাশ অভিযান নিয়ে কথা হচ্ছিল । লালমোহনবাবু নিশ্চই গুনাক্ষরেও জানতেন না যে এমন প্রসঙ্গ উত্থাপিত হবে । মনে মনে ভাবলাম ঠিকই তো , কাজলের বাবা এক সময় গ্লোবের দিকে তাকিয়ে মানস ভ্রমণ করতো গোটা পৃথিবী । এখন কাজল যদি টিনটিনের মতন মহাকর্ষের বন্ধন ছিন্ন করে এই গ্রহ থেকে যায় গ্রহান্তরে তবে কি সাংঘাতিক কান্ডটাই না হবে ? কে বলতে পারে কাজল একদিন হয়ে উঠবে জগৎবিখ্যাত নভোশ্চর ! ভাবতে বেশ ভালো লাগে ।  রঙিন বই দুটো পেয়ে কাজলের শিশু মুখটা ঠিক যেনো ভোরের আলোর মতন উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে । পিকুও সাগ্রহে ঝুঁকে পড়েছে । বাচ্ছা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক কমিক স্ট্রিপের আকর্ষণ সকলের কাছেই অপ্রতিরোধ্য । আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ! আমি সেই আনন্দে আরও একটু মাত্রা যোগ করার জন্য বললাম 
-- আচ্ছা লালমোহনবাবু আপনি তো নতুন বইয়ের ইলাস্ট্রেশন কে করবে সে ব্যাপারে চিন্তায় ছিলেন তাই না ? পিকুকেই তো দিতে পারেন দায়িত্বটা । ও এখন ছবিটা বেশ ভালোই আঁকছে । 
জটায়ু যেনো হাতে চাঁদ পেয়েছেন এমন ভাব করে বললেন 
-- তুমি আঁকবে পিকু ? সত্যি তুমি ইন্টারেস্টেড ? 
পিকু আর কি বলবে ! ওর মনের অবস্থা আমি সহজেই অনুমান করতে পারছি । খুশিতে আত্মহারা , অপ্রতিভ ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে বলল 
-- এতো মেঘ না চাইতে জল ! জটায়ুর উপন্যাসের ইলাস্ট্রেশন করবো আমি ? ভাবতেই পারছি না ! 

দেখতে দেখতে বেলা অনেক গড়ালো , দিনের আলো পড়ে আসছে অথচ মুকুলের কোনো পাত্তা নেই । পূর্বজন্মের রাজপ্রদাদটা একবার ঘুরে দেখবার খুব সাধ । গতবারে হৈ হুল্লোড়ের মধ্যে সময় পায়নি তাই । আমি বাইনোকুলারটা তুলে যেই না কেল্লার পাকদন্ডীতে চোখ রেখেছি অমনি দেখি কিনা মুকুল আসছে । কিন্তু তার সঙ্গে আরও দুটো বাচ্ছা ! ওরা কে ? দু পা এগোতেই বুঝলাম আরে এতো শ্রীমান রুক্মিণী কুমার ওরফে রুকু । আর অন্য জন সুধীন্দ্র বোসের পুত্র সাত্যকি । লালমোহনবাবু সাংঘাতিক অবাক । জিজ্ঞাসা না করে পারলেন না 
-- কি ব্যাপার তোমরা এখানে ! জানলে কি করে ? 
রুকু স্মার্টলি উত্তর দিলো 
-- ক্যাপ্টেন স্পার্কের কাছে কোনো কিছুই অজানা থাকে না । বাড়ীতে বসে ভিডিও গেম খেলে বোর ফিল করছিলাম । তাই সাত্যকি দার সঙ্গে চলে এলাম । 
সাত্যকি বলল  
-- হ্যাঁ ঠিক তাই । ছোট্ দাদু আমাকে বলে গেছেন কূপ মন্ডুক যেনো কখনো না হই । তাই যখনই জানতে পারলাম যে তোমরা সোনার কেল্লা রি-ভিজিট করছো  তখন আর থাকতে পারলাম না । ব্যাস চলে এলাম । 
-- কিন্তু ফেলুদা কৈ ? 
মুকুল এতক্ষন চুপ করে ছিল । থাকতে না পেরে প্রশ্নটা করেই ফেলল । 
 " এই এসে পড়লেন বলে "  
কে ? কে বলল কথাটা ? যেনো দৈববাণী হলো ! আর সেই সঙ্গে ঝুপ্পুস করে একটা শব্দ । সবাই এক ঝটকায় ঘাড় ঘোরাতেই চক্ষু একেবারে ছানাবড়া । আরে এযে দেখি স্বয়ং গুপীদা আর বাঘাদা ! পরণে সেই চিরাচরিত ছিট্ কাপড়ের ফতুয়া আর ধুতি । সবাই কে অবাক হতে দেখে গুপিদা বলল
-- ফ্যাল ফ্যাল ওমন কইরা চেয়ে দ্যাখো কি ? আমাদের তো আর অগ্রিম টিকিট কাটনের বালাই নাই গো ! 
দু পায়ে দিয়ে নাগরা 
যাও তুমি যাবে আগ্রা , 
সোনার কেল্লা হীরার কেল্লা 
মেলাই পথে পাবে ।
-- বাহ্ অপূর্ব ছন্দ 
লালমোহনবাবু চিৎকার করে উঠলেন ।

সবাই আনন্দে মেতে উঠেছে , গল্পে মশগুল ওদিকে দূর দিগন্তে দিনমণি অস্তাচলে যাচ্ছেন । আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে । লংশটে সিল্যুয়েট ফিগারে দেখলাম ফেলুদা উঠে আসছে , সঙ্গে গবেষক । কিন্তু পিছনে একদল মানুষ হেঁটে আসছেন ! ওরা কারা ? কাছে আসতে ফেলুদা পরিচয় করলো । এঁরা সবাই স্থানীয় বাসিন্দা । সোনার কেল্লাকে কেন্দ্র করে একটা ট্যুরিষ্ট স্পট গড়ে উঠেছে । এঁরা সবাই সেটার অংশীদার । অনেকেরই কিউরিও শপ্ আছে । কেউ বা গাইডের কাজ করে । অটো কিম্বা টোটো চালায় কেউ । ওদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই । একজন প্রৌঢ় বললেন
-- আগে এখানে কেউ আসতো না জানেন দাদা । মানিকবাবু আমাদের রুজি রুটির ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছেন । উনি সাত রাজার ধন এক মানিক । 

নিজে থেকে যখন বলেছে না তখন নিশ্চিত বুঝেছি কেসটা নিয়ে ফেলুদা বেশ চিন্তায় আছে । ব্যস্ত হয়ে লাভ নেই , পরে সময় মতন ঠিক জানা যাবে । অনেকক্ষন থেকেই দেখছিলাম ফেলুদা একজন জাপানী প্রৌঢ়া ও এক ফরাসী যুবকের সঙ্গে কথা বলে চলেছে । বহু ভাষাবিদ হওয়ার এই এক সুবিধা । পরিচয় পর্বে জানতে পারলাম জাপানী ভদ্রমহিলা মিস বেনিবারা টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভের সহ অধিকর্তা । সম্পর্কে আকিরা কুরোশাওয়ার আত্মীয়া । ঐ ফরাসী ছেলেটি সে দেশের একটি ফিল্ম স্কুলের পরিচালনা বিভাগের ছাত্র । এই প্রজন্মের মানুষ কিন্তু ইন্ডিয়ান সিনেমার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের যোগসূত্র মিস্টার 'রের ছবির মাধ্যমেই তৈরী হয়েছে বলে জানালো । এ্যালেয়েন্ড্রো নামের আদ্যন্ত এই নব্য যুবাটি স্রষ্ঠা ও সৃষ্টি দুজনেরই প্রগাঢ় গুণমুগ্ধ । ফেলুদা এবং গুগাবাবা উভয়েরই পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয়েছে । সেই উপলক্ষ্যে আমাদের সকলকে নিয়ে  একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করার একান্ত বাসনা তার । তাই ছুটে এসেছে সুদূর রাজস্থানের ঊষর ভূমিতে ।

স্থানীয়রা মুকুলের হাতে একটা বড়সড় উপহারের মোড়ক তুলে দিলো । তারা  মনে করে মুকুল তাদেরই একজন । আমাদের সকলের জন্যই অবশ্য কিছু না কিছু উপহার ছিল । এবার মিস বেনিবারাকে গবেষক তাঁর নিজের হাতে তৈরী সুগন্ধি কাগজের ফুলের তোড়া দিয়ে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানালেন । তাঁকে অনুরোধ করা হলো আজকের সন্ধ্যার প্রারম্ভিক কথাবার্তা শুরু করার জন্য । তিনি একটা উঁচু পাথরের ওপর উঠে সকলের উদ্যেশ্যে সম্ভাষণ জানিয়ে বললেন 
-- বন্ধুরা এ যেনো এক অলৌকিক সমাপতন । এই স্থান যেনো এক অকল্পনীয় রাঁ দে ভ্যু ! যে চরিত্রদের আমি  চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি আপনারাও সবাই দেখতে পাচ্ছেন তারা যেনো এক অভূতপূর্ব অনসম্বল কাস্ট । এদের সকলের স্রষ্ঠা পূর্ব থেকে পশ্চিম আজও সমানভাবে জনপ্রিয় , সমাদৃত ও প্রাসঙ্গিক । তাঁকে নিয়ে চর্চা ও গবেষণা অব্যাহত রয়েছে । আর মাত্র একটি বছর পর ২০২১ সালের ২রা মে তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করবেন । আশা করা যায় আপনারা যথাযোগ্য মর্যাদায় তা উদযাপন করবেন । ওনার সৃষ্ট চরিত্রদের মতন উনি হলেন এক এবং অদ্বিতীয় অর্থাৎ একমেবাদ্বিতীয়ম্ ।  

সবাই সোল্লাসে করতালি দিয়ে উঠলো । 

এদিকে লালমোহনবাবুকে ভুরু কুঁচকে থাকতে দেখে ফেলুদা বলল

-- কি হলো জটায়ু জী কনফিউসড মনে হচ্ছে

-- মোক্ষম ধরেছেন মশাই ! আপনার দৃষ্টি শুধু প্রখরই নয় রুদ্র তেজের মতন অন্তরভেদীও বটে ।

-- অর্থাৎ দুয়ে মিলে প্রখর রুদ্র তাইতো

-- হেঁ হেঁ হেঁ কি যে বলেন ফেলুবাবু আর লজ্জা দেবেন না । 

-- এবার আসল কথাটা ঝেড়ে কাসুন । 

-- না মানে হয়েছে কি জানেন অনেকক্ষন থেকেই একটা চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করছে !

-- এবং সেটা কি শুনি

-- আমরা সবাই শুধুই এক একটা চরিত্র নাকি জলজ্যান্ত মানুষ ?

-- আপনার কি মনে হয়

-- আমার তো মনে হয় দুটোই ! 

-- ব্যাস তবে আর কি ল্যাঠা চুকে গেলো। শাবাশ আপনাকে অভিনন্দন জানাই । 

-- কেনো বলুন তো

-- এই প্রথম চট জলদি কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত  নিতে পারেছেন তাই ।

-- ভাবনার দিশা সঠিক বলছেন ?

-- আলবৎ ! নিঃসন্দেহে । 

-- কি রকম শুনি ?

-- কোনো মানুষ যদি দীর্ঘ দিন কোনো চরিত্রের মধ্যে বসবাস করে ঐ চরিত্রটা হয়ে জীবন যাপন করে তবে তার আর আলাদা কোন সত্ত্বা থাকে না । এক সময় সে সেটাই হয়ে যায় । আবার ধরুন পাঠক বা দর্শকের হৃদয়ে যদি কোনো চরিত্র দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বা তার বেশী সময় স্থান দখল করে বসে থাকে তখন সেও তাদেরই একজন হয়ে ওঠে। 

-- বাহ্ জটিল সমস্যার কি সহজ সরল সমাধান ! এই কারণেই তো আপনাকে এ্যাডমায়ার করি । তবে আরো একটি খিচখিচানি থেকেই যাচ্ছে যে ! 

-- আরো ! বলেন কি ! 

-- আমাদের সকলের স্রষ্ঠা একজন ঠিক কথা । কিন্তু আমরা তো একই সময়ের মানুষ নই ! অথচ দেখুন এখানে আমরা দিব্যি একসঙ্গে হেসে খেলে ঘুরে বেড়িচ্ছি ! আশ্চর্য তাই না

-- ব্যাপারটা কালানুক্রমিক হচ্ছে না তাই তো

-- এক্সজেক্টলি সো । 

-- এ ব্যাপারে লীলু পিসির একটা বক্তব্য উল্লেখ করা আশু প্রয়োজন । 

-- হু ইজ লীলু পিসি

-- শ্রীমতী লীলা মজুমদার । 

-- ওরে বাবা ! উনি তো প্রাতঃস্মরণীয়া । আপনি ওনাকে পিসি বলে ডাকেন

-- হোয়াই নট ? আমার ক্রিয়েটার আর আমি কি আলাদা ? আমি যে তাঁরই অল্টার ইগো । 

-- বেশ বেশ তা কি বলেছেন আপনার লীলু পিসি

-- বিশেষ প্রণিধান যোগ্য , মন দিয়ে শুনুন । ওনার মতে যা ঘটেছে বা ঘটে গেছে যা ঘটছে বা ঘটে চলেছে যা ঘটবে কিম্বা ঘটতে পারে এই সব নিয়েই তো নতুন থেকে নতুনতর কিছু সৃষ্টি হবে । যা কিছু চরম অবিশ্বাস্য তাকে পরম বিশ্বাস যোগ্যতায় পরিবেশন করাই তো স্রষ্ঠার কাজ । কল্পনার বিস্তার যে অসীম অনন্ত ! তার ওপর কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া যে অসম্ভব । 

-- চমৎকার ! 

-- ব্যাস আর কোনো কথা নয় 

চিৎকার করে উঠল বাঘাদা ! 

-- এবার শুরু হোক আমাদের বর্ষপূর্তি উৎসব ।

ফেলুদা বলল 

-- ভর্সাপূর্তি নয়তো বাঘামশাই

বাঘাদা জিভ  কেটে বলল

-- মাফ কইরা দ্যান মিত্তিরমশাই । সেবার বড় ভুল হয়ে গেসলো । নিজ গুনে ক্ষমা করে দ্যান । 

সাত্যকি আর রুকু একসঙ্গে বলে উঠলো। "লেটস্ সেলিব্রেট"।


" গুড় গুড় গুড় গুড় , 
ডুডুম ডুডুম ডুম ডুম " 
গোধূলি লগ্নে বেজে উঠলো বাঘা বাইনের ঢোলবাদ্য । সঙ্গে গুপী গাইনের সুমধুর সঙ্গীত । তবে সে গানবাজনা যে ঠিক কি  রকম হলো তার বর্ণনা দেবার কোনো উপায় আমার নেই । কারণটা তো সকলেরই জানা , নতুন করে আর কি বলব ?
.................................... 
অলঙ্করণ :- প্রিয়াঙ্কা সরকার