ভ্রমণ কাহিনী - ঐশ্বর্য্য কর্মকার





নিঃশব্দে র শব্দ শুনতে কালিমপং, লাভা 
ঐশ্বর্য্য কর্মকার  
 
 
ঘরবন্দি থেকে বেশ কয়েকটা ট্রাভেল ব্লগ পড়েছিলাম।  ওই সব দেখে মাথায় ভূত চাপলো , আর যাই করিনা কেন , লকডাউন উঠলে আমি কালিমপং যাবোই। পাইন বোনের মাঝে কাঠের তৈরী ছোট্ট দোতলা বাড়িতে থাকবো।  যেখানে থাকবে একটা সুন্দর কাঠের সিঁড়ি।  বারান্দায় থাকবে রঙ্গিন পাহাড়ি ফুলের গাছ। না , যেতেই হবে। 
যথাসময়ে বেরিয়ে পড়লাম।  আমি একাই রওনা দিলাম একটা টুরিস্ট গ্রুপের সাথে।  
 নিউজলপাইগুঁড়ি স্টেশনে পৌঁছে একটু চা জলখাবার খেয়ে গাড়িতে যাত্রা শুরু।  সকাল হতেই শহরে চায়ের দোকানের উনুনে ধোয়া উঠতে শুরু করেছে।  এসব দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম সেবক করোনেশন ব্রিজের কাছে ।  স্থানীয় লোকজন  " বাগপুল " নামে ডাকে।
পৌঁছে গেলাম কালিমপং।  হোটেলে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।  চলে গেলাম নিরিবিলি পাহাড়ি পথে।  বিকেলে যাওয়া হলো দুরপিন মনাস্টারিতে ।  এখানে তিব্বত থেকে আনা দলাই লামার কিছু পুরোনো পুঁথি পত্র দেখতে পেলাম।  হোটেলে ফিরে একটু সন্ধ্যের দিকে বেরিয়ে পড়লাম স্থানীয় বাজারে।  
কালিমপং থেকে সকাল সকাল পরের দিন আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম।  পথে পাহাড়ি কুকুরের ছুটোছুটি , মানুষজনের দিন শুরুর দৃশ্য দেখতে দেখতে গাড়ি লোকালয় ছেড়ে এসে পড়লো পাহাড়ি পথে।  পথের একধারে উঁচু পাহাড় , অন্য ধারে ঘন জঙ্গল।  পৌঁছে গেলাম ৫৬০০ ফুট উচ্চতায়।  এখানে একটা সুন্দর পার্ক আছে।  থাকার জন্য একটি হোটেল ও আছে।  চারি ধারে তিস্তা নদী , দূর পিন পাহাড় , সবই দেখা যাই।  জায়গার নাম ডেলো কালিমপং।  
সামান্য একটু খাওয়া  দাওয়া করে গেলাম পাইন ভিউ নার্সারী তে।  এখানে প্রায় হাজার দেড়েক ক্যাকটাস আছে।  বিচিত্র তাদের চেহারা। ঠিক মতো দেখতে গেলে অনেক দেরি  হয়ে যেত , তাই কোনোরকম করে চোখ বুলিয়ে চলে আসতে হলো।  
গাড়িতে করে এবার আমার গেলাম রিশপ এ।  রিশপ প্রায় ৮৫০০ ফুট উচ্চতায়  অবস্থিত এক পাহাড়ি জনপথ। পাইন , বার্চ এর অরণ্য এই অঞ্চলকে আরো সুন্দর করেছে। পাখির ডাক আর অরণ্যের হাতছানি মনকে নিয়ে যায় অজানা একদেশে।  থাকবার ব্যবস্থা ও খুব সুন্দর।  ঠিক যেমন ভেবেছিলাম , সেই রকম একদম।  
আবার গাড়ি চলে লাভা মনাস্টরির দিকে।  প্রায় ৭৭০০ ফুট উঁচু।  পথে লোকজনের সংখ্যা ও কম।  ধ্যানমগ্ন কম বয়সীদের দেখে মনটা খুব শান্ত হয়ে গেলো ।  লাভার হোটেল এ রাতে থাকার ব্যবস্থা হল।  
সন্ধ্যার দিকে আমরা কয়েকজন মিলে বের হলাম।  অন্ধকারে দূরের বাড়িগুলো মিটমিট করছে।  বাজারের দিকে এগোলাম।  সঙ্গীরা উলের চাদর , টুপি কিনলেন। সামান্য কেনাকাটা করে ফেরা হয়।  রাত যত বাড়তে থাকে  , মনে হতে থাকে এই আজকেই শেষ দিন।  কাল বাক্স গুছিয়ে আবার কর্মব্যস্ত জীবনে ফেরার প্রস্তুতি নিতে হবে।চা বাগান দেখতে দেখতে পা বাড়াই কলকাতার দিকে।  পিছনে ফেলে আসি পাহাড় জঙ্গল।   

সমাপ্ত ~