অণুগল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অণুগল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

অণুগল্প - সাদা মন- রাখী আঢ্য

সাদা মন 

রাখী আঢ্য


-"মন কেমন করে না? কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলি?" কোল্ড কফির  স্ট্রয়ে একটা সিপ দিয়ে মধুজা সায়নীর দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল। সায়নী  ভ্রু কুঁচকে বললো, "বিদ্রুপ করছিস?  আর যদি করেও থাকিস তবে বলবো ঠিকই করছিস। বিদ্রুপের যোগ্য কাজই করেছি আমি।" মধুজা সায়নীর এইভাবে কথা বলা ধরনের সাথে বহু বছর আগে থেকেই পরিচিত। এরপরেই ঠোঁট ফুলে আর দু চোখ জলে ভর্তি হয়ে আসবে। নয় নয় করে আজ প্রায় দশ বছর বয়স হতে চললো ওদের বন্ধুত্বের। কলেজে ঢুকে আলাপ। তারপর আজ এই ত্রিশের কোঠায় পৌঁছেও সমানভাবে অটুট আছে তাদের বন্ধুত্ব।
মধুজা তাড়াতাড়ি  বলে উঠলো, "আরে বিদ্রুপ  করতে যাব কেন?  তোকে তো সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করলাম তোর কি মন কেমন করে না সায়নের জন্য?"
সানি ঠোঁটটা টিপে কফিশপের উপরের প্রাচীনতম ঘূর্ণায়মান ফ্যান টা দেখতে দেখতে বলল, " মন তো অনেক কিছুর জন্যই কেমন করে। রোজ সকালে ফোনে 'সুপ্রভাত' মেসেজ, সারা দিনে দশ- বারোবার ফোন করে কি করেছে তার রুটিন বলা। আমাকে যে ভালোবাসে তা বার কুড়ি বলা সবকিছুর জন্যই তো মনটা বড় কেমন করে। হঠাৎ করে মুছে নিঃশেষ হয়ে গেল যে এইসব জীবন থেকে, সে ধাক্কা সামলে তো দুটো বছর পার করে দিলাম। তা বলে কি মন কেমন করাও মুছে গেছে?"
 
মধুজার চোখটা জ্বালা করে উঠলো। ও বুঝতে পেরেছে সায়নীর কোথায় লেগেছে। কিন্তু ও আঘাত করতে চায়নি সেটা বোঝাবার জন্য বলে উঠলো," সায়নী আর কিছু অর্ডার করবো?"
মনে হলো সায়নী অনেক দূরে বসে আছে। বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে বললো," তোরা জানিস যে আমি সায়নকে ছেড়ে দিয়েছি। না,ভুল জানিস। সায়ন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। কারণটা লজ্জায় কাউকে বলতে পারিনি। এমনকি তোকেও না।  চল একবার আমার সাথে ওয়াশরুমে।" এই বলে মধুজার হাত ধরে টান দিলো।
মধুজা  দ্বিরুত্তি না করে সায়নীর পিছু নিলো।

ওয়াশরুমে ঢুকে টি-শার্ট টা সায়নী খুলতেই মধুজা অবাক!!!
-" এ তো!!!!"
-" তুই যা ভাবছিস, তাই।আমার বুকের মাঝখানে প্রথমে একটা ছোট বিন্দু  হিসেবেই দেখা দিয়েছিল আর আজ সেটা বেড়ে গেছে এতটা। আর কদিন পর গলার কাছে চলে আসবে, তখন তা লুকোতে পারবো না। তখন হয়তো লোকে ঘৃণায়  মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যাবে। যেভাবে সায়ন চলে গেছে..." শেষের কয়েকটা কথা সায়নী বলতে পারলো না চোখের জল লোকাতে গিয়ে।
মধুজা সায়নীর চোখের জল মুছিয়ে টিশার্টটা পরিয়ে দিতে দিতে বলল," যে তোকে এই সামান্য কারণের জন্য ছেড়ে চলে গেছে তার ভালোবাসা খাঁটি ছিল না। আজ তোর অন্যকিছু হলেও এভাবেই ছেড়ে চলে যেত। শ্বেতী তোর দেহে হয়েছে কিন্তু সায়নের যে মনটাই শ্বেতীতে পরিপূর্ণ।  কষ্ট পাস না। মনে হয় যা হয়েছে ভালই হয়েছে।"
-" না,কষ্টটা অন্য জায়গায়। আমি সায়নের হাতে একটা ছোট বিন্দু দেখেছিলাম শেষবার। ভাবছি এতদিনে তা হয়তো অনেক বেড়ে গেছে। এবার ও হয়তো আমার যন্ত্রণা উপলব্ধি করবে।"

...................................... 





অণুগল্প- আয়না - অনামিকা বসু

আয়না

অনামিকা বসু 

 



অফিস থেকে বেড়িয়েছি সেই ছটায়, এখনও জামজটে সিআর অ্যাভিনিউতেই আটকে আছি।মাথাটা পুরো ধরে আছে।স্টার্ট বন্ধ করে একটু অন্যমনস্ক হয়েছি..জানলার কাঁচে ঠকঠক্।

'কি রে সুমায়া খাতুন,অনেকদিন পর..কি খবর?..কি এনেছিস আজ ?'

ময়লা উসকোখুসকো চেহারায় উজ্জ্বল দুটি চোখ আর মায়াময় একটা মুখ। না আজ আর কিছু সাথে আনেনি।গাড়ি পোছা সবকটা বিক্রি হয়ে গেছে।ওকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম একগোছা গোলাপ ছিল ওর হাতে।তারপর থেকেই মাঝেসাঝে এই ক্রসিং এ দাঁড়ালেই কোথা থেকে চলে আসে জানলায়। সবসময়ই যে কিছু বেচতে আসে তা নয়।


মাইকের দৌরাত্ম্যে কোন কথা ঠিকমত শোনা যাচ্ছে না।হঠাৎ কি খেয়াল হল সিগনাল গ্রিন হতেই ওকে বললাম এই ফুটপাথটায় দাঁড়া, আমি আসছি।পুজোর সময় পার্কিং এর খুব সমস্যা, অনেকটা এগিয়ে গাড়িটা রাখতে হল।

'কি খাবি বল' একটা স্ন্যাকসবারের বেঞ্চে ওকে বসালাম। লাজুক হেসে বলল..

'চাউমিন।'

ওকে তৃপ্তিকরে খেতে দেখে মনটা প্রসন্নতায় ভরে গেল।ওর হাতে কিছু টাকা গুজে দিলাম..

'সাবধানে রাখ।কি করবি টাকাটা দিয়ে?'

'মাকে দেব।'

'এ বাবা! মাকে দিবি কেন?এটা তোর,যা ইচ্ছা করবি,যা ইচ্ছা খাবি।'

'না,মাকে দিলে পুজোর কদিন রোজ চুলা জ্বলবে, আমরা সবাই খেতে পারবো।'

কথাটা যেন থাপ্পরের মত পড়ল আমার মুখে। কি স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক আমি! সাত/আট বছরের শিশুটা এই মহৎ মহান আমিকে আয়না দেখালো। লজ্জায় মাথানত করলাম..

'বেশ।'


পুজোর সাজে সেজেছে গোটা শহর,রাস্তায় নেমেছে মানুষের ঢল।কিনে দেওয়া ব্যাগ ভর্তি চিপস্ ,চকলেট আর ফ্রুটি হাতে ঝুলিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাস্তা পার হয়ে আস্তে আস্তে ভিড়ে মিশে গেল সুমায়া।ফোনটা ভাইব্রেট করছে,অনুজার কল।অনেকটা দেরী হয়ে গেল।আজ আমারও পরিবার নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেড়োনোর কথা।

আজ ষষ্ঠী.. সন্তান অধিষ্ঠাত্রী, সন্তানদাত্রী এবং রক্ষাকর্ত্রী দেবীর পুজো।


............................


 

 

 

 

অণুগল্প - অন্য বসন্ত - সংকলিতা তাম্বুলী চন্দ্র


অন্য বসন্ত

সংকলিতা তাম্বুলী চন্দ্র


 

 

আজ প্রায় বছর তিনেক পরে, সাসপেনশন পিরিয়ড কাটিয়ে দিল্লীর কমান্ড হেডকোয়ার্টার্স অফিসে জয়েন করছে শুভ্র; এক সিনিয়র দাদার বদান্যতায়। এবারে আর ফাইটার প্লেনে ফ্লাইট গানার হিসেবে কাজ করবেনা সে। গ্রাউন্ড অফিসার হিসেবে অফিসে বসেই কাজ করবে তরুণ এই অফিসার, শুভ্র ব্যানার্জী। সারা অফিস আজ রং-বেরংয়ের বেলুন দিয়ে সাজানো। এটা তো তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য হতে পারেনা। ডেস্কে রাখা ডেট ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ পড়তেই লাল কালির তারিখের দিকে তাকিয়ে তার মনে পড়ে গেলো যে আগামী পরশু হোলি - রংয়ের উৎসব। না চাইতেও চোখের সামনে ভেসে উঠলো তিন বছর আগের সেই দিনটি, যেইদিন তাকে তার কর্তব্যের  কাছে হয়তো মস্ত এক অপরাধী করে তুলেছিল !!

 

তিন বছর আগে --

 

"অ্যাটেনশন জেড্-এ-জিরো-নাইন পাইলট ক্যাপ্টেন শুভ্র ব্যানার্জি, দিস ইজ কমান্ডার ইন চার্জ অনলদীপ সিং। অব্জেক্ট কনফার্মড আ্যট ৩x.xxx২১ ক্রস ৭x.xxx৮০। লোকেট অব্জেক্ট অ্যান্ড সেট ফায়ার ইন থার্টিন সেকেন্ডস।"

 

"কপি স্যার।" - হেডকোয়াটার্স থেকে অর্ডার পাওয়ার পরে, রিপ্লাই দিয়েছিল শুভ্র।

 

এরপরই চেনা লোকেশনের উপর অব্জেক্ট সেট করেছিল শুভ্র। ডিসপ্লে বোর্ডে কাউন্টডাউন শেষ হওয়ার আগেই ট্রিগারে হাত চলে গিয়েছিল তার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে, ১ নং এর জায়গায় ৩ নং ট্রিগার প্রেস করে ফেলেছিল সে সেদিন। আসলে, নিজের মনকে সে মানাতে পারেনি, কয়েকটা জঙ্গীকে মারার জন্য বাচ্চাদের একটা গোটা স্কুলের উপর বোম চার্জ করতে!! তাই কুচকাওয়াজের মহড়ার জন্য রাখা আবীর-ভরা সেই জেটের ৩ নং ট্রিগার প্রেস হতেই মার্চের সেই হোলির মরশুমে বোমের ঝলসানো আগুনের পরিবর্তে সারা আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল লাল আবীরে। সদা কর্তব্যপরায়ণ তরুণ অফিসারটি সেদিন নিজে হেরে জিতিয়ে দিয়েছিল তার বিবেককে !

 

ডিসক্লেইমার: সমগ্র গল্পটি কল্পনাপ্রসূত, বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই।

 

......
 
 

 

অণুগল্প - রক্তিমাভা কলমে - মহুয়া মিত্র



 রক্তিমাভা
 মহুয়া মিত্র

মহালয়ার সকাল।
শম্পা দেবী তুহিনের ঘরে ঢুকে ঠক্ করে চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে ঈষৎ গলা তুলে বললেন, -- " ন'টা বাজতে যায়, বলি নবাবজাদার ঘুম ভাঙবে কখন?"

তুহিন ঘুম ভেঙে হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে তৃপ্তি করে 'আহ' শব্দ করে বলল, --" কি সৌভাগ্য আপনার মাতৃদেবী, আপনার গর্ভে এক নবাবজাদার জন্ম হয়েছে। "

--" ফাজলামি রাখ্, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বাজার যা, আজ মহালয়া, বলি ঠাকুরের ভোগ তৈরি করব তো না কি? "

--" যথা আজ্ঞা জগতজননী। তবে আমি কিন্তু এগারোটা নাগাদ বেরোবো, কখন ফিরব জানি না, একটু ভারী খাবার দিও। পাড়ায় পূজো কমিটির উদ্যোগে রক্তদান শিবির আছে। "

--" ঐ কর্ তুই, কটা টিউশন করে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়া, যত জ্বালা এই বিধবা বুড়ির। তোর সব বন্ধুরা চাকরি বাকরি করে কি সুন্দর ঘরসংসার করছে, আর তুই! "

--" আমি সমাজ সেবা করব মা, ঐসব সংসার আমার জন্য নয়।"

সেদিন সন্ধ্যা বেলা শিবির থেকে পাওয়া সব রক্ত ব্লাডব্যাঙ্কে জমা করে বীরের হাসি হেসে বাড়ি এল।

কিন্তু অষ্টমীর অঞ্জলি দিয়ে বাড়ির পথে আসার সময়ে একটা বেপরোয়া গাড়ি এসে খুব বাজে ভাবে ধাক্কা দিল তুহিনকে। প্রচুর রক্তপাতে ভেসে যাচ্ছে গোটা শরীর। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও উপযুক্ত রক্ত সঠিক সময়ে পাওয়া না যেতে রক্তের অভাবে অকালে ঝরে গেল একটা তরতাজা প্রাণ।

মাসখানেক পর আবার পাড়ায় রক্তদান শিবির হচ্ছে তবে এবারের উদ্যোগ শম্পা দেবীর কারণ একজন তুহিন চলে গেছে ঠিকই কিন্তু তিনি চান না রক্তের অভাবে আর কোন তুহিন অসময়ে অমৃতলোক যাত্রা করুক।

সমাপ্ত 



অণুগল্প - ফিরে আসা - রিয়া মিত্র


ফিরে আসা
রিয়া মিত্র
 

মেজাজটাই বিগড়ে গেল বলাকার। এতদিনের মনোমালিন্য, ভুল বোঝাবুঝি শেষ হতে চলেছিল আদালতের পরবর্তী হিয়ারিং- এই কিন্তু এই বছর অতিরিক্ত গরম পড়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল আদালত! গরম না কমা পর্যন্ত আদালত নাকি খুলবে না!

মিউচুয়াল ডিভোর্স ফাইল করা সত্ত্বেও আদালতের নির্দেশে বলাকা আর প্রকাশকে ছ'টা মাস একসাথে থেকে দেখতেই হবে, নিজেদের বোঝাপড়া আবার সম্ভব কিনা। যদিও দুজনেই নিশ্চিত, সেটা আর সম্ভব নয় আর তারা যে কতখানি সত্যি, তা গত ছয় মাসেই প্রমাণিত কিন্তু যতদিন না আদালত খুলছে, ততদিন আবার একে অপরকে সহ্য করতেই হবে!

অতিরিক্ত গরমে সারাক্ষণই ঘরে থাকতে হচ্ছে প্রকাশকে, বাইরে বেরিয়ে প্রিয়তমার সাথে দেখাও করতে পারছে না বেচারা, মনে মনে মুচকি হাসে বলাকা।

কয়েকদিন ধরেই বিধ্বস্ত লাগছে প্রকাশকে, ফোনে কাউকে বলছিল, হয়তো চাকরিটা চলে গেছে। ওকে এত ভেঙে পড়তে কখনো দেখেনি বলাকা!

..... নাহ্, এভাবে প্রকাশকে ভেঙে পড়তে দেওয়া যায় না। বরাবরই রান্নার হাতটা ভালো বলাকার। রান্না করে বাড়িতে বাড়িতে ডেলিভারি দিতে শুরু করল সে.....।

আজ বলাকা আর প্রকাশের রেস্টুরেন্টের উদ্বোধন..... বলাকাকে জড়িয়ে ধরে প্রকাশ বলল, "ভাগ্যিস, এই বছর এত গরমটা পড়েছিল......।"
 .............................

 



অণুগল্প - সমালোচনা - অর্ণব ভট্টাচার্য্য

 



সমালোচনা
অর্ণব ভট্টাচার্য্য
 

“আরে এসো এসো।” সমরেশকে ঘরে ঢুকতে দেখেই হাতের ম্যাগাজিনটাকে রেখে বলে উঠলেন অজয়বাবু। সমরেশ খুব উপকারী ছেলে, পাড়ার লোকের বিপদে আপদে ছুটে যায়। আরো অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করে। সকলের সঙ্গেই তার খুব ভালো সম্পর্ক। 
“ ম্যাগাজিন পড়ছিলেন কাকু! ”
“ হ্যাঁ একটা গল্প পড়ছিলাম বুঝলে, জগৎ মিত্র নামে কেউ লিখেছেন। কি বলবো তোমায়, সেই একই গরীবের দুঃখ কষ্ট নিয়ে গল্প। শুধুমাত্র গল্প হিট করতে এরা এইসব লেখে। গরীবের জন্য এদের সত্যি সত্যি কোনো দুঃখ টুঃখ হয় না।”
“ না মানে কাকু ”
সমরেশ ইতস্তত করে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই অজয়বাবু হাত তুলে তাকে থামালেন, “ আমি জানি সমরেশ তুমি কি বলতে চাইছো, তুমি এটাই বলবে তো, যে হতেও‌ পারে লেখকটি সত্যিই গরীব দুঃখীদের নিয়ে ভাবে, কিছু না জেনেশুনে এরকম বলা উচিত নয়। শোনো হে সে যুগ পেরিয়ে গেছে। তুমি খুব সরল বলে বিশ্বাস করতে পারছো না। এসব সেন্টিমেন্টাল লেখা আজকাল শুধু গল্প হিট করার জন্য লেখা হয়। সবাইকে চেনা আছে।” এমনসময় অজয়বাবুর স্ত্রী ঘরে ঢুকে সমরেশকে বসে থাকতে দেখেই বলে উঠলেন, “ আরে সমরেশ তোমার মায়ের কাছে শুনলাম তুমি নাকি আজকের ‘সাহিত্য ' ম্যাগাজিনে জগৎ মিত্র নামে একটা গল্প লিখেছো। বাঃ আমাদেরকেও দেখাও একটু। ”
তারপর অজয়বাবুর দিকে ফিরে বললেন, “ ওর মধ্যে এত প্রতিভা,অথচ দেখো ছেলেটা গল্প লিখেছে কিন্তু ছদ্মনামে। আসল নামে লিখলে, বন্ধুবান্ধবরা জেনে যাবে, ওকে নিয়ে মাতামাতি করবে, সেটা নাকি ওর পছন্দ নয়। বোঝো তাহলে ! সমরেশের মা না বললে বোধহয় আমরাও জানতে পারতাম না। তবে হ্যাঁ ছদ্মনামটা খুব ভালো হয়েছে কিন্তু, জগৎ মিত্র অর্থাৎ জগতের মিত্র। খাসা!” এই বলে তিনি জোরে হেসে উঠলেও, সামনে বসে থাকা দুজন সে হাসিতে যোগ দিতে পারলেন না।
.....................................



অণুগল্প - সিঁড়ি- অনিন্দ্য পাল

 

সিঁড়ি 
অনিন্দ্য পাল 
 
"মেইল ডেলিভারি সাবসিস্টেম, দেয়ার ইজ আ টেম্পোরারি..." -- ওহ্ ভগবান! মাথাটা দুহাতে চেপে ধরে চরম হতাশায় ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো অনু, নাহ্ আর তাহলে হল না, এত পরিশ্রম, করেও সব বৃথা হয়ে গেল... । সস্তার স্মার্টফোনটা প্লাস্টিক মাদুরের উপর ছুঁড়ে ফেলে দশ বাই দশের ভাড়া ঘরটা ছেড়ে বেরিয়ে এল রাস্তায়। স্টেশনের পাশের এই বস্তিতে এখন গলি-ঘোঁজ ভরে উঠেছে সস্তার মদ আর জুয়ার আড্ডায়। পূর্ণিমার বিরাট চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনমনা হয়ে গেল অনু। 
"কাট"- পরিচালক ধনু হাজরার মুখে বেশ চওড়া হাসি। এগিয়ে এসে আকাশের পিঠটা একটু চাপড়ে দিয়ে বললেন, 
-- বাহ, চমৎকার। এবার প্রোডিউসারের সঙ্গে একটু মাখো মাখো হয়ে যাও, ব্যাস জমি পাকা হয়ে যাবে। ম্যাডাম ওইখানে। 
ধনু হাজরা একটা ঘরের দিকে ইশারা করে অর্থপূর্ণ হেসে আর একবার পিঠটা চাপড়ে দিলেন আকাশের। 
 -- আজ তোমার নথ ভাঙবে প্রোডিউসার ম্যাডাম। 
কানের ভিতরে কথা গুলো বলে গেল সহ পরিচালক বাসু। 
চমকে উঠে ব্যপারটা ভাবতেই গা ঘিন ঘিন করে উঠলো আকাশের। ঘরের কাছে পৌঁছে একটু ইতস্তত করে দরজায় নক করলো আকাশ। 
--এসো। খোলা আছে। 
ঘরের ভিতর হাল্কা নীল আলোতে যেন স্বপ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই স্বপ্নের সিঁড়ি আকাশের থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে স্বচ্ছ পোষাকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। 
নিস্তব্ধ কয়েকটা সেকেন্ড কেটে গেল। হঠাৎ করেই আকাশের দিকে ফিরলেন সেই স্বপ্নমানবী। চমকে উঠলো আকাশ, এ কাকে দেখছে সে? সমস্ত শরীর মনে যেন আগুন জ্বলে উঠলো আকাশের! 
--মা? তুমি! 
আকাশের দিকে তখন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন মাত্র দশ বছর বয়সের আকাশ আর তার হঠাৎ বেকার বাবাকে ছেড়ে পালিয়ে হয়ে যাওয়া "মা"। 
==============================



অণুগল্প - দুর্ঘটনা - শুভশ্রী সাহা

 


দুর্ঘটনা
শুভশ্রী সাহা


দুদিন হয়ে গেছে এবাড়ির বড় বউ পলি মারা গেছে কিন্তু আত্মীয় স্বজন সবার আসা যাওয়া চলছে। সরিতের ভালো লাগছে না, সে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসছে   বিকেলবেলাটায়। সেই এক কথা,,---  পলির মতো সাবধানী  মানুষ   প্রেসার কুকার থেকে পুড়ে  মারা গেল!   আহারে স্টোরে যাবার তাড়া!  ব্যবসা টাতো প্রাণ না! এর উত্তর কে দেবে!,তার দোকানটা এ-ই মফস্বলের সেরা স্টোর।  সরিত  মুখচোরা ছেলে, বিয়ের পর পলি দোকানের হাল ধরতেই   বদলে গেল। পলির কাজ নিটোল।    ওর পারফেকশনের চাপে সরিতের চোখ ফেটে জল এসে যেত প্রায়ই। 
 
--- বাবা চা খাবে?  গীতালি এলেন
--- 
। বড় ভালো ছেলে, তার মেয়েটাকে মাথায় করে রাখত--  পলি এমনিতে বেশ  জেদী ,  কথা না শুনলে রসাতল করতো।  সরিত  ,হাসিমুখেই মানিয়ে নিতো। পলির জন্য সরিতের উন্নতি, কপাল,  ভোগই  করতে পারল না পলিটা!
মেয়েটাকে  গেরোতেই   ধরেছিল! নইলে প্রেশার কুকার থেকে এত বড় দুর্ঘটনা ! রোজের জিনিস! উঃ! 
সরিত   চুল খামচে ধরল   তার জীবনটা কি ভাবে চলবে! 

-- সরিত দা,  চা, 

--- বুলি, , এমন ভাবে বাঁচা যায়! 

বুলির চোখ উপচে জল , সে পলির  বিপরীত  নরম, মায়াবী।  বুলি জামাইবাবুর হাতটা ধরল।


  ওর গোড়ালীর দিকে সরিতের চোখ গেল।  গোড়ালির ভাঁজে সরিতের পাপটা লুকোনো আছে।

পলি কেন বুলির মতো হলো না, বড় কষ্ট দিতো! কথায় কথায় নির্বোধ বলে  ব্যঙ্গ, অপমান, অযোগ্যতা  প্রমাণ করতে ব্যস্ত হত । সরিতের মা, বাড়ির লোকজন    সরিতকে গোপনে আলাদা ফ্ল্যাট নেবার জন্য অনুরোধ  করেছিল। সে কি করে পরিবার ছাড়বে!  সরিত  তার আর বুবুনের জন্য একটু শান্তি--- 
সে জানে বুবুনের জন্য বুলি তাকে ফেরাবেই না।


সরিত বাড়ি ফিরে তার শোবার ঘরে ঢুকল। 
 দোতলার বারান্দায়   পাতাবাহারের গাছ।  পলির সখ। সবচেয়ে বড় টবটার মাটির ভেতরেই 
 প্রেসারকুকারের  লিডের পালটে দেওয়া ওয়েটটা  সে লুকিয়ে রেখেছে।
 
...................