দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সাক্ষী ছিল না - দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়

সাক্ষী ছিল না
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
 
 

 


                টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই ওরা শিলিগুড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিল। শুকনা পার হতেই বৃষ্টির তেজ বেশ বেড়েছিল। আরিয়ান একবার বলেছিল এই বৃষ্টিতে আর এগিয়ে কাজ নেই, কিন্তু ময়ঙ্ক হেসে বলেছিল -''তুই এই ডুয়ার্সের ছেলে হয়ে বৃষ্টিকে ভয় পাচ্ছিস?''

-''আমার ঐ ইকো রিসর্টে যাওয়ার ইচ্ছাই ছিল না। তোরা রাজি হলি বলে যাচ্ছি।''

-''ধুর, যাবো না কেন? এই ফাঁকে দুদিন ঘোরাও হবে।''

সাহিল কানে হেড ফোন গুঁজে বসেছিল প্রথম থেকেই। ওদের কথা হয়তো কানে গেছিল। তাই আদেশকে বলেছিল -''বৃষ্টিতে পাহাড়ি রাস্তায় একটু সাবধানে চালাস ভাই। এত তাড়াতাড়ি দেওয়ালে ছবি হতে চাই না।''

দুধিয়া পার করে ওদের গাড়ি তখন পাকদণ্ডি পথে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু আরও কিছুটা ওপরে ওঠার পর ওদের ঘিরে ধরেছিল এক রাশ জল ভরা মেঘ। আগে পিছে কিছুই আর দৃষ্টি গোচর হয় না। ফগ লাইট জ্বালিয়েও গাড়ি নিয়ে এগোতে ভয় পাচ্ছিল আদেশ।

শেষে ময়ঙ্ক ওকে সরিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসল। বলল -''নবনীতটা আর বিয়ে করার দিন পেল না!''

ওরা চার বন্ধু চলেছে মিরিকের পথে, একটা ছোট্ট গ্ৰামে। ওদের বন্ধু নবনীতের একটা ইকো রিসর্ট রয়েছে ওখানে। এর আগেও বহুবার নবনীত ওদের ডেকেছে। কিন্তু একসঙ্গে চারজনের যাওয়া হয়েই ওঠে না। গত সপ্তাহে নবনীত হঠাৎ ফোন করেছিল ওদের যে ও বিয়ে করছে। স্বাধীনতা দিবসে ওর বিয়ে, করোনার জন্য কোনও অনুষ্ঠান করছে না। তবে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে উইক এন্ডটা ও এনজয় করতে চায় ইকো অরেঞ্জ রিসর্টে। বিগত পাঁচ মাস এই অতিমারিতে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ। তাই ও এভাবে বিয়েটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

সাহিল হঠাৎ বলে -''আচ্ছা নবনীত ঠিক কাকে বিয়ে করল তোরা কিছু জানিস!ও তো ভালবাসত...” কথাটা শেষ করে না ও আর।

সবাই চুপ।

কয়েক সেকেন্ড পর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আদেশ বলে -''একটা মেয়েকেই বিয়ে করবে নিশ্চই। ওর গিফটটা এনেছিস তো ময়ঙ্ক।''

হঠাৎ করে বন্ধুর বিয়ের খবর পেয়েছিল ওরা গত সপ্তাহে। ময়ঙ্কের পৈতৃক সোনার দোকান। এখন তো অতিমারিতে দোকানপাট ঠিকমত খোলে না। তাই ওরা সবাই মিলে ময়ঙ্ককেই উপহার কিনতে বলেছিল।

ময়ঙ্ক গাড়ি চালাতে চালাতে মাথা নাড়ে।


শনিবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সবার ছুটি। করোনার জন্য এসময় ব‍্যবসা সে ভাবে চলছে না। রাস্তাঘাট শুনশান। কিন্তু এই বৃষ্টিতে যে পরিস্থিতি এমন ভয়ানক হয়ে উঠবে ওরা বুঝতে পারেনি।

সামনের বাঁকটা বিপদজনক ভাবে পেরিয়ে ময়ঙ্ক গাড়িটা পাহাড়ের ঢালে দাঁড় করায়। আর মাত্র কয়েক কিমি পথ বাকি। কিন্তু পুরোটাই হেয়ার পিন বাঁক। এপথে একটু ভুল করলেই বিপদ।

সিটের নিচ থেকে একটা বিয়ারের ক্যান বের করে একাই চিয়ার্স করে আদেশ বলে -''বৃষ্টি থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। লেটস এনজয় দা রেইন।''

আরিয়ান আরেকটা ক্যান তুলে বলে -''তবে তাই হোক। নবনীতের বিয়ে উপলক্ষে আমরা এখানেই আসর জমাই।''

সাহিল ময়ঙ্ককে বলে -''আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলেই ভালো হত। অন্ধকার হয়ে আসছে। কোনও বড় গাড়ি উপর থেকে নামার সময় আমাদের দেখতে না পেলে... নিউজ হয়ে যাবো ভাই। এমন কিন্তু হয় পাহাড়ে।''

ময়ঙ্ক দাঁতে দাঁত চেপে আবার গাড়ি স্টার্ট করে। আধঘণ্টার পথ দেড় ঘণ্টায় পার করে ওরা যখন ইকো অরেঞ্জ রিসর্টে পৌঁছয় তখনো বৃষ্টি পড়েই চলেছে। কিন্তু তেমন কোনও লোকজন ওদের চোখে পড়ল না। দারোয়ান বলল ছয় নম্বর কটেজে রয়েছে নবনীত। কটেজটা একটা ছোট টিলার উপর। একদিকে গভীর খাদের উপর ঝুলন্ত বারান্দা। বৃষ্টির জন্য অন্ধকার আজ আরও বেশি ঘন।

আপাতত ব‍্যবসা নেই বলে সব স্টাফকে ছাড়িয়ে দিয়েছিল নবনীত। ওরা ছ’নম্বর কটেজে পৌছতেই খিলখিল করে মেয়েলী হাসির আওয়াজ ভেসে এল।

আদেশ আর ময়ঙ্ক নবনীতের নাম ধরে ডাকতেই ও বেরিয়ে আসে। হলুদ পাঞ্জাবিতে ওকে বেশ অন্যরকম লাগছে।


-''চলে এলাম, এবার বল কী প্ল্যান? আর তোর বৌ কই? আলাপ করা।'' আরিয়ান বলে।

ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে নবনীত বলে -''দাঁড়া, এত তাড়া কিসের। অনেকটা পথ পার করে এলি তোরা। বস, রেস্ট কর। মংলুকে বলি ড্রিঙ্কস দিতে। বৌ তো পালিয়ে যাচ্ছে না আমার।''

ওদের কটেজের প্রথম ঘরটায় বসায় নবনীত। বাইরে একঘেয়ে বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দ।

-''তোরা কি ফ্রেশ হবি? তবে পাঁচ নম্বর ঘরটা খুলে দেবে মংলু।'' নবনীত বলে।

-''আগে বৌ দেখি, আলাপ হোক।'' সাহিল বলে।

-''ও একটু তৈরি হচ্ছে। তোরা বস। আমি মংলুকে বলে দেই।'' পাশের ইন্টার কম ফোনটা তুলে নেয় নবনীত।

-''আর লোকজন... মানে তোর স্টাফেরা...?'' আদেশ বলে।

-''সবাইকে ছাড়িয়ে দিয়েছি। ব‍্যবসাই তো বন্ধ। শুধু মংলু রয়েছে পরিবার নিয়ে। ও এই রিসর্টের কেয়ারটেকার।''

ওরা গুছিয়ে বসতেই মংলু ড্রিঙ্কস আর পকোরা নিয়ে হাজির হয়। ময়ঙ্কের এখানে আসার পর থেকেই মাথাটা কেমন ধরে ছিল। মেজাজটাও কেমন তাল কেটে গেছে। ও একটা হুইস্কির বোতল টেনে নেয়।

-''সবে বিয়ারটা খেলি, এখনি ওটা খাস না।'' সাহিল বলে। কিন্তু ময়ঙ্ক ওদের কথায় পাত্তা না দিয়ে গ্লাসে ভরে নেয় সোনালী তরল। বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ঝমঝম করে বৃষ্টিটা হয়েই চলেছে।

আদেশ একটা সিগারেট ধরিয়ে ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। বলে -''আমার এখানে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না! তোদের জন্য এলাম।''

-''বোকার মত কথা বলিস না। এই রুটে আমি বহুবার এসেছি।''

-''কিন্তু...!'' কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় আদেশ। দূরের পাঁচ নম্বর কটেজের বারান্দায় একটা সাদা কুর্তি পরা মহিলার অবয়ব যেন ওদের দিকেই চেয়ে রয়েছে।

-''কিরে, তোরা এই ঝোড়ো হাওয়ায় বাইরেই থাকবি নাকি। করোনা না হলেও নিউমোনিয়া হয়ে যাবে কিন্তু তোদের।'' আরিয়ান ওদের ডাকে ভেতর থেকে।

-''তোর পাঁচ নম্বর কটেজে কি গেস্ট আছে নবনীত!!" ঘরে ঢুকে কাঁপা গলায় বলে আদেশ।

-''এই অতিমারিতে ট্যুরিজম লাটে উঠেছে। গেস্ট আসবে কোথা থেকে?'' বলে ওঠে নবনীত।

খিলখিল করে কে যেন হেসে ওঠে ওদের কথায়। আদেশ চমকে ওঠে। কিন্তু বাকিরা শান্ত। তবে কি নবনীতের স্ত্রী!

আরিয়ন ভেতরে ডাকে ময়ঙ্ককে -''মশা মাছি তো কম নেই বাইরে। ভেতরে চলে আয়।''

ও ভেতরে এসে বসে।

একটু পরেই মংলু গরম গরম নাগেটস আর পেয়াজি নিয়ে আসে। আদেশ ওকে বলে -''আমরা ছাড়া আর কেউ আছে নাকি এই রিসর্টে?''

-''নেহি সাব। কিউ?''

উত্তর দেয় না আদেশ। মনে মনে ভাবে তবে ওটা মংলুর বৌ হবে।

একটা নাগেটসে কামড় দিয়ে সাহিল নবনীতকে বলে -''কি রে তোর বৌ আর কত সাজবে? ডাক এবার।''

নবনীত একবার ভেতরের ঘরে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসে। ও গায়ে একটা হাল্কা শাল জড়িয়েছে।

এবার সবার হাতেই শোভা পাচ্ছে পানীয়র পাত্র। আদেশ নবনীতের দিকে একটা গ্লাস এগিয়ে দিতেই ও বলে-''তোরা নে, আমি ভাই ছেড়ে দিয়েছি ও সব। আর আজ তো একদম নয়।''

-''কেন? তোর বৌয়ের বারণ বুঝি! বিয়ে হতে না হতেই তুই শালা স্ত্রৈণ হয়ে গেলি! জরু কা গোলাম!'' ময়ঙ্ক হাসতে থাকে। ওর রসিকতায় সবাই হেসে ওঠে।

-''ছাড় আমার কথা। তোরা এনজয় কর। রাতে বিরিয়ানি আর কাবাব বলেছি। মংলু যা বানায় না! ফাটাফাটি! আমি একবার দেখে আসি ওদিকটা।''

একটা ছাতা নিয়ে ও এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে। একঘেয়ে বৃষ্টিটা হয়েই চলেছে।

ময়ঙ্ক এবার উঠে দুই ঘরের মাঝের দরজাটা ধাক্কা দিয়ে বলে -''আরে নতুন বৌদি, এ ঘরে আসুন। আর সাজতে হবে না। ''

সাহিল আর আরিয়ান বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ঘরটা সিগারেটের ধোয়ায় ভারি হয়ে উঠেছে। খুব জোরে বিদ্যুৎ চমকায় আকাশে। আর দিনের আলোর মত চারদিক সাদা হয়ে ওঠে। সেই আলোয় পাঁচ নম্বর কটেজের দিকে চোখ পড়তেই কেমন সাদা হয়ে যায় ওর চেহারা। কে ওটা? ও কি কিছু ভুল দেখল!

-''তুই কি কাউকে দেখতে পেলি ওধারে?'' কয়েক সেকেন্ড পর সাহিল বলে। আরিয়ান উত্তর দিতে ভুলে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকারে মনে হয় একটা অবয়ব এগিয়ে আসছে এদিকে।


-''কিরে, এমন ভাবে কী দেখছিস?" ছাতাটা বন্ধ করতে করতে বলে নবনীত।

-''তুই... তুই ঐ পাশের কটেজটার বারান্দায় ছিলি?''

-''আমি তো কিচেনে সব দেখে আসলাম। রুমি বের হয়নি এখনো?'' নবনীত ভেতরের ঘরে দিকে তাকায়!

-''রুমি... এখানে!'' সাহিল বলে।

-''ও হো, সারপ্রাইজ ফ্রেন্ডস! আমি রুমিকেই বিয়ে করেছি। এই রুমি, এবার বাইরে এসো।'' নবনীতের ডাকাডাকিতে ভেতরের দরজা খুলে যায়। আর চার জোড়া চোখ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে হাল্কা গোলাপি শিফন পরা যে রুমি ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

ময়ঙ্ক হিসহিস করে বলে -''এসব কি নবনীত? রুমি এখানে কোথা থেকে...!''

-''কেন? রুমিকে তো তোরা সবাই চিনতিস। সাহিল তো জানতিস আমাদের ব‍্যপারটা। আর ময়ঙ্ক তুই তো শুনেছিলি গতবছর যে রুমি আমাকে বিয়ে করবে!'' নবনীত রুমিকে নিয়ে এগিয়ে আসে।

বাইরে বৃষ্টির তেজ বেড়েছে।

রুমি খিলখিল করে হেসে ওঠে, বলে -''আমায় দেখে তোমার বন্ধুরা কেমন ভয় পেয়েছে দেখো!''

-''সরি রুমি, আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি।'' আরিয়ান হঠাৎ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।

-''এনাফ ইজ এনাফ। এটা রুমি নয়।হতে পারে না।নবনীত, দা গেম ইজ ওভার।'' ময়ঙ্ক চিৎকার করে ওঠে।

-''ও যদি রুমি হয় ও গত এক বছর কোথায় ছিল?'' আদেশ বলে।

-''আরে, এক বছর কোথায় ছিলাম তোমরা জানো না?'' আবার হেসে ওঠে রুমি।

-''নবনীত কাজটা ভাল করলি না। এভাবে আমাদের ডেকে এনে... !'' ময়ঙ্ক বলে। ওর চোখ দুটো টকটকে জবা ফুলের মত লাল।

-''রুমি যা হয়েছে ভুলে যা। আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমরা চলে যাচ্ছি।'' আরিয়ন বলে।

-''দাঁড়াও, এই বৃষ্টিতে কোথায় যাবে?'' রুমি বলে।

-''আরিয়ান, সাহিল চলে আয়। ইটস আ ট্র্যাপ। ময়ঙ্ক...!'' আদেশ বেরিয়ে যেতে চায়।

-''ওয়েট ওয়েট, কী হয়েছে তোদের? কেন এমন করছিস?'' নবনীত প্রশ্ন করে।

-''শোন নবনীত। রুমি কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না। ও তো বেঁচেই আছে দেখছি...!" ময়ঙ্ক বলে।

-''হ্যাঁ, বেঁচে আছি। কিন্তু আমার সঙ্গে যা ঘটেছিল...'' রুমির চোখ দুটো জ্বলে ওঠে।

-''এবারের মত ক্ষমা কর আমাদের। আমরা চলে যাচ্ছি। ভুলে যা যা ঘটেছে...'' আরিয়ান আর্তনাদের স্বরে বলে ওঠে।

-''নিজেকে বড্ড চালাক ভাবিস তুই! এবার দেখ।'' আদেশের হাতে উঠে এসেছে একটা 4.25 mm লিলিপুট। হিসহিসে গলায় আদেশ বলে -''সেদিন তুই কি করে বেঁচে গেছিলি জানি না, আজ তুই আর নবনীত দুজনের একটাকেও ছাড়ব না।''

-''কী করছিস আদেশ?'' নবনীত দু পা পিছিয়ে যায়।

-''গত বছর এই পাহাড়ে এসেই রুমির শরীরটা আমরা ভোগ করে একটা পাহাড়ের খাদে ছুড়ে ফেলেছিলাম। ও যে বেঁচে যাবে ভাবিনি। বড় অহংকার ছিল ওর..., কিন্তু আজ আর সেই ভুল করবো না।''

ফায়ারিং এর আওয়াজে সবাই চমকে ওঠে। আদেশের রিভলভার ছিটকে পড়েছে, হাত চেপে বসে পড়েছে আদেশ। তিনজন লোক ওদের ঘিরে ধরেছে।

সাদা চুড়িদার পরা এক মহিলা এগিয়ে আসেন। বলেন -''ওয়েল ডান সুমি, ওয়েল ডান নবনীত। ইনস্পেক্টর ভুজেল, রুমেলা থাপাকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে এদের চারজনকে এরেস্ট করো।''

শালের নিচ থেকে একটা ছোট ক্যামেরা বার করে দেয় নবনীত। সেটা হাতে নিয়ে মহিলা বলেন – “সবটা রেকর্ড করেছ তো?”

মাথা নাড়ে নবনীত।

একজন ওদের হাতকরা পরাতে এগিয়ে যায়। আদেশ সহ বাকি তিনজনের চোয়াল ঝুলে পড়েছে তখন।


*****

-''ওয়েল ডান অফিসার দময়ন্তী। এবার বলুন কী ভাবে এই আনসলভ মিষ্ট্রিটা সলভ করলেন?'' এসিপি সিনহা প্রশ্ন করেন। ওরা সবাই বসেছিল দার্জিলিং কমিশনারেটে। এক বছর আগে হারিয়ে গেছিল রোমিলা থাপা। ওর বোন সুমেধা থাপা বার বার থানায় জানিয়েছিল রোমিলা শিলিগুড়িতে পড়াশোনা করত, গত বছর স্বাধীনতা দিবসে চার বন্ধুর সঙ্গে পাহাড়ে ঘুরতে গেছিল। অথচ ওর এই বন্ধুরা বলেছিল রুমি আসেনি ওদের সঙ্গে। আমরা রুমির ফোনের টাওয়ার চেক করে দেখেছিলাম সে মিরিকের দিকেই ছিল সেদিন সারাদিন। বিকেল থেকে তার ফোন বন্ধ ছিল। গত তিনমাস আগে পাহাড়ে মধু সংগ্ৰহ করতে গিয়ে এক গিরিখাতের ভেতর একটা পচা গলা কঙ্কাল দেখতে পেয়ে আমাদের জানিয়েছিল। কঙ্কালের ডিএনএ টেস্ট করে আমরা জানতে পারি ওটাই রুমেলা অর্থাৎ রুমি। সুমি ওর এক বছরের ছোট বোন প্রায় এক রকম দেখতে, ও থাকত সিকিমে দাদুর বাড়ি। সুমি আর রুমির বন্ধু নবনীত বারবার বলেছিল ওরা চারজন রুমির অন্তর্ধানের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু প্রমাণ ছিল না। বাধ্য হয়ে সুমিদের সাহায্য নিয়ে এই ছোট্ট নাটকটা করতে হয়েছিল। সুমিকে রুমির মতো সাজিয়ে প্লেস করার প্ল্যানটা নবনীতের। বাকিটা তো দেখতেই পেলেন।''

-''অপরাধ সাক্ষী রেখে না গেলেও তোমরা অসাধ্য সাধন করেছো। আই রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ।'' এসিপি সাহেব বলেন।

সুমি ও নবনীত বেরিয়ে আসে থানার বাইরে। আজ রুমির আত্মা অবশেষে শান্তি পাবে।
..................................
 
Debdutta Banerjee
 

 অলঙ্করণ :-  সহিষ্ণু কুড়ি