পাঠ প্রতিক্রিয়া
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
পাঠ প্রতিক্রিয়া
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
পাঠ প্রতিক্রিয়া
সায়ন তালুকদার
তিনি বনজ্যোৎস্নার তান্ত্রিক। তিনি বনফুলের পুরোহিত। তিনি ঝরা-বনপাতার বাউল। তাঁর সাহিত্যসাধনার সালোকসংশ্লেষে নীরবে এসে মিশেছে টাঁড়, বন, অরণ্যের নিবিড় আলো-জল-বাতাস।
তিনি 'ঋজুদা'। তিনি বুদ্ধদেব গুহ।
বাংলা সাহিত্যজগতকে কাঁদিয়ে, চিরঋণী করে তিনি চলে গেলেন নক্ষত্রলোকের অন্য পাড়ে,কোনও এক নামহীন অজানা দেশে...
বহু বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় ছিল তাঁর জীবন। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকা তাঁর দেখা। পূর্ব ভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও তাঁর সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। 'সাহিত্য-রচনায় মস্তিষ্কের তুলনায় হৃদয়ের ভূমিকা বড়' - এই মতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন।
জঙ্গল তাঁর লেখায় বারে বারে ধরা দিয়েছে। তিনি জঙ্গলের প্রেমে পড়েছেন বারবার। দশ বছর বয়সে শিকার শুরু করলেও নিজেকে শিকারী বলে পরিচয় দিতে কখনও চাননি। 'জঙ্গলের জার্নাল' তার চেয়ে ভালো আর কেউ লিখেছেন কী?
খুব সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারতেন, তাঁর যেকোনো উপন্যাস পড়লেই তা বোঝা যায়! ‘সবিনয় নিবেদন’ উপন্যাস তো পুরোটাই পত্রপোন্যাস! ঋতি ও রাজর্ষি একজন আরেকজনকে না দেখে না শুনে চিঠির এক অদ্ভুত ব্যাকরণে বুনতে থাকে তাদের সম্পর্ককাব্য। অদেখাকেও যে চিঠি লিখে প্রিয় ব্যক্তিতে রূপ দেওয়া যায়, তার সাথে খুনসুটি করা যায়, করা যায় অভিমানী অভিযোগ, চিঠি লিখে যে কাউকে ভালোবাসাও যায়- তার এক অনবদ্য প্রমাণ ‘সবিনয় নিবেদন’।
তাঁর লেখা 'মাধুকরী'’ বাংলা সাহিত্যের জগতে অন্যতম একটি মাইলফলক। পৃথু, কুর্চি, রুষা, মগনলাল, ঠুঠা-এই সকল চরিত্রের মধ্যে কী যে জাদু ছড়িয়ে আছে যা এড়ানো সম্ভব নয় কোনো পাঠকের পক্ষেই। এই উপন্যাসে কেউ কারও পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান করে না, এত সমান্তরালভাবে চরিত্রগুলোকে সম্পৃক্ত রেখেও বয়ে যেতে দিতে তিনিই পারেন!
আজ তাঁরই লেখা 'গানের ভুবন' প্রসঙ্গে আমার পাঠানুভবেই তাঁর প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
........................
পাঠ প্রতিক্রিয়া
সুকন্যা দত্ত
প্রকাশনী: অরুণা
মূল্য: ৭০/-
'নীলুদের গ্রামটা না কি এখ
"সুপুরিবনের সারি"— এ শুধুমাত্র
একদিন দুপুরে কলেজের লাইব্রেরি
আবিষ্কার করেছিলুম দেশবিভাগের চু
'সুপুরিবনের সারি'- কে কিশোর উপ
লেখক শক্ত শব্দার্থ বর্জিত খুব
বসে ছিলুম পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখতে
"কেবলই করে ভয়
এত যে লোক এত যে জন
আমার কি কেউ নয়।"
পাঠপ্রতিক্রিয়া
শুভদীপ কোলে
উপন্যাস – সেফটিপিন
লেখক – স্মরনজিৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক – আনন্দ
মূল্য – ২৫০ টাকা
“দিনের পরে রাত কেটে যায়... রাতের পরে দিন...
কার কাছে আজ লুকিয়ে রাখো তোমার সেফটিপিন!”
ছোটবেলা থেকে দেখেছি মা সেফটিপিন দিয়ে আঁচল গেঁথে রাখে। কিন্তু একটা সেফটিপিন কি সময় গাঁথতে পারে? মনে করুন ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দী হয়ে এই একবিংশ শতাব্দীকে গেঁথে রাখল একটা সোনার সেফটিপিন ব্রোচ। স্মরনজিৎ বাবু কি মন দিয়ে প্রেম লেখেন। যখনই তাঁর প্রেম পড়ি, আমি আবার প্রেমে পড়ি। আবার প্রেমে পড়লাম – পড়লাম সেফটিপিন – এর।
উপন্যাসটি শুরু হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দীর আলমার যুদ্ধক্ষেত্রে। ওয়াল্টার নামের এক সদ্য যুবা যুদ্ধের ময়দানে জেনারেলের থেকে উপহার হিসেবে একটা সেফটিপিন ব্রোচ পায়, সে ভাবে সেটা তার প্রেম ভার্জিনিয়া কে দেবে। তারপর কি হয়? গল্প এসে পড়ে ২০১৮ তে। আমাদের কলকাতাতে। সিয়োনা আর বিরাজ এর গল্প হয়ে। তারপর গল্প চলে যায় উত্তাল সাতের দশকে যেখানে নকশাল কর্মী সাহিমার সাথে দেখা হয় রেয়াংশ এর। কি হয় তাদের গল্প? কেন গল্প রসিক লাল আর তার মেম বান্ধবী মেরীর সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কলকাতায় চলে গেল? সেও এক উত্তাল সময়। জাপানীরা বোমা ফেলেছে। গল্প ক্রমেই সময়ের গোলোক ধাঁধাঁয় এদিক ওদিক চলে যায়, কখন কোন সময় এ পড়তে পড়তে ভুলে যাচ্ছিলাম। সময় ও ঘুরতে থাকে সাথে সেফটিপিন ও। গল্প যত এগোয় বা বলা যায় কখনো কখনো পিছিয়ে যায় নিজের ছন্দে, তত বোঝা যায় যে প্রেমে পড়া সহজ, প্রেম পাওয়া না। বলতে না পারা সব প্রেম গুলো, না পাওয়া সব প্রেম গুলো সময়ের সাথে সাথে গাঁথা পড়ে সেফটিপিনে আর লুকানো কিছু খাতার পাতায়। সেই সেফটিপিন যা লক্কা পুটুর খাঁচায় চলে গেছিল। কি করে? তার খোঁজে বিরাজ সিমোয়া সত্যি কাছে আসে। তখন আদরের দাগের মত আকাশ আসে কলকাতায়। এই গল্প হল প্রেমের গল্প, প্রেম না পাওয়ার গল্প, প্রেম পেয়েও হারাবার গল্প আবার তাকে ফিরে পাবার গল্প। কে পেল আর কে হারাল জানতে গেলে পড়তেই হবে সেফটিপিন। কে কার সম্পর্কে কি তাও জানতে পড়তেই হবে সেফটিপিন। তবে বলতে পারি ভালোবাসা আশপাশেই থাকে তাকে খুঁজে নিতে হয়।
......................
Suvadip Koley