চুমকি চট্টোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
চুমকি চট্টোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

পথের শেষে - চুমকি চট্টোপাধ্যায়

 


পথের শেষে
চুমকি চট্টোপাধ্যায়
 


" মা, আজ আমার ফিরতে একটু দেরি হবে। একটা এমার্রজেন্সি কেস এসেছে। সামলে নিয়ে ফিরব। তুমি চিন্তা কোরো না, কেমন?

" আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে ফিরিস। রাত বাড়লে রাস্তাঘাট মাতালে ভরে যায়। সেটাই ভয়ের। মদ খেলে তো মানুষের ভালোমন্দের হুঁশ থাকে না। " কথাগুলো বলে আল্পনা দেখলেন নন্দনা আগেই ফোন ছেড়ে দিয়েছে।

আল্পনার এই মাতালফোবিয়া নিয়ে হাসাহাসি করে নন্দনা। বলে, " মদ নিয়ে তোমার ভয়ঙ্কর রিজার্ভেশন বুঝতে পারি। অল্পস্বল্প মদ কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, সেটা জানো কি?"

" স্বাস্থ্যের জন্য ভালো আর কিছু নেই? মাছ, মাংস, সবজি, ফল, দুধ-- এগুলো ছেড়ে মদ খেতে হবে, তবেই শরীর ভালো থাকবে বুঝি? "

নন্দনা বোঝে যে কোনো কারণেই হোক মদ জিনিসটায় মায়ের প্রচন্ড অ্যালার্জি। ডাক্তার মেয়ে তাই আর ঘাঁটায় না মাকে।

" মা, কোন জায়গা দেখার তোমার খুব ইচ্ছে বলো। মানে, বেড়াবার জায়গার কথা বলছি। নেক্সট মান্থে দিন পনেরোর ছুটি নেব ভাবছি। তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। "

" আলাদা করে তেমন কোনো জায়গার কথা বলতে পারব না, তবে পাহাড় আমার খুব ভালো লাগে তা তো তুই জানিস। "

" হুম, জানি তো। তাহলে... তাহলে চলো গ্যাংটক যাই। যদিও তোমার, আমার দুজনেরই যাওয়া জায়গা তাও, আমার দুর্দান্ত লাগে। যাবে মা? "

" আগে ছুটি নে তারপর তো যাওয়া। তুই যেখানে নিয়ে যাবি ,যাব। "

" লেহ  লাদাখ খুব সুন্দর। যাবে?"

" আরে, যাব বললেই তো হবে না। পারব কি না দেখতে হবে তো! ভেবেচিন্তে জায়গা বাছিস। "

" উফ্, মা! তুমি আর একটু আর্লি বিয়ে করতে পারতে তো ! তাহলে আমি আর একটু আগে জন্মাতাম, তুমিও এত বুড়ি হতে না। আর আমরা নেচেকুঁদে ঘুরতে পারতাম। "

" অ্যাই বজ্জাত মেয়ে, চুপ কর! এসব কথা মাকে কেউ বলে!  সত্যি বাবা, আজকালকার ছেলেমেয়েগুলোর লজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই। মা যেন ইয়ার-বন্ধু! "

" তুমি আমার ইয়ার, বন্ধু, বাবা, ভগবান সবকিছু মা। তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে বলো। বাবাকে তো পেলামই না ভালো করে। ইস্, আমি ডাক্তার হবার পর যদি বাবা অসুস্থ হত তাহলে কিছুতেই বাবাকে যেতে দিতাম না...।"


রাত সোয়া বারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরল নন্দনা। আল্পনা গল্পের বই পড়ছিলেন। মেয়ে বাড়ি না ঢোকা ইস্তক ঘুমোন না তিনি। টেনশন বিষয়টা ওনার চরিত্রে পাকাপাকি বসত করে ফেলেছে। কবে থেকে এমনটা হল সেটা খুব ভালোই জানেন আল্পনা।

" জামা ছেড়ে হাত ধুয়ে আগে খেয়ে নে। "

" ইয়েস মাদার। খিদের চোটে বাড়ি গুলিয়ে ফেলছিলাম। আর একটু হলেই হালদারকাকুদের দরজা নক করতাম। কী বানিয়েছ ডিনারে? "

" তোর সবেতে ইয়ার্কি! ডিমের কারি আর থোড় ছেঁচকি আছে। মুসুর ডালও আছে। "

" ও ফার্স্টক্লাস! অনেকদিন পর ডিমের কারি করেছ। ফাটাফাটি বানাও তুমি এগ কারি! দুটো ডিম খাব আমি, কেউ রুকতে পারবে না! "

" তোর সেই সিরিয়াস পেশেন্ট কেমন আছে? "

" ভালো নয় একদমই। ঠেকাঠোকা দিয়ে রেখে এসেছি। ব্রতীন স্যারকেও বলেছি কাল একবার দেখে যেতে।  লিভারের আর কিছু নেই। দেখা যাক। তুমি শুয়ে পড়ো মা। আমি সব নামিয়ে বন্ধ টন্ধ করে শুয়ে পড়ব। কাল একটু সকাল সকাল বেরতে হবে।"

" আজ এত রাত করে ফিরলি, কাল আবার তাড়াতাড়ি যেতে হবে? "

" ব্রতীন স্যার সাড়ে সাতটা নাগাদ আসবেন বলেছেন। ধরে নিলাম আটটা হবে। আমাকে থাকতে হবে মাদার। সাতটায় ডেকে দিও। "


আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে ঠিক করেছে নন্দনা। কাল রাতে ঘুমটা ঠিকমতো হয়নি। টায়ার্ড লাগছে। তিন তলায় একটা রাউন্ড দিয়ে বেরিয়ে যাবে। ৩০৫ নম্বর কেবিনের দরজা ঠেলে ঢুকল নন্দনা। পেছনে ওয়ার্ড সিস্টার মিঠু। দেখল পেশেন্ট তাকিয়ে আছে। কাল থেকে নিয়ে আজ সকাল অবধি চোখ বন্ধই ছিল।

" গুড ইভিনিং। কেমন লাগছে এখন মি. সরকার? পেইন কমেছে নিশ্চয়ই? "

" গুড ইভনিং ডক্টর। একটু বেটার । আমি কি ঠিক হব পুরোপুরি? "

" আপনাকে সেটাই ভাবতে হবে যে, আপনি পুরো সেরে উঠবেন। আমরা তো আটমোস্ট চেষ্টা করব যাতে আপনি সুস্থ হয়ে যান। দুপুরে ঘুমিয়েছেন? মিঠু দেখি ওনার ফাইলটা। "

প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বেরিয়ে যায় নন্দনা। অরিন্দম সরকার সিস্টার মিঠুকে জিগ্যেস করেন, " ডক্টরের নাম কী? "

" ডক্টর নন্দনা সেনগুপ্ত। "

পরের দিন সকালে নন্দনা ৩০৫ নম্বর কেবিনে ঢুকে দেখল পেশেন্ট বসে আছে।

" গুড মর্নিং মি. সরকার। কেমন ঘুম হল রাতে?

" গুড মর্নিং ডক্টর সেনগুপ্ত। কাল রাতে  ঘুমিয়েছি। "

" গুড। "

এরপর সিস্টারের সঙ্গে জরুরি কথা সেরে বেরবার মুখে মিস্টার সরকার বললেন,  " ডক্টর, আপনাকে একটা কথা জিগ্যেস করতে চাই। পারসোনাল। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড। "

একটু অসন্তুষ্ট হলেও ভদ্রলোকের বয়স এবং অসুস্থতার মাত্রা দেখে বেডের কাছে এসে দাঁড়ায় নন্দনা। সিস্টার কে চোখের ইশারায় চলে যেতে বলে।

" বলুন, কী বলবেন। "

" আয়াম সরি ডক্টর। আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য। একটা কথা আপনাকে না জিগ্যেস করে পারছি না। আমার অতি পরিচিত একজনের সঙ্গে আপনার মুখের খুব মিল। তার নাম ছিল আল্পনা দস্তিদার। "

অবাক হয়ে যায় নন্দনা। বাব্বা , মুখ দেখে মাকে আইডেন্টিফাই করছে, ভদ্রলোকের তো দারুণ মেমরি! কতটা চিনত মাকে?

" আমার মায়ের নাম আল্পনা সেনগুপ্ত। "

" তুমি মাকে গিয়ে আমার নাম বোলো। মনে আছে কিনা জানি না অবশ্য। তবে, না থাকার কথা নয়। তুমি বললাম বলে কিছু মনে কোরো না। "

কথা বলতে বলতেই ভদ্রলোকের খিঁচুনি শুরু হল। সিস্টারকে ডেকে নন্দনা চিকিৎসা শুরু করল। " এটাই নেশাড়ুদের সমস্যা। নেশার জিনিস না পেলেই উইথড্রয়াল সিম্পটম হয়। "

" মা জানো তো, আজ সকালে রাউন্ডে গেছি। মিস্টার সরকার, মানে সেই সিরিয়াস পেশেন্ট আমাকে বললেন আমার সঙ্গে তার পরিচিত একজনের মুখের খুব মিল। তার নাম আলপনা দস্তিদার। "

চমকে ওঠেন আল্পনা। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। মাথাটা নীচু করে ফেলেন। টেবিলের গাঢ় খয়েরি সানমাইকার ওপর টপটপ করে জলের ফোঁটা পড়তে থাকল।

ব্যাপারটা এইখানে যাবে ভাবতে পারেনি নন্দনা। পরিচিতি তো কত রকমের হয়। কিন্তু মা কাঁদছে কেন!

" মা, মা-- কী হল মা,  কাঁদছ কেন? অরিন্দম সরকার কে? কোনোদিন এনার নাম শুনিনি তো তোমার মুখে? অথচ এত পরিচিত। "

কোনো কথা বলেন না আল্পনা। নন্দনা বোঝে, কোনো এক গোপন ব্যথা জড়িয়ে আছে অরিন্দম সরকার নামটার সঙ্গে।  প্রসঙ্গ আর তোলে না সে।

গতকাল রাতে ৩০৫ এর পেশেন্টের কন্ডিশন খারাপ হয়েছিল জানিয়েছিল হসপিটাল থেকে। আরএমও সামলে দিয়েছেন। নাহলে রাতেই ছুটতে হত।

সকালে চা খেতে খেতে খবরের কাগজে চোখ বোলানোটা একটা অভ্যেস নন্দনার। পুরো খবর পড়ে না কিন্তু হেডলাইনগুলোয় চোখ বোলানো চাই। মোবাইল বেজে উঠল সেই সময়।

নন্দনা আন্দাজ করেছিল হাসপাতালের ফোনই হবে। ঠিক তাই। " হ্যালো " বলতেই ওপাশ থেকে আরএমও ড. লাল বললেন, " ম্যাডাম, ৩০৫ এর পেশেন্ট ক্রিটিকাল। কাল রাতে খুব বেশি রকম কনভালশন হয়েছিল। আপনি কি একটু আর্লি আসতে পারবেন? "

" আসছি। " বলে ফোন কেটে দিয়েছিল নন্দনা। ঝটপট কাজ সেরে বেরিয়ে পড়ল সে। ভদ্রলোককে বাঁচানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না। লিভারটা পুরো বেগুনপোড়ার মতো হয়ে গেছে।

যেদিন থেকে নন্দনা অরিন্দম সরকারের কথা বলেছে আল্পনাকে, মা অদ্ভুতভাবে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে। মুখটা কালো। রাতে ঠিকমতো ঘুমোচ্ছে না। কেসটা কী বুঝতে পারছি না ঠিক। ড্রাইভ করতে করতে এইসব কথা ভাবছিল নন্দনা।


কেবিনে ঢুকে নন্দনা দেখল সিস্টার স্যালাইন চেঞ্জ করছে। পেশেন্টের চোখ বোঁজা। সিস্টার বলল, " ব্লাড প্রেশার অসম্ভব ফ্লাকচুয়েট করছে ম্যাম। অক্সিজেন স্যাচুরেশন এইটি ফোরে নেমে গেছিল। কাল আরএমও স্যার এই ওষুধ দুটো চালু করেছেন। "

যা যা নির্দেশ দেবার দিয়ে নন্দনা রাউন্ডে গেল। বলে গেল, " আমি ঘন্টাখানেক বাদে আর একবার আসব। "

ঘন্টা দেড়েক বাদে যখন ৩০৫- এ ঢুকল নন্দনা তখন অরিন্দম সরকার তাকিয়ে আছেন। নন্দনাকে দেখে মুখে লাগানো অক্সিজেন মাস্কটা হাত দিয়ে নামাবার চেষ্টা করলেন।

" আরে আরে হাত দেবেন না মাস্কে। " কাছে গিয়ে দাঁড়ালো নন্দনা। " অসুবিধে হচ্ছে? "

" আমার কিছু বলার আছে তোমাকে। " পেশেন্ট তুমি করে বলছে বলে অস্বস্তি হচ্ছে নন্দনার। বলল, " বলুন না, মাস্ক কিন্তু খোলা যাবে না। আমি ঠিক শুনতে পাব। "

" আল্পনার সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। " থেমে  থেমে বললেন অরিন্দম সরকার। চোখ বড় হয়ে গেল নন্দনার। কী বলছেন ভদ্রলোক! " মাস ছ-সাত আমরা বাড়ির মত নিয়ে ঘোরাফেরাও করেছিলাম।

" কলেজে পড়ার সময় থেকেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অ্যালকোহল খেতে শুরু করেছিলাম। চাকরি পেয়ে সেই নেশা বাড়ে। নিজের টাকা, কেউ কিছু বলার নেই।

" বাড়িতে কম অশান্তি হয়নি এই নিয়ে। তারপর সবাই মিলে ঠিক করল আমার বিয়ে দেবে। ওদের ধারণা ছিল,  বিয়ে দিলে হয়তো আমি ঠিক হয়ে যাব। মা, দিদিরা খোঁজাখুজি শুরু করল। আল্পনাকে পছন্দ হল। আমারও পছন্দ হল।"

থেমে গেলেন ভদ্রলোক। খুব ক্লান্ত। চোখ বন্ধ করলেন। অবাক হয়ে শুনছিল নন্দনা। এই জন্যেই মা নাম শুনে কেঁদেছে। কিন্তু বিয়েটা হয়নি কেন?

" মি. সরকার। " নন্দনা হালকা করে ডাকল। চোখ খুললেন ভদ্রলোক। " আমি আল্পনাকে প্রস্তাব দিই আলাদা দেখা করার। নিজের পছন্দ অপছন্দ বুঝে নিলে সুবিধে হবে দুজনেরই। আল্পনা রাজি হল।

" যেদিন দেখা করতে যাব, উৎসাহের আতিশয্যে আমি দুপেগ খেয়ে নিলাম। তারপর গেলাম দেখা করতে। সেদিন আল্পনা কিছু বুঝেছিল কিনা জানি না। তারপর আমরা আরও পাঁচ ছ'বার দেখা করি।

" আল্পনাকে যতবার দেখতাম, নতুন করে ভালো লাগত। এরপর একদিন দেখা করার কথা। সেদিন সকালে আল্পনার একটা দুলাইনের চিঠি পেলাম। ' এ বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। '

" আমি হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। একটু তো ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। তার পরেও হঠাৎ কী হল! আমি সোজা চলে গেলাম আল্পনাদের বাড়ি। সরাসরি জিগ্যেস করলাম ওকে, ' কেন আমাকে বিয়ে করতে পারবে না জানতে পারি? পাত্র হিসেবে কোথায় খামতি আমার?'

" আল্পনা খানিক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ' মদ আমার ভালো লাগে না। প্রতিদিনই আপনি ড্রিঙ্ক করে এসেছেন। আমি বুঝতে পেরেছি। এ আমি মানাতে পারব না। আমাকে বিয়ে করে  আপনি সুখী হবেন না।' আমি সেই মুহূর্তে বলতে পারিনি যে, আমি মদ খাওয়া ছেড়ে দেব, তুমি তোমার কথা ফেরত নিয়ে নাও। বিয়েটা হল না।

" আল্পনার বিয়ের খবর পেয়েছিলাম বেশ কিছুদিন পর। আমি আরও আরও ডুবে গেলাম তরলে। বিয়ে করে উঠতে পারলাম না কারণ আল্পনাকে ভুলতে পারছিলাম না।

" সেদিন তোমাকে  দেখে মনে হল, আল্পনা এসে দাঁড়িয়েছে আমার সামনে। আমি চমকে গেছিলাম। যাইহোক, অনেক সময় নষ্ট করলাম তোমার । কিছু মনে কোরো না।  "

" আমি বিকেলে এসে দেখে যাব একবার। " কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল নন্দনা।

সাড়ে পাঁচটার সময় ৩০৫- এ ঢুকল নন্দনা। দেখল বেডের মাথার দিকটা ওঠানো। তাকিয়ে আছেন মি. সরকার। " কেমন আছেন? পেইনটা কমেছে? আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। "

" একটু কম আছে ব্যথা। কোমরটা ব্যথা করছে। সারপ্রাইজ? এখন আর কী সারপ্রাইজ থাকবে আমার জন্য। জাস্ট কাউন্টিং দ্য ডেজ..."

কেবিনের দরজা খুলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আল্পনাকে ঢুকিয়ে নেয় নন্দনা। " দেখুন, কাকে নিয়ে এসেছি। "

বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে থাকেন অরিন্দম সরকার। অস্ফুটে উচ্চারণ করেন " আল্পনা! "

আল্পনার দুচোখ ভরা জল। অরিন্দমের কাছে দাঁড়িয়ে বললেন,  " সেরে উঠুন তাড়াতাড়ি। তারপর আসবেন আমাদের বাড়ি। "

" আমি ভালো হব তো ডক্টর। এই নেমন্তন্নটা আমাকে রাখতেই হবে। "
......................
 
অলঙ্করণ :-  প্রিয়াঙ্কা সরকার

 

জেদ - চুমকি চট্টোপাধ্যায়

 জেদ
চুমকি চট্টোপাধ্যায় 

 




প্রবালের রোগটা সারল না। সে এক অদ্ভুত রোগ। রোগের নাম ' জেদ '। তিপ্পান্ন বছর বয়েস হল, প্রবালের জীবনের অনেক কিছুই বদলালো কিন্তু জেদ থেকে গেছে অনড় হয়ে। যেমন ছিল ছ বছর বয়েসে, তেমনই আছে তিপ্পান্নতে।

প্রবাল আমার ছোট্ট বয়েসের বন্ধু। ক্লাস ওয়ানে দুজনে একসঙ্গে ভর্তি হয়েছিলাম সেন্ট সেবাস্টিন স্কুলে। স্কুলের প্রথম দিনেই আমার ওয়াটার বটল দেখে 'ওটাই চাই' বলে এমন বায়না  শুরু করল যে, ওর বাবা একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। বাকি অভিভাবক যাঁরা ছাড়তে এসেছিলেন বাচ্চাদের, তারা গা ঠেলাঠেলি করতে লাগলেন। ' কি বাচ্চারে বাবা, বাড়ির শিক্ষা নেই মনে হয়। ' -- এমন সব কথা ঘুরতে লাগল আশেপাশে।

আমার কী মনে হয়েছিল জানি না, আমারই মতো একটা ছেলেকে কেঁদে কেটে লালা হয়ে যেতে দেখে নিজের ওয়াটার বটলটা  এগিয়ে দিয়েছিলাম ওর দিকে। তাতে ওর কান্না থেমে গিয়ে অনাবিল হাসিতে ভরে উঠেছিল মুখ। ওর বাবা প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে গেছিলেন। আমার বাবাকে বলেছিলেন, ' এতটুকু ছেলের এমন স্যাক্রিফাইস আমি কোনোদিন দেখিনি। অত্যন্ত ভালো ছেলে আপনার। ' আমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ' তোমার নাম কী?'
' সপ্তক। '
' তুমি খুব ভালো ছেলে। গড ব্লেস ইউ মাই বয়।'

পরের দিন একদম একরকম দেখতে একটা নতুন ওয়াটার বটল কিনে আমাকে দিয়েছিলেন প্রবালের বাবা। সেই থেকে আমার আর প্রবালের বন্ধুত্ব।  প্রবাল খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিল। পড়াশোনায় ভালো, স্পোর্টসে ভালো, এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতেও খুব ইন্টারেস্ট ছিল প্রবালের। স্কুল ম্যাগাজিনে নিয়মিত পার্টিসিপেট করত ও।

কেজি লেভেলে ছবি আঁকত, ক্লাস ফোর-ফাইভে ছড়া লিখত। তারপর তো রীতিমতো গল্প লিখতে শুরু করেছিল।  সেটা মনে হয়, ক্লাস নাইন ফাইন হবে। সবাই প্রশংসা করত কিন্তু শেষ করত ' সবই ভালো কেবল ওই মাথার গোলমালটুকু ছাড়া ' বলে।

প্রবাল আমাকেও খুব উৎসাহ দিত। ' সপ্তক, এবারের স্কুলের অ্যানুয়াল প্রোগ্রামে তুই গান করবি। করবিই। বুঝেছিস? কি ভালো কাজী নজরুলের গান গাস তুই। আমি তোর নাম দিয়ে দেব।'

না বলার উপায় থাকত না। কারণ ওর জেদ। জেদ চাপলে  এমন করতে শুরু করত যে হুলুস্থুল কান্ড বেধে যেত স্কুলে। স্কুলের বেশিরভাগ ছেলেই ব্যাপারটা নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করত। ইচ্ছে করে ওকে খোঁচাত। উত্তেজিত করার ফন্দি করত। আমি আগলে রাখার চেষ্টা করতাম। যখন ওর জেদ চাপত তখন এমন লাল হয়ে একই কথা বারবার বলত যে, আমার ভয় তো  লাগতই আবার মায়াও লাগত।

ছোট বয়েসে জেদ করাটা তবুও মানায় কিন্তু বড় হয়ে গেলে মনে হয় যেন ইচ্ছে করে এরকম করছে। বেশির ভাগ মানুষই রেগে যেত প্রবালের কান্ড দেখে কারণ চেহারায় বেড়ে গেলেও জেদ তার জায়গাতেই থেকে গেছিল।

প্রবালের বাবার ধারণা হয়েছিল, জেদ ব্যাপারটা ওর একটা অসুখ আর তার ওষুধ এই আমি। তাই, ক্ষণে অক্ষণে আমার ডাক পড়ত কখনো প্রবালদের বাড়িতে তো কখনো রাস্তাঘাটে।

কতশত যে এমন মাথামুন্ডুহীন জেদের ঘটনা ঘটেছে তার সবকটা এখন আর মনে নেই। দু একটা স্মৃতিতে গেঁথে আছে। যেমন ট্রামে চড়ার একটা ঘটনা।

তখন আমরা সম্ভবত ক্লাস সিক্সে পড়ি। স্কুলের অ্যানুয়াল পরীক্ষা চলছে। প্রবালের খ্যাপামো যদি কোনো কারণে শুরু হয় সেই ভয়ে পরীক্ষার সময়ে ওর বাবা ওকে স্কুলে দিয়ে এবং নিয়ে যেতেন।

সেদিন পরীক্ষা শেষে বাবার সঙ্গে রাস্তা পার হবে বলে দাঁড়িয়ে ছিল প্রবাল। একটা ট্রাম আসছে দেখে ওর জেদ চাপল সেটায় উঠবে। মেসোমশাই বোঝালেন ওটা উল্টোদিকের ট্রাম, ওতে উঠলে বাড়ির বিপরীতে চলে যেতে হবে। কিন্তু তখন প্রবাল আর নিজের মধ্যে নেই। প্রবল হয়ে উঠেছে ওর জেদ। মেসোমশাইয়ের হাত ছাড়িয়ে প্রায় ছুটে যায় ট্রামে উঠবে বলে। রাস্তায় দাঁড়ানো লোকজন হই হই করে ওঠে ' গেলো গেলো ' করে। উপায় না দেখে সেই ট্রামে ওকে নিয়ে উঠতে বাধ্য হন ওর বাবা।

অফিস ছুটির জ্যামে পড়ে সেদিন বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়েছিল প্রবালদের। পরের দিনের পরীক্ষার রিভিশন ঠিকমতো করে আসতে পারেনি ও। টেনশন করছিল তাই। আমি বললাম, ' তুই তো জিনিয়াস। রিভাইস না করলেও তুইই হায়েস্ট পাবি। ' আমার কথা শুনে খুশি হল প্রবাল। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ' তুই আমার একমাত্র ভালো বন্ধু। বেস্ট ফ্রেন্ড! আমরা সারা জীবন বন্ধু থাকব। থাকবি তো আমার বন্ধু?'
' একদম। ইয়ে দোস্তি হাম নহি তোড়েঙ্গে...। '
হোহো করে হেসে উঠলাম দুজনেই।

অদ্ভুত ভাবে, একই কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি আমরা। যদিও আমার ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কিন্তু কিছু অসুবিধের কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। চাকরির ব্যাপারে অবশ্য দুজন দুই কোম্পানিতে কাজ পেলাম। কিন্তু অফিস হল একই পাড়ায়। এসপ্ল্যানেড। ফলে আসা যাওয়া একই সঙ্গে করতাম আমরা।

আর একটা মারাত্মক ঘটনার কথা ভুলতে পারি না আমি। দু বাড়ি থেকেই তখন আমাদের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। পুলক জাগছে আমার অন্দরেও। প্রবালের এ বিষয়ে তেমন কোনো উৎসাহ দেখতাম না। আমার একটা সম্বন্ধ প্রায় পাকা হবার মুখে। বাবা, মা, বোনের পছন্দ হয়েছে। এবার আমার পালা।

যেদিন দেখতে যাব সেদিন কি মনে হতে প্রবালকে বললাম সঙ্গে যেতে। বাড়ির সবাই ভীষণ রাগ করল। যে ছেলের যখন তখন জেদ চাপে, তাকে নিয়ে এরকম জায়গায় কেউ যায়! আমারও তখন টেনশন হতে শুরু করল। কেন যে বলতে গেলাম। এখন আর মানা করতে পারব না। যা থাকে কপালে বলে বেরিয়ে পড়লাম প্রবালকে নিয়ে।

যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধে হয়। বুঝে গেছেন তো ঘটনাটা কী ঘটেছিল। আমাদের বাড়ির পছন্দ করা পাত্রীকে ও বিয়ে করবে বলে জেদ ধরে বসল।

না, ব্যাপারটা তা ঘটেনি। জেদ প্রবাল ধরেছিল ঠিকই। সে মারাত্মক অবস্থা। পাত্রীর বাড়ির লোক তো এই অ্যাম্বুলেন্স ডাকে তো সেই পাগলাগারদে নিয়ে যাবার গাড়ি ডাকে আর কি! শেষে অনেক কষ্টে আমিই ব্যাপারটা সামলাই এবং প্রবালকে ওখান থেকে বের করে আনি। ওর বক্তব্য ছিল, ' এই মেয়েকে তুই বিয়ে করবি না, ব্যাস। '  কী কারণে এই জেদ, ঈশ্বর জানলেও জানতে পারেন, প্রবালের সঙ্গে সে বিষয়ে কোনো কথা পরে হয়নি।

পাত্রীর বাড়িতে এমন কান্ড ঘটাতে তারা বিয়েতে পিছিয়ে গেলো। যদিও আমার এখানে কোনো দোষই ছিল না একমাত্র ওকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ছাড়া। কিন্তু ওদের হয়তো সেটাতেই মনে হয়েছে যে, আমিও সম্পূর্ণ সুস্থ নই। নাহলে জানা সত্বেও এরকম বন্ধুকে কেউ নিয়ে যায়!

এই ঘটনার বছরখানেক বাদে আমার বিয়ে হয়। প্রথম প্রথম আগ্রহ দেখালেও পরবর্তীতে প্রবালের বাড়ির লোক ওর বিয়ে দিতে সাহস পায় না। প্রবালও খুব যে একটা আগ্রহ প্রকাশ করত বিয়ের ব্যাপারে, তাও নয়। ও অবিবাহিতই থেকে গেলো।

আমার স্ত্রী রত্নাকে আমি বিস্তারিত বলে রাখাতে প্রবাল সম্পর্কে ও সতর্ক থাকত। মাঝেমধ্যেই চলে আসত প্রবাল, জমিয়ে আড্ডা দিতাম আমরা। বার দুয়েক প্রবালের প্রবল জেদের সম্মুখীন হয়েছে রত্না। একবার তো ফুলদানিতে রাখা গ্ল্যাডিওলা ফুল রত্নার খোঁপাতে গোঁজার জেদ চাপলো ওর। সে কি বিপদ!

রত্নাই শেষে সামলালো ব্যাপারটা। একটা স্টিক বের করে কাঁচি দিয়ে ডান্ডি ছোট করে খোঁপায় গুঁজে এসে দাঁড়াল। তাই দেখে জোঁকের গায়ে নুন পড়ার মতো গুটিয়ে গেল প্রবাল। এই মধ্যবয়েসে আবারও একবার ওর জন্য মায়া লাগলো আমার। এটা হয়তো সত্যিই একটা অসুখ। নাহলে এতদিনে ঠিক হয়ে যেত। জীবনটাই অন্যরকম হয়ে গেলো ছেলেটার।

একসময় অনেক ডাক্তার দেখিয়েছিলেন প্রবালের বাবা। কিন্তু জেদ সামলানোর ওষুধ কেউ দিতে পারেনি। নার্ভ ঠান্ডা করার ওষুধ দিয়েছিল কেউ একজন। সেই ওষুধ খেয়ে সারাদিন ঘুমতো প্রবাল। আসলে, জেদ তো ওর সবসময়ের সঙ্গী ছিল না, কখনো সখনো চাপত। সমাধান কিছু হয়নি তাই।

কেটে যাচ্ছিল দিন ভালো-মন্দ মিশিয়ে। হাফ সেঞ্চুরি পার করলাম আমি আর প্রবাল। মাস তিনেকের ছোট-বড় ছিলাম আমরা। রত্না বলল, ' প্রবালদাকে ডাকো  বাড়িতে। আমি মাটন বিরিয়ানি আর চিকেন রেজালা বানাচ্ছি, পঞ্চাশে পেরনোর সেলিব্রেশন হোক।' হইহই করে কাটলো সেই সন্ধেটা যদিও সেদিন আমাদের কারুরই জন্মদিন ছিল না।
 
এরপর কেটে গেছে আরো তিনটে বছর। এক সকালে ফোন এলো প্রবালের বাড়ি থেকে, প্রবাল গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেড নং ইত্যাদি জেনে বিকেলে অফিসের পর গেলাম প্রবালকে দেখতে। নাকে অক্সিজেন মাস্ক, স্যালাইন চলছে, আরো নানান যন্ত্রপাতি লাগানো দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এত বছরে শারিরীক ভাবে তেমন অসুস্থ হতে দেখিনি ওকে।

আমাকে দেখে হাত নাড়ল। বেডের পাশে চেয়ার নিয়ে বসলাম। মাস্কে মুখ ঢাকা থাকাতে কথা বিশেষ বলতে পারছিল না প্রবাল। তাছাড়া একটা আচ্ছন্ন ভাবও ছিল। সিস্টারকে জিগ্যেস করে জানলাম সিওপিডি। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে আর কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে গেছে। সিস্টারকে আমার ফোন নম্বর দিয়ে বললাম, ' প্রয়োজনে আমাকে ফোন করবেন। '

পরের দিন কাজের চাপে অফিস থেকে বেরতে দেরি হয়ে গেল বলে প্রবালকে দেখতে যেতে পারলাম না। ভিসিটিং টাইম শেষ হয়ে গেছে। আগামীকাল যাবই ভেবে বাড়ি ফিরলাম। রত্না গেছে ওর দিদির বাড়ি। এক সপ্তাহ কাটিয়ে ফিরবে। ও থাকলে রোজই যেত প্রবালকে দেখতে।

ঘুমের ভেতরে মনে হল মোবাইল বাজছে। হুঁশে ফিরে তড়িঘড়ি ফোন ধরলাম। অ্যাতো রাতে কার ফোন রে বাবা!
' হ্যালো? '
' আমি মিশন হসপিটাল থেকে বলছি। আপনি মিস্টার সপ্তক সোম বলছেন তো?'
' হুম।' হৃৎপিণ্ডের শব্দ কানে বাজছে। প্রবালের কিছু হলো নাকি?
' স্যার, আপনাকে একবার আসতে হবে হাসপাতালে। মিস্টার দত্তকে সামলানো যাচ্ছে না। আপনাকেই পাশে চাইছেন উনি। এত উত্তেজিত হয়ে পড়াতে সমস্ত প্যারামিটার গোলমাল করছে। ডক্টর হাসান আপনাকে খবর দিতে বললেন। এই সময় আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আন্তরিক দুঃখিত।
খানিক্ষণ সময় নিয়ে বললাম, ' ওকে, আসছি।'

বেডসাইড টেবিল থেকে মোবাইলটা নিয়ে অন করে দেখলাম চারটে পঁচিশ। একটু পরেই ভোরের আলো ফুটবে। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেরব ঠিক করলাম। আধঘন্টা শুয়ে নিই। নিশ্চই প্রবালের জেদ চেপেছে আবার। কিন্তু ওই অত যন্ত্র লাগানো চারদিকে, তার মধ্যে কী এমন করছে যে ডাক্তার, সিস্টাররা মিলে সামলাতে পারছে না? আমাকে দেখলেই কী শান্ত হবে? জেদের চাহিদা না মেটা পর্যন্ত তো থামে না দেখে আসছি এতকাল ধরে। এই সব ভাবতে ভাবতে পাঁচটা বেজে গেলো। উঠে পড়লাম।

কেবিনের দরজা ঠেলে ঢুকতেই থমকে গেলাম। ডাক্তার সিস্টার মিলিয়ে জনা পাঁচেক মানুষ ঘিরে রয়েছে প্রবালকে।  উত্তেজিত ভাবে কথা বলছে নিজেদের মধ্যে। একজন সিস্টার ঘুরে আমাকে দেখতে পেয়ে বলল, ' আপনি...  মি. সোম তো? অ্যাতো দেরি করলেন কেন? উনি তো পাগলের মতো আপনার খোঁজ করছিলেন। আসুন, এদিকে আসুন।

এগিয়ে গেলাম প্রবালের বেডের দিকে। ছ নম্বর অনুভূতি জানান দিল, প্রবালের শেষ অবস্থা। চোখ যেন ঠেলে বেরিয়ে আসছে। আমাকে দেখতে পেয়েই হঠাৎই চিৎকার করে উঠল, ' আমি যাচ্ছি, তোকে নিয়ে যাব। ' তারপরেই কেমন নেতিয়ে পড়ল।

উপস্থিত সিসটারদের একজন বলল, সারাদিন এই কথাটাই বলে গেছেন উনি। ' সপ্তক আসছে, একসঙ্গেই গন্তব্যে যাব আমরা। ' 

.....................

Chumki Chatterjee

অলঙ্করণ :-  সহিষ্ণু কুড়ি