খেলাঘর - টুম্পা বিশ্বাস

 

খেলাঘর
টুম্পা বিশ্বাস 
 

 


ঘুম ভাঙতেই বিছানা ছেড়ে করে উঠে বসল অবন্তী। পায়ের পাতাটা নামিয়ে দিল ঠাণ্ডা মেঝেতে। মেঝেটাকে ছুঁয়ে সে বুঝতে চাইল যে তার স্বপ্নটা ভেঙে গেছে। ছোটবেলা থেকেই একটা মানসিক ব্যাধির শিকার সে। রাতের পর রাত বিভিন্ন ধরনের, বিচিত্র আদলের দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠে অবন্তী,প্রায়ই । এখন এতটা বয়স হল, তবুও দুঃস্বপ্নের থাবা থেকে নিজের ঘুমটাকে বাঁচাতে পারেনি সে। বয়সের সাথে সাথে দুঃস্বপ্নের তীব্রতা, রঙ, গন্ধ, স্পর্শ বদলেছে কেবল ।

ছোটবেলায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে দেখতো যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে প্রশ্ন সব চেনা অথচ তার কাছে কোন কলম নেই। কারো কাছে চেয়েও সে কলম পাচ্ছে না। তাই চেনা প্রশ্নের জানা উত্তরগুলো খাতা অব্দি লেখা হয়ে উঠছে না আর। 

স্কুলের গন্ডি পার হবার পর যখন পৃথিবীটা সবে একটু একটু করে আরও বড় হচ্ছিল, যখন কলেজের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলোতে ফুল ফুটলে মনে হতো যে ওরা বুঝি অবন্তীর জন্যই ফুটছে,যখন মনটা আরেকটু রঙিন  হচ্ছিল, পরিণত হচ্ছিল অবন্তীর, তখন প্রায়শই সে স্বপ্ন দেখত,তার পছন্দের যুবককে সে মনের ভাব ব্যক্ত করতে গেছে আর যুবক জানাচ্ছে যে সে ইতিমধ্যেই অন্যের কাছে দায়বদ্ধ। সেই স্বপ্ন এতবার দেখেছে অবন্তী যে শেষমেশ আর যুবককে মনের কথা জানানোই হয়ে ওঠেনি কোনদিন।  

তারপর একসময়  শিক্ষাগত যোগ্যতাকে ঝুলিতে ভরে  বারবার, বিভিন্ন ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে বসতে হয়েছে অবন্তীকে। প্রত্যেক ইন্টারভিউয়ের আগের রাত্তিরে ঘুমোতে ভয় পেয়েছে অবন্তী। প্রহর গুনেই রাত কাটিয়েছে সে। তার মাঝে যখনই তন্দ্রা এসেছে চোখের পাতায়, তখনই অবন্তী দেখেছে কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষগুলোর সামনে তাকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। কখনো কখনো দেখেছে ইন্টারভিউ বসেছে পাহাড়ি গুহায়। একবার এমনও দেখেছিল অবন্তী যে, প্রশ্নের জবাব দিতে না পারায় তাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে ইন্টারভিউ রুমে।

স্বপ্নগুলো জেগে থাকা অবস্থায় যতটাই হাস্যকর মনে হোক না কেন, ঘুমের পর্দার আড়ালে সেগুলো হৃদপিণ্ডটাকে জোরে চেপে ধরত। মনে হত শ্বাসরোধ করে মারবে তারা অবন্তীকে।

আজও ঘুম ভাঙতে একটু সময় লাগল অবন্তীর,ধাতস্থ হল ধীরে ধীরে। ঘুমের শেষ ছোঁয়াটুকু মুছে নিয়ে চোখ মেলে ও তাকিয়ে রইল অভিনবর মুখের দিকে। ঘুমন্ত অভিনব এখনও শান্তির দেশে। অবন্তীর দুঃস্বপ্নের অস্থিরতা টের পায়নি ও।বিয়ের পর পর যখন অবন্তী ঘুম ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে বিছানায় উঠে বসত মাঝরাতে, অভিনব তখন স্নেহের স্পর্শে অবন্তীর ভয়,আতঙ্ককে লাঘব করে দিত।তারপর একসময় একঘেয়ে হয়ে যায় ব্যাপারটা।এখন অভিনবর আঙুল অভিযোগের ভঙ্গিতে ওঠে অবন্তীর দিকে।
"সারাদিন মাথার মধ্যে যত নেতিবাচক কথা নিয়ে খেলা করো।সেগুলোই স্বপ্নে ফিরে আসে।জীবনের রোদ নিয়ে, সুগন্ধ নিয়ে ভাবো,দেখবে দুঃস্বপ্ন পালাবে।"
অবন্তী যুক্তিটা বোঝে। কিন্তু মনের মধ্যে চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালানো আশঙ্কার তীরগুলো, দুশ্চিন্তার কালো হাতগুলো অবন্তীকে ইতিবাচক হতে দেয় না।
একটু তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে আজ।অনেকটা দূরের পথ।কিন্তু দূরত্বটা সমস্যা নয়।মনের মধ্যে দুলতে থাকা প্রশ্নগুলোই সমস্যা। আদৌ কি গিয়ে লাভ হবে কিছু? 

এই প্রথম অভিনবকে না জানিয়ে এতবড় সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিয়ের পর থেকে অভিনব এত বেশি অবলম্বন দিয়েছে যে অবন্তীর মনটা লতানে গাছের মতো হয়ে গেছে। শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াবার প্রয়োজনটাই আর বোধ করা যায় না।

অথচ বিয়ের আগে পর্যন্ত অবন্তীকে লড়তে হয়েছে বাঁচার জন্য।তিয়াসাকে বারবার রাস্তাঘাটে, পাড়ায় বেপাড়ায় উত্যক্ত করত বলে সুবিনয়কে একবার প্রচন্ড অপমান করেছিল অবন্তী।ব্যাপারটা পুলিশ অব্দি গিয়েছিল।লোকসমাজে মাথা নীচু হয়ে যাওয়ার কারণে সেসময় কত হুমকি দিয়েছে সুবিনয়।ফোনে,নামবিহীন চিঠিতে।তবু পাখির মতো ডানা ছড়িয়ে বোনকে আড়াল করে গেছে অবন্তী।তার আগে বাবা চলে যাওয়ার পর মার যাবতীয় প্রাপ্য, পেনশন সব যোগাড় করে এনেছে। সব কাগুজে জটীলতা মিটিয়েছে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। তারপর চাকরিটা জোটার পর নিজের পাগুলো শক্ত মাটি পাবে ভেবে হাঁফ ছেড়েছিল মনে মনে।অথচ তারপরও জীবনের একটা ভুল সিদ্ধান্ত আবার নড়বড়ে করে দিয়েছিল মনের ভিতর থাকা মাটির কুঁড়ে ঘরটাকে।

সেসময় কত রাতে স্বপ্নে শিউরে উঠত।দেখত কে যেন তার গায়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে অ্যাসিডের ধারা।ও পালাতে চেয়েও পারছে না।বহুদিন পর্যন্ত ওর ধারণা ছিল যে সুবিনয় এত সহজে ওকে ছেড়ে দেবে না।পুরো পরিবারটার অস্তিত্বের ওপরই ঝুলে থাকত এক অদৃশ্য প্রশ্নচিহ্ন। কবে, কোন সু্যোগে নেমে আসবে খাঁড়া, অহরহ এটাই ছিল অবন্তীর ভাবনা।

কিন্তু তেমন কিছুই হল না।জীবন নিজের খাতেই বয়ে চলল।তিয়াসা নিজের পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছে। অমল সত্যি সহৃদয় যুবক।শাশুড়ি একা মানুষ হওয়ার সুবাদে সে তিয়াসাকে হরণ করে নিয়ে যায় নি বিয়ের পর। তিয়াসা বাপের বাড়িতেই থাকছে।অমল নিজের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ির তাল মিলিয়ে দু বাড়িতেই বসত করে ঘুরেফিরে।

বোনটার থিতু হওয়ার পর অবন্তীও বেছে নিয়েছে অভিনবকে।বৃক্ষের মতো,ছাদের মতো,ছাতার মতো অভিনব সাথে থেকেছে, রক্ষা করেছে।আজ অবশ্য অভিনবর অজান্তেই অবন্তী যাবে গল্পের পুরনো পাতাগুলো আরও একবার উল্টে দিতে।অফিসে যাওয়ার নাম করে অবন্তী বেরোয়।অভিনবও অফিসের জন্য তৈরী হচ্ছিল। অভিনবর পরিণত চোখগুলো অবন্তীর মধ্যে কিছু অসহজতা টের পেল।
"আজ একটু এলোমেলো লাগছে তোমায়?শরীর ঠিক আছে?" অভিনব জানতে চায়। 
"হ্যাঁ,ঠিক আছে। " কোনরকমে জবাব দেয় অবন্তী,অসহজ হয়েই।
"আর মন?" অভিনবর গভীর দৃষ্টি মাপতে থাকে অবন্তীকে।
"মনের কথা নিয়ে অত মাথা ঘামালে চলে?তুমিই তো বলো মনকে কম গুরুত্ব দিতে।" একটু খোঁচা লুকিয়ে থাকে অবন্তীর কথায়। 
"তাহলে মানছো যে মন খারাপ? "

এরপর আর অবন্তী সাড়া দেয়নি।এর বেশি বললে অভিনব ঠিক তার কাছ থেকে সত্যিটা আদায় করে নেবে।অবন্তী তাই নিজের কাজগুলো গুছিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।এখন বাসের জানলার ধারের জায়গাটা দখল করে বসে সে বাতাসের আদর খেতে খেতে রওনা হচ্ছে তার আজকের গন্তব্যের দিকে। মাত্র একটা সপ্তাহ তাকে আবার নতুন নতুন দুঃস্বপ্নের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যদি মনামির সাথে সেদিন হঠাৎ দেখা না হতো তাহলে এই চিন্তার ঢেউ তার জীবনে আছড়ে পড়ত না।

সেদিন অফিস থেকে বেরোতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর বাসও পাওয়া যাচ্ছিল না কোন কারণে। অবশেষে যে বাসটা এল তাতে চড়তে হলে রীতিমতো শক্তি প্রদশর্ন করতে হবে।উঠবে কিনা ভাবতে ভাবতেই অবন্তী হাতের ওপর একটা চেনা স্পর্শ পেয়েছিল।মনামির সাথে সেই বিয়ের আগে দেখা।মনামি চাকরি পেয়েছিল অবন্তীর বছর খানেক আগে।সেই সূত্রেই মনামি ব্যাঙ্গালোর চলে যায়। অবন্তীর বিয়েতেও থাকতে পারেনি।

সেদিন হঠাৎ দেখা হওয়ার রেশটা দুজনের কেউই হঠাৎ করে মিলিয়ে যেতে দিতে চায়নি।তাই একটা রেস্তোরাঁর ছিমছাম, নিরিবিলি পরিবেশে ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ হাতে দুজনে বসেছিল মুখোমুখি। ছেড়ে আসা মেয়েবেলার খুনসুটির গল্প শেষ হতেই চায় না।সেসবের মধ্যেই বর্তমান এসে পড়ে। মনামি এখনও স্বাধীন,অবিবাহিতা। পায়ে শিকল পরে নি।অবন্তী সুখী গৃহস্থের হাসি মুখে লেপে অভিনবর ছবি দেখিয়েছিল মুঠোফোনে। ছবিটা দেখে মনামি একটু স্তব্ধ হয়েছিল।

অবন্তী কারণ জানতে চাইলে মনামি আহত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেছিল,
"বিয়ের আর লোক পেলি না?"
এ কথার পরে হয়ত পুরনো বন্ধুত্বকে তালা বন্দী করে সেই মুহূর্তেই অবন্তী চলে আসত।হয়ত আর কোনদিন মনামির মুখদর্শনও করত না।কিন্তু মনামি আর অবন্তী ছোটবেলা থেকে একসাথে শৈশব,কৈশোর আর যৌবন ছুঁয়ে বড় হয়েছিল। আমের আচার আর স্বাবলম্বিতার স্বপ্ন একসাথে ভাগাভাগি করে বেঁচেছিল তারা।কাজেই হঠাৎ মনামির এমন মন্তব্যের কারণ কি তা জেনে নেবার আগ্রহ অবন্তীকে দিয়ে প্রশ্ন করিয়ে নিয়েছিল।

"একথা কেন বলছিস?অভিনব আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে। তার আগে পর্যন্ত আমি শুধু লড়েই গেছি।সমাজের সাথে, ভাগ্যের সাথে, নিজের দারিদ্র্যের সাথে। অভিনব এসে আমাকে শিখিয়েছে লড়াই করার পর শান্তি নেমে আসে।সেই শান্তি সংসারকে ঘিরে থাকে পাখির ডানার মতো।ও ছাড়া আমি অচল।"

সেদিন মনামি অবন্তীর এই আবেগের স্রোত দেখে স্মিত হেসেছিল।তারপর খানিকটা বিষাদ কন্ঠস্বরে মেখে নিয়ে বলেছিল,

"আমাকে ভুল বুঝিস না।আমি তোকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। সুবিনয়ের সাথে সেই সরাসরি লড়াইয়ের দিনগুলোতেও দেখেছি তুই তিয়াসাকে বাঁচাতে কি প্রাণপণে লড়েছিস। তোর সম্মানবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তাই আবার অভিনবকে বেছেছিস দেখে আজ অবাক হলাম।"

অবন্তী মনামির কথাবার্তার যুক্তিটুকু বুঝতে পারছিল না।সে অবাক হয়েই জানতে চেয়েছিল, 
"সুবিনয়ের সাথে অভিনবর কি সম্পর্ক?"

মনামিও অবাক হয়েছিল এরপর।
"তুই জানিস না?সুবিনয়ের বাড়ির বিশাল বড় হলঘরটা ওদের অফিসঘর বা বৈঠকখানা বলতে পারিস।ওর বাবা তো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মকর্তা। হাজার মানুষ ওদের বাড়ি যায় প্রয়োজনে,অপ্রয়োজনে।আমিও একবার গিয়েছিলাম।ওদের ওই হলঘরের দেওয়াল জুড়ে বিশাল বড় ছবি আছে ফ্রেমে বাঁধানো। ছবিতে সুবিনয়ের সাথে কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে অভিনব।ওরা নাকি আশৈশব বন্ধু। "

কথাটা অবন্তীর মাথাটাকে টলোমলো করে দিয়েছিল।ঠিক যেভাবে ঢেউ দোলায় পালতোলা নৌকাকে তেমনই তার ভাবনাগুলো দোল খাচ্ছিল অস্থিরতায়।তবে কি অভিনব সুবিনয়ের সাথে তার সংগ্রামের কথা জানে না?কিন্তু না জানলেও কেন এতদিনের সহাবস্থানের পরও কোনোদিন সে অবন্তীকে তার আশৈশব বন্ধুর কথা বলে নি খেলাচ্ছলেও?

আজ তাই সুবিনয়ের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় অবন্তী।ভেবেছিল দারোয়ানের ঘর থেকেই ফিরতে হবে।সুবিনয় বাড়িতে ঢোকার প্রবেশাধিকার দেবে না।কিন্তু দিল।দারোয়ান ফোনে অবন্তীর পরিচয় জানানোর পরই তাকে ভেতরে যেতে বলা হয়।

বসবার ঘরটা একতলাতেই। বাড়িতে ঢোকার পর ওটাই সামনে পড়ে। ছবিটাও সসম্মানে দেওয়াল আলোকিত করছে,এখনও।সুবিনয় ঘরে ঢোকে খানিকটা বাদেই। 
-কেমন আছেন অবন্তী?এতদিন বাদে এখানে কি মনে করে? 
সুবিনয়ের গলায় পুরনো শত্রুতার রেশমাত্র নেই। 
-নিতান্ত প্রয়োজনেই এসেছি,অপ্রয়োজনে আসার সম্পর্ক তো নেই। 
অবন্তীর তিক্ততায় সুবিনয় হাসে।কিছু বলে না।অবন্তী ফের বলে,
-আমি এতদিন সুখী ছিলাম।ভেবেছিলাম লড়াইয়ের পাট চুকেছে,এবার শুধু শান্তি। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগে জানতে পারলাম যার হাত ধরে সুখের সন্ধানে চলেছি এতকাল সে বোধহয় শত্রুপক্ষের চর।অভিনব কেন আমাকে বিয়ে করেছে সুবিনয়?তাকে কাজে লাগিয়ে কি আপনি আমার পরিবারের আরও বড় ক্ষতি করবেন?আপনার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়েও সে আমার আর আপনার বিরোধের কথা না জেনে আমাকে বিয়ে করেছে এটা তো বিশ্বাসযোগ্য নয়।

এতখানি বলে অবন্তী হাঁপাতে থাকে।সুবিনয় তাকে শান্ত হতে সময় দেয়।তারপর মৃদু,মোলায়েম সুরে বলে,
-আংশিক জানাটা ভালো নয়।পুরোটা শুনুন তবে।অভিনবকে আমি কাজে লাগাই নি।ও আমাকে কাজে লাগিয়েছিল।
আপনার প্রতি ওর মুগ্ধতা পাগলামির শেষ সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল।কিন্তু পরিবারকে অগাধ জলে ডুবিয়ে আপনি যে ওর হাত ধরবেন না তা ও খোঁজ নিয়ে জেনেছিল।
বাবার মৃত্যুর পর আপনি যেভাবে তড়িঘড়ি পরিবারের হাল ধরেছিলেন তা দেখে ওর মুগ্ধতা আকাশ ছোঁয়।তিয়াসার বিয়ের ভার আপনার ওপর অথচ সে নিয়ে আপনার মাথাব্যথা নেই। তা দেখে ও আমাকে উত্যক্ত করে,ছক আঁকে।আমি তিয়াসাকে বিরক্ত করলে আপনি ওর জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করবেন এটাই ও ভেবেছিল।
আপনি যে পুলিশে চলে যাবেন তা ও ভাবেনি।আমার ওপর নানা কারণে ওর অনেক উপকার,দাবী।তাই ওর পাগলামিতে সায় দিয়ে কিছু অপ্রিয় কাজ করেছি।কিন্তু আপনি যদি ওকে ভুল বুঝে সরে যান তাহলে ও হয়তো নিজেকেই মুছে ফেলবে। যা পাগল ও! 

সে রাতে অভিনব বাড়ি ফিরলে অবন্তীকে দেখে অবাক হয়।বড় যত্ন নিয়ে সেজেছে অবন্তী।সিল্কের শাড়ি,চোখে কাজলের মায়া।বহুদিন বাদে সেদিন অবন্তীর গলায় সুর খেলা করে।
"খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে
কত রাত তাই তো জেগেছি বলব কী তোরে।।"
 
--------------------------- সমাপ্ত ----------------------------
 
অলঙ্করণ :- সহিষ্ণু কুড়ি