সৌদামিনীর দারোগা দর্শন
কৌশিক চট্টোপাধ্যায়
-আরে অলপ্পেয়ে, ড্যাকরা মিনসে এখানে কিসের দরকার?
সৌদামিনীর হুঙ্কার শুনে পটলের ল্যাজ থাকলে বোধহয় ল্যাজেগোবরে অবস্থা হত৷৷
-না মানে আমি পটল , পিসী চিনতে পারছোনা?
পটলের আর্তস্বর সৌদামিনীর কানে পৌঁছায় না৷
-ঝাঁটা দেখেছিস? ঝাঁটা…
পটল তো পালাবার পথ খুঁজছে৷
হঠাৎ সৌদামিনীর খেয়াল পড়ল যে চশমাটা চোখে নেই তাই কেমন ঝাপসা লাগছে৷ চেনাও যাচ্ছেনা লোকটাকে৷
-শেফালি, আমার চশমাটা নিয়ে আয় তো...
বৌমা শেফালি, গোয়াল থেকে ছুটে আসে৷
-যাই মা, এ নিন চশমা৷
সৌদামিনী চশমাটা চোখে গলিয়ে নেন৷বাঁ দিকের চশমার ডাঁটিটা নড়বড় করতে থাকে৷ এবার দরমার বেড়ার ওপারের মিনসেটাকে চিনতে পারেন সৌদামিনী৷
-ও তুই পটল না?
-হ্যাঁ পিসি কখন থেকে বলছি আমি পটল৷
সৌদামিনী পার্টটাইম কালা৷ কখনও শোনেন ভাল কখনও শোনেন না তবে কেউ ফিসফিস করে নিন্দে করলেও সেটা শুনতে পান ৷
ফোকলা দাঁতে কেঠো হাসি হেসে পটলার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন৷
-কী খবর রে পটলা ?কিছু বলবি?
-না মানে বিকেলের দিকে আমাদের বাড়ী যেও ৷মা বলে দিয়েছে৷
পটলার মা আশালতা সৌদামিনীর ছোটবেলার সই৷এই শামুকখোল গ্রামেই ভাগ্যচক্রে দুজনেই এসে পড়েছে বিয়ের পরে৷ তবে হ্যাঁ ,পার্থক্য একটা আছে ৷আশালতার বিয়ে হয়েছে বড় ঘরে ৷ সে তুলনায় সৌদামিনীর অবস্থা কিছুই নয়৷ বড় ঘর থেকে একেবারে সাপ লুডোর সাপের মুখে পড়লে যা হয় অনেকটা তাই ৷একেবারে পতন প্রায় পাতাল প্রবেশ বলা চলে৷
-যাবো রে পটল ,বাড়ীতে কিছু আছে না কি?
সৌদামিনীর গলায় এখন শুদ্ধ রে খেলা করছে৷মোলায়েম চিকন সুরে প্রশ্ন করে তাই৷
-মা আজকে চন্ডীখুড়োকে ডেকেছে, নামগান হবে ৷তাই তোমাকে যেতে বলেছে৷
পটলার বাবা অনাদির দুরসম্পর্কের বোন হবার সুবাদে পটলা সৌদামিনীকে পিসি বলেই ডাকে৷
পটলা চলে গেলে সৌদামিনী রান্নাঘরে যায়৷ এ গ্রামের সবাই সৌদামিনীকে ভয় পায় ৷ভয় পায় তার বাক্যবাণ আর গালাগালিকে ৷নিন্দুকেরা বলে ঝগড়াতে সৌদামিনীর ব্ল্যাকবেল্ট আছে৷বাড়ীতে কাক চিল বসেনা সে তো ঐ গলার জোরে৷
তাতে সৌদামিনীর ভালই হয়েছে ৷মনের সুখে শীতের রোদে যখন বড়ি দেয়, আচার করে তখন আর কেউ এ বাড়ীর ছায়াও মারায় না৷ পশু পাখী সবাই এড়িয়ে চলে সৌদামিনীকে৷
যতই হক কার মেয়ে দেখতে হবো না !
ডাকাত ধরা মায়ের মেয়ে৷
এ বাড়ীতে পুরুষ মানুষ একজনই সে হল রতন৷ সৌদামিনীর ছেলে৷৷ বহু কষ্টে সব মরে একটা ছেলেই বেঁচে আছে ৷তবে সৌদামিনীর দুঃখ, রতন সৌদামিনীর স্বভাব পায়নি ৷বাপের দিকে গেছে৷ মিনমিনে পুরুষ সৌদামিনী সহ্য করতে পারেনা কিন্তু এমনই কপাল রতনের বাবা তপন দাস নিতান্তই ভাল মানুষ এবং মুখচোরা৷৷ অন্য ভাইরা বাবাকে ধরে জমির ভাগ নিয়ে নিয়েছে৷ সবার ভাল অবস্থা ৷তপন কিছুই মুখ ফুটে চাইতে পারেনি ৷
নে এবার! ফলটা দ্যাখ!
একটা কাঁচা বাড়ী , সামনে খোলা উঠোন তাতে তিনটে গাছ রাম শ্যাম যদুর মতই আম জাম আর কাঁঠাল, একটা টিউবওয়েল , টিন এর জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দরজাওয়ালা একটা চানঘর ,পায়খানা ,রান্নাঘর, দুটো ঘর আর গোয়াল নিয়ে সৌদিমিনীর সংসার৷
দু বছর হল রতনের বাবা মারা গেছে৷ নিন্দুকেরা বলে বিধবা সৌদামিনীর এরপর তেজও বেড়েছে মাত্রা দিয়ে৷
রতন দিল্লীতে কাজ করত ৷তারপর দেশে ভয়ঙ্কর রোগ এল ৷রতন তাই আবার ফিরে এসেছে গ্রামে৷শেফালি এ গ্রামেরই মেয়ে ৷বয়স অল্প ৷সৌদামিনী চোখে চোখে রাখে তাই৷ রতন বাড়ীতে থাকে না জমির কাজে বাইরে থাকে৷ উঠতি ছেলেরা দরমার বেড়ার ফাঁক দিয়ে শেফালিকে আড় চোখে দেখে ৷
ঐ পর্যন্তই ৷এর বেশী কিছু করার ক্ষমতা কারুর নেই ৷সৌদামিনীর সতর্ক প্রহরা৷
-শেফালি ,ভোলাকে খেতে দিয়েছ ?
শেফালি ছুটে আসে ৷
-হ্যাঁ মা ৷দিয়েছি খেতে৷
সৌদামিনী এখন আর গোয়ালে যাবে না৷ সকালে গোয়াল পরিস্কার করার পর ভোলার দায়িত্ব শেফালির উপর৷
সৌদামিনী ঘ্যাঁটকোল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ আজকের দুপুরে রান্না করবে৷
সৌদামিনীর মা নিস্তারিনীও সাংঘাতিক তেজী ছিলেন৷ একবার আঁশ বঁটি নিয়ে ডাকাত তাড়িয়েছিলেন৷ হারু ডাকাত ভয়ে তখন আম গাছের উপর উঠে পড়েছে নীচে নিস্তারিনীর বজ্র নির্ঘোষ শোনা যাচ্ছে সে এক কেলেঙ্কারিয়াস ব্যাপার৷
-আয়, বাপের ব্যাটা হলে নীচে নেমে আয় দেখাচ্ছি তারপর ৷
আসলে নিস্তারিনী শাড়ী পরে গাছে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন বটে তবে সফল হননি৷ সফল হলে হারু ডাকাতের কপালে অশেষ দুর্গতি ছিল৷ লখাই আর নিতাই মানে হারুর দুই সঙ্গীর হাতের আঙুল কেটে দিয়েছিলেন নিস্তারিনী৷ ৷
সে কবেকার কথা৷
সারা শরীরে রক্ত মাখা, নিস্তারিনী আঁশ বঁটি নিয়ে বনবন করে ঘুরোচ্ছেন , সবাই হাতজোড় করছে ...
মা কালির নতুন মূর্তি যেন সবাই চোখের সামনে দেখছে
হারু গাছের উপরে ঠকঠক করে কাঁপছে
-মা ঠাকরুন, পায়ে পড়ি ছেড়ে দিন ৷নাক মুলছি, কান মুলছি আর জীবনে ডাকাতি করব না ৷
নীচে নিস্তারিনী রাগে ফোঁসফোঁস করছেন৷ যারা সে দৃশ্য দেখেছিল তারা বলেছিল সেদিন নিস্তারিনীকে সত্যি মা কালি ভর করেছিল৷এবং প্রায় একঘন্টা এই গা ছমছমে নাটক অভিনীত হয়েছিল৷ সেই শীতের নির্জন রাতে গ্রামের সবাই সৌদামিনীদের বাড়ীতে চিৎকার শুনে হাজির হয়েছিল৷হ্যাজাকের আলোয় সবাই দেখেছিল উঠোনে রক্তের মধ্যে লখাই আর নিতাই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে৷পাশে তাদের সড়কি৷ ডানহাতের আঙুল কেটে ফেলেছিলেন নিস্তারিনী ৷
বিজন দারোগা, যাকে গ্রামের লোক বাঘের মত ভয় পেত তিনিও নিস্তারিনীর সাহস দেখে অবাক হয়েছিলেন৷
সৌদামিনীর মনে আছে বিজন দারোগা তার বাহিনী নিয়ে
এসেছেন৷
লখাই আর নিতাইকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে৷
হারু তো পুলিশ দেখে আনন্দে আত্নহারা হয়ে ৷চিৎকার করছে
-আমি এখানে ,আমাকে ধরুন... বাঁচান আমাকে ৷না হলে মরে যাবো৷ মা ঠাকরুন মেরে ফেলবে৷…
ইতিহাসে এমন বিরল নজীর খুব কম আছে যখন ডাকাত নিজেই পুলিশ কাস্টডি চায়৷
এ গল্প শেফালিকে বহুবার করেছেন সৌদামিনী ৷তবে দুঃখ একটাই এ বাড়ীতে ঐরকম ভয়ঙ্কর আঁশবঁটি নেই ৷
তাতে পরোয়া নেই সৌদামিনী একটা ধারালো দা সবসময় হাতের কাছে রাখেন ৷রতনের বাবাকে বলে করিয়ে নিয়েছেন ৷সেটা মাঝে মাঝে বনবন করে ঘুরিয়ে প্র্যাকটিশ করেন৷ অন্ততঃ শেফালি লুকিয়ে দেখেছে৷ তাছাড়া ছানি পড়া ঘোলাটে চোখ এখন না হয় হয়েছে তা না হলে বছর পাঁচেক আগেও হাতের গুলতি দিয়ে অনেক দূরের নিশানা ভেদ করতে পারতেন৷এখন অবশ্য গুলতি আর হাতে নেন না৷
সৌদামিনীর খুব ইচ্ছে এই ট্রেনিং তিনি শেফালিকে দিয়ে যাবেন৷ কারণ রতনের মধ্যে বারুদ নেই ৷একেবারে মিয়োনো পুরুষ অনেকটা নিজের বাবার মতই৷
-তা মা, তারপর কী হল?
সৌদামিনী বলতে থাকেন৷
-বুজলে শেফালি , বিজন দারোগা তো খুব খুশি ৷ এ জীবনে এরকম সাহসী দারোগা খুব কম দেখেছি৷ সব ডাকাতদের ঠান্ডা করে দিয়েছিল৷ হারুর কপাল মন্দ তাই সে রাতে আমাদের বাড়ী ডাকাতি করতে ঢুকেছিল৷ আমার বাবার ছিল মাছের ব্যবসা৷ পুকুর লিজ নেবে বলে টাকা নিয়ে পরের দিন সকালে নীলগঞ্জে যাবে৷ হারুর দল কেমন করে জেনেছিল৷ আমি তখন খুব ছোট ৷ আমরা শুয়ে পড়বো ৷মা রান্নাঘর গুছোচ্ছে৷ বাবা বারান্দায় তামাক খাচ্ছেন ৷এমন সময় মা রান্নাঘরের জানলা দিয়ে দেখতে পেলেন দূরে মশালের আলো৷
মা সাহসী ছিল৷ বুঝে গেছেন কী হতে চলেছে ৷
লখাই সিঁদকাঠি দিয়ে মাটির দেওয়াল গর্ত করে ভিতরে ঢুকবে আর সদরের দরজা খুলে দেবে ৷হারু তখন ভিতরে বিনা বাধায় ভিতরে ঢুকে আসবে৷ এই ভাবে ওরা ডাকাতি করত৷গ্রামে শীতের রাতে সবাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে৷
নিঝুম রাত৷ লখাই তো কাজ আরম্ভ করেছে মা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আঁশ বঁটি হাতে পাঁচিলের এ পাশে ৷সবে লখাই হাত দুটো ঢুকিয়েছে৷ ব্যাস! মা দিলেন এক কোপ ৷ডানহাতের তিনটে আঙুল আর নেই ৷
লখাই তো একবার আর্তচিৎকার করে মোটামুটি অজ্ঞান৷ মা লখাইকে টেনে নিয়েছেন এপাশে ৷নিতাই শব্দ শুনে ঢুকতে চেষ্টা করছে৷এবার নিতাই এর পালা৷ নিতাই সড়কি নিয়ে তবুও লড়ার চেষ্টা করেছিল৷ মার রণরঙ্গিনী মূর্তির কাছে খাপ খুলতে পারেনি৷ আঁশবঁটির কোপে হাত থেকে আঙুল সহ সড়কি মাটিতে৷ হারু প্রথমে বুঝতে পারেনি৷ মা নিজেই সদর দরজা খুলে দিয়েছিলেন৷
হারু যেই বাড়ীর ভিতর ঢুকেছে মা চিৎকার করে হারুকে আক্রমন করল ৷হারু দেখে নিয়েছে ততক্ষণে লখাই আর নিতাই রক্ত নদীর মধ্যে পড়ে আছে ৷
হারু অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড়াচ্ছে আর পেছনে আঁশবঁটি নিয়ে মা তাড়া করেছেন৷ তারপর হারু আমগাছে উঠে পড়ে৷ মা উঠতে পারেনি ৷শাড়ী পরে মেয়েমানুষের গাছে ওঠা মুশকিল ৷
পরে মা বাবাকে বলেছিল শাড়ী খুব বাজে জিনিষ ৷বিজন দারোগার মত প্যান্টালুন থাকলে হারুর দফা রফা করে দিতাম৷
বিজন দারোগার মত দাপুটে লোকও মার সাহস দেখে খুব প্রশংসা করেছিল৷ মা মেডেল পেয়েছিল ৷কাগজে ছবি ছাপা হয়েছিল৷
সৌদামিনী যতবার এ গল্প করেন গর্বে তার বুক ফুলে ওঠে৷ ঘোলাটে চোখ আনন্দে বুঁজে আসে৷ মুখে হাসি খেলা করে৷গর্বের হাসি৷
বিকেলে সৌদামিনী তৈরী হচ্ছেন পটলার বাড়ী যাবার জন্য ৷
রতনটা এখনো এল না কেন? তিনটের মধ্যেই তো চলে আসে জমি থেকে কাজ করে৷
যত্তসব৷কোথায় আড্ডা মারছে কে জানে৷ রতন এলে তবে নিশ্চিন্তমনে সৌদামিনী বের হতে পারেন৷ শেফালিকে একা রেখে যাবার সাহস পান না৷দিনকাল খুব বাজে৷ শেফালিরও একটু ছোঁকছোঁক স্বভাব আছে৷
-পিসী ও পিসী …
হঠাৎ কে ডাকছে যেন শুনতে পান সৌদামিনী৷
-শেফালি, কেউ ডাকছে না?
সৌদামিনী কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করেন ৷
-হ্যাঁ মা বাইরে কেউ ডাকছে
সৌদামিনী দাওয়া থেকে উঠে পড়েন৷হাতে দা টা নেন৷
-কে ?
-আজ্ঞে আমি কালু, পিসী
-কী দরকার ?
-রতনকে পুলিশ ধরেছে ৷বলছে ও নাকি আর্শাদের খেতের শ্যালো পাম্প চুরি করেছে৷ শিগগিরি পিসী থানায় যাও ৷
কালু হাঁফাতে হাঁফাতে বলে ৷
সৌদামিনী চোখে সর্ষের ফুল দেখেন৷ রতন গোবেচারা ছেলে ৷সে করবে চুরি ? কিন্তু ডাকাতের সাথে লড়াই করা যায় কিন্তু পুলিশের সাথে ? কিভাবে লড়াই করবেন ভাবতে থাকেন সৌদামিনী৷
এমনি ডাকাবুকো হলেও রতন তার একমাত্র দুর্বল জায়গা৷ চারটে সন্তান মারা যাবার পর শিবরাত্রির সলতে বলতে একমাত্র রতন৷
সেই রতনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে শুনে সৌদামিনী
কাঁদতে থাকেন৷
চোখের জল আর বাগ মানে না৷ চশমাটা চোখে দিয়ে ঠিক করেন না তাকে থানায় যেতে হবে৷ ৷পুলিশের সাথে কথা বলে একটা ব্যবস্থা করতে হবেই তাকে৷
-শেফালি তুই দরজাটা আটকে দে৷ আমি কালুর সাথে যাচ্ছি ৷
শেফালিও কাঁদতে থাকে৷
থানার সামনের পুলিশ গুলো সৌদামিনীকে ঢুকতে দেয়না ৷
সৌদামিনী বারবার বলতে থাকেন
-দে না বাবারা, একটু দেখা করব৷আমার রতন কোনও দোষ করেনি গো ৷ওকে কেন ধরে এনেছে তোমরা…
তারস্বরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন সৌদামিনী৷
পুলিশগুলো নির্বিকার ৷শুধু খৈনী ডলতে থাকে চেয়ারে বসে৷
সৌদামিনী নিজেও জানেন না তার কান্নায় ম্যাজিক আছে৷
এদিকে এসপি ব্যানার্জী সাহেব নীলগঞ্জ থানায় এসেছেন কিছুক্ষণ আগে৷বড়বাবু ঘোষ কোথায় স্যারকে বসাবেন বুঝতে পারেন না৷
-আপনারা সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোন... ডিসগাস্টিং,ওয়ার্থলেস...মিডিয়া বলছে ফরাসডাঙায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছে সাতজন মারা গেছে…
বড়বাবু মিস্টার ঘোষ ভয়ে ভয়ে মাথা চুলকোন ৷এসপি ব্যানার্জ্জী ভীষণ কড়া৷
-সরি স্যার ,এক্ষুনি ফোর্স পাঠাচ্ছি ৷
-উঁহু,নিজে যান৷ আমার একঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট চাই ৷
বাইরে হঠাৎ তীব্র কান্নার আওয়াজ আর চিৎকারে ব্যানার্জ্জী সাহেব অবাক হন৷ সৌদামিনীর কান্না তখন তীব্র৷
-বাইরে গন্ডগোল কেন?
বড় বাবু তাড়াতাড়ি বাইরে যান জানতে
-স্যার, একটা বুড়ী দেখা করতে চাইছে ৷ওর ছেলে লকআপে ৷বুড়ী কাঁদছে আর বলছে ছেলে নির্দোষ৷
ঘোষবাবু কাঁচুমাচু মুখে বলেন৷
-পাঠান তো আমার কাছে ৷কী বলছে দেখি?
সৌদামিনী এসেই সোজা ব্যানার্জ্জী সাহেবের পায়ের উপর পড়ে৷
-আরে !আরে !কী হয়েছে?ছাড়ুন পা ছাড়ুন..
-বাবা, আমার রতনকে ধরে এনেছে বিনা কারণে আজ জমি থেকে...৷
-কী কেস ঘোষবাবু?
-স্যার ,শ্যালো পাম্প চুরি হয়েছিল আর্শাদের জমিতে সেখানেই রতনকে দেখে মেজবাবু তুলে এনেছে ৷মানে ..
ঘোষ সাহেব তোতলাতে থাকেন সাহেবের সামনে৷
-প্রমাণ আছে ?কেউ দেখেছে চুরি করতে?
-না ৷মানে ..
ব্যানার্জী সাহেব বুঝে যান৷
এ অত্যাচার গ্রামে অহরহ হয়৷যদুর বদলে মধু ,গোঁজামিল দেওয়া অঙ্ক৷ মাথা গোনার অঙ্ক ৷চোর খুঁজে না পেলে অন্য একজনকে ঢুকিয়ে দেওয়া৷
-ছেড়ে দিন এক্ষুনি ৷ওয়ার্থলেস৷আসল চোর, ডাকাত ধরুন৷কাজে দেবে৷
বুড়ী অবাক হয়ে দেখে ,কনস্টেবলরা লকআপ থেকে রতনকে বার করে৷ বড়বাবুও এসপির চিৎকারে কেঁপে ওঠেন৷
জলভরা চোখে সৌদামিনী এগিয়ে আসে ব্যানার্জ্জী সাহেবের দিকে
-কিছু বলবে?
সৌদামিনী শুধু হাত তুলে বলে
-আশীর্বাদ করি খুব উন্নতি হোক৷তুমি দারোগা হও৷
এস পি ব্যানার্জী সাহেব হতবাক হয়ে থাকেন৷ দারোগা পদের সম্মান আর মাহাত্ম্যকথা তার বোধগম্য হয় না৷
সৌদামিনী রতনকে নিয়ে হাঁটতে থাকে বাড়ীর দিকে৷
এতদিনে বিজন দারোগার যথার্থ উত্তরসূরী দেখেছে সৌদামিনী ৷বাপরে !কি দাপট৷ এক কথাতেই রতনকে খালাশ করে দিল থানার বড়বাবু৷
ছানি পরা ঘোলাটে চোখে সৌদামিনী হাসতে থাকেন আপন মনেই৷
...........................
অলঙ্করণ :- পায়েল খান