চন্দ্রানী ভট্টাচার্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
চন্দ্রানী ভট্টাচার্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

কবিতা - মন্দ আমি - চন্দ্রানী ভট্টাচার্য

 

মন্দ আমি
চন্দ্রানী ভট্টাচার্য
 

আমি নাকি অহংকারী !
দেমাক আমার ভীষণ ভারী !
কেউ নাকী তল পায়না খুঁজে ,
আমার মনের গোপন ঘরের !

আমি জোরে কথা বলি ।
আমি মাথা তুলে চলি ।
গায়ের রঙটা কালো হলেও,
আমি তাকেই ভালোবাসি ।।

আমায় সবাই মডার্ন বলে ,
আমি বলি সর্বকালিন ।
নারীবাদের ধ্বজাধারী 
তাদের ছাড়াই আমি চলি ।।

আমি তো ঠিক আমার মত ,
নিজের জমি শক্ত করে ।
নিজের জীবন চালাই আমি 
সবার কথা উড়িয়ে দিয়ে ।।

আমি জানি আমি নারী ,
যাকে সমাজ মারছে লাথি ।
করে আমায় পর্দানশীন ,
ধর্ষ তারে দিনে রাতে ।।
 
আমি হলাম কমোডিটি ,
বাজারেতে বসাও যাকে ।
উঠতে বসতে শোনাও কথা ,
পনের টাকায় কেনো গাড়ি ।।

আমিই আবার মা দুর্গা ,
দশভূজা সবার ঘরে ।
সকাল থেকে কলুর বলদ ,
মা বলে ডাকছ যাকে ।।

আমি হলাম সেই মেয়েটি ,
লজ্জাই যার ছিল ভূষণ ।
সেই তোমরা পথের মাঝে 
করলে তারই লজ্জা হরণ ।।

হ্যাঁ আমি অহঙ্কারী ,
দেমাক আমার ভীষণ ভারী ।
লজ্জা আমার নয়তো ভূষণ ,
আমি হলাম আগুনপাখি ।।

সতী আমি নাইবা হলাম ,
সতীত্বটা তোমরা রাখ ।
আমি জানি আমায় ছাড়া ,
বাঁচবে না এই মানব জীবন ।।

আমি কালি হতে রাজি ,
অসভ্যতার কলিযুগে।
রাতবিরাতে 'অভয়া' নয় ,
শ্মশানভূমি হতে পারি ।

ভাবছো আমি নইকো ভালো ,
তাতে আমার বয়েই গেল ।
যেদিন সবাই উঠবে জেগে 
সেদিন না হয় হব ভালো  ।।
 
..........
 
 
Chandrani Bhattacharyya



পাঠপ্রতিক্রিয়া - চন্দ্রানী ভট্টাচার্য


পাঠপ্রতিক্রিয়া

চন্দ্রানী ভট্টাচার্য


 

  • গ্রন্থের নাম -মহাভারতের অষ্টাদশী
  • লেখক - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
  • প্রকাশক- আনন্দ পাবলিশার্স
  • মূল্য-500/

   

নারীর সৌন্দর্যের সঙ্গে যদি বিদগ্ধতার সংযোগ ঘটে তাহলে পুরুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় সেই নারী আর তাই তার ভাগ্যে জোটে গণিকার অভিধা । সামাজিক সৌজন্য এবং পারিবারিক মহিমা রক্ষার জন্য যতই লক্ষিমতী সর্বংসহ রমনীই পছন্দ হোক না পুরুষের, উপভোগ-শয্যাতে সেই লক্ষিমতীর কাছেই সে বেশ্যার ব্যাবহার আশা করে । তা নাহলে এমন সংস্কৃত শ্লোক রচিত হত না যে  - কার্যে দাসী রতৌ বেশ্যা ভোজনে জননীসমা । কথাগুলো অতিমাত্রায় সত্যি । কিন্তু প্রকাশ্যে স্বীকার করা কঠিন । বইটি পড়তে পড়তে নিজের মনের অগোচরে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছি  । উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, ঘৃতাচি এঁরা সকলেই সৃষ্টি হয়েছেন স্বর্গ রাজ ইন্দ্রের রাজত্ব রক্ষার জন্য । আসলে এঁদের মধ্যে ছিল সৌন্দর্যের সঙ্গে বৈদগ্ধতা , প্রগলভতার সঙ্গে 'ফ্লন্ট' করার ক্ষমতা, তাই তাঁদের মর্যাদাময়ী কুলবধূ বলেনি কেউ । আসলে বিদগ্ধতা তার বাইরের রূপকে পুড়িয়ে কালো করে দেয় ।অথচ মহাভারতের একজায়গায় - যেখানে দৈনন্দিন কী করলে মানুষের ভালো হয়, এইরকম প্রশ্ন করেছেন যুধিষ্ঠির সেখানে পিতামহ ভীষ্ম - দেবতা, ঋষি, রাজা, তীর্থ, নদীর মত বহুতর পুন্য নামের সঙ্গে অন্তত নয় জন অপ্সরাকে সকালে উঠেই স্মরণ করতে বলেছেন । এখানে তাঁদের বিশেষণ দেবকন্যা এবং মহাভাগ্যবতী ।পড়তে পড়তে বার বার নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি । প্রশ্ন করেছি চিরকালই কী নারী সেই সমাজের হাতের পুতুল ? তার নিজস্ব সত্তা কি এইভাবেই হারিয়ে গেছে ,কলঙ্কিত হয়েছে ? উত্তর পেলাম যখন দেখলাম বীরশ্রেষ্ঠ গান্ডিবধারী কৃষ্ণসখা অর্জুন ইন্দ্রের নৃত্য সভায় বলছেন -" সেই নৃত্যাসভার আসরে আপনার দিকে উৎফুল্ল নয়নে তাকিয়ে দেখেছি আর ভেবেছি - এই তো সেই পরম্পরাবাহিতা উর্বশী, যিনি এই প্রসিদ্ধ পৌরব-বংশের আদিজননী, আপনি আমার মাতৃসমা গুরু, যেমন আমার জননী কুন্তী, যেমন ইন্দ্রানী শচী আমার মা, তেমনিই আপনিও; অথবা তার চেয়েও অনেক বেশি- উর্বশী আমাদের বংশ-বিবর্ধিনী আদিজননী ।"

               আসলে শেষ পর্যন্ত গণিকা বা স্বর্গবেশ্যাকেও সেই আদি( ভারত ) জননীর কাছে মাথানত করতে হয়েছে ।

              মহাভারতের উর্বশী, শকুন্তলা, দেবযানী ও  শর্মিষ্ঠা, সত্যবতী , অম্বা-শিখন্ডিনী, গান্ধারী, কুন্তী, মাদ্রী, হিড়িম্বা, দ্রৌপদী, উলূপী এবং চিত্রাঙ্গদা, সুভদ্রা, রুক্মিণী, সত্যভামা, সুদেষ্ণা, লোপামুদ্রা, মাধবী, উত্তরা - এই প্রধান নারিচরিত্রগুলি নিয়েই এই গ্রন্থ । মহাভারতের বিশাল চলচিত্রে, পুরুষের বীরগাথা  ও রাজনীতির মধ্যে উঠেএসেছে নারিকুলের প্রেম, ত্যাগ, ক্রোধ ও প্রতিহিংসার বিবরণ ।

         এই গ্রন্থটি পড়তে পড়তে কখনো কখনো চলে গেছি সেই সুদূর অতীতে । অনেক ব্যাথা-বেদনা-অপমান-লাঞ্ছনা সহ্য করার পর নারী হিসাবে শেষ আত্মতৃপ্তি -আত্মশ্লাঘা লাভ হয়েছে আমারই । আমি বইটি পড়ে আত্মতৃপ্ত, সমৃদ্ধ । তাই সেই অনুরণনটুকু ভাগ করে নিলাম আপনাদের সঙ্গে


Chandrani Bhattacharyya