ভবেশ দাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ভবেশ দাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

উত্তরন - ভবেশ দাস

 


উত্তরন 

 ভবেশ দাস  

 


 

                        

                                                            -১-
 
রুটির দোকানে উবু হয়ে বসে চটপট করে রুটি বেলছে কমলা।  তারই সাথে তাল মিলিয়ে ঝপাঝপ করে গনগনে আঁচে রুটি সেঁকেও নিচ্ছে। আগুনের তাপে নাকে মুখে ঘামের ফোঁটা জমে কালো মুখটা বেশ চকচক করছে এই হিমের রাতেও। দোকানের মুখটাতে বেশ ভিড় জমেছে। তাদের মধ‍্যে কেউ একজন চেঁচিয়ে বলে ওঠে, "কিগো কমুমাসি আমারটা হল, তখন থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাচ্ছি।"  "এই যে দিচ্ছি বাবা একটু সবুর কর। তাড়াহুড়ো করলে কাল এসে বলবি মাসি তোমার রুটি কাঁচা ছিল। ভালো করে রুটি সেঁকেও দাওনি।" কথাটা বলেই আবার খুন্তি দিয়ে চাটুতে রুটি উল্টাতে থাকে কমলা। 

দোকানের বাইরে একদল ছেলেবুড়ো খরিদ্দার ভিড় করে দাঁড়িয়ে কী সব এন.আর.সি , সি.এ.এ নিয়ে আলোচনা করছে। কমলা এসব বোঝেও না বোঝবার চেষ্টাও করে না। 

রুটির দাম দিতে গিয়ে একটাকার ছোট কয়েন দিল ছেলেটা। সেটা নিয়ে কমলা মুচকি হেসে বলল,”তুই দিচ্ছিস দে। আমি নিলাম কিন্তু তোদের ফেরত দিতে গেলেই, না বলিস না বাবা। আজকাল ভিখারিও ছোটকয়েন নিতে চায় না।“ কথাগুলো বলেই আবার রুটি বেলতে লাগল কমলা। চাকিতে বেলুন দিয়ে আটার লেচি বেলে রুটিতো নয় যেন পূর্ণিমার চাঁদ তুলছে কমলা। 

ঠিক এইভাবেই সন্ধে ছ'টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত রোজ রুটির দোকান চালায় কমলা। সকালের দিকটা চা,বিস্কুট,পাউরুটি, ঘুগনি আর বিকাল থেকে শুধুরুটি।  তবে চা করে বিকেলেও এক ফ্লাস্ক রেখে দেয়। একা হাতে আর কতদিক সামলাবে। 

৩৬৫দিনই তার জীবনের আহ্নিক গতি রুটির ঘূর্ণনের মতো ঘোরে।
                                    
                                                      -২-

মফস্বল শহরে এখন বাড়ির বৌরা সব বিবি হয়েছে। কেউ প্রয়োজনে কেউ অপ্রয়োজনে। যাদের টোনা-টুনির সংসার অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী দু'জনে চাকরি করে তাদের তো কমলার দোকানে মাস কাবারি রুটির হিসাব করাই থাকে। কিন্তু যে সব স্ত্রীরা সারাদিন বাড়িতে থাকে তারাও সন্ধের পর থেকে টিভি সিরিয়ালের সৌজন্যে রান্নাঘর মুখো হতে চায় না। অফিস ফেরত বাড়ির কর্তাটিকে মুঠোফোনে আদেশ করা হয় এই বলে, " কিগো বাড়ি আসার পথে কমলার দোকান থেকে দশটা রুটি নিয়ে এসো। আমার গা'টা কেমন ম‍্যাজম‍্যাজ করছে। আটা মাখতে পারবো না। ট্রেনে বসে বসে ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে রুটি আনতে ভুলে যাও যদি তবে কিন্তু ভাত গিলতে হবে।" স্বামী বেচারা আর কী করে, যুগধর্ম মানতে বাধ‍্য তারা। কারণ রুটি না নিয়ে গেলে বাড়ি ঢুকে এককাপ চা তো দূর, চাঁদবদনীদের হাসিমুখগুলো কপূর্রী ঠাকুর হয়ে, উবে যায়।  গিন্নীরা তখন সিরিয়ালের 'রাসমনি'র মতো এমন দাপট দেখায় যে সংসারে 'স্বামী কেন আসামী' সিনেমাও হিট হয়ে যায়।

আবার কোনো কোনো স্বামীর রাতে রুটি না হলে সকালে কোষ্ঠ সাফ হয় না। তাতে বায়ুর নিন্মগতি প্রাপ্ত হয়। যাতে ভদ্রসমাজ নাকে রুমাল চাপা দেয়।

এও এক পরিবর্তন। সময়ের সাথে সাথে আরো কত পরিবর্তনের সাক্ষী থাকে কমলা। মনে মনে হাসে আর বলে, তা বাপু বেশ, তোমরা বিবিয়ানি করো তাই আমরা খেটেখুটে পেট চালাতে পারি।
                             
                                                  - ৩-                                                  

রুটির দোকান বন্ধ করে কমলা বাড়ি ঢোকার আগে তেমাথার মোড়ে বুড়ো অশ্বত্থ গাছের নিচে ষষ্ঠীর থান বলে কপালে হাত ঠেকায় ভক্তিমনে। অশ্বত্থ গাছটার ডানদিকে বড় পুকুরটা মজে গিয়ে এঁদো ডোবায় পরিণত হয়েছে। তাই কমলার মনে ভারি দুঃখ হয়। সে ভাবে সময়ের সাথে সাথে ভরন্ত সংসারও এই ভাবেই মজাপুকুরে বদলে যায়। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়িতে ঢুকেই বিছানায় শোয়া অসুস্থ স্বামীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে। 

আজকাল কমলার স্বামী একসময়ের তেজিয়াল অজিত দত্ত এখনও কথায় কথায় কমলাকে ঝাঁঝিয়ে উঠে গালমন্দ করে। কমলার তাতে মান অভিমান তো দূর, কোনো বিরক্তিবোধও নেই। সেই ছোট থেকে জ্ঞান হওয়া ইস্তক শুনে এসেছে মায়ের মুখে। মেয়েদের স্বামী ছাড়া গতি নেই। পতি পরম গুরু। 

আজ অনেকদিন বাদ মায়ের কথা মনে পড়ল কমলার। উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জে সুভাষ কলোনিতে তার বাপের বাড়ি। মার মুখে শুনেছিল,তার বাপ-মা ওপার বাংলার মানুষ। রায়টের সময় প্রাণের ভয়ে চলে এসেছে এদেশে। যদিও তার জন্ম রায়গঞ্জেই হয়েছে।  অগ্রহায়ণ মাসে নবান্নের সময় জন্মেছিল বলে,পাড়ার লোকে মাকে বলেছিল, "তোমাগো ঘরে লক্ষ্মী আইসে।" 

এখন পুরোনো কথাটা মনে পড়তেই কমলা মনে মনে একটু হেসে নিল। তারপর ভাবলো হেমন্ত ঋতুতে জন্ম বলে তার জীবনটাও হেমন্তর মতো হারিয়ে গেছে।  

শরত ও শীতের চাপে পড়ে অস্বিস্তহীন হয়ে আছে হেমন্ত। 

দুইদিদির পরে আবার মেয়ে জন্মেছিল বলে ছোটথেকেই অনাদর, অবহেলায় বড় হয়েছে। তারউপর গায়ের রং ছিল কালো। তাই তার মা মাঝে মাঝেই বলত কপাল চাপড়ে," আমার প‍্যাটেই ক‍্যান যে হইলি পুড়াকপালী! তোর নগে আমার জীবনটাও ভাজাপুড়া হইয়া গেল গ‍্যা।" এসব চিন্তা ভাবনায় কমলার রাতের ঘুমটা ঠিক মতো হল না। 

পরের দিন বিকালে বাড়ি থেকে দোকান আসবার সময় কমলা দেখে পাড়ার মেয়েরা খেলছে, "এলাটিং বেলাটিং সইলো, কিসের খবর হইল।" কমলা মনে মনে হাসে আর ভাবে সময় এগিয়ে গেছে কত। সবার হাতে এখন বড় বড় ফোন তবুও এক টুকরো পুরোনো স্মৃতির মতো তাদের এলাকায় রয়ে গেছে হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলা। 
কমলার মনে পড়ে যায় এই খেলার কথা। আর তার সাথে খেলার মহাত্ম্যের কথা। 

একটু বড় হতেই বেড়াল পার করবার মতো কমলার বিয়েটা হয়ে যায় অজিত দত্তের সঙ্গে। অজিত দত্ত তখন লিলুয়ার কোনো এক লেদ কারখানায় কাজ করতো। হাট্টাকাট্টা যুবক পুরুষ। গায়ের রং কালো হলেও কমলার মুখে লালিত‍্য ছিল। বড় বড় চোখে ছিল মায়াকাজল। একমাথা কোমর ছাপানো চুল। অজিত দত্তের মা এই দেখেই কমলাকে ছেলের বৌ করে এনেছিল। রগচটা ডাকাবুকো অজিত দত্ত প্রথম জীবনে কমলাকে ভালোবাসা, আদর, আবদার সবই দিয়েছিল কমলা বাধ‍্য মেয়ে বলে। আর ছিল শাশুড়ির ভালোবাসা। 

নিয়তিদেবী কমলার ভাগ‍্যটা খুব যত্ন করে  গড়েছে। 

বিয়ের বেশ কিছু বছর পরে একটি ছেলে বিপুল ও মেয়ে পূজাকে নিয়ে কমলার যখন ভরাট পাঁচজনের সংসার। ঠিক তখনই অজিত দত্ত বিছানায় পড়লেন। ম‍্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। ডানদিকের হাত-পা প‍্যারালাইসড।   কমলা তখন আতান্তরে। কী করবে ভেবেই কুল কিনারা করতে পারে না। শাশুড়ি তখন সাহস দিয়ে বললেন, " শক্ত হ মা। তোকেই হাল ধরতে হবে। মেয়েরা সারা জীবন ত‍্যাগ স্বীকার করে। তোকে ভগবান পরীক্ষায় ফেলেছে। তোর উপর আমার অগাধ বিশ্বাস। তুই সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবি।" 

অসুস্থ স্বামী ও দুই বাচ্চাকে শাশুড়ির জিম্মায় ফেলে রেখে আয়ার কাজ নিয়েছিল কমলা। কিন্তু বিধিবাম। দিনের বেলায় কাজ তবুও মেনে নিয়েছিল অজিত দত্ত। কিন্তু নাইট ডিউটি শুরু হতেই বিছানায় শুয়ে শুয়ে তরপানি শুরু হল, "কার সাথে সারারাত ফস্টিনষ্টি করে এলি নষ্ট মেয়ে মানুষ।" প্রথম প্রথম কমলা কেঁদে ভাসাতো। শাশুড়ি এসে আড়াল করতো কমলাকে। কিন্তু দিনের পর দিন ছেলেমেয়ের সামনে এই অপমান মেনে নিতে পারলো না। আবার প্রতিবাদ করতেও পারলো না। 

তাই আয়ার কাজে ইতি দিয়ে এই পালপাড়া অঞ্চলেই দুবাড়ি রান্নার কাজ নিল। তাতেও যখন সাংসারের অভাব মেটাতে পারে নি তখন সাহস করে এই রুটির দোকান দেওয়া কমলার। 
                               
                                                      -৪-
         
আজ বৃহস্পতিবার। আজকের দিনটাই কমলা একটু বেলা করে দোকান খোলে। বৃহস্পতিবার সকালটা কমলার জীবনে একটু আনন্দ ডেকে আনে।  ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই অসুস্থ স্বামীকে 
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিজে স্নান করল কমলা। তারপর একটা ফিকে রংয়ের ছাপা শাড়ি পরে, চুল আঁচড়ে বিনুনি বাঁধলো। কপালে ছোট করে সিন্দুরের টিপ পড়ল। মাথার সিঁথিতে সিন্দুরের রেখা টেনে হাতের নোয়ায় সিন্দুর ঠেকালো। 
ঘরের মধ‍্যে পরিপাটি করে গোছানো সিংহাসনে মা লক্ষ্মীর পটে ঘট পেতে বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপুজো করল। না পাঁচালি পড়ার মতো বিদ‍্যে বা সময় কমলার নেই। কিন্তু ভক্তিশ্রদ্ধা আছে। এককাপ চা স্বামীকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও চাখেয়ে কমলা লোনে গেল। 

'বন্ধন' ক্ষুদ্রঋণ গোষ্ঠীর লোন। গ্রুপের নাম 'উৎসাহ'।  তাদের পাড়াতেই টিনাদের বাড়িতে প্রত‍্যেক সপ্তাহে লোন বসে। হপ্তা প্রতি লোনের কিস্তি শোধ করতে হয়। আগে গ্রুপটা ছোট ছিল। এখন আড়ে-বহরে বেড়েছে। আসলে 'বন্ধন' যবে থেকে নিজেও ব‍্যাঙ্ক হয়ে গেছে তবে থেকে এই গোষ্ঠীও আকারে আয়তনে বেড়েছে। তাতে কমলার ভালোই লাগে। তাকে সবাই মাসি মাসি বলে ডাকে। লোনের স‍্যার আসার আগে সকলের মুখে তাদের সংসারের সুখদুখের গল্প শুনে নিজের কষ্টটা জলো লাগে কমলার কাছে। মাঝে মাঝে লঘু হাসিঠাট্টাও হয়। তবে আজ টিনা গ্রুপের সব মহিলাদের বুঝিয়ে বলছে সেই আগে শোনা,এন. আর, সির কথা।
চুপচাপ স্বভাবের কমলা টিনাকে জিজ্ঞেস করল,
" হ‍্যাঁরে মা টিনা এটা কী রে? এই এন. আর.সি।"
টিনা কলকাতার কলেজে পড়া মেয়ে ভালো শ্রোতা পেয়ে অনেক কথা বোঝালো কমলাকে। যার মোদ্দা কথাটুকু ধরলে এটাই দাঁড়ায়,  ভোটারকার্ড আধারকার্ড থাকলেই তুমি এ দেশের নাগরিকত্বের দাবীদার নও। এমনকি এখানে জন্মালেও এ দেশের নাগরিক হবে না।  তোমার বাবা মাকেও এদেশে জন্মাতে হবে। কথাটা শুনে কেউ একজন বলল," ওসব গুজব। আসলে প্রতিবেশী দেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেবার নিয়ম এন.আর.সি।"
টিনার সাথে তার জোর তর্ক বেঁধে গেল।
   
কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা কমলা জানেনা। কিন্তু মনটা কু ডাকল তার। কথাটা শোনার পর থেকেই  নিরীহ কমলার মনে একরাশ চিন্তা ঢুকে গেল। তবুও নিজেকে কাজের মধ‍্যে সংসারের দায়িত্বে ডুবিয়ে দিল।

লোনের কিস্তির টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মনে মনে টিনার মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতায় কমলার চোখদুটো জলে ভরে উঠল। যদি ঠিক সময় মতো টিনার মা  'বন্ধন' এর লোনের কথা না বলতো, তবে কমলার রুটির দোকান আর হতো না।  প্রত‍্যেক বছরে লোন নিয়ে নিয়ে কমলা দোকানের ব‍্যবসা বাড়িয়েছে। পৌরসভার সরকারি বাড়ি প্রকল্পের ডিপোজিট মানি জমা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছে। বিপুল বড় হতে তাকে টোটো কিনে দিয়েছে। পূজার বিয়ে দিয়েছে। এমনকি শাশুড়ি মারা যাবার পর তার শ্রাদ্ধশান্তির কাজটাও একটু ঘটা করে লোনের টাকাতেই করেছে। শাশুড়ির উপর একটু টান বেশি কমলার। জগতে ওই একটা মানুষই তাকে বুঝতো। 

বন্ধনের লোন  ও রুটির দোকান কমলার জীবনে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে আছে।
    
                                                     -৫-

 প্রত‍্যেক শনিবার পালপাড়া অঞ্চলে ভিখারিরা ভিক্ষা করতে আসে। ওদের এলাকা অনুযায়ী দিন ঠিক করা থাকে। কমলা আজকের দিনে একজনের অপেক্ষায় থাকে। না সে ঠিক ভিখারি নয়। সে বাউল। উমা দাস বাউল। গায়ে গেরুয়া শাড়ি। সঙ্গে গেরুয়া সুতির চাদর চাপা থাকে।  নাক থেকে কপাল পর্যন্ত রসকলি। বগলে খোমর চেপে আঙুলে করে তার টান দিয়ে গলা ছেড়ে গান ধরে বুগবুগির আওয়াজের সাথে,

" তুমি ভেবেছো কী মনে, এই ত্রিভুবনে
   তুমি যাহা করে গেলে কেউ জানেনা

    বারে বারে আর আসা হবে না।

    এমনও মানব জনম আর পাবে না
     বারে বারে আর  আসা হবে না।"

গানটা শেষ করেই কমলাকে একগাল হেসে বলে ওঠে," পেন্নাম গো দিদি পেন্নাম। নিতাইয়ের কিরিপায় সব ভালো তো। তা দেখো কেনে, বাসি রুটি যদি এক আধখান থাকে তোমার দোকানে... তো  গরম চায়ের সাথ একটুন দাও কেনে।  ভারী জার পড়েছে ইবারে।  খিদেটো লেগেছে দিদি।তোমার দোকান থেকি বেরিয়ে নদীর ধারে একটুন বসে জিরোবো গায়ে রোদ মেখে।  বাকি সাথিরাও ওদিক পানে এসে জড়ো হবে।"

কমলা উমা বাউলকে যত্ন করে দোকানের বেঞ্চে  বসিয়ে চা রুটি খাওয়ালো। শেষে যাবার আগে পাঁচটা টাকা উমা বাউলকে হাতে দিল। উমা বাউল যতক্ষণ ছিল ততক্ষণ কমলার মুখে এক তৃপ্তির হাসি ঝুলে ছিল। কত নতুন নতুন জায়গার খবর দেয় উমা বাউল। কত নতুন মানুষ। কত রকম তাদের স্বভাব। এগুলো শুনে কমলার মন আকাশ কুসুম ভাবে। যদি সে পাখি হত তবে উড়ে যেত সেইসব জায়গায়। তার জীবনটা কুয়োর ব‍্যাঙ হয়েই কেটে গেল। তবুও মুখ ফুটে কারো বিরুদ্ধে কখন অভিযোগ নেই কমলার।

বড়রাস্তার ধারে রোজের হিসাবে ভাড়ার গুমটি দোকান কমলার।  আজ আবার সরকারি দপ্ত‍র থেকে রোড মাপাজোখ হচ্ছে।  রাস্তা না কি চওড়া হবে। গুমটি সব ভাঙা হতে পারে।

এইসব দেখে কমলার মন খারাপ আরো বেড়ে যায়। উমার গান শুনে যে আনন্দটুকু হয়েছিল সেটাও মিলিয়ে যায় একনিমেষে।

                                                       -৬-

বিপুল টোটো চালাতে চালাতে এই পালপাড়ারই এক উঠতি প্রোমোটারের মেয়েকে প্রেমে করে বিয়ে করেছে। আসলে বিপুল হল মাকালফল। দেখতে সুন্দর। কিন্তু ব‍্যক্তিত্ব থেকে বিদ‍্যাবুদ্ধি কোনটাই তার নেই। তাই বাপের এক মেয়ে রিচা, বাপের  আদরের দুলালী বিপুলকে ঘরজামাই করে রেখেছে।
মাঝে মাঝে কমলার রুটির দোকানে এসে উদাত্ত কন্ঠে রবীন্দ্র সংঙ্গীত গাওয়ার মতো করে "মা..." বলে ডাকে। আর টাকা চায়।  আর কমলাও মমতামাখা চোখে বিপুলকে দেখে গলে জল হয়ে কিছু টাকা হাতে দেয়। 

হঠাৎ করে এতদিন রোগভোগের পর অজিত দত্ত মারা গেল এক ম‍্যাড়মেড়ে বুধবারে ঘুঘু ডাকা দুপুরে। কমলা তখন সদ‍্য দোকান থেকে এসেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার লোনের কিস্তির টাকা গুছিয়ে রাখছিল ঠিক সেই মুহূর্তে, অজিত দত্ত হেঁচকি তুলে তার জীবনাবসান ঘটালো। 

পূজা শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইকে সঙ্গে করে এল। 
বিপুল এল রিচাকে নিয়ে। পূজাই একটু বাবার জন‍্য হাউমাউ করে কাঁদলো। কমলা সব দেখছে। কিন্তু চোখে জল তার আসছে না। তবে কি শোকে পাথর হয়ে গেল কমলা?

রিচার বাবাই সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিল। অন্ত‍্যেষ্টি কাজ দ্রুত শেষ হল। 

অজিত দত্তের মৃত‍্যু সংবাদ ও শ্রাদ্ধের নেমন্তন্ন
দেবার জন‍্য পূজা আত্মীয় স্বজন কে ফোন করল।
পূজার দুই মাসি। একজন রায়গঞ্জে থাকে। আর এক মাসি আসামের ধুবড়িতে থাকে। সবার শেষে আসামের মাসিকে ফোন করে পূজা ফোনটা কমলাকে ধরিয়ে দিল মায়ের মনটা হালকা করতে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আর এক। 

আসামের মাসি ফোনে কমলার গলা পেয়েই আর্তনাদের মতো করে বলল, "ভৌনটি আমি কীবা নমরি বাঁচি আছো। তোর ভিনদৈয়ক ডিটেনশন ক‍্যাম্পত আটক করি থৈছে। কেনেকৈ জীয়াই থি থাকিম কোয়া? এন.আর.সিয়ে সকলো শেষ করি দিলে, শেষ হৈ গল আমার সংসার।" কমলা আবার এন.আর.সির নামটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল। মেয়েকে ফোনটা দিতেই লাইন হট করে কেটে গেল।

তেরো দিনে ঘাটকাজ, তারপরের দিনে শ্রাদ্ধ ও শেষে আঁশপান্না বা মৎসমুখী হয়ে বাড়ি যখন ফাঁকা, তখন কমলার মনটা হু,হু করতে লাগল।

অনেকদিন বন্ধ থাকার পর দোকান খুলেছে কমলা। মনমরা হয়ে দোকানদারি সামলে রাতে বাড়ি ফিরে কমলার ভালো লাগে না ঘরে। অজিত দত্তের গালমন্দ শোনা শেষের দিকে অভ‍্যেসে পরিণত হয়েছিল। ভালোমন্দ যেমনটি হোক। বিছানায় অসুস্থ হয়ে পরে থাকতো। তবুও কেউ তো কমলার জন‍্য অপেক্ষা করতো। বাড়ি ফেরার একটা তাগিদ তো ছিল কমলার জীবনে। আজকাল বড়ই একাকিত্ব নিঃসঙ্গতায় ভোগে কমলা। শাশুড়িমার কথা মনে পড়ে খুব। সব থেকেও আজ কমলার জীবনে কিছুই নেই।

                                                          -৭-

আজ আবার বৃহস্পতিবার। কমলা যথারীতি লোনে গেছে টিনাদের বাড়ি। বদলানোর মধ‍্যে বেশভূষা বদলেছে। অন‍্যদিনের মতোই সবাই কমলাকে "মাসি মাসি" বলে এটা ওটা শোনাচ্ছে।
আজকে লোনে নতুন স‍্যর এসেছেন। কিস্তি জমা দেবার পর নতুন স‍্যর বললেন," কমলা দত্ত কার নাম?"
কমলা নিস্পৃহ ভঙ্গিতে বলল,"আমি স‍্যর।"
স‍্যর গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললেন, " আপনার বয়স ষাট হয়ে গেছে। অতএব আপনার নামে আর লোন স‍্যাংশন হবে না। আর দুটো কিস্তি শোধ হয়ে গেলে আপনাকে আর গ্রুপে আসতে হবে না।"

কমলা হতভম্ব হয়ে গেল। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো অবস্থা কমলার। যদিও ইদানিং লোনের টাকার প্রয়োজন ফুরিয়েছে তবুও দীর্ঘদিনের অভ‍্যেস। এই 'উৎসাহ' গ্রুপের সাহচর্য।  কমলা এবার কী নিয়ে থাকবে এই ভাবতে ভাবতে কোনোরকমে বাড়ি পৌঁছালো। 

অজিত দত্ত যে বিছানায় শুয়ে থাকতো সেই বিছানায় শুয়ে গলা ছেড়ে কাঁদলো অনেকক্ষণ। 
কাঁদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। 
সেই ঘুমের মধ‍্যে স্বপ্নে শাশুড়ি এসে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, " অনেক করেছিস মা এই সংসারের জন‍্য এবার মুক্তি নে।" 
ঘুম ভেঙে গেছে কমলার। দু'গালে জলের দাগ। এই কদিনেই আঁটোসাঁটো চেহারা ভেঙে আলুথালু হয়ে গেছে।  

কমলা নিত‍্যদিনের অভ‍্যেস বশে দোকান যায় না। আজ পর্যন্ত দোকান বন্ধ যায়নি কোনদিন। খালি গুরুদশার কটা দিন বাদ দিয়ে।

কমলা ভাবতে বসে, তার আর কিছু নেই।  তার লোন নেই। দোকান ভাঙা পড়ে রাস্তা চওড়া হবে। তাই দোকানও নেই। ছেলে মেয়ে থেকেও নেই। স্বামী নেই। বন্ধু নেই। রিফিউজি বাবামায়ের মেয়ে বলে তার নাগরিকত্ব থাকবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ আছে!

তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে চলেছে। আর ভাবতে পারে না কমলা। একবার হাহা করে হাসে এক হাউ হাউ করে কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পরে। এইভাবে দু'দিন কেটে যায় নিমেষে। কেউ এতটুকু খোঁজ করে না কমলার। 

                                                    -৮-

শেষ চৈত্রে অতিরিক্ত গরম পড়েছে। কালবৈশাখীর দেখা নেই। বসন্তর কোকিলের কুহুতান কাকের ডাকের মতো কর্কশ শোনাচ্ছে। এখন শনিবারের বারবেলা পড়ে গেছে। আকাশের নৈঋত কোণে কালো মেঘ জমেছে।  খর বারে ঘোর অমাবস‍্যা। এ কিসের পূর্বাভাস!

কমলা ঘর থেকে বেরোয়। চোখের চাওনি ঘোলা। তিনদিনের উপোসী শরীর শুকিয়ে পাকিয়ে গেছে।  উন্মাদের মতো একমাথা রুখু কাঁচাপাকা চুল এলোকেশির মতো উড়িয়ে মলিণ হয়ে যাওয়া তিনদিনের বাসি কাপড় পরনে উদভ্রান্তের মতো পালপাড়া দিয়ে কমলা ছুটে যায় নদীর দিকে। 
নদীর পাড়ে এসে মনে মনে বলে, মাগো চরণে ঠাঁই দাও। বলেই নদীর জলে ঝাঁপ মারতে উদ‍্যত হয়। 

ঠিক সেই মুহূর্তে উমাদাস বাউল  পেছন থেকে কাঁধে হাত দিয়ে দু'চোখে বিশ্বাস ও আস্থা জাগিয়ে বলে, " দিদিগো আত্মহত‍্যা মহাপাপ নরকে গমন।" 

উমাদাস বাউল কমলাকে বুঝিয়ে  বলে," আমরা বাউল। সাধন ভজন করি আর আখড়াতে থাকি বট‍্যে।  দেশ, সময় আমাদের আটকে রেখে রসটো পাবে নাখো। তুমি আমাদের সাথকে চলো।"

উমাদাস বাউল কমলাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে মুখে তার গান, 

" এমন মানব জনম আর কি  হবে
    মন যা করো ত্বরায় করো এ ভবে
অনন্ত রূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই
শুনি মানবের উত্তম কিছুই নাই
      দেব-দেবতাগণ করেন আরাধন
            জন্ম নিতে মানবে।
মন যা করো ত্বরায় করো এই ভবে..."

---------------------------------×-------------------------------
 

 

রসিকের সংসার - ভবেশ দাস



রসিকের সংসার
ভবেশ দাস
 

 
 

সাধন চট্টোপাধ্যায়ের এক এবং অনাদী স্ত্রী মায়ারানি ছাড়া এলাকার সকলেই বেশ রসিক মানুষ বলেই জানে। এ হেন অভিযোগের একটা কারণ অবশ্য আছে। সাধনবাবু একটু হিসেবী মানুষ। বাইরের দুনিয়ায় না হলেও নিজ সম্রাজ্যে সকল হিসেবী পুরুষদের কিপ্টে বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। এ কথা শাস্ত্রে না হলেও গৃহবিজ্ঞানে উল্লিখিত। 
 
ছুটির দিনে বাজার যাবার আগে আর এক প্রস্থ চায়ের আবদারে তার গিন্নি মুখে অগ্নিশলাকা সংযোগে বলে উঠেন, "রসিক না আরোকিছু। ও সব বাইরের লোকের কাছে রঙ্গ-তামাশা করে ভালো সেজে থাকা। ও হচ্ছে, ঘর জ্বলানে পর ঢলানে ব্যাটাছেলে। আমার জীবন পোড়া কাঠ-কয়লা করে দিলে গা।" সাধনবাবু ব্যাগ নিয়ে বেরবার সময় মৃদু হেসে বলে যান," বাক্যহীনা ভার্যা সংসারে শান্তির ফলদায়িনী।"
 
 মধ্য পঞ্চাশের সাধনবাবু বাজার করতে খুব ভালোবাসে। তার চরিত্রটাই শুধু নয়, বেশভূষাও  বেশ সেকেলে গোত্রের। আজকের এই দুরন্ত ফোর'জির যুগেও সাধনবাবু ঢোলা পাজামা ও গায়ে ফতুয়া চাপিয়ে চোখে কালো ফ্রেমের চশমা এঁটে খুশি মনে বাজার করেন। নিজের বারে রবি-মশাই আপন কিরণে সাধনবাবুর অর্দ্ধচন্দ্র টাকে চন্দ্রকলা ভেবে বিকিরণ ঘটিয়ে চলেছে অবিরত। 
 
বাজারে ঢোকার মুখে  জনৈক পরিচিত আধুনিক মনস্ক  ব্যক্তি প্রশ্ন করেছেন, "আরে চ্যাটার্জীবাবু ঠাকুরদার আমলের পোশাকটা কোথায় তোলা ছিল এদ্দিন?" সাধনবাবু রসিয়ে জবাব দেন, " দাদুর পাজামা কোথায় দেখলেন মশাই; এতো অর্ধাঙ্গীনির শখে কেনা পালাজো পরেছি। আধুনিক সাজার সাথে সাশ্রয়ও হল।"
 
জবাব পেয়ে সেই ব্যক্তির মুখ চুন হলেও আশেপাশের লোকজন বাক্যরসের খাবি খাওয়া দেখে সাধনবাবু বেশ আমোদ পেলেন। তারপর দুলকি চালে বাজারে প্রবেশ করলেন।

বাজারের বিকিকিনির মূল জায়গায় পৌঁছানোর আগে এলাকার গলি তস্যগলিতে ঢোঁ-মারা কর্তব্য মনে করেন সাধনবাবু। এতে  তার পরতার সওদার সাথে মাঝেমধ্যে ফাউ হিসাবে বিড়ম্বনাও জোটে।
 
তারকভোলার তীর্থস্থান থেকে আসা এক ক্ষেপচুরিয়াস বুড়ি শেষপাতের বেগুন সাজিয়ে বসে আছে গালে পানঠুসে। সাধনবাবু বুড়ির সামনে হাঁটু মুড়ে উবু হয়ে বসলেন। গলায় সরগমের তৃতীয় সুর খেলিয়ে সাধনবাবু বললেন, " ঠাম্মা তোমার কানা বেগুনগুলো ক'নয়ায় দেবে গো?" বুড়ির বোধহয় পানে চুন অধিক পড়েছে। তাই নরম জিভে  চুনের শান ধরিয়ে খ্যাঁকখেকিয়ে বলে উঠল,"চোকে কি ন্যাবা হয়েছে বাচার? এমন তেল চুকচুকে বেগুনকে কানা দেখছো! চশমা খুলে দেখো বাচা,
তোমার চোকে পোকা পড়েছে মনে হয়, এই আমি বলে রাখলুম।"
সাধনবাবু মনে মনে ভাবলেন, প্রথম বউনিটা না কেচিঁয়ে যায়। তাও লড়ে যাওয়ার মানসিকতায় মুখে শুকনো হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
" তোমার সরেস বেগুন তোমার থেকেও কচি গো ঠাম্মা।" বুড়ি এবারে খানিক নরম হয়ে ঠোঁটের পর্দা তুলে পানের ছোপ লাগা আধক্ষয়া পাঁচটি দাঁত বের করে বলে উঠে, " আর তেলাতে হবে না বাচা। কুড়ি টাকায় বেচছিলুম তুমি না হয় আঠেরো টাকা দিও।"
 শেষ পর্যন্ত খেলার মাঠের দড়ি টানাটানি প্রতিযোগিতার মতো টেনে হিঁচড়ে পনেরো টাকায় রফা করে বেগুন বগলদাবা করলেন সাধনবাবু।
 
 একটু এগিয়ে সাধনবাবু দ্যাখেন, এক তমসাঘন রাত্রির বর্ণের মাঝ বয়সি মাসি কপালে অগ্নি বর্ণ  টিপ পরে অপরিচিত ভদ্রলোকের সাথে কপি নিয়ে দরদস্তুর করছেন। পরিস্থিতি দেখে সাধনবাবুর মনে হচ্ছে, যেন রিঙের ভেতর দুই ফাইটার বক্সিং করছেন।  স্বগোত্রের লোক পেয়ে সাধনবাবুও  পড়িমরি করে পৌঁছালেন সেখানে।
উপস্থিত হয়ে বুঝলেন ম্যাচ ড্র হয়েছে। সেই ভদ্রলোক দাম মিটিয়ে ব্যাগে কপি ভরে স্থান ত্যাগ করলেন। সাধনবাবু কোন কথা না বলে দুটি কপি ঝপাঝপ ব্যাগে পুরলেন;কালীকেশ্বরী মাসির হাতে কুড়ি টাকা গুঁজে দিয়ে। সেই মাসি কুড়ি টাকা হাতে পেয়ে ললাটের অগ্নি,চোখে হেনে বলল, " ও বাবুর সাইথে জো দরটি হইছে তু ক্যান ও পয়সায় কপি লিবি?"  সাধনবাবু ফাজিল হেসে বললেন, " ওই লোকটা তোমার জামাই হয়? না বাংলা সিনেমার নায়ক দেব! যার জন্য ওর থেকে বেশি টাকায় কপি বেচবে আমাকে।" কালীমাসি বুঝল এ ব্যাটা সব নজর রেখেছে তাই পয়সা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সাধনবাবুকে বলল, " ও ব্যাটা আমার জামাই বটেক, তু তো সতীন পো কিনা।"
 
সাধনবাবু মনে মনে হেসে চললেন একটু দূরে মটরশুটির ঝুড়ির দিকে।
সদ্য গোঁফ গজানো ছোঁড়া, পা-ফাটা লো-ওয়েস্ট জিন্স ও স্কিন টাইট গেঞ্জী পরে কাঁধে গামছা রেখে কড়াইশুটির বাজরার উপর আর্দ্ধেক ঝুঁকে হাত চালিয়ে শুটি গোছ করছে। সাধনবাবু মটরশুটি দেখার আগে ছোঁড়ার কোমরে নজর গেল। প্যান্ট নিতম্ব থেকে নেমে যায় আর কী। দু'পাছার মাঝের কানা গলি দর্শন করে সাধনবাবুর মুখ চুলকিয়ে উঠলেন। কিছু একটা বলার জন্য মুখ হাঁ করতে যাবার মুহূর্তে ছেলেটা  দাঁড়িয়ে উঠল। মুখের কথা গিলে নিয়ে  ঝুড়িতে চটপট হাত দিয়েই সাধনবাবু চারটে শুটি তুলে ছাড়াতে ছাড়াতে গালে পুরছেন আর টকখাই মেজাজে বলছেন, " ভালো না কড়াই। মিষ্টতা নেই। তা তোমার ছিবড়ে কড়াই কত করে?"        
 
ছেলেটি তৎক্ষণাৎ টেঁটিয়া হয়ে বলে উঠে, 
" মাল কিনে তবে খান। আমার শ্বশুরের জমিদারি নেই। ফকটে খাচ্ছেন আবার দর জানতে চাইছেন।"       
 
 দরদামে ঠিক  পোষালো না কড়াইশুটি। আবার এগোতে থাকলেন। ছেলেটি ঔদ্ধত্যের সাথে বলল, " বেলার দিকে সব কাঙালিরা  বাজারে আসে ভেজা খেতে।"
 
এ সব কথা সাধনবাবু গায়ে মাখেন না। বন্ধু মহলে বলেন, একযুগ স্ত্রী সঙ্গ করলেই গায়ের চামড়া নিজে থেকেই গন্ডারের হয়ে যায়।          
এক লুঙ্গি পরা সব্জি বিক্রেতা হাঁটুর উপরে লুঙ্গি তুলে ঘসঘস চুলকাচ্ছে ও ঊর্ধ্বশ্বাসে বলছে,  "ক্যাডবেরি কুমড়ো, নিয়ে যাও সস্তা--সঙ্গে আনো বস্তা।" 
আশেপাশের বিভিন্ন লোকজনের বিভিন্ন রকম কথা শব্দের কোলাজ তৈরি হয়ে বাজার সরগরম। কত রকমের মানুষ তাদের বিভিন্ন রকমের স্বভাব। সাধনবাবু এসব দেখেন। আর ভাবেন, মায়ারানি কেন যে শপিংমল থেকে কেনাকাটার জন্য ঝোঁক তোলে! সে সব নিরস নিরেট জায়গায় যেতে সাধনবাবুর মন সায় দেয় না।
 
সাধনবাবু ইতি-উতি চাইছেন আর খুঁজে দেখছেন কার থেকে পরতায় আরো কী বাগানো যায়। ঘোঁচ মতো একটা জায়গা দিয়ে কার্নিক ঘেঁষে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে গেলেন সাধনবাবু টাকে কিছুর স্পর্শ পেয়ে। এক মাঝ বয়স্ক লোক  একটু উঁচু জায়গায় বসে সাধনবাবুর মাথায় ধনেপাতার বান্ডিল বুলিয়ে দিয়েছে চামরের মতো। সাধনবাবু তার দিকে তাকাতেই লোকটি বলে উঠল,  "কচি কচি ধনে --বেচি বাজারের কোনে।" সাধনবাবু  কান সকড়ি করা হাসি দিয়ে বললেন, "কত করে কত্তা তোমার ধনে?" দু'জন রসিক মানুষ আলাপ আলোচনা চালাচ্ছেন তাদের প্রয়োজন মেটাতে। সেই ব্রাহ্মমুহূর্তে বাজারের হৃষ্টপুষ্ট বেরসিক বোকাপাঁঠা ধনেপাতার সতেজ গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে সাধনবাবুর দু'ঠ্যাঙের পাশ গলে ধনেপাতার আঁটি ধরে টেনেছে। সেই বোঝাই করা ধনেপাতার উপর সাধনবাবুর পাজামার দড়িটাও ঝুলছিল। অবলা প্রাণী সবুজের সাথে দড়ির পার্থক্য করতে না পেরে একটু জাবর কেটেছে।  বুড়ো লোকটা তাই দেখে যেমনি, "হেঁই হেঁই" করে উঠছে, অমনি সাধনবাবুর কোমরে টান পড়েছে। আসলে এতক্ষণ বাজার করা ও রসালাপের মোহে সাধনবাবুর হুঁশ ছিল না কখন তার পা'জামা নাড়া ঝুলে পড়েছে। 
 
রসেবশে সাধনবাবু বাজার থেকে বেরনোর মুখে দ্যাখেন এক বুড়ো মতো লোক হেটো ধুতি ও মলিন চাদর গায়ে লঙ্কা,লেবু নিয়ে তীর্থের কাকের মতো হা-পিত্যেস করে বসে আছেন। সাধনবাবু তার সামনে ধপ করে বসে লেবু বাছতে বাছতে বললেন,
"তা বুড়োকত্তা,তোমার চিমসানো লঙ্কা ও নিরস লেবুর কত দিতে হবে।" বুড়ো সারাদিনের ক্লান্তি ফেলে মিচকে হেসে বলে, " আমার মতো আমার গাছেরও বয়স হয়ে যে গো। ঝাঁঝ আর রস কি থাকে মালের। যা আছে নাও। সস্তায় দিয়ে দেবো।"
 সাধনবাবু মনের সুখে সম্পূর্ণ লেবু-লঙ্কা নিয়ে নিলেন।
এই ভাবে সাধনবাবু বাজার ঘুরে-ফিরে সস্তা দরে 
শোঁষ ধরা মুলো, হেজে যাওয়া শাক, নধরকান্তি গোটা কুমড়ো নিয়ে যখন বাড়ি ঢুকলেন তখন দ্বি--
প্রহরের সূর্যের তাপে পাড়ার লোকেরা গা সেঁকছে।
মায়ারানি সাধনবাবুকে দেখেই কাংস কন্ঠে পাড়া মাথায় করে বলে উঠলেন, " ভিখিরির সাথে
ঘর সংসার করে আমার জীবন ভাজাপোড়া হয়ে গেল গা। মাঝে মাঝে মনে হয়ে, সংসারের মুখে নুড়ো জ্বেলে দিয়ে হাতে খাঁড়া নিয়ে রণনেত্য করি গে।"  
 
 সাধনবাবু জিভ দিয়ে একটু চুকচুক শব্দ করে
বলে উঠেন, " মায়ার সংসারে সবই মায়া।"
দিনের তপন সন্ধ্যার সময় তপস্বীর রূপে যখন পাটে বসেন তখন জগৎসংসারেও স্নিগ্ধতা নেমে আসে। 
সন্ধেবেলা স্ত্রীকে বেসনে ডুবিয়ে চারটি কুমড়ি ভেজে দিতে বলেছেন সাধনবাবু। মুড়ির সাথে মচমচে কুমড়ি ভালোই মজে। মায়ারানি কুমড়ো কাটতে গিয়ে দেখে কুমড়োর ভূতি থেকে পচা গন্ধ ছাড়ছে। ভেতরের শাঁস পুরো হেজে-মজে আছে। 
সাধনবাবুর সামনে সেই কুমড়ো ধরে মায়ারানি বললেন, " সস্তার তিন অবস্থা।" উগ্র ঝংকার না দিয়ে তীব্র কটাক্ষ হেনে মায়ারানি রান্নাঘরে চলে গেলেন। সাধনবাবু উদাসীন দার্শনিকের মতো ঝিম ধরে বসে রইলেন। 
 রাত বাড়ে। সংসারের আর এক খন্ডযুদ্ধ মশারী টাঙানো নিয়ে তোলপাড় হবার ভয়ে, ঘরে ঘরে বাঙালি পুরুষের বিরক্তিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সাধনবাবু বিছানায় শয্যা নেন স্বহস্তে মশারী গুঁজে। মায়ারানি গেটে তালা ঝুলিয়ে এসে বিছানায় ঢোকেন। বালিশে মাথা দিয়েও গজগজ করতে থাকেন বাঙালি রমণীদের প্রতিভু হয়ে। সাধনবাবু মায়ারানিকে উদ্দেশ্য করে বেশ ভাব রসে তান ধরে বলেন,
" বুক পেতেই রেখেছি। চড়ে যাও। দুপুরে বলছিলে না নেত্যকালী হবার সাধ তোমার। শোন, কালীর নিচে শিব শুয়ে থাকে শব হয়ে। এতে দেবাদিদেব ছোট হয় না। কালীর দৃঢ়তা প্রকাশ পায় শুধু।"
 মায়ারানি ডুকরে কেঁদে উঠে সাধনবাবুর বুকে মাথা গুঁজে দিলেন।
..................................... 

অলঙ্করণ :- প্রিয়াঙ্কা সরকার


ভ্ৰমণ - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ী - ভবেশ দাস

 



অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ী
ভবেশ দাস

 

জীবনে যখনই ইঁট চাপা ঘাসের মতো বিবর্ণ রঙ লাগে তখনই হাঁটি-হাঁটি, পা-পা করে বেরিয়ে পড়ি। ইচ্ছেশক্তির জোরে সাথীর অভাব হয় না।

আজ সকালে জলখাবার খাচ্ছি জমিয়ে, ফুলকপির সিঙারা ও আউসধানের লালচে মুড়ি।
আধুনিক প্রজন্মের সকল গুণধারী আমার তনয়া 
ফোনে মুখ গুঁজে সিঙারায় কামড় দিয়ে, 'উফ্' বলে উঠল। 

আমি তার দিকে একবার তাকিয়েই আবার সিঙারা-মুড়ির প্রেমে মজলাম। খেতে খেতে মনে মনে মেয়ের ফোন আসক্তিকে মুন্ডুপাত করছি
নিজের স্বভাব দোষে। সে বোধহয় কিছু একটা টের পেয়ে আমাকে বললে, " দুপুরে খাওয়ার পর এক জায়গায় নিয়ে যাবো তোমাকে আর মা'কে।"

কথাটা শুনেই আমার ললাটের তিনটি সরলরেখা বক্র হয়ে উঠল। স্ত্রী কন্যা সহ বেড়ানো মানেই মানিব্যাগের মূর্ছা যাওয়া। গিন্নির টেলিপ্যাথির জোর সাংঘাতিক। রান্নাঘর থেকে আমাদের শুনিয়ে বলে দিল, " যেখানে মন চায় বাপ-বেটিতে ঘুরে এসো। আমাকে টানা হ্যাঁচড়া করো না এই বিষাক্ত ঠাণ্ডায়।"

আমার ধড়ে প্রাণ এলো এই ভেবে, ঘরোয়া মজলিশে খালি গলার গানই ভালো। বাজনদারের খরচটা অন্তত কমে। 

সময়ের নিয়মে দ্বি-প্রহর উপস্থিত। মেয়েকে নিয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠলাম। গন্তব্য কোন্নগর। 

ট্রেনের কামরায় এক হকার গলার শিরা ফুলিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে বলছে, " আর কারো ঠকবার ইচ্ছা আছে কি..." সে দিকে তাকিয়ে দেখি, ঝুড়িতে করে কমলালেবু বিক্রি করছেন তিনি। মনে মনে হেসে ভাবলাম দেশের নেতারা এমন সৎ হলে কতই ভালো হতো।

কোন্নগর স্টেশনে নেমে টোটো'য় চড়ে বসলাম। যাবো মিরপাড়া বাগানবাড়ী। যেতে যেতে রাস্তার দু'ধারে তাকিয়ে দেখি পুরনো মফস্বল শহরের 
চুন-সুরকির আস্তরন এখনও অল্প বিস্তর টিকে রয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে তবুও পুরোপুরি নিষ্প্রাণ হয়ে যায় নি শহরটা। 

জি.টি-রোডের একধারে টোটো নামিয়ে দিল। সামনেই দেখি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত তোরণ। মেয়ে চোখ নাচিয়ে বললে,
" তুমি চিনতে এই জায়গাটা?" আমি ঘাড় হেলিয়ে না বললেম।  এক ছটাক বিশ্বজয়ের হাসি আমার পানে ছুঁড়ে দিয়ে সে বললে, " ফোন ঘাঁটতে দেখো শুধু। জানো, ফোনেই জেনেছি এই বাগানবাড়ীর কথা।" আমি চুপচাপ গুটি-গুটি পায়ে এগোতে থাকলাম। 

টিকিট কাটার বালাই নেই। গেটের সামনে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক বলেদিলেন, " ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটবেন না। ফুল ছিঁড়বেন না। বাঁধানো রাস্তা দিয়ে বাঁ-দিকে চলে যান গঙ্গার ধারে। সব দেখে ওটা দিয়েই ফিরে আসবেন।"

মেয়ের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে গঙ্গার দিকে এগোচ্ছি। প্রাচীন বটবৃক্ষ ঝুরি বিস্তার করে দন্ডায়মান। গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা বোর্ডে সাবধান বানী," এই স্থানে বিষধর সাপ আছে।" পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার শুদ্ধতা জায়গাটিকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। পায়ে-পায়ে পৌঁছে গেলাম গঙ্গার ঘাটে। আধুনিক নির্মানে 
ত্রি-ধারা আর্চের মাধ্যমে ঘাটের শোভাবর্ধন। 

সেখানে একটু বসলাম। আশেপাশে আরো কিছু মানুষ জড়ো হয়েছে। সবাই আপন মুঠোফোনে খচাৎ শব্দে তুলছে নিজস্বী। আমি ঘোরে আছি। 
আমার কন্যারত্নটি জানে এই সময়ে তার কল্পনাবিলাসী বাবাকে কথা বলানো যাবে না। 
চোখবুজে ভাবে আচ্ছন্ন হয়ে আমি দেখতে পাচ্ছি,
অবনঠাকুর নদীরঘাটের বজরা থেকে নামছেন তাঁর সাধের বাগানবাড়িতে। সঙ্গে লটবহরের মধ্যে চিত্রলিপির সরঞ্জাম। এক অন্য জগতে পৌঁছে যাবার হাতছানিতে আমি ডুবে যাচ্ছি। সেই মুহূর্তে মেয়ে গায়ে হাত রেখে বললে, " বাবা ওদিকে চলো। বাড়ীর ভেতরে ঢুকি।" 

বাস্তবে ফিরে এসে মেয়েকে নিয়ে অবনঠাকুরের বাড়ীতে প্রবেশ করলাম। পুরনো স্থাপত্য বজায় রেখে আধুনিক ভাবে কলেবর সাজানো হয়েছে বাড়ীটিকে। মাথার উপরে প্রকান্ড কড়ি-বরগার ছাদ। খড়খড়ি দেওয়া জানালা। সুউচ্চ দরজা।
ঘরের ভেতর দিয়ে ঘর। বিশালতা যেন ব্যঙ্গ করছে 
দশফুট বাই দুশফুটে থাকা মানুষদের। 

আমি তন্ময় হয়ে সব দেখছি। মেয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত। একটি বড় ঘরে অবন ঠাকুরের জগৎবিখ্যাত চিত্রের কিছু প্রতিলিপি রাখা আছে। চতুর্ভুজা ভারতমাতা, শাজাহানের অন্তিমকাল, ওমর খৈয়াম, বুদ্ধ ও সুজাতা। 

সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ীর পেছনদিকে গেলাম। 
বুড়ো আমগাছ ক্ষয়িষ্ণু ভাবে জানান দিচ্ছে তার প্রাচীনতা। যোগ্য সাথীর সাক্ষ বহন করছে তাল, কাঁঠাল, অশ্বত্থ ঘেরা ছায়া নিবিড় প্রাঙ্গন। 

সব জায়গায় যত্নের ছাপ সুস্পষ্ট দেখে কোন্নগর পৌরসভার তারিফ করলাম মনে মনে।

গঙ্গারদিকে বাগানবাড়ীর সন্নিকটেই একটি ইসলামী মাজার। কোনো পীর সাহেব শয়নে আছে বোধহয়। টাটকা রজনীগন্ধা ফুল ও ঝকমকে ঝালর দেওয়া চাদরে বোঝা যায় ভক্তি ভাব আজও বিদ্যমান।

এই আমাদের ঐতিহ্য মন্ডিত বাংলা। যেখানে বিরোধ নেই। সহবস্থান আছে। 

আশেপাশে যে টুকু স্থান ফাঁকা ছিল সেইখানে প্রাকৃতিক ঘাসের সবুজ গালিচার উপরে শীতকালীন ফুলের সমারোহ। দেখেই নয়ন জুড়িয়ে আসে। 
মনের মধ্যে শীতলতার স্পর্শ অনুভব করি।  

ফিরে আসার সময় হয়ে এলো। কন্যাটি আমার কৌতুহল বশত বললে, " বাবা, রাজকাহিনী,বুড়ো-
-আংলা, ক্ষীরের পুতুল এই বইগুলো অবনঠাকুরের লেখা তো। ছবি আঁকা ছাড়াও ওঁর লেখা পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।" আমি আশ্বস্ত হয়ে ভাবলাম, যাক  যন্ত্র নির্ভর আধুনিকতার নামে নিজের সংস্কৃতির বিসর্জন দেয় নি। 

অনেকদিন আগে পড়া একটা লেখার কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েকে বললেম, " জানিস বাবু, ঋতুপর্ণ ঘোষ একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, রবি ঠাকুরের ছায়ায় অবনঠাকুর নিজেকে ঠিকমতো  মেলে ধরতে পারেন নি। আসলে কি জানিস তো,সূর্যের পাশে শুকতারার অস্তিত্ব থাকলেও উজ্জ্বলতা হ্রাস পায়।
কাকলিদি সাধে বলেন রবি ঠাকুর ছিলেন দানবীয়
প্রতিভার অধিকারী।"

গঙ্গার দিকে তাকিয়ে দেখি, ভাগীরথীর কোলে মিলিয়ে যাচ্ছে বৈকালিক অস্তরাঙা সূর্যের কিরণ।

বিচিত্র অনুভূতির রঙে মনকে রাঙিয়ে দুহিতার হাত ধরে বাড়ী ফিরে এলাম।
..................