নীলাঞ্জনা মল্লিক
কবিতা - অয়নাংশুর চিঠি- নীলাঞ্জনা মল্লিক
কবিতা - গল্পদাদু- নিবেদিতা মুখার্জী
গল্পদাদু
কবিতা - শৈশবের বরিষন দিন- শুভ্রা ভট্টাচার্য
কবিতা - ঢাকের কাঠি- সর্বানী বন্দোপাধ্যায়
ঢাকের কাঠি
সর্বানী বন্দোপাধ্যায়
রেললাইনের ধারে কাশফুল আজও ফোটে,
আজও অপেক্ষায় থাকে ডাগর চোখের এক ছেলে।
“কবে সারবে রে তোর জ্বর?
শরৎ ঋতু এলে?”
জানতে চায় অবুঝ বালক দূর আকাশে চেয়ে।
ঢাকের কাঠিতে আদুরে হাত রাখে অবরে সবরে আর
অসহায় বাবাকে মনে মনে প্রশ্ন করে,
“এবার পুজোয় যাব তো আমরা শহরে?”
মাঠের পাশের একলা শিউলি গাছ ঝড়ে ভাঙে।
ভাঙা গাছের কোলের কাছে বসে থাকে উদাসী ছেলে;
অবদমিত চোখের জলে গড়ায় জিজ্ঞাসা,
কবে সারবে এই জ্বর?
বর্ষা গিয়ে শরৎ ঋতু এলে?
....................
কবিতা - বৃষ্টিদিন - দিলীপ মাশ্চরক
কবিতা - রাস্তা - তিলক মুখার্জি
তিলক মুখার্জি
আরো একবার বৃষ্টি নামুক মুষলধারে
এ শহরের রাস্তাগুলো বহু প্রতীক্ষায়
চেয়ে থাকে অবিন্যস্ত আকাশের গায়ে
যেন রোদের কণার সামিয়ানা মেলা ।
কেউ তার খবর রাখেনি কেবল -
উষ্ণ ধুলোবালি কখনও হয়েছে রাজি
নির্জন দুপুরে সন্ধি করে বিদীর্ন
করেছে পথ , শিরা উপশিরা উপড়েছে ।
তারা ফেরার বেলা পিছে তাকায়নি
শহরের রাস্তাগুলো বড়ই উপেক্ষিত
গাড়ির মিছিল ভোর হতে রাত্রি
ঘুরে যায় ঘড়ির কাটা বিরামহীন অক্ষত।
জীবন পড়ন্তবেলায় খই ছিটিয়ে থাকে
সন্ধ্যে হলে বাজে কাসর ঘন্টা ঢাক
বিসর্জনের অন্তিম করুন সুরের তালে
আরো একবার বৃষ্টি নামুক মুষলধারে।
..........................
কবিতা - মাল্টিভার্স - অমিত চক্রবর্তী
মাল্টিভার্স
অমিত চক্রবর্তী
অতন্দ্রিলা লাল গোলাপ চেয়েছিল, আমার সংগ্রহে
একটি প্রবীণ বেলফুল গাছ, গোড়াটা পোক্ত হলেও
হাওয়া দিলে টবশুদ্ধ গড়াগড়ি যায় ডেকে
এ দিক থেকে সে দিক। এ অঞ্চলে হাওয়া কম নয়,
এখন তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে রেলিংয়ের সঙ্গে,
গৃহদাস চেন পরে সঙ্গী হয়েছে আমার। আমারও শিকড় প্রবীণ,
পাথুরে জমিতে লাল গোলাপের শখ, এখন
লাল পাঞ্জাবি পরে
ঢেউখেলানো আকুলতা, বেনোজলের আবর্তন।
অতন্দ্রিলা লাল গোলাপ চেয়েছিল, ললিতা ধর চৌধুরির
গানের ক্লিপ পাঠিয়ে। আমার সংগ্রহে
একটি বেলফুল গাছ, জল দিই তাতে মরিয়ার মত, প্লাস্টিকের
ভাঙা ঝাঁঝরি ঝাঁকিয়ে। একদিকে লাল গোলাপ,
আশাবরী রাগে লাল আবদার,
অন্যদিকে ডেকে বাঁধা বেলফুল, পুরিয়া অন্ধকারের বিড়ম্বনা –
এই নিয়েই আমাদের মাল্টিভার্স, যুগ্মপৃথিবী।
..........................
কবিতা - গ্রামের শরৎ- সুপ্রিয়া মণ্ডল
গ্রামের শরৎ
সুপ্রিয়া মণ্ডল
শাপলা দিঘি, শ্যাওলা পুকুর, দূরের কোনো গ্রাম,
সাথে গাংচিল আর মাছরাঙাদের অলস বিশ্রাম।
মাথার ওপর নীলচে তাঁবু, মেঘদূতেরা যায় যে ভেসে,
সন্ধ্যে হলেই আলোকমালা জোনাকিদের দেশে দেশে।
শরৎ সেথায় উঁকি মারে খুশির পরব নিয়ে,
বছর শেষে সবুজে মিশে ঢাকের বাদ্যি নিয়ে।
কাশের বন দেয় জানান, আসছে মোদের মা—
শহর থেকে অনেক দূরে মায়ায় ভরা গাঁ।
তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বলে শঙ্খধ্বনির সুরে,
ক্লান্ত চাষি জিরোয় শরীর তাসের আসরে।
পাখির ডাকে সূয্যি ওঠে রাঙা সকালে,
দীর্ঘ দুপুর ঘুমোয় যেথা আঁধার ঘনালে।
আশ্বিনের এই আনন্দ ছড়াক রাশি রাশি,
শরৎ, তুমি বাঁচিয়ে রেখো পল্লী বালার হাসি।
...................
কবিতা - বৃষ্টি হয় - শুভদীপ কোলে
যখন গোলাপের শেষ পাপড়ি-
বলে সে যে ভালোবাসেনা
তখন বৃষ্টি হয়।
আবার ওই পাপড়িই যদি বলে
সে আমাকেই ভালোবাসে
তখনও বৃষ্টি হয়।
তোমার একলা মাঝরাতে
যখন মন খারাপের ভয়
আবার বৃষ্টি হয়।
আর একাকার দুপুরে
ভালোবাসার সময়
অন্য বৃষ্টি হয়।
আসলে বৃষ্টি আসে সবসময়
কিন্ত ভেবে দেখো
সব বৃষ্টি এক নয়।
কবিতা - আমাদের আগামীর জীবন - আকাশ দত্ত
কবিতা - বারিষনামা - উৎস ভট্টাচার্য
বারিষনামা
উৎস ভট্টাচার্য
স্বপ্ন-শহর এলোমেলো করার অনেক লোক৷
বর্ষণেতে ডুবছে শহর, নিম্নচাপের রোগ৷
বৃষ্টিভেজায় উত্তাপেতে কাঁপছে থরথর৷
একলা হয়ে ভিজছে আজও স্হাপত্য মর্মর৷
মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আকাশের মুখ ভার৷
আলোর কণা গিলছে এখন ভীষণ অন্ধকার!
রণ-হুংকারে ঝলসে ওঠা চোখ ধাঁধানো আলো৷
কাঁপছে সবাই, কাঁপছে ত্রাসে, মরণ বুঝি এলো!
আলোয় কালোয় মিশলো যখন, ঘুচলো সীমারেখা৷
জীবন-পথের পথিক হয়ে, চলতে চলতে শেখা৷
জলের ধারা নামছে আজি, নামছে অনর্গল৷
জল শুকালে দৃষ্টি মাঝে প্রকাশিবে অনল৷
আলোয় কালোয় বেশ মিলেছে; ধূসর রঙের সাজে,
বারিষনামা প্রাণ পেলো আজ কালচক্র মাঝে!
যাচ্ছে গো আজ, যাচ্ছে ভেসে, ব্যথার পরশ প্রাণে৷
একতারাতে উঠলো যে সুর, নতুন খবর গানে৷
....................
কবিতা - ফেলু - ফীলিং - প্রতীক কুমার মুখার্জি
ফেলু - ফীলিং
প্রতীক কুমার মুখার্জি
সাপলুডোয় বেজায় পাখোয়াজ শ্রী ভবানন্দের চেলা ...
বুদ্ধি খাটিয়ে করলে খতম তার ইহজীবনের খেলা।
দার্জিলিঙে রাজেনবাবুর ডেরায় দিলে সেই যে হানা ...
মুখোশের মুখ তিনকড়িবাবুর, তোমার কাছেই জানা।
কাশীতে পেলে ভন্ড এক মছলিবাবা, হাতে বেমানান উল্কি ...
তারই সূত্রে ভেস্তে দিলে ভেস্তে মগনলালের বদ ভেল্কি!!!
নওলখা হার করলো পাচার 'লাইফ ডিভাইনে' গোরে ...
ল্যাজেগোবরে হল সেও, তোমার মগজাস্ত্রের জোরে।।
পাচার হবে প্রাচীন পান্ডুলিপি, তাই বাক্স হল হাওয়া ...
চোর পাকড়াও করতে তিনমূর্তির, সেই সিমলা যাওয়া।
শিকার করতো একজনায়, নামযশ অন্য লোকের
'ফোকলা ফকির' ফাঁস, তোমার লক্ষভেদ পাখির চোখের !!!
বিরল প্রতিভা ছোট্ট ছেলের, তাই হল প্রাণ সংশয়,
হারালে তারক, গাওয়াঙ্গীকে - তুমি সদাই অকুতোভয় ...
ভূস্বর্গেও অদ্বিতীয়, রাখলে সাফল্যের চরম কীর্তি ...
দেশ জুড়ে জয়জয়াকার, সুনাম ধরে রাখল তিনমূর্তি ।
মূর্তি পাচার রুখতে সোজা পৌঁছে গেলে কৈলাস
ছদ্মবেশে কিস্তিমাৎ - বাকিটা সবাই জানে - ইতিহাস !!!
তিন শ্যামাপোকার জোরে এবার শানালে নিশানা,
'টীনটোরেট্টোর যীশু' খুঁজে পেল তার আসল ঠিকানা ...
বাদশাহী ভুলভুলাইয়াও তোমার কাছে স্রেফ সরল সাধা ...
এত বুদ্ধি, পর্যবেক্ষণ কি সত্যি ... না এও অলীক এক ধাঁধা ?
বহু জায়গায় রেখেছ গড়ে নানা কীর্তির চালচিত্তির,
একমেদ্বীতিয়ম - পঞ্চাশোত্তীর্ণ - শ্রীমান ফেলু মিত্তির !
সবার শেষে প্রনমি তোমায় বাক্যে, মনে, কায় -
পরমপূজ্য গুরুদেব, মহামতি শ্রী সত্যজিৎ রায় !!
কালি, কলম, ছবি, সংগীত, মেধার বহুমুখী উৎকর্ষে -
শ্রদ্ধা জানাই মানিকরাজা তোমার জন্ম শতবর্ষে!!
.......................
কবিতা - মাধবীলতা তুমি - অভিজিৎ দাশগুপ্ত
কবিতা - প্রচ্ছদের মেয়ে - রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়
প্রচ্ছদের মেয়ে
রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়
অন্ধকার বিভাজিকার গভীরে বয়ে যায় হাতছানি…ভাসিয়ে নিয়েছে বদ্বীপে অবশিষ্ট স্নেহ
অস্থি মাংস মজ্জার আটপৌরে কাঠামোয় চকচকে চামড়ার খাপে বিভঙ্গ মুড়ে রেখে
শ’য়ে শ’য়ে উপোসী ও অর্ধভুক্তদের দল দাহ্য পত্রিকার দামে মিটিয়ে নিতে থাকে ক্ষিদে
লালায়িত জিভে এসে জমা হওয়া জোরালো ইচ্ছেদের ভোঁতা অভিমুখ
চেটে নিতে নিতে বিকৃতকামের পাঁচিলে উড়ে এসে বসে ব্যর্থ কাক,
তার ধূসর রঙ থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ক্লান্তিকর দহনের পরিণতি – ছাই!
এভাবে ট্রয়ের গল্পে আজও উস্কে দেওয়ার মোহিনী অবচেতনে থই থই জল…
পোর্টফোলিওতে আরেকটি অ্যাসাইনমেন্টের সবুদ নিয়ে সে জেব্রা ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে
তাকে সরাসরি বলা হল, সহেলীর জুলাই ইস্যুতে আপনার বাঁদিকের ব্রেস্টে যে তিলটা ছিল…
শহরের সব বিলবোর্ড জুড়ে এরপর তিলফুলে মরেছে ভ্রমর!
.........
কবিতা - ভাইরাল - শুভায়ু দে
কবিতা - মৌটুসী - মহুয়া সমাদ্দার
মৌটুসী
মহুয়া সমাদ্দার
বুকের ভেতর সিঁটিয়ে থাকা মোম
আর পোড়ে না গোপন দাবানলে
খোলনলচে বদলে ফেলা মন
পাহাড় কোণে একাই অস্তাচলে ।
গ্ৰীষ্ম প্রখর , এক বুক মরু তৃষ্ণা
কেই বা দেয় একফোঁটা জল, খুশি ?
দুপুর কেনে ক্লান্ত অভিমানে
ভুলে যাওয়া প্রেমিক মৌটুসী ।
জলের ওপর জলের ছায়া কই ?
ছায়া খুঁজে মরে আজও ভূতও ।
ফর্সা রঙে রক্তাল্পতা জটিল
চটুল গানে ঝর্ণা পরিশ্রুত ।
সূর্যাস্ত পথ আগলে , করুণ
সময় গেছে গোপন অভিসারে
সুর কী বাঁধে আবার নতুন করে
ছেঁড়া তার আর বিবর্ণ সেতারে !
নতুন সূর্য উঠতে চাইছে জ্বলে,
নিষ্প্রয়োজন। মনটা নিজেই আগুন
মৌটুসীটা একা একাই দেখে
কবিতা - স্বপ্নবৃষ্টি- কনকজ্যোতি রায়
স্বপ্নবৃষ্টি
কনকজ্যোতি রায়
ঘাসের মত হলে পদানত হয়েই থাকতে হবে,
তার চেয়ে কাঁটাঝোপ হওয়া ভাল
অন্তত প্রতিবাদের অক্ষমতার আফসোস থাকে না।
মাটীর মত হলে জড়বৎ হয়েই থাকতে হবে,
তার চেয়ে নুড়িপাথর হওয়া ভাল
অন্তত পথিকের পায়ের সাথে কম্পিত হওয়া যায়।
ঢেউ এর মত হলে তীরে এসে ভেঙে পড়তেই হবে,
তার চেয়ে হিমশৈল হওয়া ভাল
অন্তত ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের দুঃখ থাকে না।
নক্ষত্রের মত হলে অবিরাম জ্বলতেই হবে,
তার চেয়ে চাঁদ হওয়া ভাল
অন্তত রাতের অন্ধকারে স্নিগ্ধ আলো বিতরণের গর্ব থাকে।
রাত্রির মত হলে সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই মিলিয়ে যেতে হবে,
তার চেয়ে প্রত্যুষ হওয়া ভাল
অন্তত অল্প আলোর আভাসের মধ্যে উজ্জ্বলতার প্রকাশ থাকে।
মেঘের মত হলে পরনিয়ন্ত্রিত হয়েই উড়ে যেতে হবে,
তার চেয়ে আকাশ হওয়া ভাল
অন্তত অসীম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করা যায়।
বাতাসের মত হলে স্বেচ্ছাহীন বয়ে যেতেই হবে,
তার চেয়ে দখিণাবায়ু হওয়া ভাল
অন্তত শুষ্ক হৃদয়ে আনা যায় শীতলতার স্পর্শ।
.............................
কবিতা - দূরে থাকা ভালো - লিপি সেনগুপ্ত
দূরে থাকা ভালো
লিপি সেনগুপ্ত
বেশ কিছু দিন আমাদের দূরে থাকা ভালো
বেশ কিছুটা সময়
তারপর না হয়
কোন অবসরে নদীর গভীর ছুঁয়ে দেখা যাবে
জলস্রোতের তীব্রতা কতদূর
নিয়ে যেতে পারে
সে কি আগের মতো
পৌষালী ক্ষীণ, না কি তন্বী!
সুষমানীল.... জল টলোমলো
বুঝে নিতে নিতে আর একটা বর্ষা
ধান রোপণের সময় হয়ে এলো
এই ফিরে যাওয়া কেমন
দেখার জন্য কিছুদিন নদী থেকে দূরে
পাহাড়ের উপত্যকায় বা কোন মরুভূমিতে
কিছুটা সময়
তাকে সঁপে দিই এসো
................
কবিতা - নাছোড়বান্দা - জয়দীপ লাহিড়ী
নাছোড়বান্দা