ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

নতুন বৌঠান - ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়

নতুন বৌঠান
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়

 


 

 


 


হ্যালো। হ্যাঁ রে, কেমন আছিস?
ক্ - কে? আপনাকে...
বলছি, সব ঠিকঠাক তো?
হ্যাঁ... কিন্তু...
এই তো!  এর মধ্যেই ভুলে যাচ্ছিস? গুড গুড! গলাটাও চিনতে পারছিস না দেখছি।
আরে কে? কে?  ...  এই নাম্বারটা...
হ্যাঁ, এটা অন্য নাম্বার। যদি না ধরিস। তোর এখন যা --
কী এখন? ধরব না কেন? এবার কিন্তু ভালো লাগছে না, কেটে দেব। টু মাচ।
ভালো তো লাগবেই না, যা করলি আমার সঙ্গে! আয়াম রিয়্যালি শকড।... আমি কপোতাক্ষ। এখন কি তোর...
ক-পো! ও মাই গুডনেস! থাম থাম। সত্যি রে কপো, সারাক্ষণ তোর শুধু ড্রামা... কী হয়েছেটা কী?
কী করেছি আমি?
কিছু করিসনি? এতবড় খবরটা আমায় অন্যের মুখ থেকে শুনতে হল। সো এমব্যারাসিং।  আমি তো ধরেই নিয়েছি, তোর আর আমার কথা শেষ।
ধ্যেৎ! কী হাবিজাবি বকছিস বল তো!...  হিঃ হিঃ, বুঝেছি, বুঝেছি। আমার বিয়ের খবর। হ্যাঁ রে, আজ বিকেলে ফাইনাল হয়ে গেল। কোত্থেকে খবরটা পেলি রে কপো?
সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু এটা কি ঠিক হল শুক্লা?
কোনটা?  বিয়ে? তুই কি পাগল হয়ে গেছিস কপো?  আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি,  বাড়ি থেকে ছেলে দেখছিল, আজ পাকা হয়ে গেল। এর মধ্যে ঠিক-বেঠিকের কী আছে ?
ঠিক- বেঠিক নয়?  আমাদের সাত বচ্ছরের রিলেশন এক ফুঁয়ে নিভিয়ে দিলি?
নিভিয়ে দিলাম? কী ভাট বকছিস? ইউ আর অলওয়েস মাই বেস্ট ফ্রেন্ড।
ফ্রেন্ড!  হাঃ, কী কথা! এমনি নয় --- আবার বে-স্ট ফ্রে-ন্ড!  
হ্যাঁ, অবশ্যই বেস্ট ফ্রেন্ড। তুই আমার কাছে তাই ছিলি, আছিস, থাকবি।

তাই?...  শুক্লা, আমরা কি শুধুই ফ্রেন্ড?  ব্যস?  সাত বছর ধরে যেখানে তুই, সেখানে আমি। তোর জন্যে আমি বর্ধমান থেকে উজিয়ে নৈহাটি এসেছি, তারপর একসাথে কলকাতায় চক্কর কেটেছি, সিনেমা থেকে বইমেলা, কলেজ স্ট্রিট, ক্রিকেট সব আমরা একসাথে। সাত বছর ধরে আমাদের মধ্যে শুধু কি ফ্রেন্ডশিপই ছিল?
অবশ্যই ছিল। কেন, ছেলে আর মেয়ের মধ্যে কি পিওর ফ্রেন্ডশিপ হতে পারে না?
কেন পারে না?  একশো বার পারে, হাজার বার পারে। কিন্তু তোর চোখের চাউনি, তোর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কি সেকথা বলত? দিনের পর দিন আমরা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে হেঁটে গেছি, বৃষ্টির দিনে তোর লেডিস ছাতার তলায় লেপ্টে থেকেছি, ঠাণ্ডায় কেঁপেছি, কত কত এতোল বেতোল বকে গেছি, দুজন দুজনের মুখের দিকে হাঁ করে ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ে থেকেছি... এসব কি সত্যি নয়?  
হ্যাঁ সত্যি,  সো হোয়াট? যদি তুই আর আমি এক জেন্ডার হতাম, তখন কী বলতিস? গে বা লেসবিয়ান? যদি তুই আমার দাদা বা ভাই হতিস, তখন কী মানে হতো?  বন্ধুত্ব নয়? তুই -- তুই--
কপো, তোর মেন্টালিটি দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।
সে তো আমিও। যদি সত্যিই তুই আমাকে তোর বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করিস, তার মর্যাদাও কি দিয়েছিস? তোর একটুও রিপেন্টেন্স হচ্ছে না?  
কেন?  রিপেন্টেন্স হবে কেন?  
বাঃ রে শুক্লা, বাঃ! নাম্বার ওয়ান,  তুই যে ফাইনালি বিয়ে করতে রাজি, সেটা বাড়ির লোকজন জেনে গেল, বেস্ট ফ্রেন্ড জানবে না,  বল? এমনকী, তোর পাকা দেখা হয়ে ডেট ফিক্সড হয়ে গেল, তারপর পাঁচ ঘন্টা কেটেও গেল, তার পরেও তোর মুখ থেকে আমি জানব না? বাঃ রে শুক্লা, এটাই তোর বেস্ট ফ্রেন্ডশিপের নমুনা !
উঁ...
কী উঁ?  চুপ করে আছিস কেন?  বল, জবাব দে।
কপো...  ভাই কপো...  আই অ্যাম সরি কপো। সত্যিই আমার অন্যায় হয়েছে রে। আসলে...  আসলে বিয়ের এক্সাইটমেন্টে আমার সব গুলিয়ে গেছে। প্লিস, আমাকে মাপ করে দে।
দ্যুৎ,  পাগলি কোথাকার!  বন্ধু আবার মাপ চায় নাকি। জানিস শুক্লা,  আমি এতদিনে নিশ্চিন্ত হলাম।
নিশ্চিন্ত?  কেন? কপো, আর হেঁয়ালি করিস না রে ভাই। আমি ভুল করেছি, স্বীকার করছি। প্লিস,
কী বলতে চাস, একটু সোজা বাংলায় বল।
সোজা বাংলাতেই তো বলছি রে শুক্লা। আমি বলতে চাইছি,  আজ আমার মাথা থেকে একটা বিরাটবোঝা নেমে গেছে। আমি সত্যিই খুব রিলিভড ফিল করছি। ক'বছর ধরে তুই আমার সঙ্গে যে লেভেলে বিহেভ করেছিস, যেরকম ইন্টিমেটলি মিশেছিস, আমার ওপর সব ব্যাপারে ডিপেন্ড করেছিস, আমি বারবার ভেবেছি, শুক্লা আমায় অন্য চোখে দেখছে না তো!  জিগ্যেস করতে সাহস পাইনি, তুইও কিছু বলিসনি। দুশ্চিন্তায় কাঁটা হয়ে থেকেছি। কারণ, বিশ্বাস কর, আমি তোকে একফোঁটাও গার্লফ্রেন্ড ভাবিনি। তারপর আজকের খবরটা হঠাৎ অন্য সোর্স থেকে পেয়ে আরও ঘাবড়ে গেলাম। তোকে প্রপোজ করিনি বলে তুই কি আমার ওপর রেগে গেলি? অভিমান করে হঠাৎ ডিসিশন নিলি? তাহলে কি আমাদের এতদিনের রিলেশনটা কাট্টি হয়ে গেল? সেইজন্যেই জানালি না?
কপো, তুই সত্যিই একটা পাগল! সো সুইট! লাভ ইউ।
যাগ্যে, এবার বল দেখি, কেমন দেখলি তোর হবু বরকে?  হ্যান্ডু তো?
হ্যাঁ রে, ঠিকঠাক। অন্তত আমার ভালোই লেগেছে। সবচেয়ে ভালো লাগল ওর চোখদুটো। তুই তো জানিস,  আমার চোখের উপর স্পেশাল ফ্যাসিনেশন আছে।
তা আর জানি না!  উরিব্বাস -- তোর চক্ষু রিলেটেড কতরকম টার্ম আছে! গরুর চোখ, বাজপাখির চোখ, শকুনের চোখ, শিয়ালের চোখ, লোভী হায়েনার চোখ, নেকড়ের চোখ... তা সোনা, তোমার বর বাবাজি কোন ক্যাটেগরিতে পড়ছে?
হিঃ হিঃ হিঃ,  তুই একটা রামবিচ্ছু, যাকে বলে হাড়জ্বালানো পাজি। তুই নির্ঘাত আওয়াজ দিবি, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি,  ওগুলোর কোনটাই নয়। বুঝলি, আমার বরের চোখদুটো  সমুদ্রের মতো, গভীর,  অতল।
আহা রে, মরে যাই, মরে যাই। তুই তো দেখছি এক সিটিংএই ফিদা। সেই লোকটা খুব  লাকি। তা তিনি থাকেন কোথায়, মানে তার বাড়ি?
বাড়ি না রে, ফ্ল্যাট। বিটি রোড, সোদপুর মোড়। কী যেন নাম কমপ্লেক্সটার।
সোদপুর?  আর ইউ সিওর?
সিওর!  রবীন্দ্রভারতীতে পড়ায়, বেলঘরিয়া ক্যাম্পাস।
বেশ, বেশ। তার বাবা মা?  সবাই কি ওখানেই থাকেন?  
বাবা মা?  এই রে, তুই তো মুশকিলে ফেললি। বাবা মা কে দেখলাম, একটা ভাইও আছে, শুনলাম।
কিন্তু তারা ঠিক কোথায় থাকে, জানা হয়নি। একমিনিট ধর, মা জানে, জিগ্যেস করে বলছি।
দরকার নেই। আমি জানি।
কী!  তুই -- তুই ওকে চিনিস?  
অবশ্যই। তোর বুদ্ধিশুদ্ধি আছে বলে ভাবতাম, তুই যে এতটা গাধা, সরি গাধি, ভাবতে পারিনি রে।
আমারই ব্যর্থতা।
অ্যাই -- অ্যাই -- তুই কিন্তু লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছিস কপো।
না ছাড়িয়ে উপায় কী বল! তোর হবু বরের নাম শুনতে চাস?  বলব?...  হাঃ হাঃ হাঃ --- শ্রীল শ্রীযুক্ত শ্রীমান কমলাক্ষ ভট্টাচার্য। ঠিক বলেছি তো?...কী রে, চুপ করে গেলি যে? ফিউজ উড়ে গেল? বাবা মা কোথায় থাকেন? শুনে রাখ-- নৈহাটি। কী রে, এবার কিছু বুঝলি?.... ছি ছি,  এতখানি ক্লু দেওয়া সত্ত্বেও পারলি না!  সত্যিই তুই গরুর চোখবিশিষ্ট।
নৈহাটি?  
আজ্ঞে হ্যাঁ। আর কমলাক্ষর একমাত্র কনিষ্ঠ ভ্রাতার নাম হল কপোতাক্ষ।
সত্যি? ওয়াও!  কী মজা, উঃ -- আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে... আমি সত্যিই বুদ্ধু...  তুই -- তুই আমার একমাত্র...
ইয়েস, ওয়ান অ্যান্ড অনলি দেবর। তোমার আদরের ঠাকুরপো। তবে আমি তোমায় ছাড়ছি না ম্যাডাম! এবার শুরু হবে আমাদের নতুন এপিসোড।
নতুন এপিসোড!
অবশ্যই।...যেথা আমি যাই নাকো তুমি প্রকাশিত থাকো / আকুল নয়নজলে ঢালো গো কিরণধারা...
আরে, আরে ! কী হল তোর ?
ইয়েস!  তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা... নতুন করে পাব তোমায়...  আমি রবি আর তুই নতুন বৌঠান... তারপর...  হুঁ হুঁ... কুঞ্জবনে, ইয়ে মানে বাগানে...  সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে... হাঃ হাঃ!
অ্যাই চুপ, চুপ... বিচ্ছু মর্কট উল্লুক...  তোকে আমি কামড়ে খিমচে... শেষ করে দেব।

...............................

অলঙ্করণ :-  প্রিয়াঙ্কা সরকার