অণুগল্প - সিঁড়ি- অনিন্দ্য পাল

 

সিঁড়ি 
অনিন্দ্য পাল 
 
"মেইল ডেলিভারি সাবসিস্টেম, দেয়ার ইজ আ টেম্পোরারি..." -- ওহ্ ভগবান! মাথাটা দুহাতে চেপে ধরে চরম হতাশায় ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো অনু, নাহ্ আর তাহলে হল না, এত পরিশ্রম, করেও সব বৃথা হয়ে গেল... । সস্তার স্মার্টফোনটা প্লাস্টিক মাদুরের উপর ছুঁড়ে ফেলে দশ বাই দশের ভাড়া ঘরটা ছেড়ে বেরিয়ে এল রাস্তায়। স্টেশনের পাশের এই বস্তিতে এখন গলি-ঘোঁজ ভরে উঠেছে সস্তার মদ আর জুয়ার আড্ডায়। পূর্ণিমার বিরাট চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনমনা হয়ে গেল অনু। 
"কাট"- পরিচালক ধনু হাজরার মুখে বেশ চওড়া হাসি। এগিয়ে এসে আকাশের পিঠটা একটু চাপড়ে দিয়ে বললেন, 
-- বাহ, চমৎকার। এবার প্রোডিউসারের সঙ্গে একটু মাখো মাখো হয়ে যাও, ব্যাস জমি পাকা হয়ে যাবে। ম্যাডাম ওইখানে। 
ধনু হাজরা একটা ঘরের দিকে ইশারা করে অর্থপূর্ণ হেসে আর একবার পিঠটা চাপড়ে দিলেন আকাশের। 
 -- আজ তোমার নথ ভাঙবে প্রোডিউসার ম্যাডাম। 
কানের ভিতরে কথা গুলো বলে গেল সহ পরিচালক বাসু। 
চমকে উঠে ব্যপারটা ভাবতেই গা ঘিন ঘিন করে উঠলো আকাশের। ঘরের কাছে পৌঁছে একটু ইতস্তত করে দরজায় নক করলো আকাশ। 
--এসো। খোলা আছে। 
ঘরের ভিতর হাল্কা নীল আলোতে যেন স্বপ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই স্বপ্নের সিঁড়ি আকাশের থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে স্বচ্ছ পোষাকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। 
নিস্তব্ধ কয়েকটা সেকেন্ড কেটে গেল। হঠাৎ করেই আকাশের দিকে ফিরলেন সেই স্বপ্নমানবী। চমকে উঠলো আকাশ, এ কাকে দেখছে সে? সমস্ত শরীর মনে যেন আগুন জ্বলে উঠলো আকাশের! 
--মা? তুমি! 
আকাশের দিকে তখন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন মাত্র দশ বছর বয়সের আকাশ আর তার হঠাৎ বেকার বাবাকে ছেড়ে পালিয়ে হয়ে যাওয়া "মা"। 
==============================