স্বপ্নময়ী
মঞ্জুলিকা রায়
ইউনিভার্সিটি
থেকে ফিরছিলেন অনিন্দ্যবাবু, অন্য দিনের থেকে আজ একটু আগেই বের হয়েছেন।
শরৎকাল চললেও দিল্লির আবহাওয়া এখনো বেশ গরম। সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে তবুও
আকাশে এখনো সূর্যের শেষ রশ্মির ছটা। এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে কি করবেন
ভেবে বাড়ির কাছেই একটা পার্কের সামনে গাড়িটা রাখেন। পার্কে কিছু বয়স্ক
মানুষ ছোট ছোট গ্রুপ করে আড্ডা দিচ্ছে আর কয়েকটি বাচ্চা ছোটাছুটি করছে।
একটা ফাঁকা বেঞ্চি দেখে অনিন্দ্য বসলেন, আশেপাশে মানুষের উপস্থিতি
একধরনের উত্তাপ দেয় মনে, নইলে বাড়ি গিয়ে তো সেই একা চুপচাপ সময় কাটানো!
অন্যমনস্ক
ভাবে বসে ছিলেন, হঠাৎ একটা নরম রঙিন বল গায়ে এসে লাগায় মুখ তুলে দেখেন
একটা দেড় দুই বছরের খুদে বাচ্চা টলমল করতে করতে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে।
তিনি এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেন, বলটা ওকে দিতে গিয়ে দেখেন
বাচ্চাটার আর বলে মন নেই, খুদেটা তাঁর চশমা ধরে টানতে আরম্ভ করেছে ।
"
এ মুন্না, বদমাশি মত করো। ইধার আও " মেয়েলি গলার আওয়াজ কানে আসতেই
অনিন্দ্যবাবু তাকিয়ে দেখেন একটি বছর তেইশ চব্বিশের তরুণী তাঁদের দিকে
আসছে। বাচ্চাটাকে কোল থেকে নামিয়ে দেন । যখনই কোনো বাচ্চাকে তিনি কোলে
নেন তখনই বাচ্চার গায়ের নরম ওম তাঁকে মনে করিয়ে দেয় চুষি কাঠি, মায়ের
কোল আর আদর, ফেলে আসা শৈশব । মনে মনে ভাবেন জীবনে একটা বড় স্বপ্ন তাঁর
কখনো পূর্ণ হলো না , কোনো শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভাবা হলো না যে এ আমারই
সন্তান, এ আমারই সৃষ্টি!
অনিন্দ্যর
বাবা প্রণবেশ চৌধুরী যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তাঁকে বিয়ে দেবার কম
চেষ্টা করেন নি কিন্তু বিয়ের নামেই তাঁর কেমন একটা অসম্ভব ভয় হয় , হাতপা
ঠান্ডা হয়ে আসে। বিয়ে করেননি বলে আজও কোনো আফসোস নেই কিন্তু একটা সন্তানের
বড় শখ ছিল তাঁর।
আজ এই
পড়ন্ত বেলায় উত্তর ভারতীয় যুবতীটিকে দেখে মুহূর্তে চল্লিশ বছর পার করে
নিজের ফেলে আসা শৈশবে পৌঁছে যান। অনেকটা সেই তাঁর মতো মুখের আদল, সেই রকম
দুধে আলতা গায়ের রঙ যা আম বাঙালিদের মধ্যে দুর্লভ।
*******
"
বাবু, বাবু ওঠ ওঠ, আর ঘুমায় না, ঝড় উঠেছে। চল ছাদে যাই, বৃষ্টি
দেখবো, চল চল। " মায়ের ডাকে দুপুরের ঘুম থেকে জেগে ওঠে বাচ্চা অনিন্দ্য ,
অবাক চোখে দেখে হাসি ঝলমলে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মা। মায়ের হাত ধরে ছাদে
উঠে আসে, বৃষ্টি দেখে খুশিতে আটখানা মা ছেলের হাত ধরে ভিজতে নেমে পড়েন।
চোখ বুঁজলে আজও অনিন্দ্য দেখতে পায় বৃষ্টি ঝমঝম ছাদে দুই হাত ছড়িয়ে গোল
গোল পাক খেয়ে ঘুরছে তার মা, মায়ের আজানুকেশ ভিজে যাচ্ছে আকাশ ভাঙা জলে ,
শাড়ি উঁচু করে তোলা, ফর্সা পায়ে রূপোর নুপুর ঝকমক করছে। পাক খেতে খেতে
ছেলেকেও মা কাছে টেনে নেন, মুখে ছড়া কাটেন ' আনি মানি জানি না, এ কাদের
ছেলে চিনি না। " শুনে ছেলে ঠোঁট ফুলায়, ছেলের কপালে চুমু এঁকে মা বলেন "
দূর পাগল, এটা তো খেলা। "
অনিন্দ্যর
আজকাল মনে হয় তার মা যেন এক জীবন্ত প্রহেলিকা ছিলেন বা হয়তো বা সেইভাবে
বড়ই হন নি কখনো । তার বাচ্চা মা তাকে নিয়ে নানারকম ছেলেমানুষী খেলা
খেলতেন , কখনো আচার চুরি করে দুজনে মিলে ছাতের চিলেকোঠায় লুকিয়ে লুকিয়ে
খেতেন কিন্তু লুকানোটা কার থেকে! বাবা তো তখন ব্যবসাকে বড় করার নেশায়
পাগলের মতো ছুটছেন, বাড়িতে থাকতেনই না। বাড়িতে বাচ্চা অনিন্দ্য আর তার
তরুণী মা ছাড়া ছিল কয়েকজন কাজের লোক।
তারা
সবাই বাবাকে যমের মতো ভয় পেতো তাই মা ও ছেলের দুষ্টুমির কথা বাবাকে কেউ
জানাবেই না কিন্তু মা এমন আচরণ করতেন যেন অদৃশ্য কেউ একজন তাদের বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্র করছে এবং তার থেকে তাদেরকে লুকিয়ে বাঁচতে হবে। বাচ্চা অনিন্দ্যর
কাছে এটা অবশ্য একটা খেলার মতো ছিল।
মা
তার থেকে মাত্র সতেরো বছরের বড় ছিলেন। নামেও কমলিনী দেখতেও প্রস্ফুটিত
পদ্মের মতো সুন্দর। একাত্তরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে খুলনা থেকে
তার দাদু দিদিমা আর পনের বছরের কিশোরী মা এইদেশে পালিয়ে এসেছিলেন। রূপসী
মেয়েকে নিয়ে দাদু দিদিমার অসম্ভব চিন্তা ছিল তাই তারা আর ওইদেশে ফিরে যান
নি। খড়দায় একটা ছোটো বাড়ি বানিয়ে এখানেই থেকে যান কিন্তু রূপসী মেয়েকে
নিয়ে এখানেও তাঁরা নানারকম বিপদের মুখে পড়লেন।
মা
খুলনায় ক্লাস নাইনে পড়তেন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ফলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে
গিয়েছিল। এদেশে আসার পরে মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছিলেন ওনার বাবা মা,
ফলে বাড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছিল , প্রচুর বিয়ের সম্বন্ধ আসছিল কিন্তু সেসব
দাদু দিদিমার মনমতো হচ্ছিল না। অনিন্দ্যর বাবার পিসি ওনাদের প্রতিবেশী
ছিলেন, তিনিই এই বিয়েতে ঘটকালি করেছিলেন।
প্রথমে অনিন্দ্যর বাবা রাজি ছিলেন না । চালচুলোহীন গরিব রিফিউজি
পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছে তাঁর ছিল না কিন্তু পরে কমলিনীর ফটো
দেখে তিনি এতটা মুগ্ধ হয়ে যান যে কয়েক দিনের মধ্যেই শুধু শাঁখা সিঁদুর
দিয়ে গরীব রিফিউজি পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন।
তাঁদের
বিয়ের পরপরই অনিন্দ্যর একমাত্র পিসি একটি দুর্ঘটনায় মারা যায় আর
প্রণবেশের মাকে মেয়ের বাচ্চাদের সামলানোর জন্য সেখানে গিয়ে থাকতে
হয়েছিল। ফলে বিয়ের পর থেকে কমলিনী বাড়িতে প্রায় একাই থাকতেন । জামাইয়ের
বাড়িতে মাত্র দু বছরের মধ্যেই প্রণবেশের মায়েরও মৃত্যু হয়।
বিয়ের
পর প্রণবেশ সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে কালচার্ড বানাতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন।
স্ত্রীকে সবরকম ভাবে গড়েপিটে নেবার উদগ্র বাসনায় তিনি খেয়ালও করেন নি ষোলো
বছরের মেয়েটি কি চায় ! বাংলাদেশের উন্মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে বড় হয়ে ওঠা
মেয়েটি উত্তর ভারতের রুক্ষ, শুষ্ক আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে উঠতে পারছিল না।
কোথায় বাংলার কোমল শ্যামলিমা আর কোথায় উত্তরের তীব্র দাবদাহ ! স্বজনহীন
পরবাসে মেয়েটি রোজ মরছিল, বন্ধুবান্ধব নেই, কথা বলার কেউ নেই,
বাড়িতে অধিকাংশ সময়ই কমলিনীকে একা একাই থাকতে হতো।
প্রণবেশ
মানুষটিও খানিক রুক্ষ স্বভাবের, তিনি চোদ্দ বছরের ছোট স্ত্রীর বন্ধু
কম অভিভাবক বেশি ছিল। একা একা দূরে প্রবাসে থাকা, স্বামীর কড়া শাসন আর
সময়ের আগেই মাতৃত্বের চাপেই বোধহয় কমলিনীর মানসিক অসুখের সূত্রপাত হয়েছিল।
এমনিতে ভালোই থাকতেন, খুব আনন্দে আছেন, ছেলের সঙ্গে গল্প করছেন,
খেলছেন, গান গাইছেন আবার কখনো কখনো গুম হয়ে পাথরের মূর্তির মতো বসে
থাকতেন, বাইরের কোনো কিছুই তখন তাকে স্পর্শ করতে পারতো না। ছোট্ট অনিন্দ্যর
মনে আছে দুপুরের ঘুম ভেঙে পাশে মাকে না দেখতে পেয়ে সে সারা বাড়িতে মাকে
খুঁজছে, ডেকে ডেকে গলা ফাটিয়ে ফেলার উপক্রম কিন্তু মায়ের কোন সাড়াশব্দ
নেই। খুঁজতে খুঁজতে কখনো সে মাকে খুঁজে পেত আলমারি আর দেওয়ালের মধ্যে ছোট
একটা কোণার মধ্যে হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে। মাকে হাত দিয়ে স্পর্শ
করলেও মা কোন সাড়াশব্দ করতেন না। মায়ের হাঁটু ছোঁয়া চুল খোলা অবস্থায়
মাটিতে লুটোচ্ছে, তখন কেমন একটা ভয়ে অনিন্দ্যর বুকের মধ্যটা সিরসির করে
উঠতো। মাকে হাত দিয়ে অল্প অল্প ঠেলা দিলেও মা সেইরকম পাথরের মূর্তির মতোই
বসে থাকতেন, শেষে যখন অনিন্দ্য ভয় পেয়ে কান্না জুড়তো তখন যেন মায়ের হুঁশ
ফিরে আসতো। ভয় পাওয়া ছেলেকে বুকে চেপে প্রবোধ দেবার চেষ্টা করতেন যে এটা
একটা খেলা, তিনি স্টাচু স্টাচু খেলছিলেন। অনিন্দ্য বাচ্চা হলেও কেমন করে
যেন বুঝে যেত এটা খেলা নয়, সিরিয়াস কিছু। মায়ের এই ঘোর লাগা অবস্থা বেশ
কয়েকদিন ধরে চলতো, তারপরে আবার সেই পুরনো আনন্দময়ী রূপে ফিরে আসতেন ।
অনিন্দ্যর
বাবাকে তখন ব্যবসার নেশায় পেয়েছে, ব্যবসায় যত শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছিল ততই
তিনি কম সময় দিচ্ছিলেন তার পরিবারকে। অনিন্দ্যর বাবা ছেলেকে সময় না দিলেও
তার জন্য নামকরা গৃহশিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন, তাদের তত্বাবধানে সে স্কুলে
ভালোই রেজাল্ট করতো। অবোধ বেলায় কোনো দুঃখ বা মানসিক কষ্ট তাকে ছুঁতে
পারে নি কারণ তখন তার জগতে তার মা ছিলেন।
********
যখন
অনিন্দ্যর বয়েস সাত বছর তখন একদিন দুপুরে হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে যায়। দুপুরে
ভাত খাবার পরে সে মায়ের সাথে শুয়ে ঘুমিয়েছিল। ঘুম ভেঙে দেখে মা পাশে নেই।
সে ভেবেছিল মা বোধহয় আবার তার সাথে সেই লুকোচুরি খেলাটা খেলছে। মজা পেয়ে
হাসতে হাসতে সে এঘর থেকে ও ঘরে মাকে খুঁজতে থাকে। একা একা ছাদ পর্যন্ত
ঘুরে আসে। মাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ভীষণ অভিমানের সাথে বলেছিল " কোথায়
লুকিয়ে রয়েছো? আমি খুব রেগে গেছি কিন্তু ! তোমার সাথে আমার আড়ি আড়ি
আড়ি! আর কক্ষনও কথা বলবো না। "
এরপরেও
যখন মা সাড়া দিলেন না তখন ভয় পেয়ে সে কাঁদতে আরম্ভ করে । কাঁদতে কাঁদতে সে
দোতলা থেকে একতলায় নেমে এসেছিল। একতলাটায় অনিন্দ্যর বাবার অফিস, ঘরে
থাকার সময়ে কোনো ক্লায়েন্ট আসলে বাবা নিচের তলার অফিস ঘরটা ব্যবহার করতেন।
খুঁজতে খুঁজতে অনিন্দ্য একতলার অফিস ঘরে আসে।
বাথরুমের
দরজা খোলা দেখে সে সেদিকে যায় , তখনি দেখতে পায় সাদা ধপধপে পোর্সিলিনের
বাথটবের মধ্যে লাল রঙের জলের মধ্যে মায়ের মুখটিই শুধু ভাসছে যেন রক্তের
সরোবরের মধ্যে একটা শ্বেত পদ্ম ফুটে আছে, মায়ের মাথার খোলা চুল কিছুটা জলে
আর কিছুটা বাথটব পার করে বাথরুমের মেঝেতে লুটোচ্ছে। কেমন একটা অবুঝ ভয়ে
সে কেঁপে ওঠে , চেঁচিয়ে কাঁদতে থাকে মা মা বলে, কাছে গিয়ে মায়ের চুল ধরে
টানে তখনি দেখতে পায় বাথটবের পাশে খানিকটা রক্ত আর একটা রক্তমাখা ছুড়ি পড়ে
আছে।
প্রচণ্ড
ভয়ে তার ছোট্ট শরীরটা কেঁপে উঠেছিল, চোখ অন্ধকার হয়ে আসছিল, সে বুঝতে
পারছিল সে প্যান্টে হিসু করে ফেলেছে, পা গড়িয়ে সেই হিসু গিয়ে মাটিতে পড়ে
থাকা রক্তের সাথে মিশতে থাকে , অনিন্দ্যর চোখে আঁধার ঘনিয়ে আসে, সে কাঁপতে
কাঁপতে বাথরুমের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
এরপর
তার আর কিছু মনে নেই, বড় হবার পরে শুনেছিল তাদের কাজের মাসি তাদের দুজনকে
একতলায় খুঁজে পেয়েছিল। সেই রাতেই অনিন্দ্যর প্রচণ্ড কনভালশন আর হাই
টেম্পারেচার ওঠে। সেরে উঠতে বহুদিন লেগেছিল, প্রায়ই বেড ওয়েটিং হয়ে যেত।
স্বপ্ন দেখতো লাল সায়রের জলে মায়ের মুখখানা শ্বেত পদ্মের মতো ভাসছে। বাবা
তখন দিন রাত এক করে তার সেবা করেছিলেন, ব্যবসা ভুলে সারাক্ষণ তার পাশে
থাকতেন। ধীরেধীরে সে ভালো হয়ে উঠেছিল, বড় হয়ে সে জানতে পেরেছিল যে তার
মায়ের বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল।
মায়ের
মৃত্যু সে কখনো ভুলতে পারে নি, বাবার সাথে থাকলেও সম্পর্কে প্রচুর দূরত্ব
তৈরি ছিল। বাবা যা বলতেন বা যেটা চাইতেন তার বিরুদ্ধতা করা স্বভাবে দাঁড়িয়ে
গিয়েছিল। একই বাড়িতে তাঁরা দুটো দ্বীপের মতো বাস করতেন। অনিন্দ্য কখনো
সেইভাবে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে নি।
অনিন্দ্য
ইউনিভার্সিটিতে পড়ান, বাবার মৃত্যুর পরে ব্যবসা বেচে দিয়েছেন, তাঁর ধন
সম্পত্তি, বিদ্যা, সম্মান সব আছে কিন্তু তাঁর কোনো ঘর হয় নি। স্বপ্নে আজও
একটি নূপুর পরা রূপসী তরুণী তাঁর কাছে আসে। আবছা স্বপ্নের মতো একটি অবয়ব
তাঁকে ঘিরে আবর্তিত হয়, ফিসফিসিয়ে যেন বলে " আনি মানি জানি না, পরের ছেলে
মানি না। "
******