পরজন্ম - শরণ্যা মুখোপাধ্যায়

 

পরজন্ম

শরণ্যা মুখোপাধ্যায়

 
 

।।১।।

“না রে, ঠাম্মা ঠিক আর পাঁচটা মানুষের মত নয়! ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি! দাদাইকে পাইনি! আমার জীবনের প্রথম দশটা বছর ঠাম্মার সঙ্গেই কেটেছে। কত অদ্ভুত গল্প যে তখন শোনাত! সেগুলো পেলে আমাদের কাজটা ভাল হবে, বলছি তোকে আমি! আর কতদিন দেখাও ত হয়নি! এই সু্যোগে সেটাও হবে।…”

গোধূলি আর অনিন্দ্য! একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বন্ধু। প্রোজেক্ট পেয়েছে বাড়ির পুরনো জেনারেশনের মুখে শোনা গল্পকে সাজানোর! গোধূলির ঠাম্মা, এখন যিনি বীরপুরে থাকেন, যেটা কিনা মুর্শিদাবাদের একটা বর্ধিষ্ণু গ্রাম, সেখানে যাবার কথাই হচ্ছিল।

“ঠাম্মার কাছে যে কত গল্প শুনেছি! সাধারণ রূপকথা নয় রে সেগুলো! ওই লালকমল-নীলকমলের মত নয়! আমার ধারণা ঠাকুমা নিজেই বানাত গল্পগুলো! অথবা…

“বুঝে গেছি! ঠাম্মা রক্স! ব্যবস্থা কর, নেক্সট উইকেই যাব আমরা!...”

।।২।।

আঠারোশ’ চুয়ান্ন! এই বছর, এই শতক চীনের জন্য একান্তই শ্লাঘার! কিং রাজাদের রাজত্বে গড়ে উঠেছে কৃষির সুস্পষ্ট ভিত্তি। বানিজ্যেও যথেষ্ট নামডাক হয়েছে দেশের। ঘরে ঘরে সুফলা সন্তানরা ব্যস্ত থাকে নিজেদের কর্মকান্ডে! দেশ এগোচ্ছে, মানুষেরও এগোবারই কথা! ঠিক এই সময়টাই কিন্তু আবার সবচেয়ে কঠিন সময়! জীবনের পরীক্ষার! যখন মানুষ হাতের কাছে প্রয়োজন নির্বাহের সব জিনিসই পেয়ে যায় যখন তার হাতে অনেক সময় থাকে, তখনই তার আসল রূপ ধরা পড়ে! গভীর নির্জন রাস্তার অদৃশ্য দস্যুর মত বেরিয়ে আসে ভেতরের আদিম সূত্রগুলি! বাইরের কাজ কমে এলেই সন্ধান পড়ে নতুন কাজের, যে কাজ আসলে বিনোদন, খেলা! আর এইরকম একটা খেলাই সে সময়টায় বিখ্যাত বা কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল চিনের বিশেষ কয়েকটা প্রদেশে!

বাঘবন্দী খেলা!

চিনের জিংয়াং প্রদেশে প্রথম শুরু হয় ব্যাপারটা। ওখানকার দুংসিং গ্রামের জমিদারের কাছে দুখানা বাঘ ধরা পড়েছিল! একটি বাঘ, আর একটি বাঘিনী! জমিদার মশাইয়ের দুই ছেলে খেলা করত তাদের নিয়ে! খেলাটা ক্রমশ পীড়ায় পরিণত হয়, আর পীড়া হয়ে ওঠে অলস, হাতে অর্থ আর অকুণ্ঠ সময় থাকা মানুষদের বিনোদন। ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল খুব নির্দোষভাবে! জমিদারের ছেলেদের দুই মামা বেড়াতে এসেছিলেন তাদের বাড়িতে। সেখানেই একদিন ঘটনাটা ঘটে। খেতে দেবার সময় ওদের ট্রেনার যখন বাঘদুটোকে এক এক করে খাঁচার সামনে থাকা একটা লোহার জাল দিয়ে ঘেরা চত্বরে নিয়ে যেত। মেটিং-এর সময়ে একবার সে দ্বিতীয়জনকে খেতে দেবার আগেই একটা অন্য কাজ চলে আসে! আর ভুলবশত, একটা বাঘকে বাইরের চত্বরে বেঁধে সে চলে যায়, অন্যটি ভিতরেই থেকে যায়! কিছুক্ষণ পরেই আসল ব্যাপারটা হল! লোহার জালের একপাশ থেকে পুরুষ বাঘটা আছাড়ি-পিছাড়ি করতে থাকল আর বাঘিনীটিও ক্রমাগত ডাকতে থাকল তাকে! সে এক দর্শনীয় ব্যাপার! শোরগোল শুনে ট্রেনারটি ছুটে এসে বাঘদুটোকে এক জায়গায় করতে চায়, কিন্তু বাধা দেন ছেলেদুটির এক মামা যিনি ওখানেই দাঁড়িয়েছিলেন! তিনি এই মজাটা আরও কিছুক্ষণ চালানোর জন্য ট্রেনারকে বকশিশ দেন। কথাটা জমিদারমশাই অবদি পৌঁছায়! তিনি এসে ব্যাপারটা দেখে নিজেও আমোদ পান! আর ঠিক এই সময়েই জিনিসটা ঘটে! একটা আইডিয়া! একমুহূর্তের একটা ঘটনা, সেই ঘটনাই বহু প্রাণের দাম, কানাকড়ি ঠিক করে দিল! জমিদারমশাই শুরুতে গ্রামের কিছু গণ্যমান্য মানুষকে ডাকলেন। নাম দিলেন “লাও হু সিঝু”, বা টাইগার ড্রামা বা বাঘের নাটক! বাঘদুটোকে একটাকে আরেকটার থেকে আলাদা করে দেওয়া হত, তারপর তাদের চিৎকার আর পরস্পরের কাছে আসার ব্যর্থ চেষ্টা ছিল মনোরঞ্জনের অন্যতম উপাদান! এইভাবে ব্যাপারটা ছড়িয়ে পড়ল। প্রচার পেল, সঙ্গে এল টাকা! বাঘের নাটক দেখতে লোকে ভিড় জমাতে থাকল। বিদেশেও ছড়ালো এ খবর! বাঘ নাকি মানুষের মত কাঁদে, হাসে, ভালবাসে! গ্রামের পর গ্রামে দাবানলের মত ছড়ালো ব্যাপারটা!

বহু বড় ব্যবসায়ী এ কাজে নামলেন! পর্যটন শিল্পের একটা বড় আকর্ষণ হয়ে উঠল বাঘের নাটক! তারপর যা হয়! অনিচ্ছুক প্রাণীগুলোকে মেটিং-সিসনের বাইরেও নানাধরণের ওষুদ দিয়ে অস্থির করে তোলার ব্যবস্থা করা হত। তারপর পরস্পরকে পাবার জন্য যখন তারা পাগল হয়ে উঠত ঠিক সেইসময়টাতেই তাদের আলাদা করে দেওয়া হত, তারা পরস্পরের কাছে যাবার জন্য যখন আকুলিবিকুলি করত তখন তাদের নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কির ফোয়ারা ছুটত, হা-হা হাসি আর ভরাভর্তি মানুষের আদিম হিংস্রতা! তার সঙ্গে ক্রমশ বাড়তে থাকে অত্যাচার, খোঁচানো, খেপানো, মার… দিনের পর দিনের পর দিন। জমিদারের যে বাঘটাকে দিয়ে গল্প শুরু হয়েছিল, তার সারা গায়ে এখন ঘা! আর বেশিদিন তার বাকি নেই! জমিদার নতুন বাঘের খোঁজ শুরু করেছেন!

কিছুদিন হল তার বাঘিনীটিও অসুস্থ। খেলার দিন পিছিয়ে যাচ্ছে এখন! নির্জীব হয়ে পড়ে থাকা দুটো প্রাণীকে দেখে জমিদারের ম্যানেজারের মাথায় একটা প্ল্যান খেলল! দুটোকে আবার একসঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যাক! তাহলে ওরা আবার সতেজ হয়ে উঠবে! কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটল না। এখন দুজন একসঙ্গে হলেও আর কিছুতেই মিলিত হতে চায় না। বাঘিনীটা প্রথম দিন বাঘটার কাছেই আসতে চায়নি। ম্যানেজার বলল এ কিছু নয়, দীর্ঘদিনের অনভ্যাস, আর তার সঙ্গে ভয়ও! ও দুদিনেই কেটে যাবে। বেশ! যেমন বলা, তেমনি কাজ। রাখা হল তাদের একসঙ্গে! একদিন দুদিন তিনদিন… কিন্তু না… ওরা কেউ কারোর কাছে এলো না। বাঘিনীটা এক-পা দু-পা করে বাঘটার কাছে এগোত, তারপর পিছিয়ে আসত! কী একটা ইনফেকশন হয়েছিল যেন। এভাবে এক সপ্তাহ গেল। এদিকে নতুন বাঘও পাওয়া যায় না! আর বাঘ ত নয় জোড়াবাঘ চাই! সে এত সহজে মেলে নাকি! শেষ ছমাসে বাঘে্র খেলা এতটাই জমেছে যে বহু ব্যবসায়ীই নতুন একজোড়া করে বাঘ নিজেদের কাছে জমিয়ে রাখছে যাতে দরকার পড়লে তারা পুরোনটার বদলে নতুন জোড়াকে কাজে আনতে পারে।

বাঘ না পেলে ব্যবসায় ক্ষতি অনিবার্য! আর মানুষ ক্ষমতা থাকা অবস্থায় কোনভাবেই ক্ষতি বরদাস্ত করে না! তার কাছে, তার অধীনে থাকা যে কোন জিনিসের একটাই মূল্য, তার সুখ! এইটা ধরে রাখতে গিয়েই যাবতীয় অসুখকে ডেকে আনে মানুষ! দিনদশেক পর বাঘদুটোকে চাবুক মারা শুরু হল! রমণের জন্য যত পিঠের চামড়া ফালা হতে থাকল, ততই যেন জেদ বাড়তে লাগল বাঘ আর বাঘিনীর। বাঘিনী খাওয়া ছেড়ে দিল এরপর! তিন, চার, পাঁচদিন গেল! বাঘিনী মারা গেল। একই খাঁচায়, বাঘটি তখনও জীবিত। তার থেকে ঠিক একফুট দূরে হাত-পা মেলে একেবারে রুগ্ন অবস্থায় পড়ে রইল বাঘিনীটি! একফুট দূর থেকে বাঘটি নির্নিমেষে তাকিয়ে রইল তার দিকে। তখন ত এসব ভিডিওর ব্যবস্থা ছিল না! নাহলে সেও এক দেখার জিনিসই হয়ে উঠেছিল বাবুবিবিদের কাছে। জমিদার মশাই “দুই প্রেমিকযুগলের শেষ গল্প” নাম দিয়ে খাঁচার সামনেই ব্যবস্থা করেছিলেন জমায়েতের। মৃত্যুকালেও বাঘিনীটি অর্থ জুগিয়ে গিয়েছিল জমিদারটিকে। আর বাঘটা? না সেদিনের পর তাকে আর কেউ খাওয়াতে পারেনি। ম্যানেজারটিকে দুর্বল হয়ে আসা একথাবায় প্রায় নিকেশ করার পর তার কাছেও যেতে পারেনি আর কেউ! বাঘিনীর মৃত্যুর তিনদিনের মাথায় সেও মারা যায়! বাস্তব জীবনে এরকম ঘটনা কেউ কখনো দেখেনি। অবাক হয়েছিল সবাই! প্রচুর টাকা আদায় করেছিল তাদের মালিক! অসহায় দুটো প্রাণীর মৃত্যুকে উৎসব বানিয়ে।

।।৩।।

“কীসের ছবি গো এটা? আগে দেখাওনি ত?”  

গোধূলির কথার উত্তরে ঠাকুমা মৃদু হাসলেন।

“সেই রাজপুত্তুরের কথা মনে আছে তোর? সেই যে, যার বাস ছিল গভীর বনে, বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে যে রাজবাড়ি ছেড়ে বনে এসে থাকত!  যে রাজকন্যের সঙ্গে একা একাই সময় কাটাত, তার সঙ্গী বলতে ছিল বনের পশুপাখি! আর শুধু লোকের ডাক পড়লে…”

“আরে ধুর, কোথায় তোমায় এই ছবিটার কথা জিজ্ঞেস করছি, আর কোথায় তুমি… এরকম অদ্ভুত ছবি আগে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না ত? এটা কোথায়? আর এরা কারা? আর কাদেরই বা শাস্তি দেওয়া হচ্ছে? অনিন্দ্য দেখ…”

ঠাম্মার বিছানায় বসেছে দুই শাগরেদ। ঠাম্মার পুরোন দেরাজ ঘেঁটে বার হয়েছে যাবতীয় গুপ্তধন। পুরোন চিঠি, ছবি, খাতা… তারমধ্যেই রাখা ছিল হলদেটে কাগজের ওপর প্রায় অদৃশ্য হয়ে আসা অয়েল পেইন্টিং-টা! তিন চারজন লোককে খুঁটিতে বেঁধে রাখা, অনেক লোক জড়ো হয়েছে সেখানে! আর দূরে দাঁড়িয়ে আছে দুটো বাঘ! কোন প্রাচীনকালের ছবি! 

“খুব ক্যাপ্টিভেটিং! এটা চায়নার ছবি বলে মনে হচ্ছে ঠাম্মি! দাদু কি কখনও…”

“গল্প শুনবি না ওইসব দেখবি? তোদের দাদু ওসব আঁকত এককালে! কিছু ছবি রয়ে গেছে হয়ত!...”

“বল বল…”

“ত সেই রাজপুত্র ছিল বনচারী! কিন্তু হাজার হোক সে রাজার ছেলে, আর খুব দয়ালুও! তাই বনে থাকলেও তার গুণের কথা সবাই জানত। কেউ কোন বিপদে পড়লেই সবার আগে ছুটে আসত তার কাছে! রাজার কান অবদি যে খবর পৌঁছত না সে খবর পেত রাজপুত্র! লোকে তাকে জানাত দুঃখের কথা! রাজার কাছে ত তারা পৌঁছতে পারত না, তার বদ মন্ত্রীরা আটকে দিত তার আগেই! ঠিক সেরকমভাবেই একদিন কয়েকজন এসেছিল তার কাছে! গাঁয়ের জমিদারের অত্যাচারের কথা শোনাতে! সে জমিদার জাতের বাইরে বিয়ে করার জন্য এক চাষীভাই আর তার নতুন বিয়ে করা বৌকে কীভাবে মেরেছে, তারা বলেছিল! জামা খুলে দেখিয়েছিল পিঠের চাবুকের দাগ! রাজকুমার জমিদারকে আগে দুবার সাবধান করেছে আগে! কিন্তু সে সাবধান হয়নি! বারবার তিনবার! এবারে আর ছাড়লে না রাজার কুমার! সোজা গেল গ্রামের মাঝে, নিজের বন্ধু, বনের পশুদের সর্দারকে নিল সঙ্গে! তারপর গ্রামে যেতেই জমিদারদের সেকি লম্পঝম্প! কিন্তু বনের রাজার ক্ষমতার সঙ্গে তারা পারে কখনও? হার মানতেই হল! তারপর সুখেদুঃখে সেই চাষী পরিবার ভালভাবে দিন কাটাতে লাগল!...”

“কনসেপ্টটা দারুণ কিন্তু, বল? অনিন্দ্যর দিকে ফিরল গোধূলি! জাতপাতের কথাও আছে। বন্যপ্রাণীর প্রতি ভালবাসাও আছে, মানুষের প্রতিবাদের কথাও আছে!...”

“আসল কথাটাই ত বললি নারে!”

“কী?”

“এটা ত প্রেমের গল্প! রাজপুত্র কেন উতলা হয়েছিল? দুটো মানুষ পরস্পরের সঙ্গে থাকতে পায়নি বলে। ভালবাসার জন্য সব সম্ভব, বুঝলি!...”

“শোনো ঠাম্মা, এসব পুরোন কনসেপ্ট! তুমি শুধু গল্পগুলো বল, বাকি আমরা বুঝে নেব!...”

“তাই নাকি! তোরা বুঝি ভালবাসায় বিশ্বাস করিস না?... ভালবাসায় সব হয়, বুঝলি! পাথর কাঁদে, পশুও মানুষ হয়! মিলন পূর্ণ না হলে ফিরে আসে বারবার! অন্য শরীরে! হয়ত সবসময় সময় মেলে না, কিন্তু তারা আসেই জোড়ায় জোড়ায়! মিলবেই কোন না কোন জন্মে! সত্যিকারের ভালবাসাকে তাই ত বাঘ আর বাঘিনীর ভালবাসা বলে! তাদের কখনও আলাদা করা যায় না!...”

“আচ্ছা ঠাম্মা তুমি সত্যিই বিশ্বাস কর যে একজন্মের ভালবাসা পূর্ণ না হলে অন্যজন্মেও সেটা গড়ায়?”

“কেন করব না দাদুভাই, জগতটাই ত বিশ্বা্সীর! যে জানে, সে জানে!... জন্তুরও মানবজন্ম হয় সত্যিকারের ভালবাসায়, একজন্মেই চৌষট্টি লক্ষ যোনী পেরিয়ে…”

“ওহ, ঠাম্মি! তুমিও পার সত্যি!...”

“নারে গোধূলি! ঠাম্মার কথাটা হয়ত ভুল নয়! জাতকের গল্প পড়েছিস ত? কতবার কতরূপে জন্মেছেন বুদ্ধ!” কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে যায় অনিন্দ্য! তার পিঠে জন্মগত দাগটার কথা মনে পড়ে তার! তিনটে টানা চেরা দাগ! ঠাম্মা তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছেন তখন! কতবার যে ঘুরলেন! মানুষের জন্য, তাদের কাজে, কখনও সময় মেলে, একসঙ্গে হন! আবার কখনও আগেপিছে হয়ে যায় কাল!

দাদাই এবারে আগেই জন্মে গেছেন! টের পান ঠাম্মা! 

তাঁরও যে সেমিজের তলায় লুকোন আছে অনেক যুগের পুরোন চাবুকের দাগ!

..............................

 অলঙ্করণ :- সহিষ্ণু কুড়ি