পরশপাথর - আগমনী পাঠক

 

পরশপাথর
আগমনী পাঠক
 
 
 
        নীল আকাশটা বাটির মত করে উল্টানো আছে যেন, আর এই ধরিত্রী চাপা পড়েছে তার ঠিক নিচে! সৃজন নরম ঘাসের উপর পিঠ দিয়ে, শুয়ে আছে। দুপুরের গুনগুনে রোদ এখন পড়ন্ত বেলার শীতল চাদর চাপিয়ে নিয়েছে। তবে সৃজনের কিছুতেই উঠতে মন চাইছে না। শিশুর মত করে আকাশ গিলছে সৃজন।
খানিকসময় পর উঠে দাঁড়িয়ে দেখল, আশে পাশে আর কেউ নেই, দূরের পাহাড়টা নিঃসঙ্গ, ঠিক ওর মতই একা দাঁড়িয়ে আছে। সামনের এই অন্ধকার হয়ে আসা গভীরতা পেরোতে পারলেই ……
“এই যে শুনছেন? একটু এইভাবেই স্থির থাকুন প্লিজ… পড়ন্ত রোদে আপনাকে …”
একটা মেয়েলি কণ্ঠ কানে যেতেই সৃজন মুখ ঘোরাতেই, “খিচিক, খিচিক”
“বাঃ! দারুণ এসেছে বুঝলেন ছবিটা”
সৃজন ঘটনার আকস্মিকতায় একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল।
“ওহ! সরি সরি, অনুমতি না নিয়েই ছবি তুলে ফেললাম। যদি কিছু মনে না করেন , আরও কিছু ছবি তুলতে পারি?”
সামনের এই অপরিচিতার কথায় , আকস্মিকতা কাটিয়ে সৃজন বলল, “মানে?”
“বলছি, আপনার ছবি তুলতে কি পারি?”
“আমার কেন?”
“আরে! ঠিক আছে, যদি কোনও অসুবিধা থাকে তো থাক, কিন্তু যদি অনুমতি পাই তো! প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি বলুন, নয়ত এই সুন্দর সোনালি আলোটা ক্ষণিকের অতিথি!”
সৃজন কিছুটা বুঝল, অনেকটা না বুঝে একটু দ্বিধা নিয়েই সম্মতি সুচক মাথা নাড়াল……
“একটু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, মুখটা সামান্য ওই দূরের পাহাড়ের দিকে করুন প্লিজ, … হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক এইরকম…”
--“খিচিক…”
এইভাবে নানান নির্দেশ মেনে সৃজন দাঁড়ালো, বা বসল…
মেয়েটি অনেক ছবি তুলল। এরই মধ্যে পাহাড়ে ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে এল।
“অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি যদি আপনার ইমেল আর মোবাইল নাম্বার দেন তো, এই ছবি গুলো আপনাকেও পাঠিয়ে দিতে পারি…”
“হ্যাঁ, তা না হয় দিলাম, তবে…”
“ওহ হো , এই দেখেছেন, আমি তো পরিচয়ই দিই নি। আমি দুযতি মিত্র। দুরজতি বা ধূর্জটি নয়, দুযতি ! ঠিক আছে? উম উম উম্‌্‌্‌্‌ আপনি আমাকে দুতি বলে ডাকতে পারেন”
বলে মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিল সৃজনের দিকে…
সৃজন গত ১৫ থেকে ২০ মিনিট এই মেয়েটিকে দেখছে এবং অত্যন্ত কথা বলা স্বভাবের এই মেয়েটিকে দেখতে মোহময়ী লাগেনি তবে বেশ আকর্ষণীয় লেগেছে।
“আমি সৃজন পাল। নাইস টু মিট ইউ”
“এই নিন, এতে একটু আপনার নাম্বারটা টাইপ করে দিন না” দুতি নিজের মোবাইলটা সৃজনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল।
মেয়েটি সত্যিই আকর্ষণীয়, যখন থেকে এসেছে সৃজন ওর কথাই শুনে চলছে।
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?”
“হ্যাঁ, নিশ্চয়…”
হাসিমুখে দুতি জবাব দিল।
“হঠাৎ আমার ছবি কেন? না আসলে পড়ন্ত রোদে শুনেছি মেয়েদের ছবি বা ল্যান্দস্কেপ ক্যামেরা বন্দি হয়…সেখানে আমার”
“ওহ! এই ব্যাপার!” একটু হাসতে হাসতে দুতি বলল, “আমি একটু ব্যতিক্রমী একটা অ্যালবাম করছি, কি নাম দিয়েছি বলুন তো!” সামান্য একটু থেমে বলল, “মানুষ ও পৃথিবী”
“হুম্ম…”
“আরে, বেশি ভাব্বেন না এটুকুতেই। বলছি সবই, এখন একটু ঠাণ্ডা লাগছে চলুন ওইদিকে হাঁটতে হাঁটতে বলছি”
ওরা পাহাড়ের ধার থেকে আগেই সরে এসেছিল, এখন সামনের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করল।
“আসলে আমার মনে হয়, পুরুষকে সেই রাফ এন টাফ দেখতে দেখতে ভিতরের কোমলতাটাকে এই সমাজ কখন যেন মেরেই ফেলেছে। তবু সময়ের প্রভাবে কখনও কখনও তা আবার বেঁচে ওঠে। আমি ঘুরতে ফিরতে সেই মুহূর্তগুলোই এই ক্যামেরাই বন্দী করছি”
“পুরুষের কোমলতা? সেটা কি সমাজ চায়?”
“কে কি চায় তা আমি জানি না বাপু, আমার এগুলো ভালো লাগে তাই করি। আর কে বলল কোমলতা চায় না? আমি তো চাই। তুমি আমি সবাই মিলেই এই সমাজ, আমি চাইছি মানেই সমাজ চাইছে…”
সৃজন এত সহজ সমাধান শুনে, একটু অন্যমনস্ক হয়ে উঠল।
“শুনুন, এই সামনের ক্যাফেতে একটু বসবেন চলুন। একটু বেশিই ঠাণ্ডা লাগছে…”
“না, আসলে আমার একটু কাজ বাকি আছে, আমি আজ আসি কেমন!”
“আরে! আরে! করেন কি , করেন কি! এক কাপ মাত্র, আপনার বেশি সময় নষ্ট হবে না…”
বলেই দুতি সৃজনের হাতটা হালকা করে ধরে নিয়ে ক্যাফের মধ্যে ঢুকে গেল… সৃজন এবারে একটু ছটফট করতে লাগল। তবুও একটা সুসজ্জিত টেবিলে বসল।
“আপনি কি করেন? আমি শখের ফটোগ্রাফি করি আর স্নাতক করছি”
“সেটা জানা কি খুব প্রয়োজন? আমাকে যেতে দিন…”
হঠাৎ হাসিখুশি মুখটা গম্ভীর করে মেয়েটি বলল, “যেতে দেব? কোথায়? আপনি তো স্বেচ্ছায় এসেছেন, বললেই কি ফিরে যাওয়া যায়!”
“মানে?”
“বাঁ হাত টা দেখুন তো, রক্ত ঝরছে। বুঝতে পেরেছেন এতক্ষণ?” দুতির কথায় সৃজন নিজের বাঁ হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর শার্টের হাতাটা রক্তে মাখামাখি। অথচ ও এতক্ষণ বুঝতেই পারেনি। আবার দুতি বলল, “যে অভিপ্রায় নিয়ে ওই পাহাড়ের ঢালে এসেছিলেন, সেটি পূর্ণ করেছেন আর বুঝতেই পারেননি! আশ্চর্য!”
“হে! কি যাতা বলছেন, আমি কখন সুইসাইড করলাম। আমি তো ওখানে সময় কাটাচ্ছিলাম মাত্র! যত্তসব! বাজে বকা!” বলেই সৃজন উঠতে যাচ্ছিল,
“তাহলে বলুন আপনি এই রাস্তায় একজন লোককেও দেখেননি কেন! এতক্ষণ! আর আপনার হাতের ওই ক্ষত!”
“এটা হয়েছে , হয়ত! আমি খেয়াল করিনি”
বলতে বলতেই সৃজনের কানে এল এক সুমধুর বাঁশির শব্দ, চারিদিক কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল। সৃজন দৌড়ে বাইরে এল, কোথাও কোনও আলো নেই…
মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল, “এখনও কি বিশ্বাস হচ্ছে না?”
সৃজন একবার বুকভরে শ্বাস নিল, “না হচ্ছে না। আপনি ইচ্ছা করে আলো নিভিয়েছেন, এসব প্রাঙ্ক করছেন। সব বুঝি আমি”
“ও তাই বুঝি! এই তো বললেন আপনি সুইসাইডই করবেন ভেবে এসেছিলেন, করেছেন কিন্তু বুঝতে পারছেন না হয়ত! ওই সময়ের মাঝে আটকে যাওয়া, যেমনটা গল্পে পড়েন আর কি!”
সৃজন চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করল, নিচের উপত্যকাও কালো অন্ধকার চাদরে মুড়ে আছে! “আশ্চর্য!”
“অনেক আশ্চর্য এখনও বাকি যে!”
এমনিতেই সৃজন শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল, তার উপর এইসব কথা! চোখের সামনে যেন সবটা অন্ধকার দেখতে লাগল!
 
                                              ******
 
চোখ খুলতেই সৃজন নিজেকে এক খাটিয়ার উপর পেল, মাথাটা বড্ড ভারী লাগছে, মাথার উপর খোলা আকাশ! একটু এদিক ওদিক মুখ ফেরাতেই লক্ষ্য করল,  সেই দুতি নামের মেয়েটি স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে কোনও কথা বলছে না। সেই সুমধুর বাঁশির সংগীত এখন সর্বত্র , চারিদিক জ্যোৎস্না ছড়িয়ে আছে।
সৃজনের বুকে যেন কিসের এক পাথর চেপে আছে, গলার কাছে কষ্টগুলো দলা পাকিয়ে আছে, নামতে চাইছে না।
“কীভাবে হল?” দুতিকে উদ্দেশ্য করে বলল।
দুতি কোনও জবাব দিল না আরও খানিক ওর দিকে তাকিয়ে রইল। সৃজন মুখ দুহাতের তালুতে ঢেকে বসে রইল, হয়ত কাঁদছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। দুতির সাথে যখন দেখা হয়েছিল সৃজনের হঠাৎই খুব ভালো লাগছিল, ঘটনাটা একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প তো হতেই পারত কিংবা নিদেনপক্ষে একটা মুহূর্তের ভাললাগার স্মৃতি হলেও ক্ষতি কি ছিল! এখন সৃজনের দুতিকে অসহ্য লাগছে।
“বলতে পারি, যদি সবটা বল , তো আমিও বলতে পারি তোমার অজানা অংশটুকু” দুতির কথায় সৃজন মুখ তুলল। দুচোখের কোন চাঁদের আলো পড়ে চিক চিক করে উঠল।
“আমার কথা কিছু নেই, ভালোই হয়েছে যা হয়েছে”
“ও তাই বুঝি! তাহলে ওই চোখের কোনের জলের মানে কী?”
“ও কিছু না, তবু বলছি”
“আমি শুনছি”
“আমার মায়ের নাম সৃজনী। ছোটোথেকেই মা আমাকে মানুষ করেছিল, বাবা কোন ছেলেবেলায় মারা যায়, আমার তখনও জ্ঞান হয়নি। পড়াশোনা শেষ করে আমি একটা ফার্মে চাকরি পেলাম, সেখানে কাজ বিশেষ ছিল না তবু মাইনে বেশ ভালোই হত। আমার আসলে ওটা ছিল হাতের পাঁচ, আমার লক্ষ্য ছিল কোনও এম এন সি। ওখানে দু বছর করার পর পেয়েও গেলাম কাঙ্ক্ষিত চাকরি ইনক্রিমেন্টের সাথে। নতুন জব ছিল আমার চেনা শহর ছেড়ে দূর শহরে। চলে গেলাম । প্রথম প্রথম খুব ভালো লাগত, তবে ধীরে ধীরে বুঝলাম আমি আসলে তখনও মামা’স বয় আছি। সবার সাথে পেরে উঠছিলাম না। তবু লড়ে যাচ্ছিলাম প্রাণপনে, খাপ খাইয়ে নিতে ।
তারই মাঝে জিনিয়া এল আমার জীবনে!”
সৃজনকে থামিয়ে দুতি বলল, “ওহো, সেই এক কেস!”
“না না, সবটা একই নয়। জিনিয়া যেমন এল আবার চলেও গেল! এইসবে মা ছিল সবসময় আমার পাশে। কিন্তু গতবছর মা হঠাৎ ই ইহলোকের মায়া কাটিয়ে চলে গেল! আমাকে একদম একা করে। আবার জিনিয়া এল, জানি না কেন আমাদের সম্পর্কটাকে আবার সুযোগ দিলাম। কিন্তু এখন ভাবছি হয়ত না দিলেই ভালো করতাম”
দুতি ওর পাশে এসে বসেছে, এবার কাঁধে হাত রেখে বলল, “কেন?”
“জিনিয়া এতদিনে অন্য কোম্পানিতে চলে গেছে আর আমি আমাদের কোম্পানিতে গ্রুপ লিডার। একটুও বুঝতে পারিনি ও আমার সাথে …
আমার দুবছর ধরে করা প্রোজেক্ট প্ল্যান জানাটাই উদ্দেশ্য ছিল, সেটা পেয়ে যেতেই আবার… জানো ও আসলে বিবাহিত, সবটাই ছিল বিজনেস আর মানির জন্য! আমি ভেঙ্গে গেলাম, একেবারে। এবার তো আর মাও নেই… কোথায় যাব আমি!”
“ব্যস এটুকুই!”
সৃজন দুতির এহেন উত্তরে খুব অবাক হল, তারপর, “এই অবহেলা, অবজ্ঞার জন্যই কাউকে বলিনি কোনও কথা। হয়ত সামলেও উঠতাম, কিন্তু গতকাল মিথ্যে বদনামে চাকরিটাও খোয়ালাম, সাথে জুটল অপমান। আমি নাকি এইভাবেই কোম্পানির গোপন প্ল্যান বিক্রি করি!”
“তোমাকে ছোটো করতে বলিনি, এটুকুতে ভেঙ্গে পড়লে কি তোমার মা খুশি হতেন? এটাই কি উনি শিখিয়ে ছিলেন! যতক্ষণ জীবন আছে তাকে হেলায় হারিও না। একজনকে আমি চিনি , না! চিনতাম। জানো, সে আমাদের মতই ছিল, হই হুল্লোড় হাসি মজা নিয়ে তার দিন কেটে যেত। আমার মত ফটোগ্রাফি করার শখ ছিল। সবসময়ই জীবনকে সে অদ্ভুত সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে দেখত। সেই মেয়েটির হঠাৎ একবার এক দুর্ঘটনায় দৃষ্টি শক্তি চলে গেল। সঙ্গে তার ফটোগ্রাফিও চলে গেল। কিছুদিন একটু দমলেও জীবন থাকতে তার জীবনী শক্তি কেউ কেড়ে নিতে পারেনি। জানো এরপর সে কি করেছিল?”
“কী?”
“জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। শুরু করেছিল সংগীত চর্চা”
“তারপর?উনি কি বিখ্যাত কেউ?”
“আহা! এই তো তোমার মস্ত দোষ! সব গল্পে বিখ্যাত কেউ থাকতেই হবে! সাধারণের গল্প, তোমার আমার গল্পগুলো কি গল্প নয়? জীবনটাকে জীবন দিয়ে বাঁচাই তো জীবনের উদ্দেশ্য। এটা আমার এক বন্ধুর গল্প!”
দুতির কথায় সৃজন একটু চুপ রইল। তারপর বলল, “আচ্ছা তাহলে তুমি কেন এই পথে?”
“কোন পথে?”
“না মানে তুমিও কি সুইসাইড?”
এবার দুতি হো হো করে হাসতে লাগল। সৃজন আরও একবার হাঁ করে চেয়ে রইল,
“আরে বোকা কেউ মরেনি, তুমিও না। আমার তোমাকে দেখে মনে হল সাহায্য করি, যদিও মানছি তার ধরন অদ্ভুতরকমের বাজে। তার সাথে এই শহরের লোডশেডিং যা সাথ দিল” বলেই আরও জোরে হাসতে থাকল।
এবার সৃজনও বোকার মত হাসল, কিন্তু নিজেকে ওর খুব হালকা লাগছিল, যেন অনেকদিন পর এক নির্মল ভালোলাগা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। এই মেয়েটির হাসি ওকে ওর মায়ের কথা মনে করাচ্ছিল। ওর মাও তো এইরকমই প্রাণোচ্ছল ছিল।
ওই স্থান দুতির কোনও এক পরিচিতের ক্যাফে, সন্ধ্যাতে বন্ধ হয়ে যায় তাই কেউ ছিল না। আর সুরটি ছিল বাঁশির সুরের রেকর্ড।
এরপর কিছু কথা বলে সৃজন আরও একটু সুস্থ হতে দুতি ওকে এগিয়ে দিল বাড়ির পথে। দুতি ফিরে যাওয়ার আগে সৃজনকে ওর তোলা ছবিগুলো দিল আর বলল, “সৃজন তোমার মা সবসময় আছে তোমার সাথে, আমাকেও তো…”
“অনেক ধন্যবাদ, দুতি, আজ তুমি আমাকে অনেক কিছু শেখালে… এবার আসি, তোমার ফোন নংটা দেবে?”
“ওই ছবিটার খামে আছে, লেখা”
“তাহলে আসছি, কাল আবার আসব এদিকে, দেখা হবে, আমি এতদিন শহরে আছি , আবার এটা আমার মায়ের জন্মস্থানও। কিন্তু এদিকে কখনও আসিনি, কি আশ্চর্য!”
“হুম, এসো”
                                        ******
 
এরপর সৃজন বাড়ি এসে, খেয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছিল, আজ কি কি ঘটল। মেয়েটি খুব সুন্দর ছবি তুলেছে ওর। কাল আরও একবার যাবে ভেবল।
পরেরদিন ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে গেল…
ওখানে পৌঁছানোর পর, কোথাও কিছু দেখতে পেল না।
“হয়ত ভুল দিকে এসেছি” স্বগোক্ত করে সৃজন অন্য পথ ধরল, দূর থেকেই একটা ঢালু চালের বাড়ি দেখতে পেল… “এবার ঠিক পথে আছি”
কিন্তু কাছে গিয়ে দেখল বাড়ি তো আছে কিন্তু এ তো পরিত্যাক্ত! “আশ্চর্য!”
কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করে ফিরে আসতে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করল,
“এই যে দাদা শুনছেন, এখানে কোনও ক্যাফে …”
“ক্যাফে? ওই বড় মার্কেটে আছে। এখানে নেই”
সৃজন একটু সঙ্কোচে ওই বাড়িটার দিকে হাত বাড়াতেই,
“এই হোটেল তো প্রায় ৩০ বছর আগেই উঠে গেছে। মালিকের একটাই মেয়ে ছিল তার বিয়ে হতেই এই দোকান বন্ধ করে উনি চলে যান মেয়ের সাথে”
“মেয়ের নাম কি বলতে পারেন?”
“নাম? … ওহ হ্যাঁ , মনে পড়েছে, সৃজনী!”
সৃজন এবার যেন আকাশ থেকে পড়ল।
ওই লোকটি কথা বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেল…
সৃজন একটু টাল খেয়ে রাস্তার পাশেই বসে পড়ল। ওর সাথে সেই ছবিটা ছিল। বের করে দেখল, ছবিটা একরাতেই যেন পুরানো হয়ে গেছে।
“আমার ছবিই তো এটা!”
ভাবতে ভাবতে উলটালো ছবিটা, দেখল পিছনে লেখা আছে,
“নির্মলকে সৃজনীর তরফ থেকে!”
--নির্মল সৃজনের বাবার নাম ছিল। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে , “মা, ঠিকই বলত, আমি একেবারে বাবার মত!” দু ফোঁটা অশ্রু টপটপ করে ছবিটার উপরে পড়ল…
তাড়াতাড়ি মুছে সৃজন ওটাকে বুকে জড়িয়ে বলল, “মা, আর আমি হেরে যাব না, মা!”
.........................................
 
অলঙ্করণ :-   রিচা দাস