ধারাবাহিক -পান্তা দিদার গুপ্তধন - কেয়া চ্যাটার্জী

ধারাবাহিক

পান্তা দিদার গুপ্তধন
কেয়া চ্যাটার্জী


|| প্রথম পর্ব ||

                           

    

     “ গয়নাতলার বুড়োশিব, দখিন হাওয়ার পাল

       ফোকলা বটের ঝাড়ে ঝাড়ে সুলুক সন্ধান।

       পাহাড় কোলে সূয্যি দোলে, সোনালী ধানের ছায়ে

       মাটির প্রাসাদ মধ্যে শুয়ে মো....”

    

 

      একদিন প্যাংলাদাদা ঘাটে বসে পা দোলাচ্ছিল।  তার পাশে বসলাম, কোনো পাত্তা দিল না। উদাস চোখে তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। বললাম, “কিরে দাদা, দিদার জন্য মন খারাপ?” প্যাংলাদাদা মুখ ব্যাজার করে বলল, “দিদা আমায় খুব ভালোবাসতো রে। আমাকে যখন খাইয়ে দিত তখন গপ্পো করতো। দিদার অনেক গুপ্তধন আছে জানিস তো? আমায় বলেছিল মরার আগে আমায় খোঁজ দিয়ে যাবে। কিন্তু দিদা তো অর্ধেক বলেই চলে গেল। জানিস তো আমার বুদ্ধি শুদ্ধির বহর। স্কুলটাই টপকালাম পাঁচবারের চেষ্টায়। দিদার এই ধাঁধার রহস্য কিভাবে সমাধান করি বলতো?” আমি বললাম, “ধুর! ওসব গুপ্তধন বলে কিছু হয়না। দিদা হয়তো গল্পই বলেছে তোকে।” প্যাংলাদাদার মুখ দেখে বুঝলাম কথাটা তার ভালো লাগেনি। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার কপালটাই মন্দ রে ভাই!” এই বলে প্যাংলাদাদা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে চলল। কিন্তু তার কপাল হয়তো সত্যিই মন্দ ছিল। কোত্থেকে এক হতচ্ছাড়া গোবরে পা পড়ে সে হড়াত করে পড়ল পিছলে। প্যাংলাদাদার প্যাংলা শরীর সে ধকল নিতে পারল না। উঠতে গিয়ে পা পিছলে আবার ধপাস। এইবার যেই উঠতে গেল কোত্থেকে এক মেনি বিড়াল খ্যাঁক করে এলো ঝাঁপিয়ে। অমনি প্যাংলাদাদা “ওরেবাবা রে” বলে এক চিৎকারে ঝপাং করে লাফ দিল পুকুরের জলে। ততক্ষণে আমার চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো জ্যেঠু, বাবা, ইলিয়াস কাকা। প্যাংলাদাদা পুকুরে তখন রীতিমতো চিৎকার করছে আর খাবি খাচ্ছে। তার দিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে কেউ আর হতচ্ছাড়া গোবরের দিকে নজর দিল না। জ্যাঠার পা গিয়ে পড়লো গোবরে আর সঙ্গে সঙ্গে তিনিও কালিপুজোর রকেটের মতো তীব্রগতিতে পুকুরের জলে গিয়ে পড়লেন। আর পড়লেন তো পড়লেন এক্কেবারে প্যাংলাদাদার ঘাড়ের ওপর। প্যাংলাদাদার চিৎকার দ্বিগুণ বেড়ে গেল, “ও মা গো। বাঁচাও গো, ব্রহ্মদত্তি আমার ঘাড়ে চাপলো গো। কেউ বাঁচাও।” সেই শুনে ঘর থেকে জেঠিমাও কাঁদতে কাঁদতে বেরোলেন, “কে কোথায় আছো? দিনে দুপুরে আমার ছেলেকে ভূতে ধরলো গো!” জ্যেঠুর তো তখন আক্কেল গুড়ুম! প্যাংলাদাদার চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, “এই বেয়াক্কেলে বিটকেলে ছোকরা। চোখ খুলে দেখ। তোর বাপ দাঁড়িয়ে রে, তোর বাপ।” প্যাংলাদাদা ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখে জ্যেঠুর সাদা ধবধবে ধুতি পাঞ্জাবিতে চাপ চাপ গোবর লেগে। কিন্তু হতভাগা গোবর শুধু জামায় লেগেই নিস্তার দেয়নি, তা দখল বসিয়েছে জেঠুর চকচকে টাকে আর গালে। তাই দেখে প্যাংলাদাদা ভয় ভুলে ফিক করে দিল হেসে। প্যাংলাদাদার ফিচেল হাসি সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়ল  ইলিয়াস কাকা, বাবা আর জেঠিমার মুখে। পুকুর ঘাটে সে এক লাফিং ক্লাবের আসর। কিন্তু আমি দেখছিলাম  আরেকজনের হাসি। গাছের মগডালে বসে সেই মেনি বিড়ালটার মুখেও যেন এক ভীষণ চেনা ফিচেল হাসি। কই আগে তো একে এই এলাকায় দেখিনি!

 

   

 

গয়নাতলার বুড়োশিব, দখিন হাওয়ার পাল, ফোকলা বটের ঝাড়ে ঝাড়ে সুলুক সন্ধান। পাহাড় কোলে সূয্যি দোলে, সোনালী ধানের ছায়ে

মাটির প্রাসাদ মধ্যে শুয়ে মো....”

    

 

 

    




Keya Chatterjee

                                 
  
                                            

Comments

Loading... Logging you in...
  • Logged in as
There are no comments posted yet. Be the first one!

Post a new comment

Comments by