ভাবনা কারা - আগমনী পাঠক

 ভাবনা কারা
আগমনী পাঠক


    “বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এই কল্পনাতীত বিশাল ক্ষেত্রের ক্ষুদ্রাতীত ক্ষুদ্র আমাদের এই বাসভূমি। পুনশ্চ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তুলনায় মোদের অস্তিত্ব নগন্য। তবে জানিস, হিন্দু দর্শন মতে, যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে তাই আছে সবথেকে ক্ষুদ্র কণাতেও, আবার মনই নাকি এসবের আধার! উফ, কীসব বকছি তোদের কাছে। আসলে, ইদানিং আমার আবার বিজ্ঞানের তত্ত্বর সাথে নানান ধর্মীয় তত্ত্ব আলোচনা পর্যালোচনার ভূত মাথায় চেপে বসেছে। এই ভূত বলতেই আমার মাথায় বেশ ইন্টারেস্টিং ঘটনা মাথায় এসেছে”
 

    মামাবাড়িতে গরমের ছুটিতে সবাই এসেছি। আমি, বাবাই, তুতাই, টুবলাই, মনি দিদি, আর ছোট্ট রিনিও এসেছে। আমি, তুতাই , টুবলাই তিনজনেই হাওড়া ঠাকুরানী উচ্চবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রছাত্রী। সম্পর্কে আমারা সবাই একেওপরের কাজিন্স। মনি দিদি আর টুবলাই অবশ্য সিব্লিংস। বাবাই দাদা আমার মামত দাদা। এই বাড়িটা আমাদের মামাবাড়ি ঠিক নয়, এটা মামার চাকরিসুত্রে পাওয়া কোয়াটার, কিন্তু বিএসএফ ইন্সপেক্টরের কোয়াটারকে স্বচ্ছন্দে ছোটোখাটো বাংলো বাড়ি বলা যায়।  আসামের শিলচর শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে গ্রাম্য পরিবেশে এই বিশাল বি এস এফ ক্যাম্প! এর পাশেই আর্মি ক্যাম্প, সেটা আরও বড়ো, তবে আমরা যাইনি ওখানে, দূর থেকে দেখে আর মামীমার মুখে শুনে ঠাওর করেছি ওর আয়তন। বাবাইদাদা এখন ব্যাঙ্গালরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে আর মনি দিদি কলকাতায় বালিগঞ্জে এম এস সি করছে। আমি এটুকু গল্প শুরুর আগে বলা প্রয়োজন মনে করলাম নয়ত গল্পের মাঝে আমাদের পরিচয় পেতে পাঠকের হয়ত ভালো লাগবে না। যাইহোক, আমি আবার গল্পে ফিরি। এবার নিশ্চয় বুঝেছেন যে কথা শুরু করেছে সে আমাদের মনি দিদি। মামা যেখানেই থাকুক প্রতিবার গরমের সময়ে আমরা সবাই সেখানে যাই, খুব খুব মজা করে কাটে আমাদের ছুটি। সাথে মনিদির গল্প আমাদের উপরি পাওনা।
মনিদির কথায় বেশ বুঝতে পারলাম একটু উৎসাহ দেখালেই মনিদির গল্পের ঝাঁপি খুলে যাবে।
“ইন্টারেস্টিং? মানে কি সেই হাউ মাউ খাঁউ মানুষের গন্ধ পাঁউ? এই তাহলে আমি নেই, উঠলাম, ওসব গাঁজাখুড়ি গল্প আমার পোষায় না” বাবাই দা মনিদির কথা শেষ হতেই হাঁই হাঁই করে বলে উঠল!
মনিদি সোফার উপর বসে বেশ যোগীমাতার মত মুখের ভঙ্গি করে বলল, আমি কবে শুনিয়েছি সেসব ? না, শুনতে চাইলে আমি বলবো না, যা!
উফ, এই দাদা দিদি নামেই বড়ো হয়েছে, তবু বাচ্ছাদের মত রাগ করে, যাইহোক আমি বললাম,
“আরে না না, দিদি তুমি যা বলছিলে শুরু করো, আট টা বাজতে গেল, ঠিক ৯টা পনেরো তে মামিমা আবার ডাক দেবে, খেতে যেতে হবে, তার আগে প্লিজ”
“ঠিক আছে সবাই বলছে যখন আমিও বসি” বাবাই দাদার সম্মতিতে দিদি বেশ মুখে এক প্রসন্ন হাসি এনে, আবার বলতে শুরু করল। আর, বাকিরা তো, আগে থেকেই গল্পের নাম শুনে জাঁকিয়ে বসেছে।
 

    এবার যা গল্প মনিদিদির কথাতেই লিখছি আমি,
“তবে শোন, এই গল্প আমার অভিজ্ঞতা নয়, এ আমার এক রুমমেটের কথা, গল্প তোদের মামদ, জামদ বা ভ্যাম্পায়ার নিয়ে না হলেও…,” বলতে বলতেই দুম করে কারেন্ট অফ হয়ে গেল, আর বাইরে যে এতক্ষণ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে তা এতক্ষন টেরই পাইনি, এখন তারই শব্দ কাঁচ ঘেরা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে, নিঝুম পরিবেশের ছমছমে ভাবটা আরও গভীর থেকে গভীরতর করে তুলল।  
“এই ভয় বলতে বলতেই কারেন্টটা কেন যে হাওয়া হয়ে যায়, বুঝি না বাপু!” তুতাইয়ের কথা শেষ হতে না হতেই, মামি মা দুটো বড়ো বড়ো বাতি জ্বালিয়ে ঘরের দুই কোনে রেখে গেলেন। আমরা মনিদিদির আরও কাছে কাছে ঘেঁসে বসলাম।
“এই যে এখন অন্ধকার হয়ে গেল, এখন তোদের মনে হচ্ছে না, এটা যেন একটু আগেই হয়েছে বা এই একই সময় কাটিয়েছিস? বা জানিস সবটুকু কী ঘটতে পারে!”  
“দিদি, প্লিজ, কীসব বলছিস! তুই গল্প বল” টুবলাই বলল।
“হুম্, আমার রুমমেট প্রিয়া, আছে এখান থেকে সামনেই শিলং শহরে। গতবছর মার্চে বিয়ের পর পরই ও ওর বরের সাথে এই শিলং শহরে চলে আসে, ও আমার রুমমেট কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে ছিল আমার থেকে ১ বছরের সিনিয়র। তাই পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে খুব আনন্দেই শিলঙে চলে আসে। আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, ওখানের পরিবেশের অপরূপ দৃশ্যের ছবি পাঠাত আমাকে। ছুটিতে ওখানে যেতেও অনুরোধ করে, কিন্তু তোরা তো জানিস আমার ফাইনাল ইয়ার গেল এই বছরটা । সুতরাং ছুটি পেলেও প্রোজেক্ট , রিপোর্ট, করতে করতেই কেটে যেত।
 

    প্রায়ই কথা হত। ওর ছবি বা ভিডিও থেকে আমারও ততদিনে ওদের বাড়ির  আশে পাশের পরিবেশ সহ মানচিত্র বেশ মাথায় গেঁথে গেছে। একটা সবুজ উদ্যান ঘেরা একতলা বাড়ি ওদের। ওর বর ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোফেসর আর ইউনিভার্সিটির খুব কাছেই ছিল ওদের এই বাড়ি। এমনিতে দেড় কিমির মতো হলেও, সামনের এক পার্ক এর রাস্তা নিলে ৫০০ মিটার কম হাঁটতে হতো। এখানে এসে তো, তোরা পাহাড়ের সৌন্দর্য বুঝতেই পারছিস তাই ওসব আর বলবো না। মোটকথা ওখানের দৃশ্য আমি দূর থেকে ডিজিটালি দেখেই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। এইভাবে ওর ওখানে ৮ মাস কেটে গেল, শীতকাল জাঁকিয়ে বসেছিল শিলং শহরে, আর আমার জীবনে বসেছিল সেমিস্টারের চাপ! অনেকদিন কথা হয়নি আর প্রিয়ার সাথে। এরপর একদিন হোয়াটসঅ্যাপে দেখি প্রিয়ার খুব লম্বা একটা মেসেজ”
 

    এতটুকু বলে মনিদিদি থামলো, ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে করতে মিনিট খানেক পর আমাদের সামনে মোবাইলটা এগিয়ে দিল। বাবাইদা সেটা প্রায় ছোঁ মেরে সবার আগে নিয়ে নিল। মনিদিদি বলল, “ওটা ও পাঠিয়েছিল, খুব একটা ব্যাক্তিগত কিছু নেই, তাই তোদের সরাসরি দেখতে দিলাম”। বাবাইদার পর সবার হাত ঘুরে আমার হাতে এসে পৌঁছাল সব শেষে, এস এম এস টা ছিল এইরকম।
“মনি, কতদিন তোকে ফোন করতে পারিনি, কিন্তু আজকালযে কি হয়েছে আমার! সময় যেন কেমন আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে হারিয়ে যায়। গতকালেরই ঘটনা, সোমনাথ ওর রিসার্চ ল্যাবে একটু রাত অবধি কাজ করবে জানাল, আমাকে বলল ওর রাতের খাবারটা ওখানেই নিয়ে যেতে। সেইমতো আমি সব প্যাক করে নিয়ে বেরলাম, তখন সবে সাতটা বাজে কিন্তু এখন শীতের সময়, তাই বেশ অন্ধকার! নিলাম ওই পার্কের পথ, হাতে মোবাইল ছিল তবে টর্চ জ্বালানোর প্রয়োজন ছিল না, অনেক স্ট্রিট লাইট জ্বলছে। পার্কের সামনের ফাউন্টেনটা পেরিয়ে যেতেই এমন একটা রাস্তা পড়ে যার দুপাশে বড়ো বড়ো গাছ। ওই গাছের সবুজ ডাল পালাগুলো এমনভাবে রাস্তার সামনে এগিয়ে এসেছে যে সকালে নীল আকাশ উঁকি মারলেও রাতের অন্ধকারে তা দেখা যায় না। দিনে এই পথ বেশ রোম্যান্টিক লাগে কিন্তু রাতে যেন এক গুহা পথ। কাল দেখি, শুধু ওই পথেরই স্ট্রিট লাইট গুলো ঠিক করে জ্বলছে না, দুটো একেবারে বন্ধ আর দুটো জ্বলছে নিভছে। হাতের মোবাইলের টর্চটা জ্বালাতে হল না, তাড়াতাড়ি ওখান থেকে বেরতেই দেখি, একটা বেশ সাদা রঙের ছোটো কুকুর খুব লেজ নাড়াচ্ছে আর আমার সামনের দিকে এগিয়ে এসে আমার পায়ের কাছে যেন মাথা ঠেকিয়ে কিছু একটা জানাতে চাইছে, আমি বুঝলাম, ওর হয়ত খিদে পেয়েছে। আমার ব্যাগে রাতের খাবারের সাথে কিছু শুকনো খাবারও ছিল, সেটা আমি বের করে ওই কুকুরটাকে দিলাম। ও সানন্দে লেজ দুলিয়ে খাবারের দিকে মুখ ঝুঁকিয়ে খেতে শুরু করে দিল। তখন, আমার হঠাৎ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে খুব ইচ্ছা হল। মাথা নুইয়ে দিতে গিয়েই কেমন যেন একটু চোখের দৃষ্টি অন্ধকার হয়ে এলো।
 

    এরপর দেখি, কোথায় সেই কুকুর, এমনকি আমি ওই পথের অন্য প্রান্তে মানে এখনও আমি ওই রাস্তাই পার হইনি। কিন্তু কীভাবে তা হয়? ভাবলাম, আমি হয়ত অনেক বেশি ক্লান্ত, আর বেশি বেশি চিন্তা করছি, তাই মনের ভয় ভয় ভাবটা কাটিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলাম। আর তুই তো জানিস, আমি সবসময় একটু বেশি ভাবতে থাকি। এবার যা হল,কীভাবে যে বলি! ওই সবুজ গুহাপথের ন্যায় রাস্তা আবার পেরিয়ে গেলাম ওপর প্রান্তে, আমি আবার একইভাবে ওই কুকুরটার দেখা পেলাম, কেন জানি না, মনে হল ওকে খাবার দিই। কিন্তু সেই একই ঘটনা ঘটল, মানে খাবার দিয়ে ওকে খেতে দেখতে দেখতে যেই ওর মাথায় হাত দিয়ে একটু আদর করতে গেলাম,…
দেখি কিনা, আমি আবার অন্য প্রান্তে! এরকমভাবে প্রায় তিনবার ঘটল। আমি খুব ক্লান্ত, সবথেকে অবাক কী জানিস?
আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম, সাতটা বেজে ১০ মিনিট আর ওই ঘটনা তিনবার ঘটার পরও দেখলাম মোবাইলের ঘড়ি জানাচ্ছে তখন সবে মাত্র ৭ মিনিট পেরিয়েছে। তাহলে কি সবই মনের মাঝে!! বেশি ভাবার জন্য কি হচ্ছে?
আমি আবার গেলাম, তবে এবার আর ওই কুকুরটার মাথায় হাত বোলানোর জন্য ঝুঁকলাম না। দেখলাম আর আমি অন্যপ্রান্তে নিজেকে আবিষ্কার করলাম না। যতটা সম্ভব দ্রুত হেঁটে ওর ইউনিভার্সিটি পৌঁছে গেলাম। গিয়ে খুব হাঁপিয়ে পড়ি, তাই ঠিক করলাম, সোমনাথের সাথেই বাড়ি ফিরব, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ওদের রেস্টিং প্লেসে বসে রইলাম।
এরপরের ঘটনা, ঐদিনই ফেরার সময় হয়।
 

    ফেরার সময় সোমনাথ সাথেই ছিল। হাঁটতে হাঁটতে ইউনিভার্সিটি এরিয়া শেষে পার্কের রাস্তা ধরলাম, তখন ও ওর ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে আমায় এগিয়ে দিয়ে বলল, “খেতে খেতে চল”। আমি নিতে গিয়ে দেখি, কোথায় পার্কের রাস্তা কোথায় চকলেট দিচ্ছে! সোমনাথ তো আমার পাশে দাঁড়িয়ে বোতল থেকে জল খাচ্ছে, আমরা পার্কের রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই তো শুরু করিনি! ঠিক এই ঘটনা তো হাঁটতে শুরু করার আগের মুহূর্তেই ঘটল। আমি আবার দেখলাম, একই ঘটনা ঘটল, সময় এগোচ্ছে না যেন পেন্ডুলামের মত দুলছে।  
এবার হাঁটতে লাগলাম, সেই একইভাবে সোমনাথ আমার দিকে চকলেট এগিয়ে দিল! এবার আমার মাথাটা ঝিম ঝিম করতে শুরু করেছে, চকলেট না নিয়ে আমি সোমনাথের হাতটা শক্ত করে ধরলাম। এসব শুধু আমিই অনুভব করছি, সোমনাথ নয়।
জানি না রে, কী হচ্ছে আমার সাথে, কেন হচ্ছে! আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি!”
এত্ত বড়ো এস এম এসটা পড়া শেষ করতেই মনিদিদি আবার বলতে শুরু করল, “আমি প্রিয়াকে ফোন করে আরও অনেক কথা জানতে পারি, ও বলে ও নাকি জানে আমি কী কী বলবো, একই ঘটনা নাকি বারে বারে হচ্ছে,… শুধু ওর জন্য! অথচ আমি ওকে ঐদিন একবারই ফোন করেছিলাম!”
“তোর বন্ধুর স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে, এতে ভয়ের কিছু নেই” বাবাইদা বলল।
বাবাইদার কথায় মনিদিদি বলল, “এতটুকু শুনে আমিও তাই ভেবেছিলাম, তাই ওর হাসবেন্ড মানে সোমনাথকে ফোন করে আমার সাথে যা কথা হয়েছে সবই বললাম, শুনে উনিও বললেন, প্রিয়া নাকি এই কদিন খুবই অন্যমনস্ক থাকে, নানান রকম অদ্ভুত কথা বলে”।
“কেমন, কেমন” তুতাই বলল,
“ওরা একদিন শিলং শহরের এক চার্চে গিয়েছিল, প্রিয়া আর সোমনাথ একদম শেষের দিকে বসে ছিল। চার্চে প্রার্থনা চলছিল। হঠাৎ প্রিয়া সোমনাথের পাশ থেকে উঠে গিয়ে কোথা থেকে এক বালতি জল নিয়ে এলো, আর তখনই দেখে, এক বাচ্ছা মেয়ের ফ্রকে বাতির আগুন থেকে আগুন লেগেছে সে ভয়ে ছুটে আসছে, আর প্রিয়া তখনই ওই জল ছুঁড়ে নিভিয়ে দেয়। সবাই সেদিন প্রিয়াকে সাক্ষাত ঈশ্বরের দূত মেনে ভূয়সী প্রশংসা করেছে, বিশেষ করে ওই মেয়েটির বাবা মা। এবার, প্রশ্ন হলো যে, প্রিয়া জানল কি করে যে ওটা হবে?
 

    আমি প্রিয়ার সাথে কথা বলতে,  ও আমায় বলে, ঠিক আগেই ও ওই মুহূর্তটা কাটিয়েছে, ওটা ও , না করলে মেয়েটার ডান পা নাকি মারাত্বক দগ্ধ হয়ে যেত!
প্রিয়ার এটা বিশেষ কোনও ক্ষমতা নাকি সবটাই ওর মনের মাঝে হওয়া জটিল কোনও ভাবনার বহিঃপ্রকাশ! দাঁড়া,  তোদের আরও একটা এস এম এস দেখাই,………”
মনিদিদি আবার থামল, বাইরে সমানে বৃষ্টি হচ্ছে। কাঁচের জানালায় বৃষ্টির ফোঁটা টপ টপ করে লাগছে। এরকম নিশ্চুপ বৃষ্টি আমাদের হাওড়াতে হয়না, যেন কেউ নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। মনের মাঝে মনিদিদির গল্পটা অনেক দাপাদাপি করছে, কোনও ঘটনা ঘটার সময় অথবা ঘটে যাওয়ার পরে মনে হয়না যে ওটা যেন আগেও ঘটেছে, আগেই দেখেছি, হয়না কি আমাদের সাথে?? দিদির বন্ধু প্রিয়ার মতো আমাদের সাথে এগুলো হয়না?
এতক্ষনে বাতিগুলো থেকে মোম ঝরে বাতির গায়েই এক লম্বা স্তুপ সৃষ্টি করছে, অথচ একটু আগেই যেন কিছু ছিল না। আচ্ছা, এইমাত্র দেখলাম যেন বাতিটা নিভে আসছে আর ……
ভাবনার জালে জড়িয়ে যেতে মনিদিদির স্বর আবার বাস্তবে ফিরিয়ে আনল।
“এই এস এম এস টা দেখ, ঋতু” মনিদিদি আমাকে মোবাইলটা দিল। ওতে দেখলাম,
“জানিস, এখন এত বেশি হচ্ছে একই ঘটনার ফিরে ফিরে আসা, আমি আর পারছি না রে, মাঝে মাঝে মাথাটা যেন যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যায় এসব ভেবে ভেবে। মাথার চুল ঠিক করে নিয়ে, আয়নার সামনে থেকে সরে এসেও যেন আবার আমি আমাকে দেখতে পাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কোনটা যে সত্যই হচ্ছে, কোনটা যে আমি আর কোনটা নয়, চার পাঁচ বার ঘটে যাওয়ার পরও দেখি সকলের জন্য সেটা মাত্র একবারই হচ্ছে। সময় যেন শুধু আমার সাথেই এই লুকোচুরি খেলছে, এই লুকোচুরিতে আমি ক্লান্ত।
আচ্ছা মনি, তোর কখনও এরকম হয়েছে যে , হয়ত তুই কারোর সাথে কথা বলছিস কিন্তু বুঝতে পারছিস যেন সে কি বলবে, যেন তুই আগেও শুনেছিস! অথবা, খাওয়ার শেষ করেও দেখছিস তোর খাওয়া হয়নি, টেবিল ভর্তি খাবার একইভাবে পড়ে আছে। কী রে হয়েছে?”
এই এস এম এস টা পড়ে দিদির মোবাইলটা ফিরিয়ে দিয়ে বাতিটার দিকে চেয়ে এবার সত্যই যেন মনে হল, এই লেখাগুলো আগেও পড়েছি।
বৈদ্যুতিক আলো জ্বলে উঠল, বৃষ্টি থেমে এল, মামিমা আমাদের খেতে ডাকল, সবই যেন আগেও ঘটেছে, আবার ঘটল।
বেশি ভাবলে কি সময় পেন্ডুলামের মতো দোলে?
আপনাদের সাথেও কি এরকম হয়? আমার এই লেখা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে না? এটা আগেও পড়েছেন? কি হচ্ছে না?
 

সমাপ্ত 

 

Agamoni Pathak

 


 


Comments (2)

Loading... Logging you in...
  • Logged in as
অনবদ্য এবং খুবই সুন্দর গল্প। পড়ে খুব ভালো লাগলো ☺।
Darun laglo. Ektu onnorkm glpo. R o notun notun glpo chai.

Post a new comment

Comments by