জোঁকা
পার্থপ্রতিম
বিন্থটদের মানুষ ভয় পায়।
আবার বিন্থট ছাড়া মানুষের চলেও না।
দরকারে না পড়লে কেউ বিন্থটদের সংস্পর্শে আসতে চায় না। দরকার শেষ হলে তাড়ানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
বিন্থটরা জানে মানুষের ভালবাসা পাওয়ার জন্য তাদের জন্ম হয়নি।তাদের জন্ম মানুষকে পিশাচ এবং রাক্ষসদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।
পৃথিবীতে পিশাচ ও রাক্ষসদের সংখ্যা কিছু কম নয়।
কিন্তু বিন্থটরা ক্রমেই কমে আসছে। আশ্রমে নতুন বিন্থটের জোগান খুব কম। কোন মানুষ সাধ করে আর বিন্থট হতে চায় না। মৃত্যুর পর তারা চায় শান্তিতে ঘুমোতে, পিশাচের সাথে লড়তে নয়।
বাড়ির লোককে মৃত্যুশয্যায় তারা শেষ ইচ্ছের কথা বলে যায় - তা হল চিতার অগ্নি।
গত বছর মাত্র বারোজন নতুন বিন্থট তৈরী হয়েছিল। আর তাদের মধ্যে দশজনেরই কোন পূর্বপরিচয় পাওয়া যায়নি। বিন্থট আশ্রমের গুরুজি বলেন - পূর্বপরিচয় অজানা থাকলে সেই মানুষকে বিন্থট করা খুব বিপজ্জনক।
বিন্থটদের কাজ খুবই দায়িত্বশীল৷
অপরিমিত ক্ষমতার সাথে আসে পর্যাপ্ত দায়িত্ব।বিন্থটদের প্রত্যেককে সেই দায়িত্ব নিতে হয়।
সেই দায়িত্ব হল কোনভাবেই কোন মানুষের কোন ক্ষতি না করা। নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও মানুষকে রক্ষা করা।
অবশ্য বিন্থটদের প্রাণ থাকে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।
কারণ বিন্থটদের নিশ্বাস পড়ে না। আর বিন্থটদের খাদ্য হল পশুপাখির কাঁচা রক্ত৷ আর কিছু খায়না তারা। একদিন রক্তপান করলে তারা এক পক্ষ কাল না খেয়ে চলতে পারে। বিন্থটদের জল খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
তাই বেশির ভাগ মানুষ বিন্থটদের দানবের এক রকমফের বলে মনে করে এবং যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখে।
তবে গুরুজী বলে অনেক আগে বিন্থটদের সম্মান দিত মানুষ, ভয় পেলেও প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাদের শ্রদ্ধা করত।
বিন্থটদের নিয়ে গাথা লেখা হত। রাতের বেলায় বিন্থটদের বীরত্বের গল্প করত মায়েরা। শিশুরা সেই শুনে ঘুমতো।
ঙিন একবার জিজ্ঞাসা করেছিল - গুরুজি, এখন তাহলে এই অবস্থা কেন? বিন্থটদের দেখলে মানুষ সরে যায়। দরকারে না পড়লে দশ হাতের মধ্যে আসে না। কেন?
এর কারণ হল পূর্বজন্মের সংস্কার - গুরুজি শান্তসুরে বলেছিলেন। - পূর্বজন্মের সংস্কার ছাড়া এমন হয় না। আগে বিন্থট হতেন রাজপরিবারের বীরেরা। যুদ্ধে আহত হলে তাঁরা নিজে বিন্থট হয়ে মানুষকে রক্ষা করার ব্রত নিয়ে আশ্রমে আসতেন।
এখন আমরা কাদের বিন্থট করছি! রাস্তায়, সরাইখানায় পড়ে থাকা মরতে বসা ভিখিরি, চোর, ডাকাতদের। প্রায় কারোরই পূর্বপরিচয় আমরা জানি না।
ওদের মধ্যে খুনেরাও যে লুকিয়ে নেই কে বলবে!
সেই স্বভাব যাবে কোথায়। ওদের থেকে যে বিন্থটরা তৈরী হয় তারা রুক্ষ, কুটিল, ক্রুর হয়। স্বাভাবিকভাবেই মানুষরা তাদের পছন্দ করবে না। তাই মানুষদের দোষ দিয়ে লাভ নেই৷
মানুষের অনেক খারাপ স্বভাবের মধ্যে একটা হল অমূলক গুজব রটানো। এক কণা চালকে এক থালা ভাত বানিয়ে দেওয়া।
তাই বিন্থটদের নামে অনেক বিভৎস গল্প চালু হয়েছে সময়ের সাথে।
এতে আশ্রমের কিছু করার নেই।
প্রতি বছর অন্তত দশজন বিন্থট না তৈরী করতে পারলে শহর গ্রাম বাঁচান মুশকিল হবে।
সব খেয়ে ফেলবে পিশাচে।
ঙিন মাথা নাড়ল।
ঙিন একজন নতুন বিন্থট। জন্মসাল পাঁচশো বাইশ৷
গুরুজি বললেন - ঙীন, ডাক এসেছে। দেড়শো মাইল দূরে হড্ডর অঞ্চলে একটা পিশাচের উপদ্রপ শোনা গেছে। ইতিমধ্যেই পাঁচজনের মৃত্যু ঘটেছে। হড্ডর থেকে দুজন এসেছিল বিন্থটের খোঁজে, দু থলে স্বর্ণমুদ্রা অগ্রিম দিয়ে গেছে। এবার যাবার সময় হয়েছে। আশ্রমে তোমার অস্ত্রশিক্ষা সম্পূর্ণ। তুমি নিজে কি মনে করছ?
তুমি কি পিশাচের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।
ঙিন ঘাড় নাড়ল। বিন্থট হওয়ার পর প্রায় একবছর গুরুজি ও তাঁর দুই সহকারী নতুন বিন্থটদের অস্ত্রশিক্ষা দেন। ঙিনের সেই শিক্ষা শেষ হয়েছে।
অঘোরীবাবার মন্দিরে গিয়ে প্রণাম করে গুরুজির আশীর্বাদ নিয়ে ঙিন বেরিয়ে পড়ল। বিন্থটদের মনে আবেগ তেমন জন্মায় না। তবু, ঙিন নিজের মধ্যে একটা অন্যরকম উত্তেজনা অনুভব করছিল।
হড্ডর গ্রামে হেঁটে পৌছতে ঙিনের লাগল সাতদিন।
সে গ্রামে ঢুকতেই সেখানের লোকেরা তার উপস্থিতি বুঝতে পেরে সরে সরে যেতে লাগল। কেউ তার কাছে আসতে চায় না।
বিন্থটেরা নিজেদের পরিচয় লুকোয় না। তারা প্রত্যেকে ডান হাতে অঘোরীবাবার নামাঙ্কিত সোনালী বাজুবন্ধ পরে থাকে। তাছাড়াও বিন্থটদের চুল কটা হয়।
হড্ডর গ্রামের সভাপতির ঘরে সোজা গিয়ে উঠল ঙীন, নিজের পরিচয় দিল। যদিও সে বুঝতে পেরেছিল সভাপতি তাকে দেখামাত্র চিনতে পেরেছে।
মনের অস্বস্তি লুকিয়ে সে ঙিনকে যথাসাধ্য অভ্যর্থনা জানাল। বলল যে উপদ্রপ শুরু হয়েছে একটা জলপিশাচের।
মোট সাতজন গ্রামবাসীকে সেটা রাতের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় পা ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে জলে ডুবিয়ে মেরেছে। তাদের দেহ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঘর থেকে পুষ্করিণী পর্যন্ত ধুলোর ওপর ভারী কিছু টেনে নিয়ে যাওয়ার দাগগুলো শুধু পাওয়া গেছে।
সারা গ্রামের লোকজন আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছে৷
তারপর সভাপতি ঙিনকে বলল - তুমি যদি আমাদের রক্ষা কর আমরা সবাই তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
কৃতজ্ঞতার কথা শুনেই মাথা গরম হল ঙিনের। মানুষের অনেক কিছু থাকতে পারে, কৃতজ্ঞতা বোধটা তাদের একদমই নেই৷
সে ঘষা ঘষা গলায় বলল- সে ঠিক আছে। আমার পারিশ্রমিক তিনশো স্বর্ণমুদ্রা। পিশাচ টা যদি নতুন প্রজাতির কিছু হয় তাহলে আরো পাঁচশো। আপাতত আমার তিনটে বড়ো ছাগল চাই। আর একটা গামলা।
সাতদিন না খেয়ে আছি।
সভাপতি ব্যাস্তসমস্তভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ঙিনের থাকার ব্যাবস্থা করা হল একটা আধভাঙা গোয়ালঘরে। গোরুগুলোকে সদ্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সারা ঘরটায় পচা গোবরের বোঁটকা গন্ধ।
ঙিন কিছু মনে করল না। মানুষের কাছ থেকে বেশি কিছু বিন্থটেরা আশা করে না।
শুধু পারিশ্রমিকটা ঠিকঠাক বুঝে নেয়।
পারিশ্রমিক না নিলে গুরুজির আশ্রম চলবে না। অঘোরীবাবার মন্দিরে বিন্থট তৈরী হওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন মানুষদের পিশাচের হাত থেকে বাঁচাবার কেউ থাকবে না।
তাই লোকেরাও পারিশ্রমিক ঠিকঠাক পৌছে দেয়।
বহুকাল আগে কোন একটা গ্রাম পিশাচমুক্তির পর বিন্থটের পারিশ্রমিক দিতে গোলযোগ করেছিল।
তার পরের এক মাসের মধ্যে বিভৎস সব পিশাচ আর রাক্ষসের উপদ্রপ শুরু হয়েছিল সেই গ্রামে। বহু অনুরোধেও গুরুজি আর কোন বিন্থট পাঠাননি সেখানে। শ্মশান হয়ে গেছিল পুরো অঞ্চল।
গুরুজি বলেন - সবই অঘোরীবাবার খেলা।
গোয়ালঘরের এককোণে চারটে মাঝারি আকারের ছাগল বাঁধা আছে। ঙিন তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তারা ভয়ে লাফালাফি করা শুরু করল।
ওরা বোধহয় আসন্ন মৃত্যু বুঝতে পেরেছে।
বেশি সময় নিল না ঙিন। হাতের কাছে পোশাক টা কনুই পর্যন্ত তুলল। দুহাত মুঠো করে জোরে ঘোরাতেই চেটোর কাছ থেকে দুটো ধারালো চকচকে লোহার ফলা বেরিয়ে এল।
দু হাতের এই ফলাদুটো হল বিন্থটের অস্ত্র। অঘোরীবাবার দান। গুরুজির নিজের হাতে বসিয়ে দেওয়া।
সাঁৎ সাঁৎ করে বাতাসে একটা আওয়াজ হল। মুন্ডহীন ছাগল চারটে নেতিয়ে পড়ল গামলার ওপর।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের রক্তে গামলাটা ভরে উঠল।
ঙিন সেটা তুলে কয়েক চুমুকে শেষ করে দিল। হাতের চেটোয় করে মুছে নিল মুখের রক্ত।
এখন দিন পনেরোর জন্য নিশ্চিন্ত।
পুষ্করিণীটা দেখে প্রথমেই খটকা লাগল। এতো ছোট জলাশয়ে জলপিশাচ থাকে কেমন করে। জলপিশাচের প্রিয় থাকার জায়গা হল বিশাল জঙ্গলে ঢাকা গভীর হ্রদ - টদ।
আর এই পুষ্করিণী তো গ্রামের একদম মাঝখানে। তিনদিকে ঘরবাড়ি। পুষ্করিণীর একদিকে আবার একটা মন্দির রয়েছে। কয়েকটা পুরনো বট অশ্বত্থ গাছ। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়টা হল পুষ্করিণীটা নতুন খোঁড়া। বছরখানেকের বেশি পুরনো নয়। ধারে ধারে এখনো কোদালের দাগ দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার।
জলপিশাচ পুরনো জলাশয় ছাড়া থাকে না।
গ্রামের লোকেরা নিশ্চয়ই কিছু লুকোচ্ছে।
সে সভাপতিকে বলল - পিশাচটাকে কেউ দেখেছে?
-- না।
-- তা হলে বুঝলে কি করে যে জলপিশাচ?
---আজ্ঞে সবাইকে যে জলেই টেনে নিয়ে গেছে। জলে তো জলপিশাচই থাকবে।
ঙিন একবার লোকটার দিকে আগুনদৃষ্টিতে তাকাল৷ গুটিয়ে গেল লোকটা।
পিশাচ আর রাক্ষসের কতরকম ভাগ হয় তা ও কি করে জানবে। আশ্রমে পিশাচ আর রাক্ষসের ওপর একশো দশ খন্ডের বই আছে। প্রত্যেকটা পড়তে হয়েছে ঙিনকে। জানতে হয়েছে কোন রাক্ষসের কোন দূর্বলতা। কোন পিশাচ কি সহ্য করতে পারে না।
জলে থাকে এমন পিশাচ আর রাক্ষস আছে প্রায় তিনশো প্রজাতির। এসব অজ্ঞ আর অকৃতজ্ঞ দূর্বল মানুষকে সেসব বলে কি লাভ!
সে বলল - আজ রাত থেকে সে গোটা গ্রাম পাহারা দেবে। সারারাত।
সভাপতি গ্রামের সবাইকে কি যেন বলল।তারপর সবাই চলে গেল।
ঙিন নিশ্চিত গ্রামের লোকেরা তার কাছে কিছু লুকোচ্ছে। কিছু একটা বলছে না তাকে।
প্রথম দুরাতে কিছু ঘটল না।
তৃতীয় রাত্রে পুকুরের পুব কোনে কিছু একটা ভারি জিনিস টেনে নিয়ে যাওয়ার শব্দ হল।
তাড়াহুড়ো করল না ঙিন। নিঃসাড়ে পুকুর পাড়ে যেতেই বুঝে গেল কি হয়েছে! সে বিশ্বাস করতে পারল না গ্রামের লোকেদের এত দুঃসাহস হল কিভাবে!
পুকুরের জল থেকে যেটা উঠে আসছে সেটা যে সে পিশাচ নয়।
ছাইয়ের মতো সাদা মুখ আর হলুদ চকরাবকরা জামা পরা সেটা একটা জোঁকা।
জোঁকাটা দাঁত বের করে হাঁসতে হাঁসতে জল থেকে উঠে পাশের একটা ঘরে ঢুকল। একটু বাদে একটা নির্জীব মহিলাকে পা ধরে টানতে টানতে জলে নিয়ে গেল।
তারপর মাঝপুকুরে গিয়ে টপ করে ডুবে গেল। মহিলাটার আর কোন হদিশ রইল না।
ঙিন চুপচাপ অন্ধকারে বসে বসে পুরো ব্যাপারটা দেখল। রাতেরবেকায় জোঁকাদের চাইতে ভয়ংকর কিছু নেই৷ রাত্রেবেলায় জোঁকা অদম্য। এমনকি বিন্থটেরও সাধ্য নেই রাতে জোঁকার কিছু করে।
তাই ঙিনের দেখা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
তাছাড়া গ্রামের সভাপতির সাথে বোঝাপড়াও বাকি ছিল।
তার জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সকাল হতে মুঠো ঘুরিয়ে হাতের ফলা বের করে সভাপতির ঘরে গেল ঙিন। তারপরে সোজা সভাপতির কাঁধ থেকে একটা হাত কেটে ফেলল। আশপাশের লোক আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল। তারা ভাবল এই বিন্থট পাগল হয়ে গেছে, এবার সবাইকে মেরে ফেলবে। তারা এদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে দিল।
ঙিন শীতল গলায় সভাপতিকে বলল - জোঁকা মানুষে তৈরী করে। তারপর নিজের লুকোন ধনরত্ন পাহারা দেবার কাজে লাগায়। তবে কোন কারণে মন্ত্র পড়া ভুল হলে জোঁকা জেগে উঠে যারা তাকে বানায় তাদেরকেই তীব্র আক্রোশে খুন করে। আমি জানতে চাই নতুন পুষ্করিণীর জোঁকাটাকে কে বানিয়েছে আর কেনই বা বানিয়েছে?
সভাপতির কাটা কাঁধ থেকে দরদরিয়ে রক্তপাত হয়ে চলেছে। সে হাঁফাতে হাঁফাতে জড়িয়ে মড়িয়ে যা বলল তা থেকে ঙিনের পুরো ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হল না।
মানুষ যে আসলে অত্যন্ত লোভী শয়তান সে বিষয়ে তার ধারণা আরো পোক্ত হল।
এই গ্রামে কয়মাস আগে পঁয়ত্রিশ একদল ভ্রাম্যমাণ পথিক আসে। তারা টাকা পয়সা দিয়ে সভাপতির বাড়িতে আশ্রয় নেয় রাতটুকু থাকার জন্য৷ তারা জানত না এ গ্রামের লোকেদের লুকোন ব্যবসাটা কিসের।
সে রাতেই বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে সব লোকগুলিকে খুন করে সভাপতি সহ গ্রামের লোকেরা। পথিকদলের সঙ্গে ছিল প্রচুর সোনা দানা, ধন রত্ন। অত মূল্যবান জিনিস নিরাপদে লুকিয়ে রাখতে সভাপতি একটা জোঁকা বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পুকুর খোঁড়া শুরু হয়। পাশে মন্দির। মন্দিরের নিচে একটি গোপন ঘর। পথিক দলের মধ্যে একটা পনেরো বছরের ছেলে ছিল। তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল৷ পুকুর খোঁড়া শেষ হলে ওই মন্দিরের নীচে গুপ্তঘরে ছেলেটাকে মন্ত্র পড়িয়ে পুজো করে সোনাদানা ধনরত্নসহ রেখে আসা হয়।
তারপর সেই ঘরের দরজা এঁটে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরপর ওই ধনরত্নে অজানা কেউ হাত দিলেই জোঁকার নজর পড়ত তার ওপর।
সে ওই ধনরত্ন পেলেও তা ভোগ করতে পারত না৷
তবে মন্ত্রে যদি গোলযোগ হয় তাহলে জোঁকা যারা তাকে মন্ত্র পড়ায় তাদেরকেই এক এক করে মারে। কাউকে ছাড়ে না।
হড্ডর গ্রামে ঠিক তাই হয়েছে।
এসব বলে সভাপতি কাতরাতে কাতরাতে ঙিনের পায়ে পড়ে গেল। বলল - আমাদের বাঁচাও বিন্থট। তুমি যা চাও তাই দেব আমরা। মন্দিরের সব ধনরত্ন তোমার। শুধু আমাদের প্রাণটা বাঁচাও৷
ঙিন বলল - ওই সম্পদ এখন অভিশপ্ত। জোঁকার সাথে লড়ার ক্ষমতা একজন বিন্থটের নেই। আর তোমাদের মতো মানুষকে বাঁচানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই। আমার মনে হয়না গুরুজী এসব জানলে আমাকে তোমাদের রক্ষা করতে পাঠাতেন। জয় অঘোরী।
সব রকম পিশাচ আর রাক্ষসের মধ্যে সব থেকে নিষ্ঠুরতম হচ্ছে মানুষ৷ পিশাচরা নিজেদের খুন করে না। একমাত্র মানুষরাই নিজেদের একজনকে খুন করে একটা অভিশপ্ত, অতৃপ্ত জোঁকা তৈরী করতে পারে। আর সেই মানুষদের বাঁচানোটাই বিন্থটদের ভবিতব্য।
ঙিন আশ্রমের পথ ধরল। বিন্থটেরা নিশ্বাস নেয় না। নইলে এসময় ঙিন নিশ্চয়ই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলত।