অবন্তী পাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অবন্তী পাল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

আহ্বান - অবন্তী পাল


আহ্বান
অবন্তী পাল
 

 

 

...১...

 
১০৫ ফুট উচ্চতায়, নেলসন মনুমেন্টের ছাদে দাঁড়িয়ে নিজেকে বেশ হাল্কা ফুরফুরে পালকের মতন নির্ভার লাগছিল। ওপরে অন্তহীন নীল আকাশ, মাঝে শোঁ-শোঁ করে বয়ে চলেছে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া আর অনেক অনেক নীচে আপন খেয়ালে রাজপথ দিয়ে এঁকে-বেঁকে এগিয়ে চলেছে স্বপ্নিল নগর এডিনবরা, স্কটল্যান্ডের রাজধানী।

আমি আর আমার দুই বান্ধবী রুশ্মি আর তনুজা সপ্তাহান্তে ক্লান্তি ঘোচাতে রবিবারের দুপুরে এসেছি ক্যালটন হিলসে। পায়ে হেঁটে প্রিন্সেস স্ট্রিট থেকে কিছুটা দূরত্বে অবস্থিত এই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট একটা বিশিষ্ট পর্যটনকেন্দ্র। এই উচ্চতা থেকে দেখা যায় ন্যাশনাল মনুমেন্ট, এডিনবরা'র ইতিহাস জুড়ে যার উপস্থিতি প্রগাঢ়। ওই দূরে দেখা যায় আর্থার'সি সিট – একটা চ্যাপ্টানো পাথুরে টিলার মতন যেটা আসনের আকার নিয়েছে। কয়েকশত ফুট নীচে সন্ত অ্যান্ড্রু'স হাউস, হলিরুড প্যালেস, স্কটিশ পার্লামেন্ট বিল্ডিং প্রমুখ সব ঐতিহাসিক স্থাপত্য। আর খুব সতর্কভাবে যদি দেখা যায়, তাহলে চোখে পড়ে কয়েক শতাব্দীব্যাপী স্তরে-স্তরে গড়ে ওঠা এই প্রাচীন শহর।

এককালে এই সমুদ্রবাণিজ্যকেন্দ্রিক দেশ ইংরেজদের হাতে যেভাবে নিষ্পেষিত হয়েছে, তার হাহাকার আজও বুঝি চাপা আর্তনাদ হয়ে বেরিয়ে আসে তার ৭টা স্তর ভেদ করে। এমনই ঠান্ডা হাওয়ায় তারা ঘুরে ফিরে বেড়ায় অন্ধকার অলি-গলি, ভগ্ন স্থাপত্য আর হাজারো নাগরিকদের মনে। এতো ওপরে, সেই হাওয়ার ফিসফিসানি বুঝি বার্তাবাহী হয়ে বয়ে আনে কতদূরের অশ্রুত সংলাপ , বলে যেতে চায় চাপা পড়ে যাওয়া শহরের গুপ্ত কথা। ভাবনার ছেদ ঘটল তনুজা’র ডাকে

‘মোহিনী, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে, চল এবার নীচে নামি’

সায় দিলো রুশ্মিও
‘হ্যাঁ, আকাশ কালো হয়ে আসছে, নির্ঘাত ঝড় আসবে। তাছাড়া দুর্গ বন্ধ করে দেওয়ার সময়ও হয়েছে’

‘তোরা না কি যে করিস’ একটু বিরক্তির স্বরে আপত্তি জানালাম আমি, ‘এইমাত্র আসলাম। সারা সপ্তাহের ক্লান্তি যে একটু হাওয়ায় ধুয়ে নেবো, সেই অবকাশটুকুও দিবি না’

‘অনেক্ষন এসেছি আমরা! তাকিয়ে দেখ আর ২-৩জন লোক বাদে কেউই নেই’ ধমকের সুর তনুজার।

'তোরা নাম, আসছি আমি' তক্ষুনি নামতে নারাজ আমি।

ওরা নামতে শুরু করলে, মনুমেন্টের দিকে ঘুরে তাকালাম। ১৪৩টা সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসেছি ১৮০৭ সালের নির্মিত এই দুর্গে, সমুদ্রতল থেকে ৫৬১ ফুট উঁচুতে। ছাদের মাথায় দেখা যায় ১৫০ বছরের পুরোনো টাইম-বল, যেটা সময়ের জানান দিত সামনের নর্থ-সি দিয়ে নৌযাত্রারত ‘পোর্ট অফ লেইথ’ আর ‘ফার্থ অফ ফোর্থ’-এর জাহাজদের। এডিনবরা রাজপ্রাসাদের 'ওয়ান ও' ক্লক' ফায়ারিং-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, এই টাইম-বল ওঠানো হয় প্রতিদিন দুপুর ১টায়। ঐতিহাসিক এই কালো গোলকটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখলাম সূর্যের তেজ স্তিমিত হয়ে আসছে। সমগ্র আকাশ ছেয়ে গেছে কালো মেঘে। প্রিন্সেস স্ট্রিটের ওপরে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে থাকা স্কট মনুমেন্ট একটা কালো অশনী ছায়া ফেলেছে রাজপথে। নাহ, আর থাকা যাবে না। হাওয়ার বেগ অনেক গুন বেড়ে গেছে, কয়েক পারদ নীচে নেমেছে তাপমাত্রা। বরফশীতল হাওয়া আমাকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে সংকেত দিতে লাগলো

‘মোহিনী, ফিরে যাও, ফিরে যাও…’

এতক্ষনে খেয়াল হলো, ছাদে আমি সম্পূর্ণ একা দাঁড়িয়ে আছি।

...২...

কয়েকটা সিঁড়ি নামতে না নামতেই শুনতে পেলাম, প্রবল ঝড় এসে গেছে বাইরে। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে নামার চেষ্টা করলাম। এমনিতেই দেওয়ালজোড়া অবরুদ্ধ অন্ধকার এই সর্পিল সিঁড়িতে, তায় আবার জানলা দিয়ে যেটুকু রোদ্দুর আসে, সেটাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এখন। 

কতগুলো সিঁড়ি নেমেছিলাম জানিনা, এমন সময় দেখি সামনের বাঁকের অবতরণস্থলে কেউ একজন দেওয়ালমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার পায়ের আওয়াজে পিছন ফিরে আমার মুখোমুখি হলেন একজন অতিবৃদ্ধা, মলীন জামাকাপড় পরিহিতা ভদ্রমহিলা।

স্মিত হেসে পাশ কাটিয়ে নামতে যাবো, এমন সময় ভদ্রমহিলা এমনভাবে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন যে দুটো সিঁড়ি পিছিয়ে উঠে যেতে বাধ্য হলাম।

তারপর অতন্ত্য ক্ষীণ অথচ অনুনয়ের কণ্ঠে বললেন
'ইয়ং লেডি, আমার নাত্নিকে কি ছাদে দেখেছো?'

'না ম্যাডাম, আমি তো আর কাউকেই ছাদে দেখিনি, সকলেই নেমে গেছে' আমি নরম সুরে বললাম

'সেই কখন ছাদে উঠেছে ডেলা, এখনও নামছে না দেখে আমি উঠতে বাধ্য হলাম'

'কিন্তু ওপরে তো আর কেউই নেই, আমি দেখেই নামছি। তাছাড়া ভীষণ ঝড় উঠেছে বাইরে, কারুর ওখানে থাকা সম্ভবও নয়। আপনার নাত্নি নিশ্চয়ই নীচে নেমে অন্য কোথাও গেছে। চলুন নীচেই অপেক্ষা করবেন' আমি আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম।

'ওহ নো নো' মুখের সামনে হাত নেড়ে উনি প্রবল আপত্তি জানালেন। এবার চমকে উঠলাম আমি। ভদ্রমহিলার হাতগুলো এই অন্ধকারেও দেখে মনে হয় প্রাচীন, নখগুলো ধূলিমাখা, ক্ষয়ে যাওয়া। এতো বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষকে এখানে উঠতে দেওয়া হলো কিভাবে? উনি পুনরায় বললেন
'আমি নিশ্চিত, ডেলা এখানেই আছে। আমি ওকে নামতে দেখিনি'

এক মুহূর্ত থেমে বললেন
'ইয়ং লেডি, তুমি কি আমাকে একটু সাহায্য করবে? একবার দেখে আসবে? আমার ডেলা ছাদেই আছে'

ভারী মায়া হলো ভদ্রমহিলার ওপর। হয়তো নাত্নিকে না দেখতে পেয়েই, রক্ষক-কর্মীদের চোখের আড়ালে হন্যে হয়ে ছুটে এসেছেন এখানে। আমি বললাম

'আমি দেখছি, আপনি এইখানেই অপেক্ষা করুন'

গুনে গুনে ৫৮টা সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে এলাম। ঝড় কমেছে, বৃষ্টি আসন্ন। তবুও ছাদটা একবার চক্কর কেটে দেখলাম। কেউ কোত্থাও নেই। মিনিটখানেকের মধ্যে নামতে লাগলাম, কিন্তু কয়েকটা সিঁড়ি নেমেই, থতমত খেয়ে গেলাম। বড়োজোর ১০-১২টা সিঁড়ি নেমেছি। সেই ভদ্রমহিলা দেখি ইতিমধ্যে উঠে এসেছেন এতোদূর। এতো তাড়াতাড়ি উঠলেন কিভাবে?

'পেলে? আমার ডেলা কোথায়?' ভদ্রমহিলা দুইদিকের সঙ্কীর্ণ দেওয়াল আঁকড়ে উঠছেন। 

আমি ওনাকে তাড়াতাড়ি ক্ষান্ত করার অভিপ্রায়ে বললাম
‘নো ম্যাডাম, ওপরে কেউ নেই, আপনার কিছু ভুল হচ্ছে'

'না, ওই তো গলা পাচ্ছি কাদের… তুমি শুনতে পাচ্ছ না? ওপরের দিকটা দেখেছিলে?' 

ওপরের দিকে দেখবো! সেখানে কারুর কিভাবে যাওয়া সম্ভব? বিশালাকার টাইম-বল আছে সেখানে। কিন্তু দক্ষ কর্মী ছাড়া ওখানে যাওয়া তো সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে অসম্ভব। 

কিন্তু ওনার পীড়াপীড়িতে আবার উঠতে বাধ্য হলাম। না তো উনি আমার কথা শুনছেন, না আমাকে নামতে দিচ্ছেন।

'দেখুন আমার মনে হয় নীচে নেমে নিরাপত্তাকর্মীদেরকেই জানানো ভালো' খোলা ছাদে এসে আমি এবার পরিষ্কারভাবে জানালাম।

'ওহ নো নো, ওদেরকে কক্ষনো কিছু জানবে না, ওরা যদি আমার নাত্নীকে ধরে নিয়ে যায়!'

'মানে? ধরবে কেন? ও কি কিছু করেছে?'

'আমার ডেলা নিষ্পাপ শিশু। ও কি কিছু করতে পারে? কিন্তু তুমি শোনোনি এখানকার অভিশপ্ত ইতিহাস? আমাদের সাধারণ নাগরিকদের ওপর কিভাবে ঘৃণ্য অত্যাচার করা হতো, তার ছাপ তো শহরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রকট। শোনো শোনো, ওই যে তুফানও বলছে আজ… নিয়ে যাবে, ওরা আমার ডেলা’কে নিয়ে যাবে… ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে দাও আমার চাইল্ডকে আমার কাছে' ওনার কণ্ঠস্বর ক্রমশ উগ্র হয়ে উঠলো।

ভদ্রমহিলার উদ্ভ্রান্ত চেহারা দেখে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। আর এই যুগে দাঁড়িয়ে কোন রক্তক্ষরিত অতীতের কথা বলছেন? বুঝতাম হয়ত উনি মানসিক-ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন, হয়তো ওনার অতীতে ঘটে গেছে ভয়ঙ্কর কোন ঘটনা। কিন্তু আমার ষষ্ঠ-ইন্দ্রিয় আমাকে জানান দিচ্ছিল যে এটা কোনো সাধারণ হাহাকার নয়। ছাদে উনি প্রবেশ করেননি, দাঁড়িয়ে আছেন সিঁড়ির সর্বপ্রথম ধাপে। কিন্তু সেখান থেকেও দেখা যাচ্ছে ওনার চোখ প্রায় কোটরে, দৃষ্টি বলে কিছু থাকারই কথা নয়। জামাকাপড় যেন কত প্রাচীনকালের, জরাজীর্ণ মলিন। জীবন্ত মানুষের চামড়া যে এতো কোচকানো আর ফ্যাকাশে হয়, সেটা অভাবনীয়। সর্বোপরি, এমতবস্থায় উনি তরতরিয়ে উঠে এলেন কিভাবে এতোগুলো সিঁড়ি টপকে?

কথা বলতে বলতে আমি ছাদের একেবারে ধারে চলে এসেছি। এক অজানা শিহরণে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে আর ঠিক তখনই ভদ্রমহিলা দন্ত্যহীন হাসি হেসে বললেন

‘আমার কাছে এসো, মাই ডেলা' দুই-হাত প্রসারিত আমারই দিকে!

চোখ কপালে তখন আমার। আমি বলার চেষ্টা করলাম
'আমি আপনার ডেলা নই, আমি মোহিনী। আপনার কোথাও ঘোরতর ভুল হচ্ছে' কিন্তু মুখে এসব বললেও, এক-পাও নড়ার ক্ষমতা ছিলো না আমার। ওই অন্ধ কোটরের চাহনি মনে হলো আমাকে ঝিমিয়ে দিচ্ছে।

আবারও ভদ্রমহিলা বললেন ‘সেই কবে থেকে আমার ডেলাকে খুঁজে চলেছি। এইভাবে কেউ পালিয়ে বেড়ায়? এই টাওয়ারে ওর আসার জন্য আমি রোজ অপেক্ষা করে থাকি। আজ যখন অবশেষে তাকে পেয়েছি, তখন কার ভরসায় ওকে ফেলে রেখে দেব এই ভয়ঙ্কর শহরে? এসো মাই চাইল্ড, আমরা ফিরে যাই আমাদের স্বস্থানে’

এতো ওপর থেকে চিৎকার করলে তো কেউ শুনতেও পাবে না। এতক্ষনে কি দূর্গের ফটক তালাবন্ধ হয়ে গেছে? এই ১০৫ ফুট ওপরে কি আজ তাহলে আমার অযাচিত সমাপ্তি ঘটবে?

তখনও উনি স্থির আমার দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে বলে চলেছেন

‘কাম টু মি ডেলা' প্রায় অবক্ষয় হয়ে আসা দুই বাহু আমার দিকে প্রসারিত।

হঠাৎ চমকে ভাঙার মতন, হুড়মুড়িয়ে ছাদে প্রবেশ করলো রুশ্মি আর তনুজা।

'কিরে, পাগল হয়েছিস? এতক্ষণ কি করছিস ছাদে? জানিস কখন তালাবন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা এই দুর্গের? আধা ঘন্টা হয়ে গেল তুই নামছিস না দেখে আমরা বাধ্য হয়ে অনেক বলে-কয়ে উঠে এলাম উপরে' অনবরত বলেই চলেছে ওরা

হয়তো কিছু বুঝতে পেরে রুশ্মি বললো

'এই, কি হয়েছে তোর? ঠিক আছিস তো?'

আমি কোনরকমে জিজ্ঞাসা করলাম

‘ওই বয়স্ক ভদ্রমহিলা কোথায় গেলেন?'

'কে বয়স্ক ভদ্রমহিলা? এখানে তো কেউই নেই' অবাক হলো তনুজা,

'তুই জানিস সারা দুর্গে তুই ছাড়া আর একটা মানুষ ছিলো না। এই তো আমরা উঠে এলাম সবটা' বললো রুশ্মি

'কিন্তু ওই ভদ্রমহিলার জন্যই তো আমি আটকা পড়ে গেছিলাম, উনি খুঁজছিলেন ওনার নাত্নিকে…' 

কিন্তু ওরা কেউই আমার কথা বিশ্বাস করলো না। কোনোরকমে ওই সিঁড়িগুলো অতিক্রান্ত করে নেমে এসেছিলাম। মনে হচ্ছিলো সর্বক্ষন কেউ যেন আমার ঘাড়ের কাছে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলেছে।

সেই রাতে তনুজা আমাকে বোঝালো
'শোন মোহিনী, এই শহরের আনাচে-কানাচে অনেক অন্ধকার রহস্য লুকিয়ে আছে। সেগুলো উন্মোচন করার অথবা তাদের হদিশ পাওয়ার সদিচ্ছা যদি তোর না থেকে থাকে, তাহলে এরকম ডাককে উপেক্ষা করাই শ্রেয়'

কিন্তু রুশ্মি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো
'যত্তসব আবোলতাবোল কথাবার্তা। আজ যা ঘটেছে সব তোর মনের ভ্রম। কাজের এতো চাপ, সেই সকালে বেরিয়ে রোজ রাত করে বাড়ি ফিরিস। বিশ্রাম হচ্ছেনা তোর মোটেই, তাই এসব ভুলভাল হ্যালুসিনেশন হয়েছে'

‘আজ তোরা ঠিক সময়ে না এসে পড়লে যে কি হতো, আমি ভাবতেই পারছিনা' এটুকুই বলতে পারলাম আমি। ঘটনাটা আমাকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে।


...৩...


আজ সপ্তাহের প্রথম দিন হওয়ায়, কাজের চাপ ভালোই ছিলো। কাজের মধ্যে গতকালের ঘটনা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম। ব্যাগপত্র গুটিয়ে যখন বেরোই, তখন রাত ১০:০৩ বাজে। আজ একটু বেশিই দেরী হয়ে গেছে। অফিস প্রায় ফাঁকা।

বেরিয়ে বাস-স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছি বাসের অপেক্ষায়। ১০:১৫য় আজকের মতন এই রুটের শেষ বাস আছে। সারাদিন ধরে টিপটিপ বৃষ্টি হয়ে চলেছে। কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় মনে হচ্ছে বরফ নখের থাবা বসাচ্ছে। এতো রাত্রে আর কোনো প্যাসেঞ্জের নেই, থাকার কথাও নয়। এটা পুরোপুরি অফিসপাড়া। একেকটা অফিস অন্যের থেকে অনেকটা দূরে। কাছাকাছি কোনো লোকালয় অথবা দোকানপাট নেই।

রাস্তার উল্টোদিকের বাস-স্ট্যান্ডে, টিমটিমে আলোটা আচমকা কাঁপতে লাগলো। ঠিক তার তলায় নজরে পড়লো কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে, হাত বাড়িয়ে ডাকছে আমাকে। কেউ কি, ইনি তো গতকালের সেই বয়স্কা ভদ্রমহিলা!

উনি কি আমাকে নিতে এসেছেন তাহলে, আবারও?

........................................ 
অলঙ্করণ :-   রিচা দাস