অন্তর্দহন
রাখী আঢ্য
ঠিক দশদিন পূর্ণ হবে আগামী কাল।দশদিন না দশবছর... নাকি অনন্ত সময়!!! সুবীরকে আজ কতদিন ভালো করে কাছে পায়নি। নীপা তার স্বপ্নের মাধ্যমে সুবীরকে কাছে পাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, কিন্তু ঘুমটা ভেঙে গেল প্রবল তৃষ্ণায়। চোখটা খুলতেই তীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ বুজে ফেললো। তার ঘরে ইদানিং আলো নেভানো হয়না। একশো পাওয়ারের বাল্ব সবসময় ঘরে জ্বালানোই থাকে। বেডসাইড টেবিল থেকে জলের জাগটা নিয়ে জল ঢাললো গ্লাসে। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো। একটু আগেই যে তৃষ্ণার জন্য ঘুম ভেঙে গেছিল সেটা বোধহয় কিছু সময়ের জন্য বিস্মৃত হয়ে গেলো।
আজ প্রায় দশদিন সে এই দুইকামরার ফ্ল্যাটে একা। গত সপ্তাহে সুবীরের এক্সিডেন্টের পর তার পৃথিবীটা যেন হঠাৎ বদলে গেছে। জেলা হাসপাতালে ভর্তি আছে সুবীর। প্রথমদিন তো হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকতে গিয়েই নাকে আচমকা ধাক্কা মারে একটা তীব্র গন্ধ। কিসের গন্ধ তা বোঝানো যাবে না, কিন্তু সেই গন্ধে যেন পেটের ভিতরটা গুলিয়ে উঠলো। এমন নয় যে সে কোনদিন হাসপাতলে আসেনি কিন্তু সেদিন কেন যে তার অসহ্য লাগছিল সেটা সে নিজেও জানেনা। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে খাবলা ওঠা মেঝে,ভাঙা চায়ের ভাঁড়,রক্তমাখা গজতুলো, শুকিয়ে যাওয়া বমির দাগ পেরিয়ে যখন ঢুকলো সুবীরের কেবিনে তখন সে রীতিমতো হাঁফাচ্ছে। মনে হলো যেন অনেকটা রাস্তা সে পার করে এলো।
কেবিনে সুবীর ছাড়া আরো একজন রুগী ছিলেন। ডাক্তার দাঁড়িয়ে ছিলেন সুবীরের বেডের পাশেই। নীপাকে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। ঈষৎ কাঁপা গলায় নীপা তার পরিচয় দিলো। ডাক্তার রোগীর মুদ্রিত চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "এখনও সেন্স আসেনি রোগীর। এভাবে হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জন্য মাথায় চোটটা ভালোই লেগেছে। সেন্স আসতে সময় লাগবে। কিন্তু উনি হুইল চেয়ার থেকে পড়লেন কি করে?"
নীপা শুকনো ঠোঁট টা জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বললো, " আমি জানি না,সেইসময় ছিলাম না আমি বাড়িতে।"
"আর কেউ নেই বাড়িতে?"
"নাহ..." এ নিয়ে আর কথা যেন না বাড়ে তাই সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলো নীপা।
ডাক্তারবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন," এখন আর আপনার এখানে থেকে লাভ নেই। আপনি কাল আসুন।আশা করছি উনি দু তিনদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবেন।" নীপা মাথা নেড়ে ফিরে এসেছিল নিজের ফ্ল্যাটে। তারপরে আর একবার গেছে হাসপাতালে। আর যায়নি,বলা বাহুল্য যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
ডাক্তারবাবু সেদিন নীপাকে সুবীরের স্ত্রী ভেবেছিলেন। নীপাও আর তাঁর এই ভুলটা সংশোধন করেনি। সুবীর আর তার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবাহ হয়নি, কিন্তু সে মনে মনে সুবীরের কাছে কবেই নিজেকে সমর্পণ করেছে। যেদিন গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে সুবীর তার পা হারালো সেদিনই সে ঠিক করেছিল সুবীরকে ছেড়ে সে কোনদিন যাবে না। এই অসহায় অবস্থায় আরো বেশি করে প্রয়োজন যে তাকে। কিন্তু সুবীরের এক অদ্ভুত স্বভাবের জন্য বড় বিরক্ত বোধ করতো নীপা। সন্ধ্যা হলেই পুরো ফ্ল্যাটের আলো জ্বালিয়ে দিতো। কোন লাইট অফ হতে দেবে না। এমনকি সুবীর এইকারনে তার সামর্থের বাইরে গিয়ে একটা ইনভার্টার কিনে নিয়েছিল। জিজ্ঞেস করলে বলতো,তার বড় ভয় অন্ধকারে। এছাড়াও তার আরো একটাতে ভয়... না না ভয় ঠিক নয়, বিরক্তি আর ঘৃণা ছিল। সেটা হলো তার উপস্থিতি। হ্যাঁ,নীপার উপস্হিতি কিছুতেই সে মানতে পারতো না। সুবীর যে তার ভালোবাসা তা বোঝার চেষ্টা ই করলো না কোনদিন। বাধ্য হয়ে তো তাকে...
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
নীপার এইবার কন্ঠনালী শুকিয়ে আসার অনুভূতিটা আবার ফিরে এলো। হাতে রাখা জলের গ্লাসটা মুখের কাছে তুলে ধরতেই ঘরের আলোটা দপদপ করে উঠলো। তারপরেই হঠাৎ নিভে গেলো ঘরের লাইটটা। অন্ধকারে ঢেকে গেলো চারপাশটা। যেন নিকষ কালো একটা সমুদ্র। নীপা ক্রমশঃ ডুবতে থাকে সেই সমুদ্রে। পাগলের মতো হাতড়াতে থাকে ঢেউ কাটিয়ে উঠে একটা আশ্রয়ের সন্ধানে। কিন্তু না,তার দমবন্ধ হয়ে আসতে থাকে। চিৎকার করে ওঠে,তবু তার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। আচমকা ফিরে আসে আলোটা যেমন চলে গিয়েছিল। নীপার শ্বাস প্রশ্বাস তখনও স্বাভাবিক হয় নি। মুখে চোখে জল দেবার জন্য বাথরুমের বেসিনের আয়নার সামনে দাঁড়াতেই সে চমকে গেলো। এ কাকে দেখছে!!! এই কয়দিনে তার কি অবস্থা হয়েছে!!! চোখ দুটো যেন গভীর গর্তে ঢুকে গেছে। তার নিচে মোটা কালির পোঁচ। কয়েকদিন ধরে তার অন্ধকারকে এত ভয় কেন করছে!!! এই ভয় তো সুবীরের ছিলো। সেটা নিয়ে নীপা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। সব সহ্য করেছে শুধু মাত্র ভালোবাসার জন্য, প্রিয় মানুষের চোখে যাতে একটিবার ভালোবাসা দেখতে পায়।
যত দিন যেতে লাগল ততোই সুবীরের ঘৃণা বাড়তে লাগলো। একদিন নীপাকে সুবীর বলে দিল," তুমি এখান থেকে চলে যাও। তোমার এখানে থাকার আর কোন দরকার নেই। দয়া করে আর কোন দিন এখানে এসো না।"
নীপা সুবীরের এই অপমান নিতে পারলো না। সে ঠিক করলো সুবীরের যাতে তাকে সারাজীবন দরকার লাগে সেই ব্যবস্থাই করবে।
হঠাৎ একদিন এক গাড়ি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলো। এই দুর্ঘটনায় সুবীরের দুটো পা চিরকালের জন্য অকেজো হয়ে গেল। তখন নীপা তাকে বলল," তোমাকে ছেড়ে আমি কি করে যাব? এখন তো তোমার আমাকে প্রয়োজন।" সুবীর মুখে কিছু বলেনি। তার নীরবতাকে সম্মতির লক্ষণ মেনে নিয়েছিল নীপা। কিন্তু যত দিন যেতে লাগল নীপা বুঝতে পারলাম সুবীর তার উপস্থিতিকে মেনে নিয়েছে,তাকে নয়।
সেদিন সন্ধ্যায় অঝোর ঝরে বৃষ্টি পড়ছিল। প্রকৃতির সিক্ততা তার মনে প্রিয় পুরুষকে কাছে পাওয়ার দুর্বার চাহিদার জন্ম হলো। সুবীরের তৈরি করা এক আলোকবর্ষ দূরত্ব কে সে নিমিষে মিটিয়ে নিতে চাইল, ছুঁতে চাইলে তাকে। কিন্তু এর ফল হলো তো বিপরীত! অভিব্যক্তিহীন ভাষাহীন একটা শূন্য চাহনি, নিরুত্তাপ গলায় সুবীর তাকে বলল," আমার কিন্তু তোমাকে কোন প্রয়োজন নেই।" কিন্তু নীপা সেসব শোনার মতো অবস্থায় ছিলো না। সুবীরকে নিজের কাছে টানার চেষ্টা করতেই এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে দিতে চাইলো।আহত, অপমানিত নীপা তীব্র কান্নায় উথালপাথাল হয়ে সুবীরের শার্টের বোতামে মুখ গুঁজে বলছি লাগলো, "কেন তুমি আমাকে এত ঘৃণা করো? আমি তো তোমায় ভালোবাসি।"
সুবীর চিৎকার করে বললো,"কিন্তু আমি তো তোমায় ভালোবাসি না।আর তুমি আমার ভালোবাসার মানুষকে আমার পাশ থেকে সরিয়ে দিয়েছো সেটা কি আমি জানি না ভেবেছো? আর আমার এই দুর্ঘটনা কেন হয়েছে সেটাও আমি জানি।"
নীপার চোখটা রাগে ধক করে জ্বলে উঠলো কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে হিসহিস স্বরে বলল," সব যখন জানো তাহলে তো ভালোই। তোমার দিকে যে আসবে তাকেই আমি সরিয়ে দেবো। আমাকে ভালোবাসো তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।"
গভীর বিতৃষ্ণায় সুবীর তার দিকে তাকিয়ে বলল," তুমি আমাকে কোনদিনই পাবে না।" এই বঞ্চনা, তিরস্কার নীপা আর পারলো না সহ্য করতে। তাই তো সেদিন সিঁড়ি থেকে দিলো একধাক্কা। তারপরেও যখন দেখলো সুবীর বেঁচে উঠতে পারে,তখন সে তার শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলো।
সুবীর কে দেখে আসার ঠিক একদিন পরেই সে হাসপাতালে গেল।তার কেবিনের আর এক রোগী আগেরদিনই বাড়ি চলে গেছিল সে খবর সে পেয়েছিল। কেবিনে ঢুকেই সে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখলো সুবীরের চোখ মুদ্রিত। ঘুমাচ্ছে নাকি??? বেডের কাছে গিয়ে সুবীরের মাথায় হাত রাখলো। চোখ খুলে তাকে দেখেই প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে গেলো। বোধহয় মনে পড়ে গেছে দুদিন আগের ঘটনা। নীতু ধীর পায়ে হেঁটে সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে প্রথমে সমস্ত আলোগুলো বন্ধ করে দিল,তারপর আস্তে করে ডাক দিলো, "সুবীর..." । সুবীরকে দেখে মনে হচ্ছিল তাকে বোধহয় জলের নিচে কেউ চেপে ধরেছে। শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার মতন ছটফট করছিল। নীপা এগিয়ে গিয়ে তার কাজটা একটু সহজ করে দিল। মুখের ওপরে চেপে ধরল বালিশটা। কিছুক্ষণ ছটফট করার পর দেহটা স্থির হয়ে গেল সুবীরের। কষ্ট হয়েছিল তার, খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু সে কি করত?!! সুবীর যে তাকে মেনে নিতে পারছে না... এই অপমানের জ্বালা সে যে আর সহ্য করতে পারছিল না। এই জ্বালা সহ্য করার থেকে সুবীরকে দূরে সরিয়ে দেওয়া ঢের ভালো। তার যদি না হয় তো,আর কারো হবে না।
যেদিন থেকে সুবীর হাসপাতালে সেদিন থেকেই অন্ধকারের ভয়টা তার মধ্যে যেন মারণরোগ ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়লো!!! সে কোন অন্ধকারকে সহ্য করতে পারছে না। তাহলে কি সেও...!!! ভাবতে গিয়েই তার বুকের রক্ত ঠান্ডা হয়ে আসে। মুখে চোখে জল দিয়ে ফিরে যায় বিছানায়। চোখ বন্ধ করে চেষ্টা করে ঘুমানোর। চোখ বন্ধ হতেই ফিরে আসে আবার সেই নিকষ কালো অন্ধকার। যেখানে দেখতে পায় সুবীরের সেই যন্ত্রণাকাতর মুখ। হৃৎস্পন্দন অগোছালো হয়ে আসে তার। চোখ খুলে উঠে বসে পড়ে। আজও তার ঘুম হবে না। আর কতদিন এভাবে চলবে? সন্ধ্যা বেলায় সারাক্ষণ লাইট জ্বলে,দিনের বেলা লাইট বন্ধ থাকলেও চোখ বন্ধ করতে পারে না সে। চোখ বন্ধ করলেই ফিরে আসে। সেই অন্ধকার!!!
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
মানুষ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলেও এই পৃথিবী কিন্তু চুপ করে বসে থাকার নয় । সে তার নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরে চলেছে নিজের কক্ষপথে। যার জন্য দিন থেকে রাত আর রাত থেকে দিন হচ্ছে। তারপর মাস, বছর গড়িয়ে যাচ্ছে। সময় আর মানুষের জীবন কখনো থেমে থাকে না। নীপার জীবনও থেমে থাকেনি। সে বুঝেছিল তার পক্ষে ওই বাড়িতে থাকা অসম্ভব। সে ওই ফ্ল্যাট বন্ধ করে ফিরে আসে নিজের বাড়িতে, ভেবেছিলো সুবীরের মৃত্যু তার মনে প্রভাব ফেলেছে, তাই তার কদিন সুবীরের স্মৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রয়োজন। নিজের বাড়িতে ফিরে এসে নীপা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। ভাবল এবার বোধহয় তার সমস্ত বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু সে এইজীবনে যা কর্ম করেছে তার ফল তো তাকে ভোগ করতেই হবে। মাথার মধ্যে আজকাল খুব যন্ত্রণা হয় নীপার। একা থাকতে ভয় করে। বাথরুমে গিয়ে যখন আয়নার সামনে দাঁড়ায় তখন নিজের প্রতিবিম্বের উপর থুতু ফেলতে ইচ্ছে করে। একটা মানুষ কে পাওয়ার জন্য সে এত কুৎসিত জঘন্য কাজ করতে পারলো!! বিবেকের দহন এত বাড়তে লাগলো যে সর্বক্ষণ জালে পরা জন্তুর মত ছটফট করতে লাগলো।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
বিমলেন্দু পাল... এই শহরের নামকরা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। সেদিন সকালে চায়ের সাথে সাথে খবরের কাগজটা হাতে তুলে নিতেই চোখে পড়ে খবরটা।যদিও এককোণে বেরিয়েছে খবরটা। কিন্তু মহিলার মুখ দেখেই চিনতে পারেন তাঁর রোগীকে।কাগজে নাম তো লেখা রয়েছে নীপা রায়। হ্যাঁ মনে পড়েছে,এই নামই ততো বলেছিল সেদিন। সচরাচর তিনি কিছু ভোলেন না,আর বিশেষ করে তাঁর রোগীদের তো নয়ই। রোগীদের নাম বিস্মৃত হলেও মুখ তিনি ভোলেন না। কিন্তু মৃত্যু তো লিখেছে হার্ট অ্যাটাকে। তবে অস্বাভাবিক এটাই যে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে পাকস্থলী তে শুধু পাওয়া গেছে প্রচুর জল, আর কিছু নয়। ঠিক যেভাবে জলে ডুবে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্ত করতে নেমে আশ্চর্য হয়ে গেছে যে বন্ধ ঘরের মধ্যে জল এলো কোথা থেকে, যেখানে সারা বাড়ি শুকনো খটখটে।
কয়েকদিন আগে তাঁর চেম্বারে এসেছিলো নীপাদেবী । তার উস্কোখুস্কো চুল, চোখদুটো কোটরে বসে যাওয়া মুখ নিয়ে কুন্ঠিত হয়ে বসে ছিলো। মুখে-চোখে ফুটে উঠেছিল বহুদিনের বিবেক দংশনের চিহ্ন। তারপর ধীরে ধীরে নিজের সমস্ত কথা যখন বলে তখন তিনি সবটা শুনে বুঝেছিলেন এ যে অপরাধ করেছে তার থেকে মুক্তি নাই। শেষ যেদিন এলো সেদিন তার অবস্থা আরো খারাপ ছিলো। চেম্বারে ঢুকেই সে বললো," ডাক্তারবাবু আমি ঘুমাতে চাই, একটু ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারেন। আমি যে চোখ বন্ধ করতেই পারছি না। মনে হচ্ছে ডুবে যাচ্ছি... অতল সাগরে... নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি। আমাকে একটু সাহায্য করুন... প্লিজ।" ডাক্তার বিমলেন্দু সাহায্য করেছিলেন নীতুকে তার ভয় থেকে বেরোতে... তার পাপের ভার কম করতে। সেদিন তাকে লিখে দিয়েছিলেন ঘুমের ওষুধের নাম... যা খেলে তার দুচোখে নেমে আসবে গভীর ঘুম আর নিকষ কালো অন্ধকার। বন্ধু পুত্র সুবীরের মৃত্যুর খবর অনেক পরে পেয়েছিলেন তিনি। স্বাভাবিক মৃত্যু যে হয়নি তা তিনি অনুমান করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অনুমান সঠিক কিনা তা জানার মতো কোন উপায় ছিল না। স্বয়ং ঈশ্বর বোধহয় সেই সুযোগ করে দিলেন নীপাকে তার চেম্বারে পাঠিয়ে। সুবীরকে তিনি পুত্রবৎ স্নেহ করতেন। সেইজন্য বোধহয় সুবীর তাকে মরে গিয়েও রক্ষা করল। নীপার শরীরে তার দেওয়া ট্যাবলেটের কোন চিহ্ন ই নেই। শুধু জল!!!আজ বড় হালকা লাগছে। সুবীরের সাথে তিনিও শান্তি পেয়েছেন। একটু মুচকি হেসে খবরের কাগজ টি বন্ধ করে দিলেন।
.................................
অলঙ্করণ :- সহিষ্ণু কুড়ি