আবার বছর কুড়ি পরে
ঊর্মিলা সেন
এ বছর ৯/১১ হবে কুড়ি বছর পূর্ত্তি। তার ঠিক আগেই জো বাইডেন সরকার আফগানিস্তান থেকে সেনা সরাতে শুরু করে - প্রত্যাহার পর্ব শুরু হয় এ বছরের এপ্রিল মাস থেকে। নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ৩১শে অগস্টের একদিন আগেই ৩০শে অগস্ট শেষ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আশরাফ ঘানি সরকারের পতন হয়, তালিবানরা পঞ্জশির বাদে প্রায় গোটা আফগানিস্তান দখল করে নেয়। আফগানিস্তান আবার কুড়ি বছর অতীতে ফিরে যায়।
তালিবানরা অবশ্য মুখে বলছেন তারা নিজেদের পাল্টিয়েছেন -কুড়ি বছর আগের সেই বীভৎসতা আফগানিস্তান আর প্রত্যক্ষ করবে না। এমন কি তারা এও বলছেন যে যারা আশরাফ ঘানি সরকারের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন , তাদের প্রতিও নব্য তালিবানদের কোন বিদ্বেষ নেই। কিন্তু কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা বলছে এ শুধু কথার কথা। ভারত তথা বিশ্বের আতঙ্ক এই যে তাহলে কি আফগানিস্তান আবার আস্তে আস্তে দুষ্কৃতীদের চারণভূমি হয়ে উঠবে ?কেননা পাকিস্তানের সম্পূর্ণ মদত রয়েছে তালিবানদের উত্থান এবং অপাশবিক আচরণে। পাকিস্তান প্রধান মন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন যে আফগান জনগণের দীর্ঘ দাসত্বের অবসান হয়েছে। বস্তুতপক্ষে প্রতিটি সেনাদল যেখানে একটি দেশের সাথে যুক্ত থাকে,পাক সেনা সেখানে দুটি দেশের সাথে যুক্ত। দখল করা সহজ ,কিন্তু দেশ চালনা বা শাসন করা অনেক কঠিন কাজ। গোটা বিশ্ব আজ তাকিয়ে আছে আফগানিস্তানের তালিবান শাসনের প্রকৃতির দিকে -আগের বার পাঁচ বছর যখন ওরা দেশ শাসন করেছিলেন ,তারই কি পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে আবার ? মুখে তালিবান নেতারা বলছেন মধ্যযুগীয় বর্বরতা ওঁরা আর ফিরিয়ে আনবেন না। বর্তমান তালিবান সরকার নারী অধিকার ,শিক্ষা এবং চাকরী নিয়ে ওয়াকিবহাল। প্রশ্ন হচ্ছে অর্থ কোথা থেকে আসবে ?মাদক দ্রব্য বিক্রী করে দেশ চালানো যায় না। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য বিশ্বের পোস্ত উৎপাদনের ৯০% তৈরী হয় আফগানিস্তানে। এই কারণে অর্থের জন্য তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
ভারতীয় নেতারা তালিবানদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে বা কেমন রাখা উচিৎ তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। যদিও তালিবান নেতা আনাস হুক্কানি বলেই দিয়েছেন তারা কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে নাক গলাবেন না।
আবার যেহেতু ভারত আগামী দু বছর U N Sanction Committee র সদস্য থাকবে,তাই আর্থিক সাহায্য আফগানিস্তান কতটা পাবে তার অনেকটাই ঠিক করবে ভারত। তাই তালিবানরাও ভারতকে চটাতে চাইছেন না।
ভারতের সর্ব বৃহৎ আশঙ্কা হল আফগানিস্তানের মাটি যদি কোনও ভাবে ভারত বিরোধী চক্রান্তের উৎস ভূমি হয়ে যায়- কেননা দুষ্কৃতীদের দল আল কায়দার সাথে তালিবানদের যে গভীর সুসম্পর্ক রয়েছে।এই আল কায়দার সঙ্গে পাকিস্তানের দুই জঙ্গি সংগঠন লস্কর - ই -তোইবা এবং জয়েশ-ই - মহম্মদের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে।
তালিব নেতা হুক্কানি অবশ্য বলেছেন ভারত অসমাপ্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি আফগানিস্তানে শেষ করুক। সেই জন্যও ভারতকে আফগানিস্তানের প্রয়োজন। আফগানিস্তান দুষ্কৃতীদের বিচরণ ক্ষেত্র যাতে না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখছে রাশিয়া, চীন এবং ইরান ও। যদিও এই তিনটি দেশ আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং তালিবানদের উদ্ভবে যারপরনাই স্বস্তি লাভ করেছে। তালিবরা ১৯৯০ এর দশকের মহিমায় ফিরে গেলে তা গোটা বিশ্বের পক্ষেই অত্যন্ত উদ্বেগজনক হবে।
পূর্ববর্তী দুই আফগান রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই এবং আশরাফ ঘানি পাকিস্তানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন। তাই ভারতের সঙ্গে তাদের মৈত্রী বন্ধন অটুট ছিল। গত দুই দশকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভারত ২২০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে।
পাকিস্তান তালিবানদের চালাচ্ছে। পাকিস্তান তালিবদের দ্বিতীয় স্বদেশ।
তালিব নেতা হুক্কানি অবশ্য বলেছেন ভারত অসমাপ্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি আফগানিস্তানে শেষ করুক। সেই জন্যও ভারতকে আফগানিস্তানের প্রয়োজন।তবে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা সাফ জানিয়ে দিয়েছে স্বাধীনতার যুদ্ধে আমেরিকাকে হারানোর পর তাদের লক্ষ্য ইয়েমেন , সোমালিয়া , প্যালেস্টাইন এবং কাশ্মীরের স্বাধীনতা অর্জন। শোনা গেছে জনৈক পাকিস্তানী সমর কর্তা দাবী করেছেন যে তালিবান যোদ্ধারা ক্রমে কাশ্মীর সীমান্ত পার হয়ে ঢুকবে। এমন কি , তালিবান বিজয়ের পর কাশ্মীর উপত্যকায় জনতার একাংশকে প্রকাশ্যে উচ্ছাস করতে দেখা গেছে। এতে নয়া দিল্লীর কপালে ভাঁজ পড়েছে সন্দেহ নেই।
ভারত সুদ্ধ সমগ্র বিশ্ব আজ অনুধাবন করার চেষ্টা করছে তালিবান ১ এবং তালিবান ২ এর মধ্যে সত্যিই কোন বৈশিষ্ট্যগত ফারাক আছে কি না - তালিবান ১ বামিয়ানে ষষ্ঠ শতাব্দীর দুটি বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করেছে,তালিবান ২ ইতিমধ্যেই গজনীর তোরণ ধ্বংস করেছে।
সুতরাং সময় বলবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল,না তালিবানরা গোটা বিশ্বের চাপে এবং প্রগতিশীল আফগানিস্তানের অধিবাসীদের ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহে নিজেদের খোলনলচে বদলে ফেললেন |
........