পাঠ প্রতিক্রিয়া লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পাঠ প্রতিক্রিয়া লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

পাঠপ্রতিক্রিয়া - চন্দ্রানী ভট্টাচার্য


পাঠপ্রতিক্রিয়া

চন্দ্রানী ভট্টাচার্য


 

  • গ্রন্থের নাম -মহাভারতের অষ্টাদশী
  • লেখক - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
  • প্রকাশক- আনন্দ পাবলিশার্স
  • মূল্য-500/

   

নারীর সৌন্দর্যের সঙ্গে যদি বিদগ্ধতার সংযোগ ঘটে তাহলে পুরুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় সেই নারী আর তাই তার ভাগ্যে জোটে গণিকার অভিধা । সামাজিক সৌজন্য এবং পারিবারিক মহিমা রক্ষার জন্য যতই লক্ষিমতী সর্বংসহ রমনীই পছন্দ হোক না পুরুষের, উপভোগ-শয্যাতে সেই লক্ষিমতীর কাছেই সে বেশ্যার ব্যাবহার আশা করে । তা নাহলে এমন সংস্কৃত শ্লোক রচিত হত না যে  - কার্যে দাসী রতৌ বেশ্যা ভোজনে জননীসমা । কথাগুলো অতিমাত্রায় সত্যি । কিন্তু প্রকাশ্যে স্বীকার করা কঠিন । বইটি পড়তে পড়তে নিজের মনের অগোচরে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছি  । উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, ঘৃতাচি এঁরা সকলেই সৃষ্টি হয়েছেন স্বর্গ রাজ ইন্দ্রের রাজত্ব রক্ষার জন্য । আসলে এঁদের মধ্যে ছিল সৌন্দর্যের সঙ্গে বৈদগ্ধতা , প্রগলভতার সঙ্গে 'ফ্লন্ট' করার ক্ষমতা, তাই তাঁদের মর্যাদাময়ী কুলবধূ বলেনি কেউ । আসলে বিদগ্ধতা তার বাইরের রূপকে পুড়িয়ে কালো করে দেয় ।অথচ মহাভারতের একজায়গায় - যেখানে দৈনন্দিন কী করলে মানুষের ভালো হয়, এইরকম প্রশ্ন করেছেন যুধিষ্ঠির সেখানে পিতামহ ভীষ্ম - দেবতা, ঋষি, রাজা, তীর্থ, নদীর মত বহুতর পুন্য নামের সঙ্গে অন্তত নয় জন অপ্সরাকে সকালে উঠেই স্মরণ করতে বলেছেন । এখানে তাঁদের বিশেষণ দেবকন্যা এবং মহাভাগ্যবতী ।পড়তে পড়তে বার বার নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি । প্রশ্ন করেছি চিরকালই কী নারী সেই সমাজের হাতের পুতুল ? তার নিজস্ব সত্তা কি এইভাবেই হারিয়ে গেছে ,কলঙ্কিত হয়েছে ? উত্তর পেলাম যখন দেখলাম বীরশ্রেষ্ঠ গান্ডিবধারী কৃষ্ণসখা অর্জুন ইন্দ্রের নৃত্য সভায় বলছেন -" সেই নৃত্যাসভার আসরে আপনার দিকে উৎফুল্ল নয়নে তাকিয়ে দেখেছি আর ভেবেছি - এই তো সেই পরম্পরাবাহিতা উর্বশী, যিনি এই প্রসিদ্ধ পৌরব-বংশের আদিজননী, আপনি আমার মাতৃসমা গুরু, যেমন আমার জননী কুন্তী, যেমন ইন্দ্রানী শচী আমার মা, তেমনিই আপনিও; অথবা তার চেয়েও অনেক বেশি- উর্বশী আমাদের বংশ-বিবর্ধিনী আদিজননী ।"

               আসলে শেষ পর্যন্ত গণিকা বা স্বর্গবেশ্যাকেও সেই আদি( ভারত ) জননীর কাছে মাথানত করতে হয়েছে ।

              মহাভারতের উর্বশী, শকুন্তলা, দেবযানী ও  শর্মিষ্ঠা, সত্যবতী , অম্বা-শিখন্ডিনী, গান্ধারী, কুন্তী, মাদ্রী, হিড়িম্বা, দ্রৌপদী, উলূপী এবং চিত্রাঙ্গদা, সুভদ্রা, রুক্মিণী, সত্যভামা, সুদেষ্ণা, লোপামুদ্রা, মাধবী, উত্তরা - এই প্রধান নারিচরিত্রগুলি নিয়েই এই গ্রন্থ । মহাভারতের বিশাল চলচিত্রে, পুরুষের বীরগাথা  ও রাজনীতির মধ্যে উঠেএসেছে নারিকুলের প্রেম, ত্যাগ, ক্রোধ ও প্রতিহিংসার বিবরণ ।

         এই গ্রন্থটি পড়তে পড়তে কখনো কখনো চলে গেছি সেই সুদূর অতীতে । অনেক ব্যাথা-বেদনা-অপমান-লাঞ্ছনা সহ্য করার পর নারী হিসাবে শেষ আত্মতৃপ্তি -আত্মশ্লাঘা লাভ হয়েছে আমারই । আমি বইটি পড়ে আত্মতৃপ্ত, সমৃদ্ধ । তাই সেই অনুরণনটুকু ভাগ করে নিলাম আপনাদের সঙ্গে


Chandrani Bhattacharyya


                               

পাঠ প্রতিক্রিয়া - সায়ন তালুকদার



পাঠ প্রতিক্রিয়া
সায়ন তালুকদার




                                               




  • বই:পুমার প্রতিশোধ
  • লেখিকা:অনন্যা দাশ
  • প্রকাশক:পত্রভারতী
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা:১৯২ পাতা
  • মূল্য:২৭৫ টাকা

    পনেরোটি রুদ্ধশ্বাস,শিহরণ জাগানো গল্পে সাজানো এ বইয়ের দু-মলাট।সবকটি গল্পই 'কিশোর ভারতী' পত্রিকার সাধারণ,বিশেষ এবং শারদীয়া সংখ্যায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল।বইয়ের শুরুতে ছোট ভূমিকা লিখেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক শ্রী ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়।
গল্পগুলিতে আমরা দেখতে পাব লেখিকাসৃষ্ট প্রিয় চরিত্রদের,। যেমন আছে অঙ্কন-ভজা,আছে রিয়া-কিম তেমনই আছে সাগরমামার সঙ্গে জোজো(পরবর্তীতে নাম পাল্টে হয়েছে জিকো)-কেকাও।
প্রথমেই গল্পের তালিকায় একবার ঝাঁকিদর্শন করা যাক।
১.রহস্যময় ভূতুড়ে বাড়ি
২.স্বীকারোক্তি
৩.গেরো যখন তিন
৪.নিষিদ্ধ লড়াই
৫.স্যাম ঘোষের আত্মহত্যা
৬.সৈকতের ছবির আড়ালে
৭.প্রত্যাবর্তন
৮.দা স্যাফায়ার ক্লাব
৯.অশরীরী আতঙ্ক
১০.বোতলবন্দী গল্প
১১.পুমার প্রতিশোধ
১২.ডাইনোসরের হাড়
১৩.গোলাপি বোতাম
১৪.দাবানল
১৫.সেই ছেলেটা

এবার গল্পগুলি সম্বন্ধে খানিক বিস্তারে আলোচনা করা যাক।

🔴"রহস্যময় ভূতুড়ে বাড়ি" গল্পে আমরা দেখতে পাই দুই বন্ধু অঙ্কন-ভজাকে।যারা ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফরেন্সিক কাইনেসিওলজি নিয়ে পড়তে এসেছে।ফ্লোরিডায় একটা কনফারেন্সে তাদের ক্লাসের এক সহপাঠীর মারফত খোঁজ মেলে এক ভূতুড়ে বাড়ির।পাঁচ বছর আগে সেখানে এক বৃদ্ধ দম্পতি মারা যান অজ্ঞাত কারণে।জানলায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় নরকঙ্কালকে।ভূত খুঁজতে গিয়ে কী আবিষ্কার করে ভজা-অঙ্কন, সেটাই রহস্য।
🔵দ্বিতীয় গল্প "স্বীকারোক্তি"-তে কেউ কিছু স্বীকার করছে।গল্পের শেষ মোচড়ে জানা যাবে কে অপরাধী?কি তার অপরাধ?গল্পটির প্লট চেনা হলেও গল্প বলার ধরণে অভিনবত্ব আছে।
🔴তিন নম্বর গল্প "গেরো যখন তিন"।গল্পের নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিন সংখ্যা নিয়ে কোনো গড়বড় আছে।জরিওয়ালা আর্কিটেক্টস্ অফিসে বিজনেস কমপ্লেক্সের ডিজাইন চুরি যায়। পাওয়া যায় তিনটি নকল ফাইল।কে করল এই চক্রান্ত?রহস্যের সমাধানের পর একটা 'ফিল গুড' পরিসমাপ্তি রয়েছে।
🔵"নিষিদ্ধ লড়াই" গল্পে দুই বোন রুবাই ও চিকলি হঠাৎই দেখে ফেলে এক নিষিদ্ধ লড়াই।তারপর তাদের পরিণাম কি হয়?কি সেই লড়াই?জানা যাবে গল্পটি পড়লে।
🔴পঞ্চম গল্প "স্যাম ঘোষের আত্মহত্যা"।এই গল্পে ভজা-অঙ্কনের বন্ধু স্যামের আকস্মিক মৃত্যুকে পুলিশ আত্মহত্যা বলে দেখে দিচ্ছিল। সেটা যে আত্মহত্যা নয়,খুন তার প্রমাণ করে দিল ওরা।কে খুন করল স্যামকে?কেনই বা? রুদ্ধশ্বাস গল্প।
🔵"সৈকতের ছবির আড়ালে" গল্পে আবির্ভাব হয় আরেক প্রিয় চরিত্রদ্বয় রিয়া-কিমের। তাদের বন্ধু শীলার বাবা সুইসাইড করেছেন।শীলার মনে হয় এটা খুন।হাতে আসে শাশ্বত দে-কে লেখা নীল ফ্রুডের প্রশংসাপত্র।কে তিনি?শাশ্বত দে-ই বা কে? রহস্যের সমাধানে নামে রিয়া-কিম জুটি।
🔴পরবর্তী গল্প "প্রত্যাবর্তন"।সামার ক্যাম্পে আসা চার বন্ধু জঙ্গলে দেখা পায় এক বিখ্যাত মানুষের।দুঃখ,অভিমানে জর্জরিত মানুষটি কিভাবে আবার ফিরে যাবে নিজের চেনা জগতে তার বন্ধুর প্রেরণায়।তাই জানতে হলে পড়তে হবে মানবিকতায় উজ্জ্বল এই গল্প।গল্পের প্লটে নতুনত্ব আছে।
🔵"দা স্যাফায়ার ক্লাব" গল্পে দুর্গাপুর থেকে ফেরার পথে বাসে একটা টুপি কুড়িয়ে পায় ঋক।সেই টুপির সূত্র থেকে পাওয়া ঠিকানা ১৭/১,সোনাদিঘি রোডে গিয়ে রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়ে ঋক ও তার বন্ধু রাতুল। কীভাবে মুক্তি পায় তারা?কী সমাধান এই রহস্যের জানতে অবশ্যই পড়ুন এই গল্প।
🔴নবম গল্প "অশরীরী আতঙ্ক"।এই গল্পে আবার ফিরে পাই ভজা-অঙ্কনকে।এক বন্ধুর অ্যাপার্টমেন্টে তারা থাকে বন্ধুর অনুপস্থিতিতে বিড়াল পাহারা দিতে।সেই বাড়িতেই খুন হন বাড়ির মালিক মিস্টার প্যাটেল। ঘটনার অনুসন্ধানে নেমে তারা জানতে পারে তিনি আসলে তাদের কলেজের বন্ধু সরীসৃপের কাকা। পুলিশের সন্দেহ এই মৃত্যুর জন্য সরীসৃপ দায়ী।সত্যিই কি তাই?নাকি অন্য কেউ?
🔵"বোতলবন্দী গল্প"-এ সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেওয়া এক বোতল থেকে পাওয়া গেল একটি চিঠি।সেই চিঠি থেকে কীভাবে ১০০ বছরের পুরনো এক ক্যাসেলের রহস্য সমাধান হয় তা জানা যাবে এই গল্পে। রোমাঞ্চ,উত্তেজনার টানটান মিশেল এই গল্পের আকর্ষণ।
🔴একাদশতম গল্প "পুমার প্রতিশোধ"।বইয়ের নামেই এ গল্পের নামকরণ।ডাক্তার মেহতার কাছে এক ব্যক্তি মৃত্যুর আগে এক "আনপুটডাউনেবল" বইয়ের নাম বলে যায়।কেন?বইটির নাম হল "রিভেঞ্চ অফ দ্য পুমা" বা "পুমার প্রতিশোধ"। মৃত ব্যক্তি এডের ঘরে খুঁজে পাওয়া যায় বইটির কথার সাইনড্ কপি।লেখক রবার্ট হেন্ড্রিন্স এডকে চেনেন না বলে জানান।গিফট অফ লাইফ পাহাড়ের কোলে এক বৃদ্ধার ঘর থেকে পাওয়া যায় একতাড়া কাগজ আর একটা পেন(ফ্ল্যাশ) ড্রাইভ। তার থেকে সমাধান হয় এই রহস্যের।কী ছিল তাতে?
🔵"ডাইনোসরের হাড়" গল্পে খেলাচ্ছলে মাটি খুঁড়ে ডাইনোসরের হাড় খুঁজতে খুঁজতে উঠে আসে মানুষের কঙ্কাল।জোজো-কেকা-সাগরমামার ডাক পড়ে রহস্য সন্ধানে।এর মধ্যে পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধ খুন হন। রহস্য জোরালো হয়।সন্দেহ পড়ে দুই বন্ধুর উপর যারা ডাক্তারি পড়তে এসে এই বাড়িতে থাকত আগে।কী হয় তারপর?
লেখিকাসৃষ্ট অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র জিকো-কেকা।এই গল্পের জোজোই বোধহয় পরে নাম বদলে জিকো হয়ে গেছে।
🔴"গোলাপি বোতাম" গল্পে খুন হন এক মহিলা।তার হাতে পাওয়া যায় একটি গোলাপি বোতাম যা গল্পের মোড় ঘোরায়।চুরি যায় পার্সিয়াসের মূর্তি। পাওয়া যায় একটি রক্তমাখা পায়ের ছাপ ও চটি।তবে কি চটির মালিকই খুনি না অন্য কেউ? তদন্তে নামে আবারও রিয়া-কিম।
🔵এবারের গল্প "দাবানল"।এই গল্পে শ্যামল সরকার নামে এক ব্যক্তির খামারবাড়িতে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে যায়।মারা যান একজন সরকারি কর্মীও।থানার দায়িত্বে থাকা টেডের সন্দেহ এ কাজ লিওর ছেলে পেড্রোর। তদন্তে নেমে রিয়া-কিম জুটি খুঁজে পায় আসল দোষীকে। অদ্ভুত চমক দিয়েছেন এই গল্পে লেখিকা।
🔴শেষ গল্প "সেই ছেলেটা"। অন্যান্য গল্পগুলির তুলনায় এ গল্পটি একটু অন্যরকম। কল্পবিজ্ঞানের মোড়কে লেখা এই গল্পে টুকানের সঙ্গে আলাপ হয় ওরই সমবয়সী একটি ছেলের সঙ্গে,নাম টম।সে নাকি ১৯৬২ সাল থেকে টাইমমেশিনে চেপে ২০০৯-এ উপস্থিত হয়েছে।টুকানের বিশ্বাস না হওয়ায় সে তাকে টাইমমেশিনে করে পাড়ি দেয় অতীতে।সেখানে গিয়ে কী আবিষ্কার করে টুকান?এই গল্পের সুন্দর পরিসমাপ্তি নজর কাড়বে।
যেহেতু লেখিকা প্রবাসে থাকেন তাই তার লেখা গল্পগুলি আমেরিকার বিভিন্ন শহর ও গ্রামের পটভূমিকায় লেখা। চরিত্রদের নামেও স্বাভাবিকভাবেই বিদেশের ছোঁয়া রয়েছে।

    গল্পগুলি প্রসঙ্গে বলি,গল্প বলার ধরণ অত্যন্ত সাবলীল, ঝরঝরে,টানটান।ভয়ের শিহরণ থেকে গল্পগুলিতে রোমাঞ্চের মাত্রাই বেশি।তবে খুনির নিজের মুখে তার কুকীর্তির কথা না শুনিয়ে পুলিশ বা গোয়েন্দার মুখে শুনতে পেলে বেশি ভালো লাগত।
    দু-একটা মুদ্রণপ্রমাদ চোখে পড়েছে।ব্লার্বে "সৈকতের ছবির আড়ালে" গল্পের নাম ভুল ছাপা হয়েছে "সমুদ্র সৈকতের ছবির আড়ালে"।
অসাধারণ প্রচ্ছদ করেছেন সৌজন্য চক্রবর্তী।যা এই বইয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।তবে ভিতরের পাতায় অগ্নিভ সেনের অলঙ্করণ আরও ভালো হতে পারত।
    সবশেষে ধন্যবাদ জানাই লেখিকা অনন্যা দাশ এবং প্রকাশক পত্রভারতীকে এরকম জমজমাট একটি গল্প সংকলন উপহার দেওয়ার জন্য।
(সমাপ্ত)

Sayan Talukdar