হাসির গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
হাসির গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

ধারাবাহিক -পান্তা দিদার গুপ্তধন - কেয়া চ্যাটার্জী

ধারাবাহিক

পান্তা দিদার গুপ্তধন
কেয়া চ্যাটার্জী


|| প্রথম পর্ব ||

                           

    

     “ গয়নাতলার বুড়োশিব, দখিন হাওয়ার পাল

       ফোকলা বটের ঝাড়ে ঝাড়ে সুলুক সন্ধান।

       পাহাড় কোলে সূয্যি দোলে, সোনালী ধানের ছায়ে

       মাটির প্রাসাদ মধ্যে শুয়ে মো....”

    

 

      একদিন প্যাংলাদাদা ঘাটে বসে পা দোলাচ্ছিল।  তার পাশে বসলাম, কোনো পাত্তা দিল না। উদাস চোখে তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। বললাম, “কিরে দাদা, দিদার জন্য মন খারাপ?” প্যাংলাদাদা মুখ ব্যাজার করে বলল, “দিদা আমায় খুব ভালোবাসতো রে। আমাকে যখন খাইয়ে দিত তখন গপ্পো করতো। দিদার অনেক গুপ্তধন আছে জানিস তো? আমায় বলেছিল মরার আগে আমায় খোঁজ দিয়ে যাবে। কিন্তু দিদা তো অর্ধেক বলেই চলে গেল। জানিস তো আমার বুদ্ধি শুদ্ধির বহর। স্কুলটাই টপকালাম পাঁচবারের চেষ্টায়। দিদার এই ধাঁধার রহস্য কিভাবে সমাধান করি বলতো?” আমি বললাম, “ধুর! ওসব গুপ্তধন বলে কিছু হয়না। দিদা হয়তো গল্পই বলেছে তোকে।” প্যাংলাদাদার মুখ দেখে বুঝলাম কথাটা তার ভালো লাগেনি। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার কপালটাই মন্দ রে ভাই!” এই বলে প্যাংলাদাদা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে চলল। কিন্তু তার কপাল হয়তো সত্যিই মন্দ ছিল। কোত্থেকে এক হতচ্ছাড়া গোবরে পা পড়ে সে হড়াত করে পড়ল পিছলে। প্যাংলাদাদার প্যাংলা শরীর সে ধকল নিতে পারল না। উঠতে গিয়ে পা পিছলে আবার ধপাস। এইবার যেই উঠতে গেল কোত্থেকে এক মেনি বিড়াল খ্যাঁক করে এলো ঝাঁপিয়ে। অমনি প্যাংলাদাদা “ওরেবাবা রে” বলে এক চিৎকারে ঝপাং করে লাফ দিল পুকুরের জলে। ততক্ষণে আমার চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো জ্যেঠু, বাবা, ইলিয়াস কাকা। প্যাংলাদাদা পুকুরে তখন রীতিমতো চিৎকার করছে আর খাবি খাচ্ছে। তার দিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে কেউ আর হতচ্ছাড়া গোবরের দিকে নজর দিল না। জ্যাঠার পা গিয়ে পড়লো গোবরে আর সঙ্গে সঙ্গে তিনিও কালিপুজোর রকেটের মতো তীব্রগতিতে পুকুরের জলে গিয়ে পড়লেন। আর পড়লেন তো পড়লেন এক্কেবারে প্যাংলাদাদার ঘাড়ের ওপর। প্যাংলাদাদার চিৎকার দ্বিগুণ বেড়ে গেল, “ও মা গো। বাঁচাও গো, ব্রহ্মদত্তি আমার ঘাড়ে চাপলো গো। কেউ বাঁচাও।” সেই শুনে ঘর থেকে জেঠিমাও কাঁদতে কাঁদতে বেরোলেন, “কে কোথায় আছো? দিনে দুপুরে আমার ছেলেকে ভূতে ধরলো গো!” জ্যেঠুর তো তখন আক্কেল গুড়ুম! প্যাংলাদাদার চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, “এই বেয়াক্কেলে বিটকেলে ছোকরা। চোখ খুলে দেখ। তোর বাপ দাঁড়িয়ে রে, তোর বাপ।” প্যাংলাদাদা ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখে জ্যেঠুর সাদা ধবধবে ধুতি পাঞ্জাবিতে চাপ চাপ গোবর লেগে। কিন্তু হতভাগা গোবর শুধু জামায় লেগেই নিস্তার দেয়নি, তা দখল বসিয়েছে জেঠুর চকচকে টাকে আর গালে। তাই দেখে প্যাংলাদাদা ভয় ভুলে ফিক করে দিল হেসে। প্যাংলাদাদার ফিচেল হাসি সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়ল  ইলিয়াস কাকা, বাবা আর জেঠিমার মুখে। পুকুর ঘাটে সে এক লাফিং ক্লাবের আসর। কিন্তু আমি দেখছিলাম  আরেকজনের হাসি। গাছের মগডালে বসে সেই মেনি বিড়ালটার মুখেও যেন এক ভীষণ চেনা ফিচেল হাসি। কই আগে তো একে এই এলাকায় দেখিনি!

 

   

 

গয়নাতলার বুড়োশিব, দখিন হাওয়ার পাল, ফোকলা বটের ঝাড়ে ঝাড়ে সুলুক সন্ধান। পাহাড় কোলে সূয্যি দোলে, সোনালী ধানের ছায়ে

মাটির প্রাসাদ মধ্যে শুয়ে মো....”

    

 

 

    




Keya Chatterjee

                                 
  
                                            

শ্রবণ বিভ্রাট - সৌভিক দাস


শ্রবণ বিভ্রাট

সৌভিক দাস 

  
    বাড়ির নাম "শান্তি-নিবাস" বাসিন্দা সাকুল্যে দুজন হলেও গৃহকর্ত্রী দোর্দণ্ডপ্রতাপ খ্যান্তবালা দাসী ও তার ভুলে ভরা ভাইপো হরিচরণের সৌজন্যে শান্তি নিবাসে কস্মিনকালেও শান্তির নামগন্ধ ছিলোনা, এখনও নেই।

    পিসীমার কঠোর শাসনে থরোহরি কম্প হরিচরণ সর্ব কর্মেই গোল পাকিয়ে গন্ডগোল বাঁধতে ওস্তাদ কাজেই অষ্টপ্রহর হরিনাম সংকীর্তনের ন্যায় চিৎকার চেঁচামেচির কারণে পাড়ার ফঁচকে ছেলে ছোকরারা মাঝে মধ্যে বাড়ির নেমপ্লেটে খড়ি দিয়ে 'অ' জুড়ে অশান্তি নিবাস" লিখে রেখে যায়।

    এরমধ্যে হরিদ্বার থেকে পিসীমার পরম পূজনীয় গুরুদেব শ্রীশ্রী স্বামী তিনশো বাহাত্তর ভন্ডুলানন্দ ব্রহ্মচারী মহাশয়ের আগমন উপলক্ষে বাড়িময় সাঁজো সাঁজো রব।

    গুরুদেবের নামের আগে তিনশো বাহাত্তর সংখ্যাটি কিসের প্রতীক প্রশ্ন করাতে গুরুদেব অন্ত প্রাণ পিসিমা বলেছিলেন ওই সংখ্যা গুরুদেবের বয়স সুনিশ্চিত করে।
যদিও গুরুদেবের স্থির চিত্র পর্যবেক্ষণ করে হরিচরণ নিশ্চিত এনার বয়স ষাট-পঁয়ষট্টি হলেও তিনশো বাহাত্তর নৈব নৈবচ...

    বহু বৎসর গতে বাড়িতে গুরুদেবের পবিত্র পদধূলি পড়তে চলেছে বলে পিসীমার ব্যাস্ততার সীমা পরিসীমার উর্ধসীমা পরিমাপ করা সম্ভব নয়!
গুরুদেব যা যা ভোজন করতে পছন্দ করেন সেসব উৎকৃষ্ট খাদ্যবস্তু স্বহস্তে তৈরি করলেও গুরুদেবের বিশ্রাম কক্ষ সহ তামাম বাড়িঘর মায় বাগান থেকে আরম্ভ করে রাস্তা সবই হরিচরণকে দিয়েই পরিষ্কার করিয়েছেন, এছাড়া পিসীমার পছন্দের লোকজনকে আমন্ত্রণ জানানোর হরিচরণকে শহরের এমাথা থেকে ওমাথা ঘড়ির পেন্ডালুমের মতো দৌড় করিয়ে ছেড়েছেন।

    যথা সময়ে পিসীমার গুরুদেব শ্রীশ্রী স্বামী তিনশো বাহাত্তর ভন্ডুলানন্দ ব্রহ্মচারী মহাশয় শান্তি নিবাসে দেহ রাখলে হরিচরণের অশান্তি দ্বিগুণ হলো...

    পিসিমা নিজহাতে গুরু সেবা যতটা না করেন তার চতুর্গুন হরিচরণকে দিয়ে করিয়ে নেন। তার ওপর গুরুদেবের অতি খাই খাই স্বভাবের কারণে ঘন্টায় ঘন্টায় বাজারে ছুটতে ছুটতে নাম থেকে হরি বিদায় নিয়ে স্রেফ চরণ যুগলই হরির একমাত্র ভরসা।
 
    থেকে থেকেই শুঁয়ো পোকার মতো গুরুদেবের খিদে চাগার দিয়ে ওঠে, জিলিপি খাবো, আমৃতি খাবো, রাবরী খাবো, খালি খাবো আর খাবো বারংবার বাজারে ছুটতে ছুটতে হরির চরণ দুখানি কাজে ইস্তফা দেওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া...

    দেখতে দেখতে গুরুদেবের প্রস্থানের সময় আগত হলে চরণ দুখানি পুনরায় তার নামের আগে ফিরে পাওয়ার আনন্দে হরি উল্লসিত হয়ে উঠল...

    গুরুদেব হিমালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পূর্বে গুরুদেবের নির্দেশে পিসীমার উৎসাহে বিশেষ তিথিতে ভক্তবৃন্দের সমাগমে শান্তি নিবাসে পূজাপাঠ তৎসহ শান্তি যজ্ঞের আয়োজন করা হলো।
যথা সময়ে পূজা শুরুর পর পিসীমার নজরে এলো সর্বনাশ একি একি অনাসৃষ্টি কান্ড গো-চোনা আনা হয়নি!

    গো-চোনা ছাড়া চরণামৃত প্রস্তুত অসম্ভব!  গুরুদেবের চরণামৃত পান না করলে বৃথাই এ মানবজীবন  উপলব্ধি করে পিসিমা  হরিচরণকে অতি দ্রুত বিশুদ্ধ গো-চোনা সংগ্রহের কাজে  পাঠালেন।

    ইচ্ছে না থাকলেও পিসীমার বিরুদ্ধাচরণ করার দুঃসাহস হরিচরণের নেই ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহ উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়তে হলো...

    হরিচরণ সমগ্ৰ শহর খুঁজে খুঁজে হয়রান! যার নাম ধরে পিসিমা তাকে দিবারাত্র সম্বোধন করেন সে বস্তু পাওয়া এতটা দুষ্কর হরি কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।

    সারা শহর খুঁজে ফিরলেও কোনমতেই ও বস্তু জোগাড় করতে না পেরে ব্যার্থ মনোরথে হরি যখন ও বস্তু বিনা কিভাবে পিসীমার মুখোমুখি দাঁড়াবে সে চিন্তায় ঘোরতর সন্দিহান ঠিক সেই সময় মুশকিল আশান হয়ে আবির্ভুত হলেন পথচারী।

    শুকিয়ে আমশি হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে সেই কৌতূহলী পথচারী হরিচরণের  সমস্যা শ্রবনে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করে সমস্যা সমাধানের উপায় বাতলে দিলেন।

    অবশেষে হরিচরণ বাড়ি থেকে প্রায় সাত ক্রোশ পথ পদব্রজে অতিক্রম করে বিস্তর সাধ্য সাধনার পর নগদ এক হাজার টাকা জামানত রেখে বিকেলের আগেই ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তে  এক খাটাল মালিকের থেকে পিসীমার ফরমায়েশি বস্তু জোগারে সক্ষম হলো।

    ওদিকে চার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও হরিচরণের দেখা নেই! অগত্যা গো-চোনা ছাড়াই চরণামৃত প্রস্তুত করে পূজা সাঙ্গ করতে হলো।

    এতো নিষ্ঠাভরে এতো আয়োজন স্বত্বেও পুজোয় খুঁত থেকে যাওয়ায় খুঁতখুঁতে পিসিমার মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেলো! হতচ্ছাড়া হরি আজ ফিরুক দেখাচ্ছি মজা মনেমনে এই সংকল্প নিয়ে উত্তপ্ত মস্তিষ্কে পিসিমা অপেক্ষা করতে লাগলেন। 

    দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাওয়ার পর পিসীমার ফরমায়েশি বস্তু জোগারে সফল হরিচরণ পরমানন্দে বাড়ি ফিরলে বাহবার বদলে বেচারার কপালে জুটল অসীম দুর্ভোগ!

    পিসীমার মুখ নিঃসৃত গোলাগুলি বা গালাগালির সামলে হরিচরণ কোনমতে মিনমিন করে জানালো শহরে খাটালের সংখ্যা অপ্রতুল, দু একটা যাও আছে তার মালিকেরা অচেনা অজানা ছোকরার হাতে বাছুর ছাড়তে রাজি নয়! এটাই বিলম্ব হওয়ার একমাত্র কারণ!

    জবাব শুনে হতভম্ব পিসিমা বল্লেন হতচ্ছাড়া আধ দামড়া বলদ, কে তোকে বাছুর আনতে বলেছে?  কেন? আপনিই তো বল্লেন গো-ছানা জোগাড় করে নিয়ে আয়! আর কেনা জানে গো-ছানা অর্থাৎ কিনা গরুর ছানা যাকে বলে বাছুর!

    গরু কোথাকার! এই বয়সেই কানের মাথা খেয়েছিস! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা এই বলে রাগে অগ্নিশর্মা পিসিমা গুরুদেবের ত্রিশূল উঁচিয়ে হরিচরণকর তেড়ে যেতেই বেচারা পালাতে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা বাছুরের ঘাড়ের ওপর চিৎপাত!

    আচমকা জগদ্দল পাহাড়ের ন্যায় হোৎকা হরি ঘাড়ে এসে পরতে আপাত নিরীহ বাছুরটি আর নিরীহ রইলনা! তিড়িং বিড়িং করে লাফিয়ে উঠে হাম্বা রবে দড়ি ছিঁড়ে ঊর্ধস্বাসে ছুটল.....
 
    এক্ষেত্রে হরিচরণের বহুদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী হরির চরণ যুগল বিশ্বাসঘাতকতা করল! প্রানপনে পিছু ধাওয়া করেও মতেই সে বাছুরকে পাকড়াও করতে সক্ষম হলোনা...

    শোনা যাচ্ছে পিসীমার রোষানল তৎসহ খাটাল মালিককে সন্ধ্যের মধ্যে বাছুর ফেরত দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে অপারগতার কারণে হরিচরণ আপাতত স্থানীয় কচুবনে গা ঢাকা দিয়েছে।

    বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী যে গুরুদেবকে এদ্দিন দুচক্ষে দর্খতে পারতনা সেই গুরুদেবের পিছু পিছু হিমালয়ের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার ব্যাপারে হরিচরণ গভীর চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে।
(সমাপ্ত)

souvik das

                        

                                  


প্রমাদজনিত - বাসু মুখোপাধ্যায়

 

প্রমাদজনিত
বাসু মুখোপাধ্যায়

    অফিসে পৌঁছনো মাত্র বসের ফোন। বললেন, "আমার শরীরটা হঠাৎ করে খারাপ হয়েছে তাই অফিসে আজ যাব না। আপনি সব দিক সামলে নেবেন।"
ফোনটা রেখেছি অমনি বসের ল্যান্ড-লাইন ক্রিং ক্রিং করে উঠল। আমি দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরলাম।
    বসের স্ত্রী ফোন করছেন। আমি ধরেই বললাম, "হ্যালো আমি ইরণ বলছি।"
ম্যাডাম বললেন, "আপনি ফোন ধরলেন কেন?  সে এখনও অফিসে পৌঁছায়নি?"
আমি বললাম, "না মানে স্যার তো বললেন, মানে বললেন...মানে!"
ম্যাডাম বললেন, "তখন থেকে কী মানে মানে করে যাচ্ছেন? ও কি চাইনিজ ভাষায় বলেছে নাকি? যা বলেছে ভণিতা ছেড়ে চটপট বলে ফেলুন।"
খেয়েছে! স্যারের কি তাহলে শরীর খারাপ হয়নি? স্যার কী বাড়িতে না বলে অন্য কোথাও চলে গেছেন! এখন কী বলি!
বললাম, "ম্যাডাম আপনার কান ভাল আছে?"
ম্যাডাম রেগে গেলেন বোধহয়, বললেন, "কী কথার কী উত্তর! হ্যাঁ কান মোটামুটি ঠিকই আছে। এবার স্যার কী বলেছেন বলুন।"
আমি বললাম, "মানে স্যার বললেন স্যারের শরীর খারাপ তাই আজ অফিস আসবেন না।"

    কিছুক্ষণ ওদিকে চুপচাপ। ম্যাডাম বোধহয় চারশো চল্লিশ ভোল্টের শক্ খেলেন! যাকে বলে বাক্যহারা হয়ে গেছেন।
আরও কয়েক সেকেন্ড পরে ম্যাডাম বললেন, "শরীর খারাপ! অফিসে যাবে না! আচ্ছা!"
বলে ফোন রেখে দিলেন ম্যাডাম।

    বসের চেম্বার থেকে বেরিয়ে দেখলাম কোয়েনা মাইতির চেয়ার ফাঁকা। 
আমাদের অফিসটা ছোট। সব মিলিয়ে জনা পনেরো স্টাফ। তারমধ্যে পার্মানেন্ট স্টাফ বলতে আমি, বস ছাড়া আর তিনজন। বাকি সবাই কন্ট্যাক্টচুয়াল স্টাফ।
গ্রুপ ডি রতনদাকে কোয়েনার কথা জিগ্যেস করতে বলল, "আসেনি।"

কোয়েনাও আসেনি? এদিকে স্যারও বাড়িতে না বলে কোথায় সটকেছেন!
কোনও যোগাযোগ আছে নাকি দুটো ঘটনার মধ্যে?
হ্যাঁ থাকতেই হবে। বসও আসেনি আর ওদিকে যে কোয়েনাকে কোনদিন অফিস কামাই করতে দেখিনি সেও আজ আশ্চর্যজনক ভাবে অনুপস্থিত!
কেস জন্ডিস মনে হচ্ছে! কোয়েনা সবসময় বসের সঙ্গে চিপকে থাকে! বস আর কোয়েনা ডেটিং-ফেটিংয়ে চলে গেছে সিওর।
এখন আমার কী করা উচিত? ম্যাডামকে কী সাবধান করে দেব?
হ্যাঁ বাঙালি হিসেবে সেটাই করা উচিত। আমরা অন্যকে অযাচিত উপদেশ দেওয়া পরম কর্তব্য বলে মনে করি।

    স্যারের ল্যান্ডফোন থেকেই আবার ম্যাডামকে ফোন করলাম।
ম্যাডাম বললেন, "কলিং বেল বাজছে, কেউ এসেছে, কাজের মেয়ে নেই আমাকেই দরজা খুলতে হবে, আপনি যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।"
আমি বললাম, "হ্যাঁ ম্যাডাম, আসলে একটা জরুরি কথা বলার ছিল। মানে বলছি কোয়েনাকে তো জানেনই নিশ্চই, খুবই সাংঘাতিক টাইপের। তাই বি কেয়ারফুল ম্যাডাম। কোয়েনা যেন স্যারকে কবজা করতে না পারে সেইদিকে কড়া নজর রাখতে হবে আপনাকে...  নইলে আপনারই সর্বনাশ হবে..."
ম্যাডাম "আচ্ছা, ঠিক আছে" বলে ফোন কেটে দিলেন।

    স্যারের চেম্বার থেকে বেরোতেই আমার আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেল! দেখি কোয়েনা মাইতি তার চেয়ারে বসে আছে।
যাহ্ বাবা এ আবার কখন এল? 
আমাকে দেখেই কোয়েনা বলল, "ওহ্ যা ফেঁসেছিলাম আজ! বড় একটা ফাঁড়া গেল! মাস্কের দড়ির সঙ্গে অটোর হুক আটকে কান প্রায় ছিঁড়েই যাচ্ছিল। অনেকটা কেটে গেছে। একটা নার্সিং হোমে গিয়ে স্টিচ দিয়ে এলাম।"
আমি দেখলাম কোয়েনার কানে ব্যান্ডেজ।

    আমার বুকের মধ্যে গুড়গুড় করে উঠল। ম্যাডামকে, বস আর কোয়েনাকে নিয়ে খারাপ ইঙ্গিত দিয়েছি। স্যার যখন জানতে পারবেন, কী হবে আমার? 
চাকরি যদিবা নাও যায়, বহুদূরে কোথাও ট্রান্সফার হবেই।
এসিতেও আমার সারা শরীর ঘামতে লাগল।

    আমার ফোন বেজে উঠল। স্যারের ফোন। হয়ে গেল!
স্যার কিছু বলার আগে আমিই বললাম, "এখন কেমন আছেন স্যার?"
স্যার গম্ভীর গলায় বললেন, "এখন বাড়িতে চলে এসেছি। অফিস যাওয়ার সময় রাস্তায় হঠাৎ পেট এমন মোচড় দিয়ে উঠল যে ড্রাইভারকে বললাম রাস্তাতেই এক বন্ধুর বাড়ি পড়ে সেখানে দাঁড় করাতে। তারপর দৌড়ে বন্ধুর বাড়ি গিয়ে বার তিনেক ওয়াশরুমে যেতে শরীরটা ঠিক হল। ঘরে ফিরতে মিসেস বলল..."
আমি তাড়াতাড়ি থামিয়ে দিয়ে বললাম, "পরে শুনব স্যার, এখন আপনি রেস্ট নিন। বেশি করে ওআরএস খান, নইলে ডিহাইড্রেশন হয়ে যেতে পারে!"
স্যার এক দাবড়ানি দিয়ে বললেন, "আরে থামুন তো। হ্যাঁ ঘরে ফিরতে মিসেস বলল..."
    
    আমার বুকে এক হাজার ড্রাম একসঙ্গে বাজছে!
স্যার বলে যাচ্ছেন, "মিসেস বলল, ইরণবাবু খুব ভাল মানুষ। তোমার জন্য খুব চিন্তা করেন। করোনা কত সাংঘাতিক, করোনা যেন স্যারকে কবজা করতে না পারে সেদিকে আমাকে কড়া নজর রাখতে বললেন..."
করোনা!!! বলে কী! মানে ম্যাডামের কানে এখনও অল্প হলেও সমস্যা তাহলে আছে। কোয়েনাকে করোনা শুনেছেন! 
স্যার বলে চলেছেন, "আপনার একটা টিএবিল আটকে আছে না? কাল অফিসে গিয়েই ওটা অ্যাপ্রুভ করে দেব...."
আমার মনের মধ্যে একটার পর একটা লাড্ডু ফাটছে....
                                                      
                                               (সমাপ্ত)


Basu Mukherjee



                                                          

কাম সারছে- শৌভিক ঘোষ


কাম সারছে
শৌভিক ঘোষ



    কাল দুপুরবেলা গান্ডেপিন্ডে গিলে ভাবলাম বিছানায় একটু প্রেমিকাকে নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করি! এই তো খারাপ ভাবছেন শুরুতেই,প্রেমিকা মানে আমার এই মুহুর্তের সুখদুঃখের সঙ্গী ...আমার জানু..আমার গুলুগুলু মোবাইলটা!! তা মেঘলা মেঘলা ওয়েদারে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই,চোখ খুলতেই দেখি মেয়ে আর বৌ পাশটিতে ভসভস করে ঘুমোচ্ছে! জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলাম সবে ভোর ভোর..বাব্বা!! কতদিন পর এত্তো ভোরে উঠলাম!! তা যাই একটু ছাদে পায়চারি করে আসি...

     ছাদে উঠে দেখি পাশের বাড়ির দাদা আর বৌদি পায়চারি করছে!! এ তো দেখছি আমার থেকেও সকালে ওঠে!! হেঁ হেঁ করে একগাল হেসে বললাম,গুড মর্নিং ..এই যে সকাল সকাল শরীরচর্চা করছেন,এটা কিন্তু বেশ ভালো!! আমার বৌকে বললেও শোনে না,কত বেলা করে ওঠে!!
দাদা বৌদি দেখলাম কোনো উত্তর না দিয়ে অবাক হয়ে তাকালো! ও ঠিক আছে, সকাল সকাল প্রেমে বাঁধা দিতে নেই..

     ছাদের এ পাশটিতে এসে দেখি পাশের বাড়ির কাকু বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে কাকিমার সাথে চা খাচ্ছেন ..আবার একগাল হেসে বললাম,গুড মর্নিং কাকু কাকিমা।এতো সক্কাল সক্কাল চা খাচ্ছেন!! আমার তো ব্রাশ ই করা হয়নি,পটি ফটি করে আজ একটু বাজার যাবো,তারপর চা খাবো!!ওনারাও দেখি অবাক হয়ে তাকালেন!! আসলে এতো সকালে তো আমাকে কোনোদিন দেখেন না তাই ঘাবড়ে গেছেন বোধহয়!!

     ভাবলাম এতো সকালে উঠলাম ই যখন একটু রামদেবকে স্মরণ করি..প্রাণায়াম যদিও করছি সকাল বিকেল..তবে শবাসন ছাড়াও এই শ্বাস ছাড়া,শ্বাস নেওয়া এটাও একটু প্র্যাকটিস করা যেতে পারে!এক পায়ে খাড়া হয়ে হুঁক হুঁ .... হুঁক হুঁ করছি ,দেখলাম পাশের বাড়ির পোংটা পাকা মেয়েটা উঁকি দিয়ে দেখেই জানালাটা ধপাস করে বন্ধ করে দিল!! ব্যাপারটা তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না!!

     খানিকক্ষণ ছাদে এদিক ওদিক করছি,দেখলাম নিচ থেকে সঙ্গীর গগণভদী চিৎকার..ফটাফট তুমি নিচে এসো!! ধুড়মুড় করে নিচে নেমে বললাম,দেখলে তো কত্তো সকাল সকাল উঠেছি আজ!!
মেয়ে টিভিতে ইদানিং খুব মহাকালী সিরিয়াল দেখছে,বৌ এর লুকস যেন সাক্ষাৎ মা কালী.. শুধু দ্রামা দ্রিমি দ্রিমি,তা দুন দুন মিউজিক দিলেই আমার কাটামুন্ডু ওর হাতে ঝুলবে!!
হুংকার দিয়ে বললো,পাশের বাড়ির বৌদিকে কি বলেছো?
কি বলেছো মানে!! চরিত্র চারবার পাঁচবার করে এখন স্যানিটাইজ করছি,কি বলবো!!

গুড মর্নিং ,এখন গুড মর্নিং?
তা না তো কি? মর্ণিংকে আফটারননুন বললে আফটারশক কি হবে বোঝো?
আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন,এখন ভর সন্ধ্যে,আর তুমি গুড মর্নিং বলে এসেছো!!দাদা বলছে, শৌভিক কে অ্যান্টাসিড দাও,মনে হয় বায়ু কুপিত হয়েছে!!
যাঃ কেলো!!সরি সরি,তুমি কুপিত হয়ো না প্লিজ,আমার বায়ুপ্রবাহ,বায়ুচাপ কিচ্ছু কুপিত হয়নি!!

     মা ফোন করলো এইমাত্র,দত্ত কাকু ফোন করে মা কে কিসব বলেছেন,তুমি নাকি উল্টোপাল্টা বকছো!! নেশার জিনিস না পেয়ে নাকি সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার!! কি করে মুখ দেখাবো বলোতো!!
আরে বাপরে! জীবনে তোমার চুমু ছাড়া আর কিছু নেশা করলাম না,এখন না হয় ফিজিক্যাল ডিসটেন্সিং মেইনটেইন করছি.. কিন্তু সেটা তো কাকুর জানার কথা না!! উনি এসব কি লাগানি ভাঙানি করছেন বলোতো!!
ভরসন্ধ্যেবেলা কাউকে মর্ণিং বললে তিনি কি তোমায় সুস্থ ভাববে?আরো শোনো ,থানা থেকে ও ফোন এসেছিল,তোমার নাকি শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল খানিকক্ষণ আগে? হেবি জোরদার শ্বাস নিচ্ছিলে?যাই যাই অবস্থা!!
সে কি!!আমি তো প্রাণায়াম করছিলাম!!

     পাড়ার কেউ ফোন করেছে পুলিশকে ,আমাদের ফোন নম্বর ও দিয়েছে,থানা থেকে বললো,আপাতত ১৪ দিন তুমি যেন বাড়ির বাইরে পা না দাও,আর বেশি টান উঠলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে....
এরপর আর শুনতে পারিনি!! নিজেকে দাদার কীর্তি র তাপস পাল মনে হচ্ছিল ..শাআআলা এতদিন ঘর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছিলাম,মোবাইলে ডালগোনা কফি খাচ্ছিলাম,এই একটা মেঘলা ওয়েদার শেষে কিনা ...😭😭😭




Souvik Ghosh