কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

কবিতা - দেবাঞ্জনা - রঙ্গন রায়

 

দেবাঞ্জনা

 রঙ্গন রায়

 

গোবড়াকুড়ি' মেলায় যেদিন ফুচকার অপূর্ব স্বাদ প্রথম পরখ করালেন

সেদিন আপনি আমার শিক্ষিকা ছিলেন না , প্রকৃত প্রস্তাবে ;

অথচ মৃত্যুর চামড়া পোড়া গন্ধের সাথে সস্তা ধূপকাঠির গন্ধে আমাদের ফুসফুস ভরে উঠেছিল

ছিন্নমস্তার মূর্তি দেখে , ভীত আমার চোখ ঢেকে ফেলা আঙুলের ফাঁকে ,

আপনার হাতের তড়িৎ  স্পর্শ , আমাকে মৃত্যুর চেতনা দিয়েছে অনুপাতে।

পুড়ে যাওয়া মাংসের দগদগে ধোঁয়ার মাঝেও মেলার ভীড়

অসমবয়সী দুজনকে নাগিন কন্যার শো দেখতে আগ্রহী করেনি ---

আমি দেখছিলাম , কীভাবে সবাই পুড়ে যাচ্ছে , চিতার মত ;

আপনার নাম , আমি দেবাঞ্জনা রেখেছিলাম সেদিন।

 

অজ্ঞাতে কত শ্রমিক - চাষীর সন্তানেরা বোধী লাভ করে ফেলেছিলো

স্বপ্নদোষের ঝটকায় ঘুম ভেঙে যাচ্ছিলো গোটা কপিলাবস্তুর -

আমি সেই স্বপ্নের প্রতিটি পৃষ্ঠায় , পেজ মার্ক দিয়ে রেখেছি

স্নিগ্ধ স্নানের শেষে , শাড়িতে যতটা চিকরাশির পাতা এসে লাগে ,

কাঞ্চন ফুলের গন্ধে , গৌতম বুদ্ধের ধ্যান ভঙ্গ হয় ---

প্রজ্ঞাপারমিতা নয় , সুজাতা নয় , দেবাঞ্জনাকেই দরকার , পায়েস পরিবেশনের

 

হরেক মাল ৫টাকার সামগ্রী ঠেলে , মত কা কুয়ার জোরালো শব্দের দিকে ,

অমন বনলতা' মত তাকালে , বাইকারোহীদের কন্সেন্ট্রেশন , ক্যাম্পে চলে যেতে পারে।

অথচ আপনি এসবের পরোয়া থোড়াই করতে জানেন!

কাশ্মীরী শাল যেসব মেলায় পাওয়া যায় , আপনি আসেননি সেই মেলায়

এখানে নাগরদোলা অন্য গ্রহের ব্যাপার।

অথচ মাটি থেকে যুধিষ্ঠিরের রথের মত উঠে থাকা আপনি

গ্রামের অভাবী মেয়েদের ভারী বুক দেখে , হীনমন্যতায় ভোগেন ,

ওরা কত সহজেই , আপনার চেয়ে ধনী হয়ে যায় , ভীনগ্রহী বানিয়ে দেয় ,

অনায়াসে।

..............................................

 


 

কবিতা - বলা হয় না - সৈকত মুখোপাধ্যায়

 বলা হয় না

সৈকত মুখোপাধ্যায়


আমি কিছু অপমানের স্মৃতির কথা বলি
আমি মাথা নীচু করে হেঁটে যাওয়ার কথা, একলা ঘরে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকার কথা বলি।

তোমাকে ভালোবাসার কথা বলা হয় না আমার।

তুমিও একটা নদীর ক্রমশ শুকিয়ে যাওয়ার কথা বলো
অনেকগুলো পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলো
অনেক লুকনো মারের দাগ খুলে দেখাও।

আমাকে ভালোবাসার কথা বলা হয় না তোমার।

এইভাবেই আমাদের বেলা চলে যায়।
আমরা দুজন দুদিকে চলে যাই, আর

তারপর সারা রাত ধরে তোমার ব্যথিত চোখ আমার মুখের ওপর ঝুঁকে থাকে।
আমার ব্যথিত চোখ তোমার কপালে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়।

.........................

 


 

কবিতা - গুরুদক্ষিণা - প্রসাদ সর্বানী

 গুরুদক্ষিণা

 প্রসাদ সর্বানী


রাতের সাজকথা আমার আর  শেষ হলোনা...
ঘাসের মাথা থেকে মাটির তৃষ্ণার্ত বুকে
আমার গরম নিঃস্বাসের সাথে ...

খসে পরে যে শিশির রোজকারের অভ্যাসে ...
আকাশের দিকে তাকিয়ে,
অমাবস্যার গরল কালো অন্ধকার পান করে
আমি দীক্ষিত হয়েছিলম্ সেই কবে...
কিন্তু মন্ত্রোচ্চারণ র করা  আমার আজ ও হলোনা...

আমার জানা ছিলোনা দীক্ষা নেবার প্রথম শর্ত ছিল
অন্ধকার কে  কোনো এক অস্থির অধিকারে আপন করে নিতে হবে...
আপন করে নিতে হবে  তার বুকের সবটুকু ক্লান্তি কে...

 আপন করে নিতে হয় তার বুকের অনাখাঙ্খিত  শূন্যতাকে ..
কিন্তু আমি যে আজ কাপর্দক শূন্য ...

অঞ্জলি তে আজ একমুঠো  অন্ধকার ও  নেই...

গুরুদক্ষিণা যে আজ ও আমার দেয়া হলোনা

........................

 


 

কবিতা - আদর - রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়

 আদর
রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়


রাত্রিকালীন গুপ্তকথার মত ন্যুব্জতনু নয় তবু
সোনাঝুরির বখাটে রোদ শাল জঙ্গলে লিখে রেখেছিল
করুণ রঁদ্যেভু...পিয়ানোয় হাওয়া খেলেছিলো...আঙুলে আঙুল রাখা মোহ
ক্রন্দসী মুহূর্তের তামসিক গাথা থেকে নির্বাচিত আনোখা দেয়ালা
প্রভু নষ্ট করে দাও! – আর্তি ছিল সেই বুদবুদ!
কেন যে কিনারে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল
স্পন্দিত নিভৃতির ভেতরে কোথাও যেন গলে যাচ্ছে সংযমী পর্জন্যের নৈঋত কোণ
একটুও ইচ্ছে করেনি পুনশ্চতে থেকে যাক কিছু...
বৈরাগ্যের মহল্লা থেকে বহুদূরে যেখানে হারিয়েছে ডাক
সংবেদে লিখিত স্পর্শের পাশে হু হু করে বয়ে যাচ্ছিল নীলাম হওয়ার অ্যালিগরি...
আবেশ আবেশ ঘ্রাণ...

.................. 




কবিতা - শুধু তোমার জন্য - রিয়া ভট্টাচার্য

 শুধু  তোমার জন্য

রিয়া ভট্টাচার্য 

 
 
পেরিয়ে এসেছি নীহারিকা...

শান্ত নদীর দিকচক্রবালে হারিয়েছে আস্ত একটা জীবন,

ফিরে দেখিনি, মৌলোভী চাতকী হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছি বাতিল কথোপকথন ---

জীর্ণ ঘোড়ার আস্তাবলে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি মুঠোভরা রোদ্দুর...

পারিনি, 

একটু একটু করে সরে গেছে সময় ' ঘটমান অতীতপানে।

কুয়াশা জড়িয়ে যেদিন হাতে তুলে দিয়েছিলাম নীল গোলাপখানা...

তারপর থেকে হাঁটছি -- দূর থেকে বহুদূর ভবিষ্যতের  দিকে,

পাচ্ছিনা খুঁজে তোমার শহর 

বলো আছো কি!

নাকি হারিয়ে গেছো ; জায়নামাজ এর ভীড়ে সাজিয়ে রাখা গুল্মলতার মতো।

পৃথিবীটা ছোট হলে নাকি রাস্তারা বেড়ে যায়! 

বেবাক কাটাঘুড়িরা মিছিল সাজায় শবের...

দেখতে পেয়েছো তাদের?  আমিও পাইনি।

বিরহের মড়া ছুঁয়ে ঘরে ফেরা বারণ, 

কিন্তু আমাকে তো ফিরতেই হবে তাইনা? 

বাতিল মলাট জমিয়ে ঘর কে তুলবে বলো!  

সীমান্তে পুঁতে আসবে কে নীল গোলাপের চারা...

মৃতদের আস্তানায় বসে ভালোবাসার গল্প শোনাবো বলেছি যে ;

শুধু তোমার জন্য।।
..................................
 
 

 

কবিতা - মূল সঙ্গীত - অমিত চক্রবর্তী

 

মূল সঙ্গীত

অমিত চক্রবর্তী

 

 

 

একটা থীম মিউসিক খুঁজছি জীবনে – একটা চারণপদ্য

একটা ছড়টানা সুর আবহের, একটা                                                                                

ফিরে ফিরে আসা মূল সঙ্গীত।                                                                                

ক’টা লাল কার্ডিনালের সঙ্গে আলাপ হয়েছে ইদানীং

খুবই যৌবনমত্ত পাখি তারা, উচ্চরব কাকলির –

সবসময় জুড়ি খুঁজছে, সবসময় আওড়াচ্ছে প্রমোদের আলাপ।

আমি মুচকি হাসি, তোমার কথা মনে পড়ে।                                                                                 

তোমাকে বোধহয় আমি নষ্ট করেছি ধেবড়ে,

ঘষে ঘষে রঙচটিয়ে আর বোঝা চাপিয়ে সংসার করার।

আর তুমি, আমার প্রভাতফেরির লাল কার্ডিনাল –

ভয়ে শিউরে উঠেছ কেঁপে, রোঁয়াফোলা তেজে গেছ

বাঁচাতে নিজেকে, আর নির্ঘাত

আস্ফোটে ভেঙে টুকরো করেছ দুটো আনাড়ি হৃদয়।

আমার অবশ্য এখন ফেলে আসা কোন কুয়াশা নেই আর

নেই বই থেকে টোকা কোন মহতের বাণী

তাই সন্ধানে একটা নতুন কর্ডের, একটা সুরসঙ্গতি

যাতে কিনা

আমি স্বতন্ত্র থাকি একা, আবার তোমার সঙ্গে মিলেমিশেও –

যুগ্মতায় একাকার। 

............................

 


 

কবিতা - এক বিকেলের গল্প - ভাস্কর শীল

এক বিকেলের গল্প

ভাস্কর শীল
 
 
এই যে তুমি দাঁড়িয়ে আছো 
লেপটে থাকা মেঘের পাহাড়
 অল্প কথার গল্পগুলো 
সার বেঁধেছে  রেলিং ঘিরে । 

বন্ধ খামের আবছায়াতে
ভালোবাসা একলা ভীষণ,
খাদের ধারে আটকে আছে
বিষন্নতার মিষ্টি প্রলেপ।

চিবুক ছুঁয়ে ভিজছে বাতাস
রঙিন ছাতা, স্বপ্নগুলো ,
চোখের পাতার দোসর যদি
ঠান্ডা লাগায় কি আসে যায়?

 শাড়ির আঁচল আঙ্গুল খোঁজে
  পলকা চুলের গন্ধ মেদুর,
 কোথাও আবার বৃষ্টি হলো
একটু যেন উতল বাতাস। 

চায়ের কাপের আদরগুলো
উষ্ণ ঠোঁটের নিষাদ রাগে,
একটু পরে সন্ধ্যা হবে
 তুমিও তো আজ প্রবাসিনী। 

একটু পরে সন্ধ্যা হবে 
আমিও কেমন  দোটানাতে, 
এই  যে তুমি  রেলিং ধরে,
 গল্পগুলো এক বিকেলের। 

**********
 

 
 
 

কবিতা - অনন্ত মাঠের পথ - অবিন সেন

 

অনন্ত মাঠের পথ

অবিন সেন

 

 

নিভন্ত নাড়ার আগুন ঠেলে জেগে ওঠে কুয়াসার বাষ্প

আবার পৌষের মাঠে শীর্ণ হিম হাতের ভিড়

উষ্ণতা অনতিদূরে, গাছের মাথায় উঠে পড়া লাল বল,

শিশুর খেলনার মতো ক্রমশ বড় হয় দেখে,

পাখিদের দল ফিস ফিস করে ডানা ঝাপটে উড়ে যায়

যে দিকে আল পথ— যে দিকে হলুদ পাম্প-ঘর,

বগ বগ করে জল ঠেলে ভাসিয়ে দিচ্ছে মুথো-ঘাসের সহজপাঠ।

সারাদিন এমনি ভেসে যাবার খেলা, সুদীর্ঘ গন্তব্যের মতো

ফিস ফিস কথা বলে, যেন তারা পুরানো স্কুলবাড়ির দরজায়

কবেকার হেলঞ্চ—সহজ—

 

ওদিকে নদীর কাছে শাদা বক কাদা পা মুছে নেয় ঘাসে,

ঠিক তার সুমুখে পাষাণ ঘুম ভেঙে জেগে উঠে অহল্যার মতো,

আলো— বিনম্র মাঠের সবুজের দিকে বরাভয় তুলে দাঁড়ায়

 

এই মাঠ— এই অনন্ত বিস্তৃত মাঠ

লক্ষ্মীর পায়ের টোকায় যেন সহসা সচকিত হয় আবার

জেগে ওঠে হাতের মুদ্রায়, শৃঙ্খল ছিন্ন করা চাষির জীবন

ফুলে ওঠা শিরায় দম-টেনে শ্বাস নেবার মতো—

জোরে জোরে প্যাডেল ঘোরায়— আর প্যাডেল ঘোরায়—

পাগলের মতো ক্রিং ক্রিং করে ঘণ্টি বাজাতে বাজাতে ছুটে যায়,

যেতে চায়।

চাষি-বাসী মানুষের সাত পুরুষের অধীত অধিকার

জিতে নেবার সাহস আছে যার, তার কি ভয় মানায়?

 

অনন্ত শাদা শেফালী ফুলের ছায়ায় লক্ষ্মীর বরাভয়

তির তির করে কাঁপে মৃদু হাওয়ায়—

স্বগতোক্তির মতো মেঠো মানুষেরে ভিক্ষাহীন স্বাধীনতার কথা বলে,

কাদায়, জলে, রক্তে, ঘামে, গুলিতে, বন্দুকে,

এই মেঠো পথে।

পথ কি বহুদূর?
..........................
 
 

 

কবিতা - মিলন সেতু - সঞ্জয় কর্মকার

মিলন সেতু
সঞ্জয় কর্মকার  

 

কৃপণ রোদে আলসে নদী খানিকটা ছোঁয় তীর
মেঘের দেশে গোপন খেলায় ইচ্ছে আলোর ভিড়।

পাখির ঠোঁটে স্বপ্ন ছড়ায় হাতছানি দূর বন
সন্ধ্যা নামে ঝুমকোলতায় রামধনু রঙ মন।

অহংকারী আকাশটা নেয় লাজুক তারার খোঁজ
সোহাগ মাখা জোছনা আসে রূপকথাপুর রোজ।

কোল ভরে নেয় দিনের ফসল একলা বিলের মাঠ
উল্লাসে ঝাঁপ রাতচরাদের ডুবছে আমোদ- হাট।
...................................